আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাউন্সিলর পদপ্রার্থী চা-বিক্রেতা মিনু

‘আমার টাকাপয়সা নেই, কী করে ইলেকশন করব। কিন্তু এলাকার মানুষ মিলে ফরম কিনে আইনে জোর কইরে দাঁড়ায়ে দেলে। জমাও তারা দিয়ে দেছে। তারা কলে তুমার ভোটে দাঁড়াতি হবে। ’ চা বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে এসব কথা জানালেন মিনু হাওলাদার (৩৯)।

তিনি খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে সংরক্ষিত ১০ নম্বর ওয়ার্ড (২৯,৩০,৩১) থেকে প্রার্থী হয়েছেন। দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচন করছেন তিনি।
মিনু হাওলাদারের গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার চিড়াপাড়া গ্রামে। তবে তিনি জন্মেছেন খুলনা নগরের ট্যাং রোড এলাকায়। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট মিনু।

অল্প বয়সে মা-বাবাকে হারান তিনি। তাই লেখাপড়া হয়নি তেমন। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করা মিনু ২০০৬ সালে নগরের গ্ল্যাক্সো মোড়ে একটি চায়ের দোকান দেন। দোকানটির নাম ‘মিনু-টি-স্টল’। এটিই তাঁর আয়ের একমাত্র উৎস।


মিনু বলেন, ‘আমার ভাইবোনের সবার বিয়ে হয়ে গেছে, শুধু আমি বিয়ে করিনি। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ টাকা বেচাকেনা হয়। খরচ বাদে যা লাভ হয়, তা দিয়ে নিজের চলে। ’
২০০৮ সালের নির্বাচনে তেমন প্রস্তুতি ছিল না মিনুর। তার পরও তিনি ১২ হাজার ১৪৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন।

২০০৮ সালে তাঁর প্রতীক ছিল হরিণ। এবারও তিনি হরিণ প্রতীক পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘গতবারে এলাকার ভ্যান-রিকশা আলারা পোস্টার ছাপায়ে দিইল। আর একদিন মিছিল করিল। মাইকিং করিল দুই দিন।

সে আমার কাছেতে টাকা নিইল না। অল্প কয় দিন ভোট চাইলাম। তার পরেও দ্বিতীয় হইলাম। প্রথম যে হইল সে আমার চাইতে পাঁচ-ছয় শত ভোট বেশি পাইল। ’
এ বছর নির্বাচন করার কোনো ইচ্ছা ছিল না মিনুর।

কিন্তু নির্বাচন আসতেই এলাকার মানুষ মিলে তাঁর মনোনয়নপত্র কিনে জমা দিয়েছে। এবারও রিকশা-ভ্যানচালক ও শ্রমজীবী মানুষেরা তাঁর পোস্টার ও চায়ের খরচ বহন করবে। মাইক ভাড়ার টাকা দেবে এক অত্মীয়।
মিনু বলেন, ‘আমার খাওয়ার কেউ নেই। সেই জন্যি কোনো দুর্নীতি করা লাগবে না।

যেটুক পারব এলাকার মানুষের জন্যি করব। একবার যদি তারা আমারে সুযোগ দেয়। ’
নির্বাচিত হলে দোকানের কী হবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে মিনু বলেন, ‘যারা আমারে কাউন্সিলর বানাবে তাগের কাজ করতি হবে, তহন তো দোকান ঠেকাতি পারব না। এডেরে তহন অফিস বানাব। ’
কাউন্সিলর হলে এলাকাবাসীর জন্য কী করবেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রথমে ভাঙা রাস্তাঘাট ঠিক করব।

ড্রেন ঠিক করব, যাতে পানিতে মানুষ তলায়ে না যায়। কারণ, একটু বৃষ্টি হলে আমার এলাকার অনেকের ঘরে পানি উঠে যায়। তারা খুব কষ্ট পায়। ’
মিনুর পাশের চা-বিক্রেতা লায়লা হক বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, বড়লোকের গেট পার হতি পারিনে। তাই আমাগে দুঃখকষ্ট তারা বোঝে না।

ও গরিব বলে আমাগের গরিবের দুঃখ বোঝবে। ’
সেখানে চা খেতে এসেছিলেন রিকশাচালক মো. রুস্তম আলী শিকদার। তিনি বলেন, ‘আমি এক বেলা রিকশা চালাব আর এক বেলা ওর (মিনুর) ভোট করব। আর ইলেকশানের সময় যে চা খরচ হয় তার জন্যি কিছু টাকা দেব। ’
এলাকার প্লাস্টিক বিক্রেতা মজিনা খাতুন বলেন, ‘গরিবের কষ্ট গরিব বোঝে।

বড়লোক বোঝে না। তাই মিনুর জন্যি আল্লাহর কাছে মানত করিছি। সে যেন জেতে। ’
১০ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য বিদায়ী মহিলা কাউন্সিলর রোকেয়া ফারুক বলেন, ‘আমি ১৮-দলীয় জোটের প্রার্থী। গতবার জিতেছিলাম, এবারও জেতব।

মিনুর জন্যি আমার নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না। ’।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.