আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্রাফিক ডিজাইন ঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

শিল্প,সাহিত্য,সংস্কৃতি ও ডিজাইন

রাজধানী শহর থেকে শুরু করে উপজেলা শহর পর্যনত্দ দেশের সর্বত্রই এখন বিস্তৃত রয়েছে কম্পিউটার টেকনোলজী। প্রতিবছর বিদেশ থেকে আমদানী করা হচ্ছে প্রচুর কম্পিউটার ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশ। সাধারণ লোকজনও আজকাল কম্পিউটার কিনছেন। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা ক্রমশঃ বাড়ছে। কিন্তু অনেকেই আজকাল কম্পিউটারকে ফ্যাশনের সাথে জড়িয়ে ফেলছেন।

সুন্দর সুসজ্জিত ড্রয়িং রুমে একটা কম্পিউটার না থাকলে আজকাল যেন মানায়ই না। অনেকে শুধু গেম খেলা ও গান শোনার জন্য কম্পিউটার কিনছেন। এসব লোকদের কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য দেশের যত্রতত্র গড়ে উঠেছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ফান্ডামেন্টাল কোর্স, এম এস অফিস, প্রোগ্রামিং, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার,মাল্টিমিডিয়াসহ কতিপয় সফওয়্যারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ গ্রাফিক ডিজাউনের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন।

''এখানে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখানো হয়" এরকম সাইন বোর্ড ও ফেস্টুন প্রায়ই চোখে পড়ে। অথচ অবাক হওয়ার ব্যাপার যে, এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালক কিংবা প্রশিক্ষকদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কতটুকু ধারণা আছে বা নেই এ বিতর্কে আমি যাচ্ছি না! আমি শুধু বলব তারা কি গ্রাফিক ডিজাইন শেখাচ্ছেন নাকি ডি,টি, পি সফটওয়্যার শিখিয়ে তাকে গ্রাফিক ডিজাইন বলে শিক্ষার্থীদের বিভ্রানত্দ করছেন। ডি, টি, পি হচ্ছে গ্রাফিক ডিজাইনের একটা শাখা মাত্র। গ্রাফিক ডিজাইন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নিতে হলে আমাদের একটু পেছনে যাওয়া দরকার। গ্রাফিক ডিজাইনের একটি সুন্দর ও আদি প্রমাণ পাওয়া যায় ঊনিশ শতকের হসত্দলিখিত পবিত্র বাইবেলের মধ্যে, যা তৎকালীন আইরিস সম্রাটের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরী হয়েছিলো।

পরে জন গুটেনবার্গ এর উপস্থাপনায় লিখিত পুসত্দকসমূহের মুদ্রণ পদ্ধতি বিসত্দার লাভ করে। বৃটেনে তখন একটি শিল্পকলা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়। গুটেনবার্গের পরে উনিশ শতকের শেষ অবধি পর্যনত্দ কোন রকম পরিবর্তন ছাড়াই গ্রাফিক ডিজাইনের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি লাভ করে। বিশেষ করে বিংশশতাব্দী পর্যনত্দ বিস্তৃত গ্রাফিক ডিজাইনকেও গ্রাফিক্স এর পুরাতন ধারা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 1891-1996 পর্যনত্দ বিখ্যাত ডিজাইনার উইলিয়াম মরিস এর কেলমস্কট প্রেস বিশেষ মানের গ্রাফিক ডিজাইন বাজারজাত করে যা কিনা তখনকার দিনে আর্টস ও ক্রাফট এর জগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে।

মরিস সর্ব প্রথম গ্রাফিক ডিজাইনে টাইপোগ্রাফী ও কালার সেপারেশন এর ব্যাপক প্রসার ঘটান। এভাবে ক্রমশঃ পৃথিবীর সেরা ডিজাইনারগণ গ্রাফিক্স এর উন্নতি সাধন করতে থাকেন। বিশেষ করে তখন বেশীরভাগ ডিজাইনারগণই টাইপোগ্রাফী নিয়ে কাজ করেন। ইগর পলিয়াকগ, সাউল ব্যাস, হার্বাট বায়ার, পিটার ব্যারেন্স, ডেভিট কারসন, এম ক্যাসেনড্রা, আদ্রিয়ান পুটিগার, এরিক গিল, মিলটন গ্লাসার, আরমিন হপম্যান, পিটার ম্যাকস, পিট মন্ড্রিয়ান, মরি চেক, জোসেফ মূলার ব্রুকমেন, পল রেন্ট ও হারমেন জেফ ইত্যাদি ব্যক্তিগণ তখনকার দিনে গ্রাফিক ডিজাইন ও টাইপোগ্রাফী নিয়ে কাজ করেন। হারমেন জেফ এর জেফসেন্সুরী ও জেফ ডিংব্যাট খুব নামকরা টাইপ যা এখনও গ্রাফিক ডিজাইনে প্রতিদিন ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম 1904 সালে খুলনায় মহেশ্বর পাশা স্কুল অব আর্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে 1948 সালে ঢাকায় "গভর্ণমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্টস" নামে আরো একটি প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়। ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফ্যাকাল্টি অব ফাইন আর্টস নামে একটি ফ্যাকাল্টি চালু করা হয়। পরবর্তীতে দেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগ খোলার মাধ্যমে ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় আর্ট কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফাইন আর্টস এর প্রসার ঘটে। গ্রাফিক ডিজাইন মূলত ফাইন আর্টের একটি অংশ বিশেষ।

তবে গ্রাফিক ডিজাইনের অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য শাখা রয়েছে। বর্তমান সময়ের জন্য গ্রাফিক ডিজাইনকে দুভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এদের একটি হচ্ছে জেনারেল গ্রাফিক (ম্যানুয়েলী গ্রাফিক ডিজাইন) ডিজাইন অন্যটি হচ্ছে ডিজিটাল বা কম্পিউটারে গ্রাফিক ডিজাইন। বর্তমানে অবশ্য কম্পিউটারভিত্তিক ডিজিটাল গ্রাফিক ডিজাইনেই প্রাধান্য পাচ্ছে বেশী। কম্পিউটার গ্রাফিক ডিজাইন কিনুত্দ আলাদা বিষয়।

কম্পিউটার, কম্পিউটার কার্যপ্রণালী, প্রসেসিং, ভিজুয়ালিটি, মনিটর, ডিসপ্লে, আউটপুট, ইনপুট বিষয় নিয়েই হচ্ছে কম্পিউটার গ্রাফিক্স। আমাদের দেশে এখনও গ্রাফিক বানানকে প্রায় জায়গায় গ্রাফিক্স লিখে ভুল করা হয়। এমনি অনেক ভুল বানানের গ্রাফিক ডিজাইন শিক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আমাদের দেশে সফল ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ হিপোক্রিটাস বলেছেন, "শিক্ষার জন্য এসো, সেবার জন্য বেরিয়ে যাও" কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিক্ষা দেয়া হচ্ছে ভুল। ভুল কনসেপ্ট আর ভুল কালারের গ্রাফিক ডিজাইন।

অথচ গ্রাফিক ডিজাইনের খুব সুন্দর সংজ্ঞা রয়েছে। গ্রাফিক ডিজাইন করার জন্য প্রাথমিক ভাবে লাইন, সেইফ, টেক্সট, টেকচার, ইমেজ, কালার ও লোগোর মত প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে। এগুলো ডিজাইনে কিভাবে কাজ করে ? কিভাবে এগুলো প্রয়োগ করতে হয়? এই সব তো রয়েছেই। তার সাথে রয়েছে ডট লাইন, জিউমেট্রিক্যাল সেইফ, টাইপ এলাইনমেন্ট, টেকচার মেকিং, ইমেজ এডিটিং, কালার সেপারেশন। শুধু তাই নয়, জানতে হবে কালার থেরাপী, কালার কম্বিনেশন, কালার সিম্বলিজম, কালার মেকিং, পেনটোন কালার, হেক্সাডেসিমেল কালার, রেজুলেশন, বিট, গ্রেস্কেল, লাইন আর্ট, টাইফোগ্রাফী, এডব ফটোসপে কিভাবে ফটো এডিটিং করা যায়, ইলোস্ট্রেটরে কিভাবে মাল্টি কালার বা সিক্স কালার সেপারেশন করা যায়, কোয়ার্কে কিভাবে স্পট কালার প্রিন্ট করা যায়, আরো অনেক অনেক কিছু।

এ বিষয়ে কোন ধারনা না দিয়ে এডব ফটোসপ, ইলোস্ট্রেটর শিখিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে যারা গ্রাফিক ডিজাইনের সার্টিফিকেট দিয়ে প্রতারিত করছেন, তাদের জন্য বলতে হয় " এই দীনতা ক্ষমা করো প্রভু"। এ বিষয়ের একটি বাসত্দব উদাহরণ না দিয়ে পারছি না। রাজধানী শহর ঢাকায় পজেটিভ আউটপুট ফার্মের কয়েকটির মধ্যে অন্যতম একটি আউটপুট প্রতিষ্ঠান (যার নাম উল্লেখ করলাম না) একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের সঙ্গে কথা বলে আমি খুব আর্শ্চয্য হলাম যে, গ্রাফিক ডিজাইন বলতে তিনি, এডব ফটোশপ, ইলোস্ট্রেটর, কোয়ার্ক ছাড়া আর কিছুই বোঝেন না। ঢাকা শহরে গ্রাফিক ডিজাইন শিখানো হয় এরকম দুটি প্রতিষ্ঠানে আমি গিয়েছিলাম আমার ভাগ্নেকে নিয়ে। গ্রাফিক ডিজাইন বিষয়ে 1বছর মেয়াদী কোর্সের প্রশিক্ষণের জন্যে।

তাদের কাছে গিয়ে আমি অবাক, তারা গ্রাফিক ডিজাইনের জন্যে 3000 টাকা ভর্তি ফিসহ প্রতিমাসে 1হাজার টাকা করে মাসিক ফি নিয়ে থাকেন। তাদের এখানে 3 মাস মেয়াদী বিভিন্ন কোর্স রয়েছে। তারা আমাকে জানালেন এখানে 3 মাসে গ্রাফিক ডিজাইন শিখানো হয় এবং এ বিষয়ে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট প্রদানে কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন রয়েছে। গ্রাফিক ডিজাইনের তারা কি কি শিখান জানতে চাইলে তিনি জানান, এডব ফটোসপ, এডব ইলোস্ট্রেটর, কোয়ার্ক এক্সপ্রেস ও কোরেলড্র এপ্লিকেশন।

আামি বললাম এগুলোতো গ্রাফিক ডিজাইন করার সফটওয়ার! কিনু্তু গ্রাফিক ডিজাইন বেসিক আপনারা কি শিখাচ্ছেন? তিনি অনেকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে হয়ত ভাবলেন আমি বোধ হয় কোন অযাচিত শব্দ বলে ফেলেছি। তিনি বল্লেন, এগুলোইতো হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইন! অন্য এক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক জানালেন, গ্রাফিক ডিজাইনের এতসব কে শিখতে চায়? 5000টাকা দিয়ে কি গ্রাফিক্স ডিজাইন শিক্ষা দেয়া যায়? তবুও এই আর কি? দেখছেন না! দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠান নিট (এনআইটিটি), এ্যাপটেক, ভুইঁয়া একাডেমী তারাওতো ফটোশপ ইলোস্ট্রেটর কোয়ার্ক এসবেই শেখায় এবং আমাদের চেয়ে তাদের মান খুব একটা ভালো নয়। এটি খুব সত্য যে, এসব প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রতি বছর অনেক ছাত্র-ছাত্রী এ গ্রেড, বি গ্রেড, সাটিফিকেট নিয়ে বের হয়। তারা গ্রাফিক ডিজাইন এর বেসিক জানবে তো দূরের কথা; তারা এডবি ইলোস্ট্রেটর, ফটোশপ প্রোগামও ভালো জানে না। তবুও কেন তারা এসব ডি.টি,পি বিষয় শিক্ষাকে গ্রাফিক ডিজাইন বলে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীকে প্রতারিত করছেন? তাদের জন্য আবারও বলতে হয় " এই দীনতা ক্ষমা করো প্রভু"।

এ বিষয়ে কবি পংকজ মনোহরের একটি কবিতার দুটি লাইন উল্লেখ করতেই হয়, "কৌশলে খুন হয় কাব্য কলা/কলঙ্কিত আত্মজ সংস্কৃতি/পাওয়া যায় কাব্যের জাল দলিল/উচ্ছেদ তার কাব্যময় ভিটেমাটি। গ্রাফিক ডিজাইন হচ্ছে ফাইন আর্টস এর একটি বলিষ্ঠ মাধ্যম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউট এবং রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইন আর্টস বিষয়ক পড়াশোনা করানো হয় অথচ এসব ফ্যাকাল্টিতে গ্রাফিক আর্টস বিষয়ে সামান্যই ধারণা দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের পার্শ্ববতর্ী দেশ ভারত, তাইওয়ানসহ ইউরোপ, আমেরিকায় গ্রাফিক ডিজাইনের উপর ব্যাপক পড়াশোনা করানো হয়। শুধু তাই নয় শুধুমাত্র ইংল্যান্ডেই রয়েছে 47টি বিশ্ববিদ্যালয়ে 200টির মতো গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স।

এগুলোর মধ্যে ফাউণ্ডেশন সার্টিফিকেট থেকে শুরু করে ডিপ্লোমা, গ্রাজুয়েট, পোস্ট গ্রাজুয়েট, মাস্টার অব গ্রাফিক ডিজাইন ডিগ্রী প্রদান করা হয়। এসব কোর্স 1 থেকে শুরু করে 4 বছর মেয়াদী হয়ে থাকে। আইটি টেকনোলজীর যুগে গ্রাফিক ডিজাইনের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের বাসত্দব জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রেই গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমাদের দেশে গ্রাফিক ডিজাইনের উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র অথবা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ মহাবিদ্যালয়গুলোতে বাধ্যতামূলক ভাবে গ্রাফিক ডিজাইন বিষয় সংযোজন করা প্রয়োজন।

শুধু তাই নয় দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রাফিক ডিজাইন বিষয়ে বিভিন্ন ওয়ার্কশপ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের উক্ত বিষয়ে উৎসাহিত করা যেতে পারে। পাশাপাশি যেসব প্রতিষ্ঠান গ্রাফিক ডিজাইনের নামে ডি.টি.পি. এপ্লিকেশন শেখাচ্ছে তাদেরকে দৃষ্টানত্দমূলক দণ্ডবিধির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। শুধু তাই নয় আমাদের দেশে গ্রাফিক ডিজাইন বিষয়ক কোন বাংলা ভাষার বই পর্যনত্দ নেই এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইংরেজী ভাষার বইও পাওয়া যায় না। কোন কোন ক্ষেত্রে এসব বই আবার এত দামী এবং দুস্প্রাপ্য যে এগুলো সংগ্রহ করাও খুব কঠিন। তবে আমাদের দেশের স্বনামধন্য গ্রাফিক ডিজাইনার ও কম্পিউটার ব্যক্তিত্ব জনাব মোসত্দফা জব্বার সাহেব "ডিজিটাল গ্রাফিক্স ও কম্পিউটারে প্রকাশনা" নামে একটি বই প্রকাশ করেছেন।

এটা যদিও গ্রাফিক ডিজাইনের পরিপূর্ণ কোন বই নয় তবুও আমাদের দেশের আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীরা এই বইটি অধ্যয়ন করে গ্রাফিক ডিজাইন ও প্রিন্টিং টেকনোলজী বিষয়ে কিছুটা জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হবে। প্রসঙ্গত বলে রাখা প্রয়োজন যে বাংলাদেশে মোসত্দফা জব্বার সর্বপ্রথম বাংলা টাইপোগ্রাফী নিয়ে কাজ শুরু করেন। 1988 সালে 16ই ডিসেম্বর তিনি প্রথম কীবোর্ডের বাংলা লে-আউট তৈরী করেন। সেটা পরবর্তীতে মেকিন্টোস কম্পিউটারে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে উইনডোজ ও লিনাক্স সিস্টেমের জন্যও এ সফটওয়্যার তৈরী করা হয়েছে।

তার বিজয় বাংলা সফটওয়্যার সারা বিশ্বে বাংলা ব্যবহারকারীদের জন্য এক যুগানত্দকারী মাইলফলক হয়ে থাকবে। তবে অত্যনত্দ দুঃখের বিষয় যে বাংলাদেশে কপিরাইট আইন চালু না থাকায় যারা এদেশে বাংলা টাইপোগ্রাফী ও বিভিন্ন সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করছেন তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। গ্রাফিক ডিজাইন শুধু দেশের জন্য নয় বিদেশে দক্ষ গ্রাফিক ডিজাইনার এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গ্রাফিক ডিজাইন করে প্রতি বছর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তাই নয় বর্তমানে ইন্টারনেটে গ্রিটিংস কার্ড, পোস্টার, ব্যানার ও ওয়েব পেজ ডিজাইন করে ঘরে বসেই প্রচুর টাকা উপার্জন করা সম্ভব।

গ্রাফিক ডিজাইনের জন্য প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ঃ কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ঃ 1.7 গিগাহার্জ ও তার বেশী ক্ষমতা সম্পন্ন প্রসেসর। 256 ম্যাগাবাইট র্যাম থেকে 512 ম্যগাবাইট আরডি অথবা ডি.ডি.আর (400-800 বাসস্পীডের) র্যাম। 7200আর পিএম থেকে শুরু করে 1000 আরপিএম এর 40থেকে 120গিগা হার্ডডিক্স। সাতা বা স্কাজি হার্ডডিক্স হলে খুব ভালো হয়। স্কাজি হার্ডডিক্স খুব দ্রুত ফাইল রেণ্ডারিং করতে পারে।

সিডিরম ড্রাইভ, সিডি রাইটার বা, পেন ড্রাইভ। একটি 17ইঞ্চি ভালো মনিটর যাতে ন্যাচারাল কালার ডিসপ্লে করার সুবিধা আছে। ভালো মানের স্ক্যানার, যার 1200/1200অথবা 2400/2400/রেজুলেশন স্ক্যান করার ক্ষমতা রয়েছে। কালার প্রিন্টার কমপক্ষে 4কার্টিজ সম্বলিত যার ঈ গ ণ ক কালারে প্রিন্ট করার ক্ষমতা আছে। একটি লেজার প্রিন্টার (মনোক্রম) লেজার 1200অথবা 2400 ডিপিআই ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি।

কম্পিউটার সফটওয়্যার ঃ উইনডোজ এক্সপি সিস্টেম অথবা ম্যাক সিস্টেম 10.0 সফটওয়্যার (ক) ফটো এডিটিং ও ইমেজ কারেকশন করার জন্য এডবি ফটোসপ-7.0 অথবা 8.0, কোরেল পেইন্ট, ইউলিড ফটোস্টুডিও ইত্যাদি। (খ) ভেক্টর গ্রাফিক্স ও ইলাস্ট্রেশন এর জন্য-এডবি ইলোস্ট্রেটর 10.0 অথবা 11.0, কোরোল ড্র-11.00 অথবা 12.00, ফ্রি-হ্যাণ্ড-10.00, মাইক্রোসফট এ্যাক্রেলিক, পেইন্টসপ প্রো, মাইক্রো মিডিয়া ফ্ল্যাশ এমএক্স স্টুডিও ইত্যাদি। (গ) ম্যাগাজিন বা বই ফরমেটের জন্য-কোয়ার্ক এক্সপ্রেস-5.0 অথবা 6.0, পেজমেকার-7.0, এডবি ইনডিজাইন-3.0, মাইক্রোসফট ফন্ট পেইজ ইত্যাদি। (ঘ) ফটো বা ইমেজ ভিউয়ার- এসিডি সি-3.0, 4.0, 6.0 (পাওয়ার প্যাকসহ) (ঙ) এডব রিডার-7.0, এ্যাক্রোবাট রিডার-5.0, 6.0, ই-বুক রিডার ইত্যাদি (চ) স্কেচ করার জন্যে-এডবি স্টিম লাইন-4.0 অথবা কোরেল ট্রেস (ছ) বিজয় প্রো অথবা প্রশিকা টাইপোগ্রাফি/ স্ক্রীপ্ট, ট্রুটাইপ অথবা প্রোসক্রিপ্ট টাইপ, ওপেন টাইপসহ ইংরেজী বা আরবী টাইপ (জ) ক্লিপ আর্ট বা হাইরেজুলেশন ইমেজ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার টুলস, প্লাগইনস, ফিল্টার।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.