অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
এরিখ মারিয়া রেমার্কের উপন্যাস পড়ে একটানা লিখে যাওয়া অনুভব, যুদ্ধের চেয়ে মানবিকতা বড় এই অনুভবের জন্ম হয়েছিলো থ্রি কমরেডস, অল কোয়াইট ইন দ্যা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট আর স্বপ্ন,মৃতু্য ও ভালোবাসা কিংবা এমন নামের কোনো একটা উপন্যাস পড়ে। অবশ্য প্রাথমিক লেখাটা সম্পুর্ন খুঁজে পাওয়া গেলো না তাই অসম্পুর্ন মনে হচ্ছে......
ভনিতা ছেড়ে সরাসরি লিখে ফেলা যাক- ফ্লাডিং হলে হবে।
তওমাকে একদিন আমার শুন্যতার গল্প শোনাবো,
তোমাকে একদিন শোনাবোজ্জলোচ্ছাসের স্বর
যখন নির্জিব,নিস্পন্দ বসে থাকি সেই জলোচ্ছাসের স্বর আচ্ছন্ন করে আমাকে,
তোমাকে একদিন ধুঁধুঁ তেপান্তরের দৃশ্য দেখাবো যেখানে সারি সারি এপিটাফ,বন্ধুর কবর,ভীষন একঘেয়ে শুন্যতা খাবি খেতে খেতে ক্যামোন গড়িয়ে যাচ্ছে দিগন্তের দিকে।
তোমাকে একদিন এক রাত্রি নিবিড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে রাখবো অন্ধকার মুড়ে
আমার ভেতরের অন্ধকার
আমার ভেতরের ঘর
আমার ভেতরের খাদ
আমার ভেতরের শুন্যতায় আছড়ে পড়া স্মৃতির ভয়াবহ স্রোত........
যুদ্ধ এখন বিগত দিনের গল্প অথচ প্রতিটা যুদ্ধাবসান নতুন যুদ্ধের শুরু
আমরা জীবনের পথে ফিরে আসছি
অপমৃতু্য আর ভুল মৃতু্যর স্মৃতি ভুলে
নারকীয় বীভৎসতার দৃশ্যগুলো গোপনে রেখেই আমরা যার যার ঘরে ফিরছি।
আমরা কেউ বাড়ীর ছোট ছেলে, কেউ বড় ভাই, কেউ মায়ের চোখের মনি
অথচ যুদ্ধক্ষেত্রে আমরা সবাই, আমরা সবাই াশ্চর্য জীবন্ত, আর অবাক করা সত্য হলো তখন আমরা সম্মিলিত ভাবে শুধুমাত্র একটা আদর্শ...... একটা লক্ষ্য...
আর তখন আমরা সবাই অন্ধ, আর তীব্র জীঘাংসায় পরস্পরের দিকে বুলেট ছুড়ছি, বৃষ্টির মতও মৃতু্যদুত..।
আর আমাদের একেকটা গল্প মৃতু্যর মতোই অস্বাভাবিক শীতল আর রোমাঞ্চকর আর একটানা কান্নার মতো...
একটা মৃতু্যকূপে মৃতু্যর প্রতীক্ষা শেষে যখন আমরা ফিরেছি,পিচে ফেলে এসেছি মর্টার শেল, বুলেটের খোসা, বন্ধুর প্রাণ আর প্রাণহীন বন্ধুর শব কাঁধে কয়াম্পে ফিরেছি। সেইসব তারাজ্বলা রাত,যেসব রাতে মৃতু্য তাড়া করছে আমাদের, আমরা প্রাণভয়ে লুকাচ্ছি গর্তে নর্দমায়, যে যেখানে পারছি আড়াল খুঁজে নিচ্ছি আর পৃথিবী তার অবাক করা সৈন্দর্য মেলে অশ্ল ীল বসে আছে.....
অথচ বিস্তৃর্ন যুদ্ধক্ষেত্রে বসে আমরা আকাশ দেখি নি, আমরা বহুদিন ঝর্নার গান শুনি নি, বৃষ্টির সারগম শুনে ঘুমাতে যাই নি, আর গত শীতে যখন এক ঝাঁকসাদা হাঁস তাদের ডানায় ঢেকে দিয়ে চাঁদকে উড়ে গেলো পশ্চিমে সেই অবশ করা সৈন্দর্যের মধ্যে দেখেছি আকাশে দলবেধে উড়ে যাচ্ছে, চাঁদ ঢেকে উড়ে যাচ্ছে গরম হাঁসের রোস্ট...
আর প্রতিটা চন্দ্রোদয় আমাদের জন্য অনাকাংক্ষিত প্রতিটা পূর্নিমা মৃতু্যর বিভীষিকা নিয়ে ...
আর সেই অশ্চর্য আলোর নীচে মৃতু্যর সাথে সহবাস, আর কান পেতে বুলেটের শীষ শুনে ঘুমাটে গিয়েছি, আর বৃষ্টির মাদল বেজেছে সারারাত, আমরা ঘুমাতে পারি নি..।
আর ঝর্নার মতো রক্তস্রোত ঠেলে, সাঁতরে আমরা প্রায়ই ক্যাম্পে ফিরে এসেছি, কোনো দিন সবাই আবার কোনো দিন পথেই ফেলে এসেছি বন্ধুকে, আর বৃষ্টি আর বুলেট বৃষ্টির মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে কোনো মতে বন্ধুে অবশেষ নিয়ে সারারাত মাতম করেছি
প্রায় বর্বর জীবন ছিলো আমাদের আর এই ক্ষনিকের বেঁচে থাকা, এই মৃতু্যময় বেঁচে থাকার ফাঁকে ফাঁকে ভালোবাসা ছিলো।
আমরা সবাই মৃতু্যর চাদর মুড়ে ঘুমাতে গিয়েছি,আমরা সবাই মৃতু্যর আশ্বাস নিয়ে জেগে উঠেছি আর আমরা সবাই জানতাম মাত্র একটা বুলেট, মাত্র একটা বুলেটেই লেখা আছে আমাদের নাম আর জানতাম আমরা সবাই যাবো, কেউ আগে কেউ পরে, তবে আমাদের মৃতু্য হবে বুলেটের শীষে আমরা জানতাম,
তাই যখন বন্ধুকে কবরে শুইয়ে রেখে পরদিন ভোরে নতুন ভাবে ট্রেঞ্চে মাথা গুঁজে ভাবছি কে কে গেলো, তখন অবাক লাগতো ভেবে এখনও বেঁচে আছি, আর বন্ধুরাও আশেপাশে আছে
আমরা পাশাপাশি প্রতীক্ষায় আছি, কেউ মাটির উপরে আর কেউ মাটির গভীরে,
আমরা এক বেলচা মাটি েলতাম আর বলতাম"তোরা যা, আমরাও আসছি.."
অথচ এমন চোরাবালির মতো শান্তি এলো যখন, যখন শুনলাম যুদ্ধ শেষ, যখন জানলাম এতগুলো মৃতু্যর বোঝা নিয়েই, এতগুলো রক্তপাতের স্মৃতি নিয়েই,আর এত ভুল মৃতু্যর অপরাধবোধ নিয়েই আমাদের যাবজ্জিবন নরকবাস,
আর বন্ধুরকবর পেছনে ফেলে আমরা ফিরে এসেছি, জীবনের পথে, আমরা যে যার ঘরে ফিরে এসেছি, আর সেই সব পরিচিত গর্ত, সেসব নর্দমা, আর সেই সব বন্ধুরা যারা এখনও ওখানে শুয়ে আছে,মাথার উপরে তারার ছাউনি আর অশ্ল ীল রাত..... অথচ তারা জীবনের এই আয়োজনে অনাহুত, জীবনের কোনো আলোড়ন আর স্পশর্্ব করবে না ওদের
আর এই শান্তির চোরাবালিতে ডুবে যেতে যেতে আমরা যখন বলছি জীবন আসলে ফ্যাকাশে, এভাবে মৃতু্যর প্রতীক্ষায় প্রায় স্থবির জীবনযাপনে সেই জ্বলে উঠার আনন্দ নেই
ভীষণ মন্থর এই জীবনটাকে রাস্তা হাঁটিয়ে ফিরতে হয় ঘরে, তারপর সেই বিছানায় শুয়ে আবার প্রতীক্ষা,
সেই খোলা আকাশের নীচে একটা ঘরের স্বপ্ন দেখতাম আমরা আর বাব-মার প্রায় অস্পষ্ট মুখটা ভেবে শান্তি পেতাম,
এখন যুদ্ধাবসান মানেই নতুন যুদ্ধের আয়োজন, এখন একটা রাত্রিবসান মানেই একটা দিনের শুরু সেই একই রকম এক ঘেয়ে নিরুত্তাপ দিন...
সেই একই রাস্তা, একই মুখ, সেই একই জনস্রোত ঠেলে খাবার লাইনে, সেই একই রকম জোচ্চুরি, আর প্রতিযোগীতা
শান্তির ভেতরে এত বেশী গোপন যুদ্ধ থাকে।
ভালোবাসাবাসিহীন এইসব নির্জ ীব দিন আমাকে ক্লান্ত করে, ভালোবাসাবাসিহীন শান্তিচাদরে ঢাকা অবিরাম যুদ্ধায়োজন আমাকে ভীষন ভাবে ক্লান্ত করে।
শান্তির নিস্তরঙ্গ আড়ালে অবিরাম ক্ষরণ ,খনন আর গোপন রক্তপাত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।