আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পঁ্যারীচাঁদের রহস্য উন্মোচন : অন্ধকারে ফিতা...(2)

সযতনে খেয়ালী!

ঢাকা এয়ারপোর্টে নেমেই পি সি মিত্তিরের চোখে পড়লো বারমুদা খানের এদিক সেদিক ইতস্তত: ছোটাছুটি। "ব্যাটা ছাগলের মতো এদিক ওদিক দৌড়ায় ক্যান খালি?" - কাদেরের কৌতুহলী জিজ্ঞাসা মিত্তিরের কান এড়ায় না। "এইটা বুঝলেতো তুমি আমার জায়গায় থাকতা আর আমি বারমুদার জায়গায়। যার যে কাজ সে সেটা করবেই। ছোটবেলায় 'উত্তম ও অধম' কবিতাটা পড়ো নাই!" কাদের ঠোঁট উলটে নেগেটিভ নিদর্শন প্রদর্শন করে।

আসলে মিত্তির নিজেও যে কবিতাটা খুব করে পড়েছে এমন নয়। খালি পরীক্ষা পাশের জন্যে কয়েকটা লাইন মনে আছে, এই যা! তারপরেও কোনমতে টেনেটুনে 33 ছিল বাংলায়। এই নিয়েই বাহাদুরী সহযোগী কাদেরর সাথে। এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল হয়ে সোজা কুলবিল বেগমের খাস কামরায় গিয়ে হাজির হলো পি সি মিত্তির, এস আই কাদের এবং তাদের বাংলাদেশ এজেন্ট বারমুদা খান। সন্ধ্যা তখন হয় হয়।

কাহিনী বেড়াছেড়া অবস্থা। কুলবিল খালি মূর্ছা যায়, দুই মূর্ছার মাঝখানে একটা করে গানের কলি আওড়ায়। "অ প্রিয়া অ প্রিয়া আপনে কোথায়...." এটা কেবল শুনে মনের কোনে তাল ধরেছে মিত্তিরের, অমনি বেটি ধপাস করে গেলো পড়ে। মনে মনে কুলবিল বেগমের বংশ উদ্ধার করে যন্ত্রনা মুক্তির ক্যান খুলে ওখান থেকে ঘটঘট করে তিন ঢোঁক অরেঞ্জ জু্যস গলায় চালান করে বল্লেন, "দোনে মোয়া লু্য তঁ্য"। কাদের আমার সাথে আসো।

"জ্বী মামা..." "উফফো মুর্খ, কতবার কইছি কামের মাঝে মামা ঝামা কইবানা। তুমি বয়রা নাকি মিয়া। আর মুসলমানের পোলা, দাড়ি কই তোমার?" "ইয়ে মানে, মুই না হয় ভুল একখান কইচ্চি, তাই বইলা আফনে কি আঞ্চলিক ভাষায় কতা কইবাইন? আর আফনেও তো মুসলমানের ছাওয়াল। নামডা তো নিছেন মাশাল্লাহ নাছারাগো। অহন বুইল্লেই তো বুইলবেন যে বুইলছে..." "আরে কেৎ কইরা উঠো কেন মিয়া? এডা হইলো গোয়েন্দাগো স্টাইল।

নামের বাহার থাকা লাগে। দেহো না আমার বগলের তলের "গাব্রিয়েল মগাদিশু চৌরাসিয়া ও তুখোড় দুধখোড়" বইটা যারে নিয়া, সেই মগাদিশু কি আসলেই মগা মনে করছো তুমি? এইখানে অনেক পলিটিক্স আছে বুঝলা? আর ল্যাঙ্গুয়েজের ব্যাপারটাও অনেকটা ঐরকমই। নাইলে আমি কি হুদাহুদি ই খাঁটি ফ্রেঞ্চ মাইরা দিলাম ভাবছো? শুদ্ধ হয় নাই, এটাতো তুমি যানো, বারমুদা বা কুলবিল বেগম তো আর জানে না..."। এবার সশব্দে দুজনেই মুহাহাহাহা করে হেসে উঠলো। এর মানে কাদের তৃতীয়বারের মতো তার ওস্তাদ পি সি মিত্তিরের কোথার গূঢ় তত্ব ধরতে পেরেছে।

হাসি শেষ করেই মিত্তির খেয়াল করলো জানালার ওপাশে কে যেন চুপিসারে ওদের জমকালো আলাপ শুনে ফেলেছে। মিত্তির ওদিকে তাকিয়েছে আর অমনি অাঁধার ঠেলে একটা মুর্তি অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে....। খানিক দুরে গিয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই মিত্তির খেয়াল করলো, লোকটার কিছুই দেখা যায় না, কেবল দাঁত ছাড়া..... কুলবিল বেগমের এপার্টমেন্টের তিন তলায় একই রুমে থাকার ব্যবস্থা হলো গোয়েন্দাদের। রাত দশটা বাজতেই বারমুদা খানের নাক ডাকার ঘড়ঘড় শব্দ কানে এলো। "গাব্রিয়েল মগাদিশু চৌরাসিয়া ও তুখোড় দুধখোড়" - এর 56তম পৃষ্ঠা পড়তে পড়তে কাদেরেরও সাড়া শব্দ পাওয়া গেলো না আর।

হঠাৎ করেই রাতের নি:স্তব্ধতায় পি সি মিত্তিরের কানে এল কে বা কারা যেনো ফিস ফাস করছে। পা টিপে টিপে সিড়ি গলে নিচে নেমে গেলো মিত্তির, হাতে দেড় ব্যাটারীর একটা টর্চলাইট এবং পুরাতন আমলের পয়েন্ট টু টু বোরের একটা জং ধরা পিস্তল। ফিস ফিস অনুসরণ করে মিত্তির সোজা বাগানে এসে দাড়ালো, খানিকটা আড়ালে। শিকলের দোলনায় হাবশী চিমু আর কুলবিল বেগম দিব্যি কথা বলে যাচ্ছে। "তুমি আমার জানের জান, পরাণ পরাণ, তুমি বিনে ক্যামনে বাঁচি আমি বলো? চলোনা সখি যাই জলসা ঘরে, তোমার ঐ নাচের তোড়ে মন-প্রাণ আমার জানি ক্যামন ক্যামন করে...।

" "যাহ্ দুষ্টু...." কুলবিল বেগমের খিলখিল হাসি...। বিন্দু মাত্র টু শব্দ না করে মিত্তির ফিরে এসে শুয়ে পড়লো তার বিছানায়। এতো তারাতারি প্রথম কেসের সমাধান করে ফেলবে ভাবেনি মিত্তির! সকালবেলা কুলবিল বেগমকে ডেকে মিত্তির বল্লো, "শোনেন ম্যাডাম, আপনার চিঠি চুরি করেছে হাবশী চিমু। কারণ ও চায় আপনি পুরাণ দিনের কথা মনে করে যাতে কষ্ট না পান। ও আপনাকে ভালোবাসে, আপনারো উচিৎ তার আবেদনে সাড়া দেওয়া।

যা গেছে তা গেছে.... বুঝতে পারছেন আমি কি বলছি"? "অ আমার হাবশী চিমু রে......." বলেই আবার চিৎপটাং কুলবিল বেগম। তারাতারি ফিরতে হবে কাজের জায়গায়। এয়ারপোর্টে বিদায় নেবার ঠিক আগে মিত্তির খেয়াল করলো বারমুদার মন খারাপ। কি যেন বিড়বিড় করছে। কাছে গিয়ে শোনা গেলো গান গাইছে, "মনে প্রেমের বাত্তি জ্বলে, বাত্তির নিচে অন্ধকার, এই জীবনে চাইলাম যারে হইলোনা সে আমার..।

" প্লেনে উঠে কাদের বল্লো, মামা চিঠিটা আসলে চুরি করেছে আমাগো বারমুদা। কারণ হেয় কুলবিল বেগমরে বিলকুল ভালোবাসে...."

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।