আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবদুল কুদ্দুসের গল্প (1)

যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে, ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

[হঠাৎ করেই আবদুল কুদ্দুসের কথা মাথায় আসল, এর সাথে বাড়তি উপকরণ হিসেবে যোগ হয়েছে আজ মাথায় চেপে বসা লেখার মুড। তাই ঠিক করলাম, লেখাটা নামিয়েই ফেলি। অনেকগুলো পর্ব হবে বলে মনে হচ্ছে, কেউ কেউ যদি ধৈর্য্য ধরে পড়েন আর মূল্যবান মন্তব্য দেন তাহলে খুব ভাল লাগবে ] এক. ঘন কুয়াশার হালকা চাদরে মতিঝিল কলোনীর বাতাস ভেদ করে যখন কমলাপুর রেলস্টেশনের সাপের মতো সমান্তরাল রেললাইন আর রেলগাড়ীগুলোকে উপেক্ষা করে সূর্য্য টা ওঠে পূব আকাশে, তখন কলোনীর বুকের জীবনের ছোঁয়াটা অনেকটা গতিশীল হয়ে ওঠে। সবার আগে জাগে কাজের বুয়ারা; কলোনীর কবুতরের খোপের মতো বাসাগুলোতে পৌঁছুতে যে সিঁড়িঘরগুলো ব্যবহার হয় সারাদিন, তারা অর্থ্যাৎ কাজের বুয়ারা সেই সিঁড়িঘরগুলোর নিচে বিভোর হয়ে তিন চার ঘন্টার ঘুম দেয় রাতে। এদেরকে কেউ কেউ নাক সিঁটকে 'মাতাড়ী' বলেও ডাকে।

এদের সাথে সাথে কাজে নেমে পড়ে আরও কেউ কেউ, যেমন মাঠাওয়ালা। ইস্পাতকঠিন বিশাল কাঁধে সে বয়ে নিয়ে চলে মাঠা, দাঁড়িপাল্লার মতো আধারের দু'পাশেই টাটকা টক-গন্ধের মাঠা। পাছাদুটোকে সাইনকার্ভের মতো একবার এপাশে একবার ওপাশে দুলোতে দুলোতে ফেরী করে বেড়ায়, 'এই ম্যাঠা!! এই ম্যাঠা' বলে। মুরুব্বী গোছের কিছু বুড়ো আর নানাবিধ প্রেরণায় হঠাৎ করেই স্বাস্থ্যসচেতন হয়ে ওঠা কিছু যুবকেরা মাঠা খায় মনের সাধ মিটিয়ে। মনের অতল গহবরে হয়ত অজানা উচ্ছাসে হাঁক ছাড়ে, 'ইয়া -- লী ---' সকালের এই ব্যাচে আরও জাগে পেপারের হকার ছেলেটি, রিজার্ভারের পানি ছেড়ে দেয়ার দায়িত্বে থাকা তপন, মসজিদের ঈমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম আর আমসিপারা, কোরান শরীফ হাতে নিয়ে সারিবেঁধে হেঁটে যাওয়া কোমলমতি ছোট্ট শিশুর দল।

আর এরা যখন জেগে ওঠে তখন সারারাত উন্মত্ত মাতলামি আর নরক গুলজারে মেতে থাকা লুচ্চা তিন পাহারাদারেরা ঘুমাতে যায়। এমনটা কমবেশী শহরের সব কলোনীতেই দেখা যায় --জীবনের ছোঁয়া লাগে ভোরে, আর সে ছোঁয়া রাতের আঁধারের সাথে মিলিয়ে যেতে যেতেও একেবারে শূন্য হয়ে যায়না। কিছু ছায়া তার স্পর্শের মতো একটা অশরীরি মায়া ফেলে রেখে যায়। সে যাই হোক, সব কলোনীর সাথে আমাদের কলোনীর একটা পার্থক্য আছে। সব জায়গায় সকালের সুন্দর শুরুর সাথে সাথে যে জেগে ওঠেনা, সে আমাদের এই কলোনীতে জাগে, ঘুরে ফেরে, এরওর সাথে কথা বলে, মাঝে মাঝে হুমকি-ধামকি দেয়, মাঝে মাঝে নীতিকথা বলে - নিজের অস্তিত্বকে জানান দিয়ে বেড়ায় চারদিকে।

সে আবদুল কুদ্দুস। হালকা গড়নের আর মাঝারী উচ্চতার; কপালের উপরে মাথার অনেকখানিই খালি, বাকীটুকু ঘন ঘ্যাসঘ্যাসে কোঁকড়া চুলে টইটুম্বুর। চোখে একটা চশমা আছে, তবে অনেকদিন ধরেই তার পাওয়ারের পরিবর্তন হয়না। লোকে ফিসফাস করে, আবদুল কুদ্দুসের মনে হয় তেমন টাকা-পয়সা নেই, নইলে সামান্য চশমাটাকে বদলায়না কেন! আবদুল কুদ্দুসের চোখ ঘোলাটে, সে চোখের দ্যূতি স্পষ্ট না; চোখের দৃষ্টিতে কাউকে বশ করার বা অনুগত করার ক্ষমতা তার নেই। কণ্ঠস্বরও তেমন জোরালো নয়, গমগম করেনা আবার বাজখাঁইও নয়।

মাঝে মাঝে হাইস্কেলে মেয়েলী গলার মতো চিৎকারও বের হয়ে আসে আবদুল কুদ্দুসের মুখ থেকে। তবে যা সে বলে, খুব জোরের সাথে খুব আত্নবিশ্বাস নিয়েই বলে। গালের মাঝে মাঝে তার খোঁচা খোঁচা দাড়ি দেখা যায়। কখনও এই দাড়ি লম্বা হয়, আবার কখনও আর দেখা যায়না। দাড়ির মতো বিষয়কে সে নগণ্যই ভাবে, এসব ছাইপাশ নিয়ে ততটা মাথা ঘামানোটা লাভজনক বলে মনে করেনা আবদুল কুদ্দুস।

তবে ধর্মকর্মে যে একদম মন বা বিশ্বাস নেই আবদুল কুদ্দুসের, তা কিন্তু না। জুম্মার নামাজ তো বটেই, প্রায়ই আসর মাগরিবের ওয়াক্তেও মসজিদের জামাতের তৃতীয়/চতুর্থ কাতারের এককোণে নিরিবিলিভাবে নামাজ পড়তে দেখা যায় তাকে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.