আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার উত্তরাধিকার-4 : ও তো চিরকালই সজীব

'... আমাদের আশার কোনো পরকাল নাই'

মাত্র 3 বছরের মধ্যে 4 খানা আবাস বদলে বড়লোকদের ছাত্রাবাস আরএইচকেই আদর্শ মনে করলেন আমার পিতা। তথাস্তু, বাড়ি থেকে টাকা যখন নিতেই হবে তখন তো বাপের কথার বাইরে যাওয়া যায় না! আরএইচ ছাত্রাবাসের দু'তলায় থাকি। ডাবল সিটের রুম। রুমমেট বাবু। রংপুর বাড়ি।

পড়ে নৃবিজ্ঞান প্রথম বর্ষে। বাবুর সঙ্গে আমার পরিচয়ের ইতিহাসটা বেশ মজার। সংেেপ সারি। দেবীশিংপাড়ায় মাদানীর বাসা ভাড়া নিয়ে আমার দুই বন্ধুর সঙ্গে থাকতাম আমি। দুই বন্ধু চলে যাবার পর বাসায় উঠলেন ছাত্রলীগের 3 নেতা।

তাদের মধ্যে একজন তাপস কুমার গোস্বামী। বাড়ি তার রংপুর। বাবু এসেছিলো তারই কাছে। এক রাতে। বাবুর অভিযোগ, তাপস ভর্তি করানোর নাম করে তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।

কিন্তু ভর্তি করাতে পারেননি। যাহোক, সেই পর্ব মীমাংসা করে দিয়েছি আমি আর আমার বন্ধু চন্দন। ভাগ্যচক্রে বাবু অপেমান তালিকা থেকে নৃবিজ্ঞানে ভর্তি হলো। সেই থেকে বাবু আমার সঙ্গে থাকে। আমি সাংবাদিকতা করি সোনালী সংবাদে বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসেবে।

বাবু নিপাট পড়ালেখাওয়ালা ছেলে। ঘরের বাইরে বের হয় কম। এখন অবশ্য আগের সেই বাবু নেই। অনেক বদলেছে। তো, সেভাবেই চলছিলো।

বর্ষাকালে রাজশাহীর রাস্তাঘাটের অবস্থা থাকে একেবারে করুণ। বাইরে বেরুতেও ইচ্ছে করে না। আর একবার বৃষ্টি ধরলেও টানা 3/4 দিন। এমনই এক বৃষ্টির সমারোহ চলছে দু'দিন ধরে। বাইরে বেরুতে পারিনি।

সন্ধ্যায় বৃষ্টি একটু কমলে নিচে নামলাম। নিচেই আরএইচ রেস্টুরেন্ট। খেতে ঢুকতেই দেখি রুমমেট বাবু বসে আছে। তাকে ঘিরে রোগা-পটকা 3 জন। বাবু পরিচয় করিয়ে দিলো।

তাদের মধ্যে একজন আমার পরিচয় পেয়েই বললো, সে নাকি আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। বলার স্টাইলে মস্তানিভাব প্রকট। কী ব্যাপার ভাই? সেই একইভাবে জা্নালো, তার ভাই আবু নাসের রাজীব ঢাবিশাসের সভাপতি ছিলেন। এখন সস্ত্রীক লন্ডনে। ভাইয়ের মতো সেও সাংবাদিকতা করতে চায়।

নিজের নাম বললো আবু নোমান সজীব। আমার নামের শেষাংশের সঙ্গে বেশ সাদৃশ্য। কী কারণে জানি, ছেলেটাকে পছন্দ হয়ে গেলো! আমার গুরু রায়হান রাব্বীকে বললাম ওর কথা। রাব্বী ভাই তখন পরীা নিয়ে ব্যস্ত। তার পত্রিকা প্রথম প্রভাতে সংবাদ পৌঁছাতে ছেলে দরকার।

সজীবকেই কাজে লাগাতে বললেন। এভাবেই সজীবের শুরু। আমি সংবাদ ব্রিফ করি, সে গিয়ে প্রথম প্রভাতে দিয়ে আসে। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো যোগাযোগের ঢেউ আসতে আসতে আমরা ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম। ক্যাম্পাসে সারাদিন একসঙ্গে।

এর মধ্যে সজীব ভোরের কাগজে ঢুকে গেলো। সেই শুরু। ক্যাম্পাসে আমাদের দু'জনের নাম শুনে অনেকে মনে করতেন, আমরা দু'ভাই! থাকতামও সেভাবে। একসঙ্গে, পাশাপাশি। সেও আরএইচে থাকতো।

এভাবেই দিন কাটে। মসৃন, তরতাজা। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই পথ অমসৃন হয়ে গেলো! মাহবুব আলম লাবলু ক্যাম্পাস ছাড়ার পর সজীব প্রথম আলোতে ঢোকার চেষ্টা শুরু করলো। ভালো কাজ করছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই সে কেনো জানি বেয়ারা হয়ে উঠলো।

ক্যাম্পাসে ঢুকলে শ্লোগান দিতো, এই ক্যাম্পাস সজীবের! দিনে দিনে প্রিয় এই মুখটি ক্যাম্পাসে অনেকেরই অপছন্দের মুখ হয়ে উঠলো। অনেক অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। আমরা ভীত হলাম, তার নিরাপত্তা নিয়ে। কিন্তু সজীব তখন আমার কথা পছন্দ করে না! শোনে মুখ বন্ধ করে। কিন্তু বোধহয় এককান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দিতে চায়।

হঠাৎ করে সজীবের প্রথম আলোতেও হলো না। এভাবেই সে ক্যাম্পাস ছেড়ে বিদায় নিলো। এখন ঢাকায় বিডি নিউজে। কথা হয়, দেখাও হয় ঢাকা গেলে। সেই আগের মতোই আছে।

কেনো থাকবে না? এখনো যে সজীবের সমস্ত স্মৃতি আমাদের ক্যাম্পাসে সজীব হয়ে আছে। সজীব কি জানে, ওপর প্রতি আমাদের ভালোবাসা এখনো সজীব?


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।