আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খুব লজ্জা লাগে। যখন নিজের সাথে দেখা হয়।

প্রায় প্রতি রাতেই অন্তত একবারহলেও নিজের সাথে দেখা হয়ে যায়। তখন নিজের সাথে নিজেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি। দ্বিধা, দ্বন্দ, ক্ষোভ, আনন্দ, দুঃখ আর প্রতিবাদে মুখর থাকে সেই ক্ষণ। এসব অনুভূতি প্রকাশ করার মতো কাউকে যখন পাই না। তখন লিখতে বসে যাই।

তখন আমি আইনের ছাত্র। সাল টা হবে ২০০৯। নভেম্বর মাস। একজন বিজ্ঞ আইনবিদের ফার্মে কাজ করছি (কাজ শিখছি আসলে)। হঠাৎ একদিন এক মেয়ে এলো চেম্বারে।

কাদো কাদো স্নিগ্ধ চেহারা। বয়স ১৭-১৮ হবে। জানতে পারলাম বাসা তার আসে পাশেই। চেম্বারের সাইন বোর্ড দেখে এসেছে। তার সমস্যাটি যখন জানতে পারলাম তখন একজন পুরুষ হিসেবে লজ্জিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই করা গেলো না।

মেয়েটির বয়স যখন ১২ তখন তার বাবা মারা যায়। অভাবের অভিশাপে তার মা শশুর বাড়ী থেকে বিতাড়িত হয়। বেশ কিছু দিন বাপের বাড়ীতে গলগ্রহ হয়ে থাকার পর এক রকম ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার মা'র বিয়ে হয়ে যায় ঢাকার এক অশিক্ষিত টাকাওয়ালা ট্রাক ব্যবসায়ীর সাথে। এটি মহামান্য ব্যবসায়ীর ৩য় বিবাহ। কিছুদিন ভালোই কাটে।

হঠাৎ দেখা যায় লোকটি দেরি করে মদ খেয়ে কিংবা জুয়া খেলে বাড়ী ফিরছে। মেয়েটির মা ভাবলো পুরুষ মানুষ, একটু মদ তো খেতেই পারে। জুয়া খেলতেই পারে। এরপর যখন কারণে অকারণে মার খাওয়া শুরু করলেন, মেয়েটির মা ভাবলেন, পুরুষ মানুষ, একটু আধটু মারতেই পারেন। আসলে মা'র তো যাবার কোনো জায়গা নেই।

এই পুরুষ মানুষটি যদি তাকে ত্যাগ করে তবে তার এই মেয়েকে নিয়ে রাস্তায় ভিক্ষা করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। সুতরাং মা মেয়েটিকে বুঝায়-সব মেনে নিয়েই থাকতে হবে। মেয়েটিও তাই বুঝে নেয়। কিন্তু এরপর যা ঘটে তা কে বুঝবে? হঠাৎ এক রাতে ঘুমের মাঝে মেয়েটি আবিষ্কার করে কোনো এক পুরুষের হাত তার শরীরে কি যেনো খুজছে। হাত তার জামার ভেতর ঢোকার আগেই সে খপ করে হাতটি ধরে ফেলে।

একটানে হাত ছাড়িয়ে লোকটি চলে যায়। মেয়েটির বুঝতে বাকি থাকে না এই লোকটিই তার সৎ পিতা। তার মায়ের স্বামী। সৎ পিতার কার্যক্রম ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আর মেয়েটি লজ্জায়, ভয়ে আর আতংকে কুকড়ে যেতে থাকে।

অনেক সাহস করে মেয়েটি একদিন তার মাকে বিষয়টি জানালে কয়েকটি চড় আর ''অসভ্য মেয়ে তুই কাপড় সামলায়ে চলতে পারোস না'' জাতীয় সহযোগীতা ছাড়া আর কিছুই পেলো না। আমার সিনিয়র মেয়েটিকে নারী নির্যাতনের মামলা করার কথা বললে মেয়েটি সরাসরি জানায় মামলা করতে সে অপারগ কারণ এতে করে তার মা'র সংসার ভেঙ্গে যাবে। এবং সে তা চায় না। এই ভয়েই সে কোনো কিছু করতে পারছে না। আমরা তাকে পরামর্শ দিলাম, সে যেনো দ্রুত কোন ভালো ছাত্রী হোস্টেলে চলে যায়।

আর যেহেতু সে মেধাবী (এইচ,এস,সি তে জিপিএ ৪,৮৮) সেহেতু সে সহজেই কিছু টিউশনি জোগাড় করে নিজের খরচ চালাতে পারে। সে যেন চেষ্টা করে ভালো কোনো সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। আমরা তাকে দুটো টিউশনি ও জোগাড় করে দিলাম। কিন্তু আর কোনো প্রতিবাদ আমরা করতে পারলাম না। এদেশের আনাচে কানাচে অসংখ্য মা,ভাই,বোন নানা রকম সমস্যায় জর্জরিত থেকেও কোন আইনী ব্যবস্থা তো দূরে থাক, কিছুই করতে পারে না।

এরকম দু একটা পরামর্শ দেয়ার জন্য বিভিন্ন কাওন্সেলিং এজেন্সি গুলো ডিমান্ড করে হাজার হাজার টাকা। আর মামলার কথা নাই বললাম। মামলা তো দূরের কথা, সামান্য একটু আইনী পরামর্শ পেতে হলেও খরচ করতে হবে হাজার টাকা। আমি খুব লজ্জিত হই নিজের কাছে। আইন নিয়ে ব্যবসা করি।

আমার খাওয়া পড়ার খোড়াক জোগায় মানুষের সমস্যা। তাই নিজেকে আর লজ্জিত না করে আমি কিছুদিন আগে শুরু করেছি একটি সেবা কর্মসূচী। Free Legal & Psychological Consultancy Bangladesh. আমার সাথে আছেন দুজন আইনজ্ঞ এবং দুজন মনোবিদ। এখানে বিনামূল্যে যে কোনো আইনী ও মানসিক সমস্যার সমাধানে পরামর্শ দেয়া হবে। আমরা Facebook এ একটি page খুলেছি।

মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার্থে একটি website খুলেছি যাতে সবাই চাইলে পরিচয় গোপন রেখে আমাদের সমস্যার কথা লিখে জানাতে পারে। আমরা সবাই নিজেদের অবস্থান থেকে দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য যতটুকু পারি করার চেষ্টা করছি। নিজের সামনে যেন নিজে লজ্জিত না হই, মাথা উচু করে দাড়াতে পারি। আমি আপনাদের সহযোগিতা কামিনা করি। যতটুকু পারেন মানুষকে এই কর্মসূচির ব্যাপারে অবহিত করুন যেন তারা আমাদের কাছ থেকে আইনী ও মানসিক সহায়তা পেতে পারে।

সঙ্গত কারনেই আমরা আমাদের ব্যক্তিগত পরিচয় গোপন রাখছি যাতে করে আমাদের ব্যাক্তিগত কোনো প্রচার না হয়ে শুধুমাত্র এই কর্মসূচির বিষয়টি মানুষ জানতে পারে। সবাইকে ধন্যবাদ। Like our Facebook page and let others know about it: Free Legal & Psychological Consultancy Bangladesh Visit our website: Free Consultancy ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।