আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বালক কাহিনী

*~*জীবনে যত কম প্রত্যাশা থাকবে ... .. . তত বেশী ভালো থাকা যাবে*~* ব্লগে খালি দেখি ব্লগাররা বালিকাদের নিয়া পোস্ট লিখে....আমি জিগাই বালকরা কি দোষ করেছে কয়েকদিন আগে দুপুরে দিকে ব্লগে এসে বালিকাদের নিয়ে তিনটা পোস্ট পড়ে এফবিতে এটার কারণ জনাতে চেয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। সেখানে সবচেয়ে মজা পেয়েছিলাম এই ব্লগেরই ২ জন সিনিয়র ব্লগার ভাইয়ের মন্তব্য দেখে ....একজন বলেছেন বালিকারা যদি বালকদের নিয়া লিখতে শরমায়, নেইটাও কি বালকদের দোষ ....আরেকজন বলেছেন বালক মাত্রই কমবেশি লুল... তাদের ক্যারেকটার ঢিলা। তাদের নিয়া যত কম লিখা যায়, ততই ভালো...ও হ্যা সেই স্ট্যাটাসে আরেক বালক ভাইয়া হুমকি ও দিছে দুইদিনের মধ্যে বালকদের নিয়া জেরীপুর পোস্ট চাই। নাইলে তাকে সেই ক্ষমতাধর দুই বালিকার হাতে তুলে দেওয়া হবে .......... :-p ....যাইহোক সব বালিকাদেরই জীবনে হালকা-পাতলা বালক কাহিনী থাকে আর সেটা আমরা বালিকারা অস্বীকার করতে চাইনা বলেই বালক কাহিনী লিখা .... বড়ভাই আর আমি হোষ্টেলে চলে যাই ক্লাস সিক্সে থাকতে। হোষ্টেলে থেকে বাসায় আসতাম বড়জোর বছরে ৪-৫ বার তাও যদি বেশী দিনের ছুটি থাকতো।

হোষ্টেলের বন্দি পরিবেশে থাকতে থাকতে নিজের মধ্যে ঘরকুনো স্বভাবটা সেই ছোট বয়স থেকেই আছে...বাসায় আসার পরও তেমন একটা বাইরে যাওয়া হতনা। সারাদিন ঘরে বসে টিভি দেখা,গল্প বই পড়া আর বিকেল হলে ছাদে ঘন্টাখানেক ঘুরাঘুরি করা। আমাদের চারতলা বাসার সামনে সরকারী একটা কোয়ার্টার ছিলো। সেখানে মাঠে বিকেলে বালকরা ক্রিকেট খেলত। পোস্টে আজকে যে বালকের কথা বলছি সেই তালগাছের মতন লম্বা টিংটিংগা টাইপের বালক সবার সাথে ক্রিকেট না খেলে সাথে যে এক পুকুর ছিলো সেখানে এমনি এমনি বসে থাকত।

খেলার মাঠে এত বালকের মধ্যে একজনকে মনে রাখার কারণ ছিলো সে শীত কিংবা গরম যেকোন সিজনেই ফুলহাতা চেকশার্ট পরে থাকত...কেমন জানি কালো সবুজ আর নীলের মিশ্রণের শার্ট পড়তো। আরো একটা কারণ ছিলো হুট করেই একদিন খেয়াল করলাম সে ছাদে তাকিয়ে থাকে কিন্তু কোন টাংকিবাজি করতো না। ভাইদের রুম থেকে বাসার সামনে যে মুদি দোকান ছিলো সেখান কেউ দাঁড়ালে স্পষ্ট দেখা যেত। হোষ্টেলে থাকার সময় আমার টেবিলে না পড়ে বিছানায় বসে বসে পড়ার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিলো...এর একটা সুবিধাও ছিলো পড়তে পড়তে ৫ মিনিটের ব্রেক হিসেবে ঘুমাতাম আবার সজাগ হয়ে একটু পরেই পড়তাম। একদিন দেখি মাঠের সেই চেকশার্টওয়ালা বালক খেলার মাঠ ছেড়ে সামনের মুদি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শুরু করলো।

এভাবেই চলছে কাহিনী হোষ্টেলে চলে গেলে সেই বালকের কথা মনে থাকতো না আবার বাসায় এসে দেখলে মনে পড়ত। ব্যাপারটা সিরিয়াসভাবেও নেইনি কারণ আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে নিভা আর ইভা নামে দুই অসম্ভব সুন্দরী বোন ছিলো। আমার মনে হত সেই বালক তাদের জন্য এভাবে দাঁড়িয়ে থাকে আর তাদের মতন সুন্দরীকে রেখে আমার মতন নাকমোটা শাকচুন্নীরে পছন্দ করার প্রশ্নই আসে না ...এ ব্যাপারে ১০০% সিউর ছিলাম। প্রায় ৩ বছর পরের কাহিনী। এস.এস.সি পাশ করে বাসায় এসে কলেজে ভর্তি হলাম ।

বাসা থেকে কখনো একা ছাড়তো না। সবসময় সাথে হয় বাবা,ভাই নয়তো ছোটমামা থাকত। সকালে কলেজে যাবার সময় বাবা নিজে দাড়িয়ে আমাকে কলেজ বাসে উঠিয়ে দিত আবার কোনদিন বাস মিস করলে বাবা নিজে কলেজের সামনে নামিয়ে দিয়ে যেত। এমন করে কলেজ যাবার সময় দেখি আবার সেই বালক পিছু পিছু ফলো করছে। সম্ভবত বালক আমার চেয়ে ১-২ বছরের সিনিয়র ছিলো কারণ কলেজে যাবার সময় সেও রেডি হয়ে কলেজে যেত।

বাসে উঠে দেখতাম সেই বালক বাবার পিছনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে বাসের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। এবারতো আমি সাংঘাতিক ভয় পেলাম,কিছু বলেনা কিন্তু বোবা ভূতের মতন ফলো করা...প্রায়ই বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কেমন জানি ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াল। এমন করে আরো এক বছর কাটার পর সেকেন্ড ইয়ারে উঠার পর একদিন ছুটির পর কলেজ বাস থেকে মেইনরোডে নেমে দেখি ভাই নিতে আসে নাই। ভয়ে ভয়ে বাসায় ফেরার সময় পড়লাম চেকশার্টওয়ালা বালকের সামনে...এতটা দিন ফলো করার পর ঠিক বাসার সামনে এসে দাঁড়াতে বললো... --এ্যাই দাড়াও। তুমি কই থাকো বলতো....মাঝে মাঝে দেখি আবার মাঝে মাঝে একদমই হাওয়া (আমি চুপ।

কত্ত বড় সাহস তালগাছের মতন টিংটিংগা বালক আমারে তুমি ডাকে ) --আচ্ছা শুনো তোমারে আমার ভালো লাগে (তাও চুপ...রাগে মাথা খারাপ আবার ভয় ও পাচ্ছি বড়ভাই দেখলে বকা দিবে এটা ভেবে। বোবা ভূত আসছে তার ভালোলাগার কথা কইতে ) --আচ্ছা চুপ করে আছ কেন? পছন্দ না করো আমরা ভালো বন্ধু তো হতে পারি ? -আমার কোন ছেলে বন্ধুর দরকার নাই ...ভবিষ্যতে ও হবে না। আর আপনি আমারে ফলো করেন ক্যান? আপনারে দেখলে আমি ভয় পাই। ফলো করবেন না ,বাসায় জানলে আমি বকা খাবো (ভয়ে হড়বড় করে কথাগুলো বলে ভাগতে চাইলাম) ---আমারে ভয় পাও? কেন? তুমি কি আমারে দেখতে চাওনা ? -না দেখতে চাই না ( বলেই গেটের কাছ থেকে একদৌড়ে বাসায় চলে গেলাম) সেইদিনের আমাদের কথোপকথনটা ঠিক এমনই ছিলো। এরপর সেই বালক আমার চোখের সামনে আর আসেনি।

বাসার সামনে দোকানে দাঁড়াত কিন্তু দেখলেই লুকিয়ে পড়ত....এমনও হয়েছে আমাদের এলাকার লাইব্রেরীতে বালক বসে আছে দূর থেকে আসতে দেখলে আস্তে করে অন্যদিকে মুখ লুকিয়ে ফেলত। এই এলাকায় আমরা প্রায় ১৮ বছর ধরে এখনো আছি আর সেই বালকরাও স্হানীয় কিন্তু কয়েকবছর পরে হুট করেই দেখি সেই বালক আর নেই। তার ফ্যামিলি আছে....বন্ধুবান্ধবরাও আছে...শুধু সেই বালক তার কথা রেখেছে। আর কখনো সামনে আসেনি। ইভা আর নিভাদিরে দেখতাম মাঝে মধ্যে সেই বালকের কথা বলতে ।

কিন্তু কেন জানি আমাদের একদিনের এই বলা কথাগুলো তাদের সাথে শেয়ার করা হয়নি। এখনো এলাকাতে বালকের ২-৩ জন বন্ধুদের দেখি তারা ও দেখা হলে জানতে চায় কেমন আছি....আফসোসের ব্যাপার হলো অনেকদিন ইচ্ছাথাকা সত্ত্বে ও বালকের কথা জিজ্ঞেস করতে পারিনি,পাছে তারা ভাবে হয়ত আগে দূবর্লতা ছিলো......আরেকটা আশ্চর্যের বিষয় হলো বালকের নামটাও জানা হয়নি কখনোই। হয়ত পাশের বাসার ওরা জানে....থাক না হয় কিছু কিছু মানুষ নাম না জানা নামহীন অপরিচিত কোন মানুষের মতন...! ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।