আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

@সকল উম্মাতের উপরই সিয়াম ফরয ছিল

জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com

এ ধারাবাহিকতার পূর্ব পর্ব পড়ুনঃ রমাদান কারীমঃ সিয়াম কি এবং কেন? সিয়ামের ইতিহাস মানব ইতিহাসের মতই সুপ্রাচীন। পৃথিবীতে প্রথম মানব আদম 'আলাইহিস্ সালাম ও প্রথম মানবী হাওয়া 'আলাইহাস্ সালাম যখন আল্লাহর নির্দেশক্রমে অবতরণ করেন, তখনি আল্লাহ্ রাব্বুল 'আলামীন তাদেরকে কিছু বিধানাবলী দান করেন; যা দিয়ে তারা পৃথিবীর জীবন পরিচালনা করেছেন। মহান আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ ((আমরা বললাম, 'তোমরা সকলে এখান থেকে নেমে যাও। পরে যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সৎপথের কোন নির্দেশ আসবে তখন যারা আমার সৎপথের অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না'। )) [সূরা আল-বাকারাহ্: ৩৮] মূলতঃ এই 'সৎপথের নির্দেশাবলী' থেকেই পৃথিবীতে সিয়ামের উৎপত্তি।

কেননা, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতা'আলা আমাদের জন্য যখন সিয়ামকে ফরয করেন, তখন বলেনঃ ((হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে দেয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার। )) [সূরা আল-বাকারাহ্: ১৮৩] সুবহান আল্লাহ্! দয়াময় আল্লাহ্ আমাদের উপর এমন কিছু কখনোই চাপিয়ে দেননি, যা আমাদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন ও কষ্টকর। এটা আল্লাহর নীতিবিরুদ্ধ, কেননা, তিনি বলেনঃ ((আল্লাহ্ কারো উপর এমন কোন দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না যা তার সাধ্যাতীত...। )) [সূরা আল-বাকারাহ্:২৮৬] তাই সিয়ামের ব্যাপারেও আমাদেরকে এমন কিছু বিধান দেননি যা আমাদের পূর্ববর্তীরা পালন করে যায়নি। সিয়াম পালনে যে উপবাস ও রিপুর নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন, তাকে যেন তাঁর বান্দাগণ নিজেদের উপর মহাকষ্টকর মনে করে তা পালনে ভীত হয়ে না পড়ে, তাই তিনি পূর্ববর্তীদের উদাহরণ দিয়েই সিয়ামকে আমাদের উপর ফরয করেছেন।

কারণ, স্বাভাবিকভাবে কোন কষ্টকর কাজও যদি বিশাল জনগোষ্ঠী একত্রিত হয়ে সম্পাদন করে, তবে তা আর কষ্টকর থাকে না। আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের প্রতি কত দয়াময়! যেমনটি আমরা ঈসা 'আলাইহিস্ সালামের একান্ত সঙ্গী বার্নাবাস প্রণিত বাইবেলে পাই যে, "গোনাহর জন্য রোণাজারির অব্যবহিত পরেই আসে উপবাসের প্রেরণা। . . . . . উত্তমরূপে উপবাস বা রোযা পালনের ব্যাপারে তোমাদের মনে রাখতে হবে সেই মজাদার খানাপিনাকারী লোকটির কথা। কেননা, যে ব্যক্তি দুনিয়ার জিন্দেগীতে প্রতিদিন মহা মজায় উত্তম খাওয়া-দাওয়া করতে চাইত, অনন্ত জীবনে আকণ্ঠ তৃষ্ণায় এক ফোটা পানিও তার কপালে জোটেনি। অথচ ল্যাজারাস নামক এক ব্যক্তি যিনি দুনিয়ার জীবনে সামান্য রুটির টুকরোতেই তুষ্ট ছিলেন, অনন্ত জীবনে জান্নাতের প্রাচুর্যময় সুখানুভূতিতে নিমজ্জিত এখন।

" [বার্নাবাসের বাইবেল, আফজাল চৌধুরী অনুদিত, ১০৭, পৃষ্ঠা ১২৯-১২৯] এখানে আমরা ঈসা 'আলাইহিস্ সালামের শরীয়তে সিয়ামের বিধান ও প্রতিদানের প্রমাণাদি পাচ্ছি, যদিও সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়ত আসার পর ঈসা 'আলাইহিস্ সালামের শরীয়ত রহিত হয়ে গেছে অর্থাৎ, প্রত্যেকের জন্যই এখন আল্লাহ্র সত্য বিধান হিসেবে শেষ নবীর আনীত শরীয়ত পালন করাই একান্ত কর্তব্য এবং এতেই নিহিত পরকালীন মুক্তি। আহলে কিতাব বা ইয়াহূদী ও নাসারাদের উপর যে সিয়াম ফরয ছিল এবং তাদের উপর নাযিলকৃত শরীয়ত থেকে মুসলমানদের উপর নাযিলকৃত শরীয়তের পার্থক্য জানতে পারি আমরা নিম্নোক্ত হাদীস থেকে। যেখানে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ((আমাদের সওম এবং আহলে কিতাবদের (ইয়াহূদী ও খৃষ্টান) সওমের মাঝে পার্থক্য হলো সেহরী খাওয়া, আমরা সওম পালনের আগে সেহরী খাই আর আহলে কিতাবগণ সওম পালনের আগে সেহরী খায় না। )) [মুসলিম] আর যেহেতু পূর্ববর্তী উম্মাতদের অধিকাংশই আল্লাহর নাফরমানী করার কারণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, যেমন- লূত জাতি, সামূদ জাতি, 'আদ জাতিসহ আরো অসংখ্য জাতির বিবরণ কুরআন ও হাদীসে রয়েছে। আর বর্তমানে আহলে কিতাব বা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসমানী কিতাব প্রাপ্তদের মধ্যে ইয়াহূদী এবং নাসারারাই বহাল রয়েছে আজো, তাই উদাহরণগুলো তাদের থেকেই পাওয়া যায় বেশী।

যেমন করে সালাত বা নামাজ প্রত্যেক উম্মাতের জন্য ফরয ছিল, তেমনি সিয়ামও প্রত্যেক উম্মাতের উপরই ফরয ছিল। তবে 'সিয়ামের শর্তাবলী, প্রকৃতি ও বিধি-বিধান যে উম্মাতে মোহাম্মাদীর মতই, তা কিন্তু নয়। যেমন, সিয়ামের সংখ্যা, সময়সীমা এবং কখন তা রাখা হবে, এসব ক্ষেত্রে আগেকার উম্মাতদের সিয়ামের সাথে মুসলমানদের সিয়ামের পার্থক্য হতেই পারে এবং হয়েছেও তাই। (তাফসীর রূহুল-মা'আনী)। সুতরাং আমাদের কাছে একথা পরিস্কার হলো যে, সিয়াম শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্যই আল্লাহ্ তা'আলা ফরয করেননি; বরং প্রত্যেক উম্মাতের জন্যই ফরয ছিল।

তাই আমাদেরও উচিত পরিপূর্ণ আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে এই পবিত্রমাসের ফরযকৃত সিয়াম সাধনা করে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতির আত্মিক, ঈমানী ও তাকওয়ার উন্নতি সাধনে ব্রত হওয়া। আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র নিকট তাঁর ফরযকৃত এ পবিত্র মাসের সিয়ামের পরিপূর্ণ কল্যাণ লাভের তৌফিক কামনা করছি। আমীন। (চলবে) ছবি কৃতজ্ঞতা: Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.