আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘হত্যা গণহত্যা প্রমাণিত’

বিচারপতি একেএম ফজলে কবীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই মামলার রায় ঘোষণা চলছে।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪৩ মিনিটে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি একেএম ফজলে কবীরের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রায়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।   এরপর রায়ের ১৭২ পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্তসারের প্রথম অংশ পড়ছেন বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
এ ট্রাইব্যুনালের অপর বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়ার পর ট্রাইব্যুনাল প্রধান  বিচারপতি ফজলে কবীর সাজা ঘোষণা করবেন।
প্রথম অংশে বিচারপতি আনোয়ারুল হক বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা প্রথম পাঁচ অভিযোগের মধ্যে প্রথমটি ছাড়া বাকি চারটিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।


এর মধ্যে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে।
দ্বিতয়ি অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল ভোর সাড়ে ৬টা থেকে ৮টার মধ্যে রাউজানের মধ্যগহিরা হিন্দুপাড়ায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামটি ঘিরে ফেলে। পরে ডা. মাখনলাল শর্মার বাড়ির আঙিনায় নিরস্ত্র হিন্দুদের একত্রিত করে সালাউদ্দিন কাদেরের উপস্থিতিতেই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের নির্বিচারে গুলি করে। এ ঘটনায় পঞ্চবালা শর্মা, সুনীল শর্মা, জ্যেতিলাল শর্মা ও দুলাল শর্মা ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। ডা. মাখনলাল শর্মা ঘটনার তিন-চারদিন পর মারা যান।

জয়ন্ত কুমার শর্মা গুরুতর আহত হন এবং পরবর্তীতে প্রতিবন্ধী হয়ে যান।
এ ঘটনায় আনা গণহত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল।
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে রাউজানের গহিরা এলাকায় কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহের বাড়ি ঘিরে ফেলা হয়।
সালাউদ্দিন কাদেরের উপস্থিতিতে প্রার্থনারত অবস্থা থেকে নূতন চন্দ্রকে টেনে বাইরে নিয়ে আসা হয়। সালাউদ্দিন কাদেরের নির্দেশে পাকিস্তানি সেনারা নূতন চন্দ্রের ওপর গুলি চালানোর পর তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তাকে গুলি করেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।


এ ঘটনায় সালাউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে আনা হত্যার অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে বলা হয়েছে।
চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীসহ রাউজানের জগৎমল্লপাড়ায় যান সালাউদ্দিন কাদের। ওই দিন সকালবেলায় সালাউদ্দিনের অন্য দুই সহযোগীকে ওই গ্রামে পাঠিয়ে একটি মিটিংয়ে যোগ দেয়ার জন্য বলা হয় গ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের। পরে গ্রামটি ঘিরে ফেলে কিরণ বিকাশ চৌধুরীর বাড়ির আঙিনায় জমায়েত হওয়া হিন্দুদের ওপর নির্বচারে গুলি চালানো হলে তেজেন্দ্র লাল নন্দী, সমীর কান্তি চৌধুরী, অশোক চৌধুরীসহ ৩২ জন নিহত হন।
এছাড়া অমলেন্দ্র বিকাশ চৌধুরী, জ্যোৎস্না বালা চৌধুরী ও ছবি রাণী দাস গুরুতর আহত হন।

এরা প্রত্যেকে পরে ভারতে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন। এরপর গ্রামের বিভিন্ন বাড়িঘর লুটপাট করা হয় এবং আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়।
এ ঘটনায় সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে পরিকল্পনা, সহযোগিতা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও দেশান্তরে বাধ্য করার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল দুপুর ১টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার সহযোগীরা পথ দেখিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে রাউজানের সুলতানপুর গ্রামের হিন্দুবসতিপূর্ণ বণিকপাড়ায় নিয়ে যান। সেখানে হিন্দুদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হলে নেপাল চন্দ্র ধর, মণীন্দ্র লাল ধর, উপেন্দ্র লাল ধর ও অনীল বরণ ধর নিহত হয়।

পরে বিভিন্ন বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়। ঘটনার সময় লুকিয়ে থাকা সনাতন বিশ্বাস ও তার পরিবার পরে পালিয়ে ভারতে চলে যান।
এ ঘটনায় আনা গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে বলে বিচারক জানান।
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যের বিরুদ্ধে আনা প্রথম অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি বলে রায়ে উল্লেথ করা হয়।
ওই অভিযোগে বলা হয়, রাউজানের আন্ধারমানিকে অরবিন্দ সরকার, মতিলাল সরকার, অরুণ চৌধুরী, শান্তি কুসুম চৌধুরী, যোগেশ চন্দ্র দে, কুমিল্লা গ্রামের পরিতোষ দাস ও সুনীলকে ১৯৭১ সালের ৪ অথবা ৫ এপ্রিল অপহরণ করে ‘গুডস হিলে’ নিয়ে সালাউদ্দিন কাদেরের উপস্থিতিতে অমানুষিক নির‌্যাতন করা হয়।

এদের মধ্যে সুনীল কমবয়সী হওয়ায় তাকে ছুরিকাঘাতে মারাত্মক আহত করা হয়। বাকি ছয়জনকে মৃত্যু পর্যন্ত নির্যাতন করা হয়।
নিহতরা নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়ের হওয়ায় এ ঘটনায় গণহত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছিল।  

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.