আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আইনের যথার্থ প্রয়োগের অভাবই বিচার প্রার্থী ও সাক্ষীদের হয়রানির মূল কারণ

সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে গেছে। তখনও ৫নং বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সামনে বিচারপ্রার্থীদের ভিড় লেগে আছে। আজকে ‘রাষ্ট্র বনাম শহীদুল্লাহ মাস্টার’ মামলার রায় ঘোষিত হবে। সুন্দরবন অঞ্চলে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী ও বহুল আলোচিত মামলা এটা। পাইকগাছা অঞ্চলে শহীদুল্লাহ মাস্টার সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি।

লালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনি প্রধান শিক্ষক। এলাকার সকলের কাছেই তার মতামত ও সিদ্ধান্ত শিরোধার্য। সেকারণেই ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে স্থানীয় জনগণ তাকে সদস্য পদে মনোনয়ন দেয় এবং নির্বাচিত করে। এলাকাবাসীর দাবী এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা, চুরি ডাকাতি বন্ধ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় শহীদুল্লাহ মাস্টার। নীতিবাদীএই শিক্ষাবিদ জনগণের আশা আকাংখা পূরণে ব্রতী হলেন।

সুন্দরবন অঞ্চলের অধিবাসীগণ চোর ও ডাকাতদের উপদ্রবে অতিষ্ট। মাওয়ালী ও বাওয়ালীরাও চাঁদাবাজদের দ্বারা প্রতিনিয়ত নিগৃহীত হচ্ছে। ডাকাত দলের সর্দার দুলাল ঢালী। তার নাম শুনলেই আঁতকে উঠে মানুষ। যুবতীরা নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে যায়।

তার বদ-নজর পড়লে কারো রেহাই নাই। এলাকাবাসী মনে প্রাণে চায় এই দুধর্ষ ডাকাতের দমন। সে আবার শহীদুল্লাহ মাস্টারের ছাত্র। শিক্ষক হিসেবে স্বভাব সুলভভাবেও চেষ্টা করলেন এই দুর্ধর্ষ ডাকাত সর্দারকে পথে আনতে কিন্তু তার সকল সৎ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো। ব্যথিত হলেন শহীদুল্লাহ মাস্টার, ছাত্রের এই অধঃপতন দেখে।

একে যথারীতি আইন মোতাবেক আদালতে সোপর্দ করতে অপারগতার কারণে পুলিশ বাহিনীও প্রতিনিয়ত জনগণের কাছে সমালোচিত হচ্ছিল। কিন্তু জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া তাদের পক্ষে এই ডাকাতের সঠিত অবস্থান চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছিল না। তারা এবার নব-নির্বাচিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি শহীদুল্লাহ মাস্টারের সহায়তা চাইলো। মাস্টার সাহেব বিবেকের দংশনে প্রতি নিয়ত দংশিত হচ্ছিলেন তারা এই সাবেক ছাত্রকে নিয়ে। তিনি পুলিশকে সার্বিক সহায়তা দিতে রাজি হলেন।

কিছুদিনের মধ্যেই ডাকাত সর্দার দুলাল ঢালী আগ্নেয়াস্ত্রসহ সদল বলে পুলিশের হাতে ধরা পড়লো। অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের হলো । বিচার অন্তে দুলাল ঢালী ও তার সঙ্গীগণ যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হলো। গোটা অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হলো শান্তি। এই কৃতিত্ব শহীদুল্লাহ মাস্টারের।

তাই মুখে মুখে এই শিক্ষাবিদ জনপ্রতিনিধির সুনাম ছড়িয়ে পড়লো। কিছুদিন যেতে না যেতেই সবাই বিস্মিত হলো শহীদুল্লাহ মাস্টারের কর্মকান্ড দেখে। তিনি এক তরুনীকে ধর্ষণ করতে গিয়ে ধরা পড়লেন। তাও হাতে নাতে। যার নীতিবোধ, নৈতিক চরিত্রের সুনাম প্রশ্নাতীত তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ জনগণকে বিস্মিত করার সাথে সাথে করে হতাশ।

তারা আর কাকে বিশ্বাস করবে। শহীদুল্লাহ মাস্টারের বিরুদ্ধে ‘নারী নির্যাতন(নিবর্তক শাস্তি)অধ্যাদেশ’ অনুসারে ধর্ষণের অভিযোগ আনীত হলো। বিধি মোতাবেক তদন্ত হলো। দাখিল হলো অভিযোগনামা। এই আইনের অধীনে আনীত মামলার বিচার ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন’ অনুসারে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার্য।

দায়রা জজ পদাধিকার বলে জ্যেষ্ঠ বিশেষ ট্রাইব্যুনাল হিসেবে এই আইন অনুসারে দায়িত্ব পালন করেন। নিজ এখতিয়ারাধীন দায়রা বিভাগে অর্থাৎ জেলায় একমাত্র তিনিই অভিযোগ আমলে নেবার এখতিয়ার রাখেন। তিনি মামলার বিচার নিজে করেন অথবা তাঁর দায়রা বিভাগে কর্মরত অন্যকোন ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করেন। অতিরিক্ত দায়রা জজ এবং সহকারী দায়রা জজ( বর্তমানে যুগ্ম দায়রা জজ)গণ নিজ নিজ এখতিয়ারাধীন দায়রা বিভাগে পদাধিকার বলে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাধারণত পদ মর্যাদা ও জ্যেষ্ঠতা অনুসারে ট্রাইব্যুনালগুলো চিহ্নিত করা হয়।

বিজ্ঞ জ্যেষ্ঠ ট্রাইব্যুনাল অভিযোগনামসহ নথিপত্র পর্যালোচনা করে আসামী শহীদুল্লাহ মাস্টারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আমলে নিলেন এবং মোকদ্দমাটি বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৫এ প্রেরণ করলেন। এই ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বে আছেন একজন তরুন সহকারী দায়রা জজ। সততা, সাহসিকতা ও নিরপেক্ষতার জন্য যথেষ্ট সুনামের অধিকারী এই বিচারক। আসামী শহীদুল্লাহ মাস্টারের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ গঠন করলেন। আসামী নিজেকে নির্দোাষ দাবী করে বিচার প্রার্থনা করলো।

বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্য গ্রহণ করলেন। আসামীর কাছে জানতে চাইলেন সে সাফাই সাক্ষ্য দেবে কিনা এবং তার আর কিছু বলার আছে কিনা। আসামী শহীদুল্লাহ মাস্টার জানালেন তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার, আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগে দুলাল ঢালীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার রায়ের জাবেদা নকল তিনি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করলেন এবং তিনি বললেন উক্তঅস্ত্র আইনে সাজাপ্রাপ্ত উক্ত আসামীর আপন বোন বর্তমান মোকদ্দমার ভিকটিম ডেইজি বেগম। এই বলে তিনি ট্্রাইব্যুনালকে জানালেন যে তিনি কোন সাফাই সাক্ষ্য দেবেন না। অতঃপর বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল উভয় পক্ষের সওয়াল জবাব শুনলেন।

তারপর রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করলেন। মধ্যাহ্ন বিরতির পর এজলাস পিওন আবু তাহের উচ্চস্বরে ট্রাইব্যুনালের আগমন বার্তা ঘোষণা করলো। ধীর পদক্ষেপে বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল এজলাসে আগমন পূর্বক নিজ আসন গ্রহন করলেন। এজলাস কক্ষে পিন পতন নিরবতায় বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল রায় পড়তে শুরু করলেন। সর্বশেষে তিনি ঘোষণা কররেন ‘ আসামী শহীদুল্লাহ মাস্টারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ অত্র ট্রাইব্যুনালে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, তাই তাকে বে-কসুর খালাস দেওয়া হলো।

অন্য কোন কারণে আসামী শহীদুল্লা মাস্টারের বিরুদ্ধে আটক আদেশ না থাকলে তাকে অবিলমো¦ মুক্তি দেওয়া হোক। ’ এরপর ধীর পদক্ষেপে বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল এজলাস কক্ষ ত্যাগ করে নিজ খাস-কামরায় চলে গেলেন। জনগণ হয়ে উঠলো কলরব মুখর। কেউ জয়ধ্বনি দিতে লাগলো শহীদুল্লাহ মাস্টারের, কেউ বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনালের বিচক্ষণতার প্রশংসা করতে লাগলো, কেউ মামলা দায়েরকারীদেরকে ষড়যন্ত্রকারী আখ্যা দিয়ে প্রতিশোধ নিতে উন্মত্ত হয়ে উঠলো, আগত হিন্দু মহিলাগণ দিতে লাগলো উলু ধ্বনি। এরই মাঝে শহীদুল্লাহ মাস্টারকে নিয়ে যাওয়া হলো কারাগারে।

সেখানে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবার পর ট্রাইব্রুনালের নির্দেশ মোতাবেক মুক্তি দেওয়া হলো শহীদুল্লাহ মাস্টারকে। কারাগারের প্রধান ফটক খুলে দিলো নিরাপত্তা রক্ষীগণ। বেরিয়ে এলেন শহীদুল্লাহ মাস্টার। জনগণ তাকে বরণ করে নিলো। তাঁর গলায় পরিয়ে দিলো ফুলের মালা।

তার পর তাকে সামনে নিয়ে বিশাল কাফেলা এগিয়ে চললো পাইকগাছার দিকে। বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনালের রায়ের মাধ্যমে প্রকাশিত হলো সত্য। রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগ মতে আসামী শহীদুল্লাহ মাস্টারকে ভিকটিম ডেইজি বেগমের ঘর থেকে আটক করা হয় বেলা এগারটার সময়। ভিকটিমকে পরীক্ষা করা হয়েছে একই দিন অপরাহ্ন চারটার সময়। মেডিকেল বোর্ড তাদের প্রতিবেদনে বলেছেন ভিকটিম ধর্ষিতা হয়েছে এই পরীক্ষার প্রায় আধা ঘন্টা আগে অর্থাৎ বেলা ৩-৩০মিনিটে।

সময়ের এই পার্থক্য বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেছেন। সেই সাথে নিশ্চিত হয়েছেন যে আসামী কর্তৃক ভিকটিম ধর্ষিতা হয় নাই। আর যেহেতু ডাকাত সর্দার দুলাল ঢালীর বোন এই ভিকটিম এবং উক্ত ডাকাতকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ার কাজে আসামী শহীদুল্লাহ মাস্টার সক্রিয় সহযোগিতা করেছে তাই স্বাভাবিক ভাবেই আসামীর সাথে ভিকটিমের শত্রুতা রয়েছে। ফৌজদারী মামলায় ঘটনা কোন স্থানে, কোন সময়ে, কিরূপে ঘটানো হয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। বর্তমান ক্ষেত্রেও এসব কিছু বিবেচনা করে বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল প্রাগুক্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে আসামীকে খালাসের আদেশ দিয়েছেন।

ভিকটিম ডেইজি বেগম এবং তার সাঙ্গ পাঙ্গরা রায শুনে জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য পালানোর চেষ্টা করে। তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এক দল যুবক তাদেরকে ধরে নিয়ে আসে জনতার সামনে। জনতার সামনে করজোরে ক্ষমা চাইতে থাকে ডেইজি বেগম। জনতার সামনে দাঁড়িয়ে সে প্রকৃত ঘটনা ব্যক্ত করে।

সে জানায় যে তার সন্ত্রাসী ভাই দুলাল ঢালীকে ধরিয়ে দেবার কারণে শহীদুল্লাহ মাস্টারের প্রতি সে এবং তার পরিবারের কতিপয় সদস্য রুষ্ট হয়। তারা শলা-পরামর্শ করে শহীদুল্লাহ মাস্টারকে উচিৎ শিক্ষা দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সাথে গ্রহণ করে পরিকল্পনা। ডেইজি ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা নিজেদের মধ্যে পাতানো বিরোধে লিপ্ত হয়। মিমাংসার জন্য হাজির হয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে।

সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে শহীদুল্লাহ মাস্টার শালিশ করে যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটাই উভয় পক্ষ মেনে নেবে। শালিশ বৈঠক বসবে ডেইজিদের বাসায়। নির্ধারিত দিনে সরল বিশ্বাসী শহীদুল্লাহ মাস্টার হাজির হয় ডেইজিদের বাসায়। হাসি মুখে তাকে স্বাগত জানায় ডেইজি। কদমবুছি করে তাকে নিজ ঘরে নিয়ে গিয়ে বসতে দেয়।

কিছুক্ষন পর ঘরে গিয়ে শহীদুল্লাহ মাস্টারকে জাপটে ধরে ডেইজি চিৎকার শুরু করে। পরিকল্পনা মোতাবেক ডেইজির সঙ্গীরা এসে ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়। তারপর স্থানীয় সম্ভান্ত ব্যক্তিগণ আসেন, থানায় খবর দিলে সেখান থেকে একজন দারোগা আসে। হতভম্ব মাস্টারকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। সারা এলাকায় রটিয়ে দেওয়া হয় ধর্ষণ করতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা পড়েছে শহীদুল্লাহ মাস্টার।

ডেইজির সাঙ্গপাঙ্গদের দাপটে শহীদুল্লাহ মাস্টার নিজে কিছু বলার সুযোগ পান নাই। দ্রুত মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলতে থাকে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খবর দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা ম্যাজিস্টেট, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে। ভিকটিমকে পরীক্ষা করার জন্য গঠিত হয় তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। এই বোর্ডের সামনে হাজির করতে বলা হয ভিকটিমকে।

এই খবর পাওয়া মাত্রই ডেইজি মিলিত হয় তার এক সঙ্গীর সঙ্গে। তারপর মাথায় কাপড় জড়িযে মুখ ঢেকে কানতে কানতে হাজির হয় বোর্ডের সামনে। এ সমস্ত কথা শোনার পর জনতা উত্তেজিত হয়ে উঠে এবং ডেইজিকে মারতে উদ্যত হয়। সদ্য কারামুক্ত শহীদুল্লাহ মাস্টার দ্রুত ঘটনাস্থলে আসেন এবং জনতাকে শান্ত হতে বলেন, তিনি আহ্বান জানান কেউ যেন আইন নিজ হাতে তুলে না নেয়। তাঁর কথায় জনতা শান্ত হয়।

পুলিশও এখানে হাজির হয়। কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে ডেইজিকে নিয়ে যাওয়া হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আদ্যপান্ত সব শুনেন এবং সমবেত জনতাকে আশ্বস্থ করেন যে ডেইজি ও তার সাঙ্গপাঙ্গদেরকে তাদের জঘন্য কৃতকর্মের জন্য আইনের আওতায় এনে বিচারের জন্য আদালতে সোপর্দ করা হবে। এক্ষেত্রে ডেইজি জেনে শুনে মিথ্যা বর্ণনা দিতে নিরাপরাধ ব্যক্তিকে সাজা দেবার উদ্দেশ্যে এজাহার দিয়েছে এবং বিচারিক কার্যক্রম তথা ট্রাইব্যুনালে হলফ নিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে। যা দন্ডবিধির ১৮২,১৯৫,১৯৬ ধারা তথা একাদশ অধ্যায় মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

প্রাগুক্ত মামলাটির বিচার হয়েছিল ১৯৮৩ সালের ‘নারী নির্যাতন ( নিবর্তক শাস্তি) অধ্যাদেশে’র ৪সি ধারা মোতাবেক। এই আইনটি ছিল ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের তফসিলভুক্ত, তাই উক্ত আইন অনুসারে গঠিত ট্রাইব্যুনালে এই বিচার হয়। ১৯৯৫ সালে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন ( বিশেষ বিধান) আইন’ প্রবর্তিত হলে ১৯৮৩ সালের ‘নারী নির্যাতন ( নিবর্তক শাস্তি) অধ্যাদেশ’রহিত করা হয়। ২০০০ সালে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’ প্রবর্তিত হলে ১৯৯৫ সালের ‘নারী ও শিশু নির্যাতন(বিশেষ বিধান ) আইন’ রহিত করা হয়। তবে উভয় আইন রদ রহিতের ক্ষেত্রে বিধান রাখা হয় যে উক্ত আইন বলবৎ থাকা অবস্থায় দায়ের হওয়া মামলা ও আইনগত কার্যক্রম অনিষ্পন্ন অবস্থায় থাকলে তা স্বাভাবিক নিয়মে চলবে এবং এসব ক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে যে সংশ্লিষ্ট আইন বাতিল করা হয় নাই।

জনজীবনে শান্তি শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটিয়ে অপরাধীগণ তাদের অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যায়। সুশাসন কায়েমের জন্য এদের দমন করা অত্যন্ত প্রয়োজন। অপরাধীরা নিরাপদ থাকার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তাকারী ব্যক্তিদেরকে নিবৃত্ত করার জন্য সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এটা করতে গিয়ে আইনের অপপ্রয়োগও তারা করে। তবে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করা এবং আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবার জন্য দন্ডবিধিতে শাস্তি দেবার সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে।

এর অনুশীলন ও প্রয়োগের অভাবে সরকারী কর্মকর্তার কাছে অসৎ উদ্দেশ্যে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করা এবং আদালতে বিচারকের সামনে হলফ নিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবার ঘটনা অহরহ ঘটছে। শান্তিপ্রিয় জনগণ তাই অপরাধীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সম্মান, সম্পদ ও দেহের নিরাপত্তার অভাব অনুভব করে এবং ভয় পায়। যার কারণে অপরাধ ঘটে চলেছে, জনজীবন হচ্ছে বিপন্ন। প্রাগুক্ত মামলার ঘটনা এই সত্যটিকেই প্রকাশ করেছে। লেখকঃ সাবেক জেলা ও দায়রা জজ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.