আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফ্রিস্টাইলে চলছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল

নিয়ম-নীতিহীন ফ্রিস্টাইলে চলা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে নেওয়া হচ্ছে মনগড়া বেতন আর ভর্তি ফি। প্রতিটি স্কুলে বছর বছর দিগুণ হারে ভর্তি ফি আর বেতনের টাকা বাড়ালেও প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ কার হাতে কেউ জানে না। বাংলা মাধ্যম স্কুলে একবার ভর্তি হলে নতুন ক্লাসে নতুনভাবে ভর্তি ফি প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হতে প্রতি বছরই লাগে মোটা অঙ্কের টাকা। স্বল্প বেতনে প্রতি বছর নিয়োগ দেওয়া হয় নতুন শিক্ষক আর পাল্টানো হয় পুরাতন শিক্ষক। ফলে অভিজ্ঞ শিক্ষকের স্বল্পতা কাটে না। গুরুত্ব দেওয়া হয় না কোনো অভিভাবকের মতামতকে। অঙ্ফোর্ড বা ক্যামব্রিজের কারিকুলাম অনুসরণের কথা বলে নিজের মতো করে সিলেবাস তৈরি করে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। সে কারণে মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং বা বিশ্ববিদ্যালয়ে মতো প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পায় খুব নগণ্য সংখ্যায়। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা আর রেজিস্ট্রেশনের দায়িত্ব ব্রিটিশ কাউন্সিলের থাকলেও কর্তৃপক্ষের বেপরোয়া আচরণের দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয় আর শিক্ষা বোর্ড নিতেও রাজি নয়। এ বিষয়ে শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোকে এখন আর নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু করতে চাই না। তবে মাস দুয়েক পর প্রতিষ্ঠানগুলোকে কিছু নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যাপারটা দেখব।

জানা গেছে, রাজধানীর একটি নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে তিন বছর আগে 'এ' লেভেল এর মাসিক বেতন ছিল ৩০ হাজার টাকা। দুই বছর আগে সে বেতন বাড়িয়ে নেওয়া হয় ৩৬ হাজার টাকা। চলতি বছরে সেই প্রতিষ্ঠানের বেতন বাড়িয়ে ৫৭ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। অন্যদিকে 'ও' লেভেল এবং প্লে গ্রুপ থেকে অন্যান্য ক্লাসেও দ্বিগুণ হারে বেতন বাড়ানো হয়েছে। সরেজমিন খোঁজ মিলেছে, স্কলাস্টিকা স্কুলের প্লে গ্রুপে ভর্তি ফি নেওয়া হয়েছে দেড় লাখ টাকা। প্রতি মাসে প্লে গ্রুপে বেতন দিতে হচ্ছে ১১ হাজার টাকা। ক্লাস ওয়ানে ১০ হাজার ১০০ টাকা। ক্লাস টুতে ১০ হাজার ৩০০ টাকা। ক্লাস ফাইভে ১০ হাজার ৭০০ টাকা। ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ২৭ নম্বরে অঙ্ফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে প্লে গ্রুপে ভর্তি ফি নেওয়া হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। আর প্রতি তিন মাসে বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। এ প্রতিষ্ঠানে বছরে চার কিস্তিতে বেতন পরিশোধ করতে হয়। রাজধানীর আসাদ গেটে গ্রিন হেরাল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে প্লেতে ভর্তি ফি নেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। মাসিক বেতন নেওয়া হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার টাকারও বেশি। একই অবস্থা মাস্টার মাইন্ড স্কুলেরও। উত্তরা মডেল টাউনের ৯ নম্বর সড়কের ৪ নম্বর সেক্টরের আগা খান স্কুলেও একই দশা। কে জি ওয়ানে ভর্তি ফি নেওয়া হয়েছে এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা। মাসিক বেতন ১০ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। বারিধারার আমেরিকান অ্যাম্বাসি রোডের আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে প্লে গ্রুপে ভর্তি ফি ২১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। প্রতি ছয় মাসে সেশন ফি দিতে হচ্ছে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তবে তারা জানায়, এই প্রতিষ্ঠানে বেশির ভাগ কূটনীতিকদের সন্তানরাই পড়াশোনা করেন। উত্তরায় ৬ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর সড়কের ৪ নম্বর প্লটে দিলি্ল পাবলিক (ডিপিএস এসটিএস স্কুল) স্কুলে গ্রেড ওয়ানে ভর্তি ফি তিন লাখ টাকা। মাসিক বেতন নেওয়া হয় সাড়ে ৫ হাজার টাকা। ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ৭ নম্বর রোডের ৩৪ নম্বর বাড়িতে সানিডেল স্কুলে প্লে গ্রুপে ভর্তি ফি নেওয়া হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। মাসিক বেতন নেওয়া হচ্ছে ৩ হাজার টাকা। তার মধ্যেও প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। অভিভাবক এবং শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণের পাশাপাশি এক ডজন শিক্ষককে চাকরিচ্যুতির ঘটনাও ঘঠিয়েছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা (আইএসডি), মাস্টার মাইন্ড, মেপ্যাল লিফ, ইন্টার ন্যাশনাল তুর্কিশ হোম স্কুল, হিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, মাস্টার মাইন্ড, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল, আরব মিশন পাবলিক স্কুলসহ প্রায় ১৮ হাজার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো দেখভাল বা নিয়ন্ত্রণ করার মতো বাংলাদেশ সরকারের কোনো দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান না থাকায় বেপরোয়া আচরণ দিন দিন বেড়ে চলছে। ২০১১ সালের বেনবেইসের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, সারা দেশে তিন ক্যাটাগরিতে ১৫৯টি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল রয়েছে। এর মধ্যে ও লেভেল স্কুল ৬৪ এবং এ লেভেল স্কুল ৫৪টি। আর জুনিয়র লেভেলের আন্তর্জাতিক মানের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ৪১টি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নীতিমালা তৈরি নিয়ে গত বছরের শেষে শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু অজানা কারণে সে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ থেমে যায়।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.