আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বালক ভুল করে নেমেছে ভুল জলে

আমি যে পৃথিবীকে চেয়েছিলাম,তাকে আমি পাইনি । তখনো আমার সময় আসেনি। তখনো আমার সময় আসেনি ,,,

"বালক ভুল করে পড়েছে ভুল বই পড়েনি ব্যকরণ,পড়েনি মূল বই। বালক জানেনা তো সময় প্রতিকূল সাঁতার না শিখেই সে সাগরে ঝাঁপ দেয় জলের চোরস্রোত গোপনে বয়ে যায় বালক ভুল করে নেমেছে ভুল জলে.." **সংশোধনের জন্য ধন্যবাদ:: ঝরা পাতা** (রফিক আজাদের কবিতা-স্মৃতি থেকে তুলে দিলাম..স্মৃতি যদি বিশ্বাসঘাতকতা করে,তবে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন। ) আমার বন্ধু সুকান্ত।

ব্রহ্মপুত্র পাড়ের ছেলে,ঐ নদের মতই শান্ত। ক্যাম্পাসে চোখে পড়ার মত কোন ঝাঁ চকচকে ছেলে সে নয়,পাঠচক্রের সময় কেবল মাঝেমধ্যে দেখা হতো..সুকান্ত সবসময়ই পেছনের একটা চেয়ারে বসা থাকত,একটু অন্যমনষ্ক। একদিন দ্্বান্দিক বস্তুবাদ নিয়ে আলোচনা চলার সময় লুকায়ে লুকায়ে জয় গোস্বামীর কবিতা পড়তে গিয়ে আমার চোখে ধরা পড়ে গেল। ব্রহ্মপুত্র পাড়ের ছেলেটা লাজুক,কিন্তু অসম্ভব মায়াবী একটা হাসি দিয়ে সেই মূহুর্ত থেকে আমার বন্ধু হয়ে গেল। কিছুদিনের মধ্যেই টের পেলাম যে,সমাজতন্ত্রের অ-আ-ক-খ এর চাইতে জীবনানন্দের কবিতার প্রতিই তার ঢের আগ্রহ!আমার বন্ধুটাকে বিপ্লবের স্বপ্ন না দেখে,কবিতার স্বপ্ন দেখলেই যেন বেশি মানাতো।

যাইহোক,আমি কয়েকদিনের মধ্যেই হাফ-রোমান্টিক বিপ্লব-বিপ্লব ফ্যাশন এর জলাঞ্জলি দিয়ে ভিনদেশে পাড়ি দিলাম। আমার সতীর্থ রোমান্টিকদের পরিণতির ব্যাপারেও খুব একটা সন্দিহান ছিলাম না। কিন্তু আমাকে ধাক্বা দিল শুধু সুকান্ত। আমার ধারণা ছিল যে,সুকান্তও বড়জোর দু'একটা বিপ্লবী ধরণের কবিতা প্রসব করে অন্য সবার মতন ইঁদুরদৌড়ে শামিল হবে। কিন্তু আড়াই বছর পর,লেভেল ফাইনাল পরীক্ষার ঠিক আগে আগে ক্যাম্পাসে গিয়ে শুনলাম যে,সুকান্ত নাকি এখন আদমজীতে।

ফোনে কথা বলার এক ফাঁকে পরীক্ষার কথা তুলতেই ঠিক আগের মত লাজুক গলায় বললো,"পরীক্ষা ড্রপ দিতেছি,দোস্ত!"কারণ জিগ্যেস করলাম। এবার লাজুক গলায় পালটা প্রশ্ন আসলো,"এতগুলা শ্রমিকের তো লাইফই ড্রপ হয়া যাইতেসে। আমার একার একটা পরীক্ষা ড্রপ হওয়া কি এর চেয়ে বড় ব্যাপার?"ওর লাজুক গলা ছাপায়ে ওর বিশ্বাসের দৃঢ়তা ঠিকই আমার কানে পৌঁছল-আমি সেদিন আর কথা বাড়াই নাই। গত বছর দেশে গিয়ে আবার সুকান্তর খোঁজ নিলাম। অন্য বন্ধুরা সব পাশ করে রুটি রোজগার করছে,আর আমার বন্ধুটা হাওড় এলাকার মানুষদের রুটির স্বপ্ন দ্যাখাতে ব্যস্ত।

এবার কপালগুণে একদিন আহসানউল্লাহ হলে ওর সাথে দেখা হয়ে গেল। একথা সেকথার পরে বিদায়ের সময় হঠাৎ নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক ভাবে জিগ্যেস করলাম,"দোস্ত,তুই ইঞ্জিনিয়ার হবিনা?"ফেরত আসলো আবারো একটা প্রশ্ন-"খালি ঘর-বাড়ি, ব্রিজ বানাইলেই ইঞ্জিনিয়ার হয়,দোস্ত?মানুষের স্বপ্ন বানাইলে ইঞ্জিনিয়ার হয়না?"সুকান্ত আমাকে নির্বাক করে দিয়ে ওর লাজুক হাসি হাসতে হাসতে ডাইনিং এর দিকে চলে গেল। আমার বন্ধু সুকান্ত ভুল করেছিল ভুল সময়ে জন্ম নিয়ে। সুকান্ত আরো ভুল করেছিল প্রলেতারিয়েতের রাজ এবং যৌথ খামার জাতীয় ফালতু বিষয়ে স্বপ্নদেখে। বুদ্ধিমান হলে গাড়ী-বাড়ী-নারী জাতীয় স্বপ্নই দেখতো হয়তো।

এইসব স্বপ্ন দেখতে দেখতে এমনকি স্বপ্নদোষ হয়ে গেলেও তো কেউ আমার বন্ধুটাকে অন্তত বোকা তো বলতে পারতোনা! ভাগ্যিস,আমরা সবাই সুকান্তের মত বোকা না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।