আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যেনে রাখুন ভালো থাকুন, কুক্ষাত এই সন্ত্রাসীর হাত থেকে

ঘটনার শুরু যেখান থেকে: সেদিন আমার এক বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছি । অনেকদিন পর দেখা। বেশ জমিয়ে আড্ডা চলছে। এমন সময় ওর দুই ছেলে মেয়ে ছুটতে ছুটতে এল। মেয়েটি ছোটো, ছেলেটি বছর দেড়েকের বড়।

মেয়েটি মাকে নালিশ করল -ভাইয়া আমাকে মেরেছে ? বন্ধু বলল-আর বলিস না রাতদিন মারামারি চলছেই। দুটো এত দুষ্টু হয়েছে কি বলব । আমি জিজ্ঞাসা করলাম -মা , ভাইয়া তোমাকে মেরেছে কেন ? ভাইয়া বলেছে এটা ফুলের বোকেতে দেয় ,আমি বলছি এটা ফুলকপি -তাই বললাম –কই দেখি তোমার ফুল কপি ? মেয়েটি আমার হাতে একটা ফুলসহ আগাছা তুলে দিল । হাতে নিয়েই চমকে উঠলাম , কি সর্বনাশ ! করেছেটা কী ! পার্থেনিয়াম গাছ ! বন্ধুকে বললাম-ছেলেমেয়েরা কী নিয়ে খেলে একটুও নজর রাখিস না ! বন্ধু আমাকে বলল-তুই টেনসন নিস না। ওগুলো ওরা প্রতিদিন নিয়ে খেলে।

আমি চেঁচিয়ে উঠলাম -সবাইকে কবরে পাঠনোর ব্যবস্থা করছিস নাকি ! এদিকে ভাবি খাবার নিয়ে হাজির। বললাম -আগে এদের হাত সাবান দিয়ে খুব ভালো করে ধুঁয়ে নিয়ে আসুন ,পরে খাবার খাব। ভাবি ছেলেমেয়েদের হাত ধোয়াতে নিয়ে গেলেন। আমি বন্ধুকে বোঝাতে বসলুম এই ভয়ঙ্কর গাছটার মারণ ক্ষমতা । -শোন মানুষ ও গবাদি পশু এমনকি ফসলের উপর এর মারাত্মক প্রভাব।

তুই মারাও যেতে পারিস। কিংবা ক্রমশ ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়েও যেতে পারিস। তাই খুব সাবধান। চল এক নজরে এর সম্পর্কে কিছু কথা জেনে নিই। গাছটির ছবি: গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম : Parthenium hysterophorus উচ্চতা : হাতদুয়েক লম্বা হয় এই গাছ গুলো।

দেখতে কেমন : অনেকটা হাইব্রিড ধনেপাতার মতো দেখতে লাগে এর পাতা আমার কাছে। ঝাঁকড়া ঝোঁপালো ধরণের গাছ। ভারতে এটা গাজর ঘাস নামে পরিচিত , গাজরের পাতার মতো পাতা বলে । নকল সৌন্দর্য : এর ফুল দেখতে এই রকম হয়। ছোটো ছোটো সাদা ফুল হয়।

অনেকটা বিয়ে বাড়িতে ছোটো ছোট সাদাফুল দিয়ে বোকে সাজানো হয় সেই রকম। কোথায় হয়: কোথায় হয় না ! পাড়ার ক্লাবের মতো । যেখানে জায়গা পায় সেখানেই গজিয়ে ওঠে। বিশেষ করে রাস্তার দুপাশে হামেশাই দেখা যায়। বাইরে বের হলেই আপনি এই গাছটিকে দেখতে পাবেন।

বিশেষ করে রাস্তার পাশে অনাদরেও দারুণ বেড়ে চলে এই গাছটি। পাকা রাস্তার ধারে , গ্রামের রাস্তার ধারে কোথায় নেই এই গাছ। খুব দ্রুত বাড়ে এই গাছ। ছড়িয়েও পড়তে পারে খুব দ্রুত। কী ক্ষতি করে? সবার ক্ষতি করে।

মানুষ , গবাদি পশু ও ফসলের উপর পার্থেনিয়ামের মারাত্মক প্রভাব। আপনি মারাও যেতে পারেন। কিংবা ক্রমশ ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়েও যেতে পারেন। তাই খুব সাবধান। চলুন এক নজরে এর বিপদ সম্পর্কে কিছু কথা জেনে নিই।

১। মানুষ : পার্থেনিয়াম গাছের প্রভাবে মানুষের নানা রকম রোগ হতে পারে • ১। অ্যাজমা • ২। ব্রঙ্কাইটিস • ৩। হে ফিভার • ৪।

অ্যালার্জি • ৫। হাঁপানি • ৬। ক্ষতসহ চর্মরোগ • ৭। এর বিষক্রিয়ার কারণে প্রচণ্ড ম্যথাব্যথা • ৮। একজিমা ইত্যাদি ২।

গবাদিপশু: পশুদের ক্ষেত্রে উপরোক্ত সব রোগগুলোই হতে পারে। “এছাড়া ‘পার্থেনিয়াম আগাছা’ যুক্ত মাঠে গবাদিপশু চরাণো হলে পশুর শরীর ফুলে যাওয়া, তীব্র জ্বরসহ নানা রোগে আক্রন্ত এবং বদ হজম দেখা দেয়। ৩। ফসল : এ আগাছা ফসলের উৎপাদন প্রায় চল্লিশ শতাংশ কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে ভূট্টার ক্ষেত্রে এ আগাছা ফল ধরার পর প্রাথমিক অবস্থায় মোচার ফল ধারণ ক্ষমতা ত্রিশ শতাংশ হ্রাস করে।

এছাড়া ধান, ছোলা, সরিষা, গম, বেগুন, এবং মরিচের ক্ষেত্রে এ আগাছা বীজের অঙ্কুরোদগম ও বৃদ্ধি কমিয়ে দিয়ে ফসলের ফলন অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। ‘’ (তথ্য-প্রথম আলো) এত ক্ষতিকর কেন ? একটা কথা আছে কলাগাছের কোনো অংশই নাকি ফেলা যায় না । সবটাই কাজে লেগে যায়। আর এই গাছের সমস্ত অংশটাই ক্ষতিকারক। গোঁড়া থেকে আগা পর্যন্ত।

এর পরাগ ক্ষতিকর , ডালপালা সবটাই ক্ষতিকর। এখন কথা হল কেন ক্ষতিকর-এই গাছে sesquiterpene lactones এই নামের টক্সিন থাকে। যা গঠিত caffeic acid, vanillic acid, ansic acid, p-anisic acid, chlorogenic acid, এবং parahydroxy benzoic acid - দিয়ে যা মানুষ সহ অন্যান্য জীবের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ আগাছা এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে যা অন্যান্য ফসলের বৃদ্ধি কমিয়ে দেয়। দমন- এ গাছ দমন করা খুবই সমস্যার।

• ১। এই আগাছার জঙ্গল পুড়িয়ে ফেলা যেতে পারে। কিন্তু সমস্যাও আছে । পোড়ানোর সময় এই গাছের রেণু উড়ে দূরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে সেক্ষেত্রেও ঐ গাছের বংশ বিস্তার বা মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ঐ রেণু ঢুকে মানুষে ক্ষতি করতে পারে।

• ২। ঐ গাছ কেটে গভীরগর্তে পুতে ফেলা তাহলে রেণু ওড়ার সম্ভাবনা কম । কিন্তু এ ক্ষেত্রেও সমস্যা আছে – যারা এই আগাছা কাটবে তারা আক্রান্ত হতে পারে। মানে একেবারে শাঁখের করাতের মতো অবস্থা। • ৩ ।

রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তথা আগাছানাশক ব্যবহার করেও এ আগাছা দমন করা যায়। এক্ষেত্রে ব্রোমাসিল, ডায়ইউরোন, টারবাসিল প্রতি হেক্টরে দেড় কেজি অথবা ডাইকুয়াট আধা কেজি ৫০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি হেক্টরে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া প্রতি হেক্টরে দুই কেজি ২.৪ ডি সোডিয়াম লবণ অথবা এমসিপিএ ৪০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করেও এ আগাছা দমন সম্ভব। • ৪। জৈবিক দমন প্রক্রিয়া পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হীন একটি ভালো ব্যবস্থা।

এই পদ্ধতিতে নানাধরণের পাতাখেকো বা ঘাসখেকো পোকার মাধ্যমে পার্থেনিয়াম গাছকে দমন করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। • ৫। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নিজের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হওয়া। আমাদের অসচেতনার সুযোগ নিয়েই পার্থেনিয়াম এত দ্রুত বংশবৃদ্ধি করছে। প্রতিকার- • ১।

কোনো যানবাহন ‘পার্থেনিয়াম’ আগাছায় আক্রান্ত এলাকা দিয়ে অতিক্রম করার পর ভালোভাবে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। • ২। বিষে বিষে বিষক্ষয়- পার্থেনিয়াম আক্রান্ত রোগে হোমিওপ্যাথিতে পার্থেনিয়াম গাছ থেকেই প্রতিষেধক ওষুধ তৈরি করা হয়। • ৩। কোনোরকম অসুবিধা বুঝলেই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

সবকিছু শোনার পর আমার বন্ধুকে দিশেহারা ও আতঙ্কিত লাগছিল। আতঙ্কিত হওয়ার মতো কথাই বটে। তবু বললাম আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। নিজের শরীরকে নিজেই সুস্থ রাখতে হবে । তার জন্য পরিবেশকেও সুস্থ রাখা দরকার।

এমন সময় ভাবি ফিরে এলেন ছেলেমেয়েদের হাত ধুইয়ে। সঙ্গে মিষ্টি , লুচি সঙ্গে ছোলার ডাল। ভাবির হাতের রান্না যেন একেবারে অমৃত। খেতে খেতে বললাম-ভাবি রান্না খেয়ে আমি একেবারে অভিভূত। আপনাকে আশর্বাদ করি পুত্র কন্যাতে আপনার সংসার ভরে উঠুক।

ভাবি কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে বললেন- আগে জানলে আমি তোমাকে রান্না করে খাওয়াতাম না। সে কি কেন ?-আমি অবাক হওয়ার ভান করে বললাম। -তুমি তো আমার শত্রু বলেই মনে হচ্ছে। দুটো শয়তান নিয়েই সামলে পারছি না । এরপর আরো হলে আমি আর এখানে থাকব না একেবারে বাপের বাড়ি চলে যাব।

আমরা সকলে হেসে উঠলাম। বিদ্রঃ ঘটনাটি আমার না কফি ফেষ্ট ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.