আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ জার্নি বাই রিক্সা

যদি নির্বাসন দাও.................................................................. আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো আমি বিষ পান করে মরে যাবো! বিষণ্ন আলোয় এই বাংলাদেশ নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ, প্রান্তরে দিগন্ত নির্নিমেষ- এ আমারই সাড়ে তিন হাত তুমি।

*** বেশি বড় মনে হলে প্রথম প্যারা বাদ দিয়ে পড়া শুরু করুন। "রিক্সার হুড ফেলিয়া দিয়া রৌদ্রকরোজ্জ্বল পৃথিবীর সৌন্দর্য অবলোকন করিতে করিতে প্রেয়সীর কোমর . . . .. . ." -এ রকম কোন চমৎকার রসাত্মক বর্ণনাময় ঘটনার ঘনঘটায় পাঠককূলের মনে উচ্ছসিত রোমান্সের জোয়ার বইয়ে দিতে না পারার গঞ্জনাটুকু সহ্য করেই আমন্ত্রণ জানাচ্ছি 'এ জার্নি বাই রিক্সা' -র যন্ত্রণা উপভোগ করার জন্য। যাত্রা শুরুর স্থান এখনই বলতে চাচ্ছি না কারণ সুধীগণ লেখাটি পড়ার আগ্রহ হারিয়ে আমার সকল উৎসাহের মূলে অচিরেই জল ঢেলে দিতে কুন্ঠিত হবেন না বলে। তাই ধরা যাক কাবুলিয়া শুভযাত্রা (!) শুরু করার স্থান আর গন্তব্য কদুবন (দুটি নামই 'ক' দিয়ে শুরু বলে সহসা রণে ভঙ্গ দেবন না প্লিজ) আর দুই সাহসী যাত্রী আমি আর আমার বন্ধু সাগর (নদী হলে বোধ করি জনতা একটু নড়েচড়ে বসার সৌভাগ্য লাভ করতেন, আবারও আশাভঙ্গের জন্য এই অধম ক্ষমাপ্রাথী)।

প্রতিদিনের মতো সেদিনও আমাদের মহান উদ্দেশ্য (! শিক্ষাব্রত) সাধনের জন্য দু'জন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি প্রায় ঘন্টা আধেক হবে। একে তো অফিস আওয়ার বলে খালি রিক্সা কম, তার উপর যাত্রীর সংখ্যা ছিলো বহুগুন । মাঝে মাঝে দু'একটা খালি রিক্সা আসছিল কিন্তু আমাদের গন্তব্যে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের বড়ই অনিহা অথচ একই পথ দিয়ে সামান্য দূরবতর্ী (কদুবন হতে 10 হাত দূরে ক্যারেড মাঠের ওয়েস্ট গেইট) গন্তব্যে তারা ঠিকই যাচ্ছিল, পার্থক্য শুধু আমাদের পরিবর্তে যাত্রীগণ ছিলেন ভদ্রমহিলা (ভদ্রমহিলাদের সাথে ভদ্রোচিত আচরণই মানানসই, তাছাড়া লেডিস ফার্স্ট বলে যে ভুলতে বসা একটা রীতি চালু আছে রিক্সাচালকেরা সে কথার মান রাখতে খুবই সচেতন। জয়তু রিক্সাচালক বাবাজি। ) যাহোক, অনেক চাচা-ভাতিজা ডেকে অবশেষে এক অল্পবয়েসি ছোকরার মন গলানো গেল।

অপেক্ষাকৃত একটু বেশি ভাড়া দিয়ে উঠে পড়লাম বিসমিল্লাহ বলে। বস্তুত: এখান থেকেই শুরু আমাদের এ জার্নি বাই রিক্সা। যে রাস্তা দিয়ে রিক্সা চলছে সে রাস্তাটি এমনই ভাস্কর্যময় যে আমাদের হাড্ডিগুড্ডি সব তুর্কি নাচন নাচছে- ঈশ্বর যেন দয়াপরবশ হয়ে আমৃতু্য ফিজিক্যাল থেরাপির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এই রোডের স্থায়ী যাত্রীদের। কোথাও উচুঁ , কোথাও নিচু, কোথাও গর্ত আবার কোথাও ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল। তদুপরি পানিতে রাস্তার অধিকাংশই ছিলো ঢাকা।

সম্ভবত বছরের নয়মাসই এই রাস্তাটি বন্যা-কবলিত থাকে এবং দুর্জনের মুখে শুনেছি ব্যাঙ হিসু করলেও নাকি এ রাস্তা পানিতে ডুবে যায়। ) এরই মধ্যে দিয়ে মোটামুটি দ্রুতগতিতেই রিক্সা চলছিল- সে সম্ভবত: ছোকরার গায়ের জোরেই। কিন্তু হঠাৎ করে সামনের একটা রিক্সা গর্তে আটকে যায়, অমনি রিক্সাগুলি কড়া ব্রেক কষতে থাকে একটার পর একটা কিন্তু শেষরক্ষা হলো না ঠিক আমাদের পেছনের রিক্সাটায় এসে। যার দরুন নিউটনের সূত্রানুযায়ী (সূত্র ভুল হলে নতুন সূত্র বসিয়ে নেবেন এটাতো আর কামসূত্র না) যে পরিমাণ ভরবেগে পেছনের রিক্সাটি আমাদের ধাক্কা দিলো ঠিক সে পরিমাণ ভরবেগে আমার বন্ধু সাগর রাস্তায় ছিটকে পড়লো। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে সামনে পা হেলান দিয়ে রেখেছিলাম বলে এ যাত্রায় আমি বেঁচে গেলাম।

সাগর তো যথেষ্ঠ আহত হলোই কিন্তু তার চেয়ে দু:সংবাদ হলো সে যখন সুপারম্যানের মতো উড়ে গিয়ে পানিতে মুখ থুবড়ে পড়ছিল তখন অপোজিট সাইটের রিক্সায় করে যাচ্ছিল ওর পাশের বাসার সুন্দরী মেয়েটি যার সাথে বেচারা অনেকদিন থেকে ভাব জমানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে চলছে। উফ! মেয়েটি বাসায় গিয়ে এই দৃশ্যের কি রসাত্মক বর্ণনাই যে করে সে ভাবনায় তার সর্বাঙ্গের ব্যাথা আপাতত ভেনিশ হয়ে গেল। একেই কি বলে- পড়বি পড় মালির ঘাড়ে? সামনের রিক্সাটা গর্ত থেকে তোলা হলে আবার চলা শুরু হলো। কিছুদূর যেতেই মাথায় নরম কিছু আপতিত হওয়ার ব্যাপার অনুভব করলাম। বুঝতে পারলাম- এটা হলো ক্রো-মিশাইল।

মাকড়শার জালের মতো বিসতৃত বৈদু্যতিক লাইনের উপর থেকে কালো শয়তানগুলির অব্যর্থ নিশানায় পরিণত হয়ে রুমাল দিয়ে মাথা পরিষ্কার করতে করতে ভাবছি কি কুক্ষণেই না আজ ঘর থেকে বের হলাম। এমন সময় পাশের রিক্সা থেকে পরিহাসময় নারী কন্ঠের মন্তব্য- আহারে বেচারা!!! ইচ্ছে হচ্ছিল সারা বাংলােেশর কাকগুলোকে একটা একটা করে এয়ারগান দিয়ে গুলি করে মারি। এদিকে আবার পুলের কাছে আসতেই দেখি বিরাট জ্যাম। সে জ্যাম ছুটতে যে কতক্ষণ লাগে স্বয়ং ঈশ্বরও বলতে পারবেন না নিশ্চিত। একটু একটু করে রিক্সা এগুতে থাকল।

এগুতে এগুতে থামল ময়লার ডাস্টবিনের সামনে। এ ডাস্টবিনের পাশে যে কোন সুস্থ লোক পাঁচ মনিট থাকলে বোধ করি তাকে ফার্স্ট এইড নিতে হবে। এদিকে আমার রুমালটার সদ্ব্যবহার ইতিমধ্যে সম্পন্ন হওয়ার দরুন এই পুঁতিগন্ধ হতে পরিত্রাণের শেষ সম্বলটুকুও নি:শেষ। দাঁতে দাঁত চেপে বসে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় নেই যদিও পেটের নাড়িভুড়ি শান্তি ভান্ডারে অবস্থানের ব্যাপারে ব্যাপক বিদ্রোহ করছিল। অবশেষে মিনিট দশেক পরে আস্তে আস্তে নম্র বধুর মতো রিক্সা মহাশয়(া) সামনে অগ্রসর হতে লাগলো।

নিজের সহ্যক্ষমতা দেখে আমি তো রীতিমত অভিভূত। সবশেষে দশ মিনিটের পথে একঘন্টা অতিবাহিত করে যখন গন্তব্যে পৌছুঁলাম ছোকরার দাবি আরো পাচঁটাকা বাড়িয়ে দিতে হবে। তার কারণ একঘন্টার জ্যাম। এই জ্যামের জন্য সম্ভবত আমারই দায়ী কারণ ঈশ্বর যেহুতুআমাদের এই গরীব পল্লীর বাসিন্দা করেছেন তার ট্যাক্স তো দিতেই হবে প্রতিদিন। সে যাহোক, তিনগুন ভাড়া পরিশোধ করে তাড়াহুড়া করে ক্যাম্পাসে পৌঁছালাম।

গিয়ে শুনি স্যার আজ ক্লাশ নিবেন না। উনার নাকি গুরুত্বপূর্ণমিটিং আছে। সাগর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে- দশ টাকাই লস । আমি সংশোধন করি- না পুরোটাই, কারণ আজ আর কোন ক্লাশ নেই। ততক্ষণে সাগরের সর্বাঙ্গের ব্যাথা আর আমার ক্রো-মিশাইলের আঘাত আস্তে আস্তে আবার মাথাচাড়া দিতে লাগল।

দুজনেই একটু থেমে বন্ধুদের উদ্দেশ্যে- কর্ণফুলিতে নৌকা নিয়ে ঘুরলে কেমন হবে বলতো? সবাই একস্বরে হেবি্ব। ওকে দ্যান লেটস গো। আজকের এই নিরস দিনে একটু সরস মজার প্রচেষ্টা আর কি! ওহ বলতে ভুলে গেছি- আমাদের যাত্রাপথ ছিলো বাকলিয়া থেকে মধুবন পর্যন্ত। এটুকুতেই এই অবস্থা বাকির কথা বাকিই থাক।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।