আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পঃ যযাতিপুত্র কিংবা জীবন বিনিময়ের স্বপ্ন

আহ অমরত্ব, তোমার উষ্ণ ঠোঁটে রাখি ঠোঁট, চোখ বন্ধ করে সবটুকু আনন্দ ভোগ করি। তোমার উষ্ণতায় বারেবারে বিলীন হয়ে যাই, দিতে পারিনি কিছুই, শুধু নষ্ট করে যাই।

চোখের সামনে অনেকগুলো মুখ। সবার চোখে মুখে উৎকণ্ঠা। -বাবা, তুমি আমাদের দেখতে পাচ্ছ? আহসান উল্লাহ সবাইকেই দেখতে পাচ্ছেন।

স্ত্রী, পুত্র কন্যা সবাই আছে তার পাশে। -আহ! ছোট ছেলেটি এমনভাবে কাঁদছে কেন? আহসান সাহেব চিন্তা করেন। এক মেয়ে আর তিন ছেলে তার। প্রতিটা সন্তানের জন্ম, বড় হওয়া। কত গল্প, কত আনন্দ লুকিয়ে আছে প্রতিটি পরতে পরতে।

বড় ছেলেটি যখন জন্ম নিল, তখন বলতে গেলে তার দুঃসময়। চাকরী নেই, সংসারে অভাব, এর মধ্যে বড় ছেলের জন্ম। ছেলেটা অবশ্য তার জন্য সৌভাগ্য নিয়ে এসেছিলো। -বাবা, এখন কেমন লাগছে? দেখো মা কেমন কান্নাকাটি করছে। তুমি আমাদের ছেড়ে যেতে চাও কেন বাবা? আহসান সাহেবের দু চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।

এই ছোট্ট মেয়েটি কিভাবে বড় হয়ে গেল তা বুঝতেই পারেননি তিনি। মেয়েটির আবার একটি ছোট্ট ছেলেও আছে। নানাভাই বলে যখন সে কোলে ঝাপিয়ে পরে, তখন আহসানের সাহেবের আরও অনেকদিন বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে। আহসান সাহেব তার স্ত্রীর দিকে তাকান। কত আনন্দ এবং দুঃখ ভাগাভাগি করে তারা কাটিয়ে দিয়েছেন এতগুলো বছর।

না তার পক্ষে এদের মায়া কাটানো সম্ভব নয়। এদেরকে রেখে চলে যেতে হবে , তা তিনি ভাবতেই পারছেন না। বেঁচে থাকাটা আসলেই আনন্দদায়ক। আহসান সাহেবের বাবা মারা যাওয়ার আগের দিকের দিনগুলোতে শুধু ঘড়ির দিকে তাকাতেন। আহসান সাহেব কে তার বাবা বললেন, - আহসান, আমার জন্য একটি পেন্ডুলাম যুক্ত ঘড়ি নিয়ে আসিস তো।

-পেন্ডুলাম ঘড়ি দিয়ে তুমি কি করবে? -সময়ের শব্দ শুনতে চাই। সময়ের একটা নিজস্ব জীবন আছে। -ঠিক আছে এনে দেবো। পেন্ডুলাম ঘড়ি টা এখনো আছে। আহসান সাহেব এখন সময়ের শব্দ শুনেন।

আহ! কি আনন্দদায়ক এই শব্দ। -বাবা। ছোট মেয়েটা তাকে ডাকছে। না, তার খুব বাঁচতে ইচ্ছে করছে। রাজা যযাতি তো তার ছেলেদের কাছ থেকে অল্প করে জীবন নিয়ে বেঁচে ছিলেন।

তিনি কি পারেন না তার ছেলে মেয়ের কাছ থেকে অল্প অল্প করে তাদের জীবন নিতে। আহসান সাহেব, তার ছেলে মেয়েদের থাকতে বলে সবাইকে বাইরে যেতে বললেন। -তোমরা আমার সন্তান। তোমাদের আমি ছেড়ে যেতে পারবোনা। তোমরা কি তোমাদের জীবন থেকে কয়েকটা দিন আমাকে দিতে পারবে? -বাবা, তুমি চুপ করে শুয়ে থাক তো।

-তোমরা বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নাও। আমার হাতে আর বেশী সময় নেই। আহসান সাহেবের চার সন্তান, সবাই চুপ করে আছে। বড় ছেলে অবশেষে মুখ খুলল, -দেখ, বাবা এমনিতেই অসুস্থ, আর তার বয়সও হয়েছে। এখন তোরা কি করবি বল।

-হ্যা, বাবার বয়সও তো অনেক। -আর সবাই তো মারা যাবে, আজ না হয় কাল। -বাবার শেষ সময়টাতে যেন কষ্ট না হয়। -আর বাবা যেটা বললেন সেটা সম্ভব নয়। আহসান সাহেবের চার সন্তান, তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।

আহসান সাহেব বুঝতে পারছেন তার সময় শেষ হয়ে আসছে। তিনি তার সন্তানদের দিকে তাকালেন। সবার মাথা নিচু হয়ে আসছে। আহসান সাহেব তার স্ত্রীর হাত ধরলেন। অনেক দিনের পরিচিত হাত।

দূর হতে ঘড়ির শব্দ ভেসে আসছে। আহসান সাহেব সময়ের শব্দ শুনছেন। সময়েরও তাহলে জীবন আছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।