আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পঁ্যারীচাঁদের রহস্য উন্মোচন : অন্ধকারে ফিতা......

সযতনে খেয়ালী!

-[ এই রহস্য ধারাবাহিকের সব চরিত্র, ঘটনা, রটনা, পাত্র-পাত্রী, সহযাত্রী কাল্পনিক এবং অলীক। যদি কোন দৈব কারণে কারো সাথে, কিংবা কোন ঘটনা-রটনার সাথে এরা মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় তাহলে.... সেন্টু খাওয়ার কোন কারণ নেই। এটা নেহায়েৎ-ই একটা রহস্য গল্প ]- কনকনে ঠান্ডা রাত। চারদিক নির্জন, নি:স্তব্ধ। অদূরে গীর্জার বেসুরো ঘন্টিটা ঢং ঢং করে তিনবার বেজে রাত তিনটা বাজার সংকেত দিল।

বাইরে রাস্তায় কোথাও কঁ্যাচর কঁ্যাচর শব্দ তুলে ঘোড়ার গাড়ি এসে থামলো। অবশ্য শব্দটা গীর্জার পাশের সিমেট্রী থেকেও এসে থাকতে পারে। কে জানে, হয়তো কোন অতৃপ্ত আত্মা, নিজেকে তৃপ্ত করার প্রয়াসে এই মধ্যরাতে কবরের ভারী পাথরের চাঁই তুলে বেরিয়ে আসছে! পঁ্যারীচাঁদ মিত্তির ওরফে পি. সি. মিত্তির উবু হয়ে নিজের ঘরের টেবিলটায় গত সন্ধ্যায় যোগার করে আনা ক্লু-স্প্যাসিমেন গুলো দেখছেন। মুখের কোনায় ঝোলানো পাইপ। মাথার তে-কোনা টুপিটা পাশে রাখা....।

কঁ্যাচর কঁ্যাচর শব্দে তাঁর তেমন মনোযোগ নেই, ঘোড়ার গাড়ি থামলো না গাধার গাড়ি তাতে তাঁর কিছুই এসে যায় না। "নাহ্, শালা 'এল বাবা দমদম' খুব চতুর। কঠিন কোন ক্লু-ই পিছনে রেখে যায় নি। এর চেয়ে অবশ্য 'ফোঁটাস অনলিমিটেড' অনেক ভালো। যদিও অনেক সেয়ানা মাল, কিন্ত পিছনে অনেক ক্লু রাখে।

" - - নিজের মনেই বলে উঠলো পি. সি. পিত্তির। চোখ ঘোরাতে ঘোরাতে কিছু একটা মালুম হয়েছে, ঠিক অমনি পাশের কাঠের দেয়ালে খটাশ করে একটা চাকু এসে গেঁথে গেলো। গোয়েন্দাদের ভয় পাবার নিয়ম নেই, তাই হার্ট কয়েকটা বিট মিস করার পরেও পি.সি. মিত্তির নিজেকে সামলে নিল। যথারীতি চাকুর মাথায় একটা চিরকুট। মনে মনে হাসলো মিত্তির, ওর মতো দুঁদে গোয়েন্দারা 'চাক্কু-চিরকুট' হুমকি না পেলে কি চলে? "স্নেহের পি.সি. আমার পিছনে লাগতে এসো না।

আমি আজকে ইউরোপে তো কাল আরবে, পড়শু হয়তো একেবারে পূবে। আমাকে কি তুমি পাবে? আমার শেকড়ে অনেক শক্তি, অনেক বিস্তৃত.... এত সহজ না আমাকে বের করা, এটা তো টের পেলেই। একটু আগে কঁ্যাচ কঁ্যাচ করা ঘোড়ার গাড়িটাতে আমি ই ছিলাম। আর কালকে তোমার হাতে যে দাড়িওয়ালা ভদ্্রলোক ক্লু গুলো তুলে দিল সেটা যে আমিই ছিলাম এটাও বলে দিতে হবে? তোমাকে আমি স্নেহ করি....। তোমার শুভ কামনায়, এল বাবা দমদম " চিরকুট টা পড়ে দৌড়ে জানালায় উঁকি দিয়ে কোন ঘোড়ার গাড়ির টিকিটিও খুঁজে পায় না পি সি মিত্তির।

টেবিলের কাছে ফিরতে যেয়ে কার্পেটের উঠে ুযাওয়া সূতায় পা আটকে ধপাস করে মেঝেতে, "আওয়া..." সুললিত ললনার বিগলিত কণ্ঠে মোবাইলের রিঙার বাজছে, "ছাইয়া দিল মে আনা রে....."। গানটা ডাউনলোড করা 'মারথাবা-করচুরি ডট কম' নামক ওয়েব পাতা থেকে। ঘুম জড়ানো গলায় হ্যালো বলতেই বুঝলো ওপাশ থেকে তাঁর সহকারী এস. আই. কাদের। কাদেরের ঘ্যাণ ঘ্যাণ খানিক শোনার পর মিত্তির বল্লো, "কাদের তুমি ঘন্টা খানেক পরে আমার এখানে আস। ডিটেইলস কথা বলা যাবে।

ফোনে এতো কথা বলা ঠিক না। গোয়ান্দা হইতে হইলে অনেক কিছু কনসিডার করা লাগে, ওভার এন্ড আউট" তাহলে এতোক্ষন স্বপ্ন দেখছিল শখের বশে গোয়েন্দাগিরি করতে চাওয়া পি সি মিত্তির। হুমম, যাইহোক, এল বাবা দমদমের হাতের লেখাটা স্বপ্নে হলেওতো দেখেছে। আর এই ব্যাটা যেরকম আপার-গ্রাউন্ড ডন, কোন না কোন একটা কেস পেয়ে যাবেই মিত্তির। ভাবতে ভাবতে বেড টেবিল থেকে পাইপটা মুখের কোনে ঝুলিয়ে নিল মিত্তির।

পাইপ থেকে কোন ধোঁয়া উঠছে না। আগুন নিভে গেছে এমন নয়, আসলে পি. সি. মিত্তির ধুমপান করেণ না। কলেজে একবার ট্রাই দিয়েছিলেন, চাঁন-তারা সিগারেটে একটা টান দিয়ে পরবর্তি সাড়ে তিন ঘন্টা খুক খুক করেছেন। কিন্ত শখের গোয়েন্দা হয়েছেন, মুখের কোনে পাইপ, পকেটে যন্ত্রণা মুক্তির স্টিলের ক্যান না থাকলে কি জমে! তাইতো অকশন মার্কেট থেকে কেনা খুব সুন্দর একটা পিতলের জারের ভিতর অরেঞ্জ জু্যস নিয়ে ঘোরেণ। একবার কয়েক ঢোঁক বিয়ার গিলেছিলেন।

তার প্রভাবে সূর্যের রাঙা আলোয় নাঙা হয়ে শহরময় দৌড়ে বেরিয়েছেন। হুঁশ হবার পর কান ধরেছেন, আর কোনদিন পাগলা পানি ছোবেন না। কিন্ত গোয়েন্দা বলে কথা, তাই কন্টেইনারে জু্যস নিয়ে ঘোরেণ, কেউ তো আর জানছে না োড় ভেতর কি আছে। লোকজন দেখলেই ভাব নিয়ে পিতলের কন্টেইনার বের করে কয়েক ঢোক...। দরজায় প্রবল কষাঘাতের আওয়াজ।

নির্ঘাৎ কাদেইরা...। খুলে দিতেই হাঁপাতে হাঁপাতে এসে কাদের শুরু করলো, "মামা...." উফফো... বলেছি না অফিসে মামা বলবা না! অফিস কই এটাতো বাসা। অই হলো, কাজটাতো অফিসিয়াল। যাইহোক, এিবার বলো, নো মামা টামা...। বলছিলাম কি, আমাদের এজেন্ট বারমুডা খান ওরফে বি.আর.সি. খান সকালে আই আর সি তে জানালো একটা কেস পাওয় গেছে।

জনৈক কুলবিল বেগমের জীবনের এক এবং একমাত্র প্রেমপত্র টা কে বা কারা যেনো রাতের অন্ধকারে ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। বেচারী এখন একবার সেন্স ফিরে পায় তো সাড়ে দুই মিনিট পরেই আবার সংগা হারায়। খুব কষ্ট পেয়েছে জীবনের এক মাত্র প্রেম পত্রটি হারিয়ে। কেউ কোনদিন প্রেম নিবেদন করেণি বলে খুব কষ্টে ছিল বালিকা। আই আর সি-র যুগে কোন এক মহীয়ান তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।

একটা প্রেম পত্র লেখে রাত জেগে জেগে, "দেড় ঘন্টায় প্রেম পত্র লিখুন" নামক বই থেকে চোথা মেরে মেরে। পত্র খানি পেয়ে কুলবিল বেগম সেন্স হারিয়ে ফেলে। "মিরকী বেরাম আছে মনে হয়", মিত্তিরের যোগিশন। কিন্ত ঘটনা ঘটলো অন্য জায়গায়। এস আই কাদের বলে চলে, পত্র পাঠানোর পর কুলবিল তার খোমা সম্বলিত ফটুক পাঠালো সেই মহীয়ান বরাবর।

ফটুক দেখে টাশকি খেয়ে মহীয়ান মনের দু:খে জঙলে চলে গেছে হাতে একতারা আর গায়ে গেরুয়া জড়িয়ে। এদিকে কুলবিল বেগম এথায় মাথা ঠুঁকে তো সেথায় পা দিয়ে কিক দেয়। কিন্ত মহীয়ানের হদিস আর পায় না। শেষ পর্যন্ত প্রেম পত্র খানি মামা-ভাতিজা জুয়েলার্স থেকে নকল সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে এনে টাঙিয়ে রাখে নিজের শিথানের কাছে। কাল ঘুমুতে যাবার আগেও সেটা নাকি যথাস্থানে ছিল।

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে পত্রে মাথা ঠুঁকে "রুটিন বিলাপ" করতে গিয়ে কুলবিল বেগম বুঝতে পারে পত্রটা বিলকুল হাওয়া...। তারপর থেকে নাকি প্রতি দেড় মিনিট পরপর সেন্স আসে আর যায়, যায় আর আসে....। গাউনের ভেতর থেকে যন্ত্রণা মুক্তির পিতলের ক্যানটা বের করে কয়েক ঢোক অরেঞ্জ জু্যস চালান করে মিত্তির। কাদের শুকনা ঢোক গিলে....। "জট্টিল কাহিনী কাদের।

লেটস মুভ টু সলভ আওয়ার ভেরী ফার্স্ট প্রবলেম, "মিশন : দ্যা লস্ট লেটার অব কুলবিল বেগম"। বাইরে অন্ধকার কেটে আলো ফুটছে একটু একটু করে, টিকিট তো এস আই কাদেরকেই কাটতে যেতে হবে। দ্যাশে যাবে এর চেয়েও বেশি কাজ করছে এসিস্ট্যান্ট গোয়েন্দা হয়ে "মিশন : দ্যা লস্ট লেটার অব কুলবিল বেগম" সলভ করার উত্তেজনা...। -:দৌড়াবে:-

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।