আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাগানের কালজয়ী সুরস্রষ্টা, অবিস্মরণীয় সংগীত শিল্পী ও সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুদিনে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা

আমি সত্য জানতে চাই
অনন্য সুরেলা কন্ঠে অজস্র হৃদয়গ্রাহী গান গেয়ে সুরের যাদুকর উপাধিতে যে গুণী আখ্যায়িত হয়েছেন, তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় একজন খ্যাতিমান বাঙালি কণ্ঠশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক এবং প্রযোজক। বাঙালী শ্রোতা দর্শকের কাছে তিনি "হেমন্ত মুখোপাধ্যায়" নামেই সু-পরিচিত আর হিন্দি সঙ্গীত জগৎ এ প্রসিদ্ধ "হেমন্ত কুমার" নামে । তাঁর অসাধারণ গায়কী ও সুমধূর কন্ঠের ঔদার্যে তিনি গানের জগতে হয়ে আছেন অমর। বাংলাগানের কালজয়ী এই সুরস্রষ্টা তার অবিস্মরণীয় সুরের আগুন যিনি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সমগ্র বাংলায়, বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে সমগ্র উপমহাদেশে।

৯৪৫সালে বাংলা ছায়াছবি ‘নিমাই সন্ন্যাসীতে প্রথম নেপথ্য গায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর গাওয়া অসংখ্য গান এখনো সঙ্গীত বোদ্ধাদের মুখে মুখে ফেরে। কোনো এক গাঁয়ের বঁধুর কথা শোন, পথের ক্লান্তি ভুলে, আজ দু’জনার দু’টি পথ, মুছে যাওয়া দিনগুলি, এই পথ যদি না শেষ হয়, এই রাত তোমার আমার ইত্যাদি আধুনিক গান গেয়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সঙ্গীত রসিকদের মন জয় করেছেন। ১৯৮৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। আজ তার মৃত্যুদিন, মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

১৯২০ সালের ১৬ জুন ভারতের পবিত্র শহর বারাণসীতে জন্মগ্রহণ করেন হেমন্ত মুখপাধ্যায় । বিংশ শতাব্দির প্রথমার্ধে হেমন্ত কুমারের পরিবার কলকাতায় আসেন। তার ছোটবেলা কাটে তিন ভাই এক বোন নীলিমার সাথে। বড় ভাই তারাজ্যোতি ছোটগল্প লিখতেন। ছোটভাই , অমল মুখপাধ্যায় কিছু বাংলা ছায়াছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন এবং ১৯৬০ এর দশকে কিছু গান ও গেয়েছিলেন।

হেমন্ত ভবানিপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনের ছাত্র ছিলেন। ইন্টারমিডিয়েট পাস করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান। কিন্তু, তিনি সঙ্গীতের জন্য আপন শিক্ষা ত্যাগ করেন। সেখানেই তার বাল্যবন্ধু ও কবি সুভাষ মুখপাধ্যায়ের সাথে পরিচয়। প্রথমে তাঁর সাহিত্যিক হবার ইচ্ছে ছিল।

কিছুদিন, তিনি দেশএর জন্যে লেখেনও। কিন্তু যাঁর হবার কথা সঙ্গীতশিল্পী, তিনি কি অন্য কোনো কাজে মন বসাতে পারেন! ১৯৩৩ সালে শৈলেশ দত্তগুপ্তের সহযোগিতায় ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’র জন্য প্রথম গান ‘আমার গানেতে এল নবরূপী চিরন্তন’ রেকর্ড করেন হেমন্ত। কিন্তু গানটি সেভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি। শেষতক ১৯৩৭ সাল থেকে তিনি পুরোপুরি প্রবেশ করেন সঙ্গীত জগতে। এই বছর তিনি নরেশ ভট্টাচার্যের কথা এবং শৈলেশ দত্তগুপ্তের সুরে গ্রামোফোন কোম্পানী কলম্বিয়ার জন্য ‘জানিতে যদিগো তুমি’ এবং ‘বলো গো তুমি মোরে’ গান দুটি রেকর্ড করেন।

বাল্যবন্ধু কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাকে গান গাইবার জন্য ইডেন গার্ডেনের স্টুডিওতেও নিয়ে গিয়েছিলেন একবার। এরপর থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরই তিনি ‘গ্রামোফোন কোম্পানী অফ ইন্ডিয়া’র জন্য গান রেকর্ড করেছেন। ১৯৪০ সালে, সঙ্গীত পরিচালক কমল দাসগুপ্ত, হেমন্তকে দিয়ে, ফাইয়াজ হাস্মির কথায়ে "কিতনা দুখ ভুলায়া তুমনে" ও "ও প্রীত নিভানেভালি" গাওয়ালেন। ১৯৪১ সালে এই শিল্পী তাঁর প্লে-ব্যাক সংগীত জীবন শুরু করেন ‘নিমাই সন্ন্যাস’ ছবির মাধ্যমে। এরপর থেকেই তিনি ভারতীয় বাংলা সিনেমার একজন অপরিহার্য শিল্পী হিসেবে পরিগণিত হন।

ফলে দর্শক-শ্রোতা একের পর এক কালজয়ী বাংলা গান উপহার পেয়েছেন। ১৯৪৪ সালে ‘ইরাদা’ ছবিতে প্লে-ব্যাক করে হিন্দী গানের শ্রোতাদেরকেও নিজের জাত চিনিয়েছিলেন হেমন্ত। একই বছরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রথম নিজের কম্পোজিশনে দুটো গান করেন। গান দুটির গীতিকার ছিলেন অমিয় বাগচী। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বেশ কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড বের করেছিলেন।

তবে তিনি প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছিলেন ১৯৪৪ সালে ‘প্রিয় বান্ধবী’ সিনেমাতে। এছাড়াও কলম্বিয়ার লেবেলে রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড বের করেছিলেন তিনি। তবে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে হেমন্ত আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৪৭ সালে ‘অভিযাত্রী’ সিনেমার মাধ্যমে। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি থেকেই হেমন্ত নিজেকে সম্ভাবনাময় শিল্পী এবং কম্পোজার হিসেবে সবার নজর কাড়েন। সেসময় তিনিই ছিলেন একমাত্র পুরুষ কণ্ঠশিল্পী যিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে কাজ করেছিলেন।

১৯৫৪ সালে বলিউডি সিনেমা ‘নাগিন’ এর সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন তিনি। এই ছবির গান সেসময় দুই বছর ধরে টপচার্টের শীর্ষে অবস্থান করেছিল এবং এই সিনেমার জন্যই হেমন্ত ১৯৫৫ সালে ‘ফিল্মফেয়ার বেস্ট মিউজিক ডিরেক্টর’ এর পুরস্কার লাভ করেন। এরপর তিনি বাংলা সিনেমা ‘শাপমোচন’ এর সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এই ছবিতে তিনি উত্তম কুমারের জন্য চারটি গান করেছিলেন। তারপর থেকেই যেন উত্তম কুমারের ছবি মানেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান।

পরবর্তী সময়ে এই জুটি পেয়েছিল অসম্ভব জনপ্রিয়তা। (বেলা মুখপাধ্যায়, গীতা দত্ত, হেমন্ত মুখপাধ্যায়, শ্রী অরূপ, স্বরোজ সেন গুপ্ত) ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৪৫ সালে হেমন্ত মুখপাধ্যায়ের সাথে বেলা মুখপাধ্যায়ের বিবাহ হয়। ১৯৪৩-এ বাংলা ছায়াছবি, কাশিনাথে, সঙ্গীত পরিচালক পঙ্কজ মল্লিক বেলাকে দিয়ে কিছু জনপ্রিয় গান গাইয়েছিলেন, কিন্তু বিবাহের পর তিনি আর সঙ্গীত জগৎ এ প্রবেশ করলেন না। হেমন্তর দুই সন্তান - পুত্র, জয়ন্ত, ও কন্যা, রাণু। রাণু মুখপাধ্যায় ১৯৬০-৭০ এ গান গাইতেন।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় কে সঙ্গীতে অবদান রাখার জন্য রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করা হয়। ১৯৮৮ সালে ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ উপাধীতে ভূষিত করে, তিনি এই পদক প্রত্যাখান করেন। ‘আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে, আমি যদি আর নাই আসি হেথা ফিরে’ মৃত্যুর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ঢাকায় এসে এই গানটি শুনিয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে যে এই শিল্পীর স্বরলিপি চিরদিনের জন্য খোদাই করা হয়ে গেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ১৯৮৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন ভারতীয় বাংলা ও হিন্দি কন্ঠশিল্পি, সঙ্গীত পরিচালক এবং প্রযোজক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।

খ্যাতিমান বাঙালি কণ্ঠশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের আজ মৃত্যুদিন। মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কালজয়ী কিছু গান; চাইলে ডাউনলোড করে নিতে পারেন। ১। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান ২।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া কিছু জনপ্রিয় ছায়াছবির গান আশা করি হেমন্তু মুখোপাধ্যায়ের শ্রোতাদের ভালো লাগবে। সবাইকে শুভেচ্ছা
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।