আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংবাদ সম্মেলনে পঠিত বক্তব্য: নারী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৩

কোনো জটিলতা নেই তবুও জটিলতর শেষ বিকেলের রোদ

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী এবং ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইট আয়োজিত নারী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৩ ৬ অক্টোবর থেকে ১১ অক্টোবর প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা, সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আপনারা জানেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংস্কৃতির বয়স অর্ধ শতাব্দীর অধিক। এখানে প্রতিবছর নিয়মিত ষাট-সত্তরটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়ে থাকে। নির্মিত সে সমস্ত চলচ্চিত্র নিয়ে আমাদের উচ্চাশা বা গর্ব নাও থাকতে পারে কিন্তু আমরা জানি পৃথিবীর খুব কম দেশেই নিয়মিত এমন চলচ্চিত্র নির্মাণের সংস্কৃতি আছে। ফলে এটা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য আনন্দের একটি বিষয়।

কিন্তু অবাক হওয়ার বিষয় হল প্রতিবছর এত চলচ্চিত্রের মধ্যে নারী চলচ্চিত্রকারদের নির্মিত চলচ্চিত্র থাকে না বললেই চলে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে অদ্যাবধি আমরা খুব বেশি নারীকে চলচ্চিত্র নির্মাতা রূপে পাই নি। তবে একেবারে যে হয় নি তাও ঠিক নয়। ষাটের দশকের একমাত্র নারী নির্মাতা ছিলেন রেবেকা, যিনি ‘বিন্দু থেকে বৃত্ত’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। অবশ্য এই চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনের মত কোনো প্রিন্ট আমাদের কাছে নেই।

এরপর সত্তরের দশকে আমরা আর কোনো নারী চলচ্চিত্রকারকে পাই নি। কিন্তু আশির দশক থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন এবং প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় ক্রমশ নারীরাও চলচ্চিত্রকার রূপে আসতে শুরু করেন। গত শতাব্দীর নব্বই এবং বিগত এক দশকে বাংলাদেশে নারী চলচ্চিত্রকারদের চলচ্চিত্র নির্মাণে আমরা তুলনামূলক বেশি মাত্রায় আসতে দেখেছি। বিগত চার দশকে বাংলাদেশের নারী নির্মাতারা নির্মাণ করেছেন অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাহিনীচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।

কিন্তু অদ্ভুত হলেও সত্য যে আজ পর্যন্ত নারী চলচ্চিত্রকারদের নির্মিত চলচ্চিত্র নিয়ে পৃথকভাবে কোনো চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন করা হয়েছে এমনটা আমাদের জানা নেই! তাদের আলাদা করে সম্মাননা জানানোর কোনো উদ্যোগ কখনও কোনো প্রতিষ্ঠান অথবা সংগঠন গ্রহণ করেছে এমনটাও আমাদের চোখে পড়ে না! অথচ সারাবিশ্বেই আলাদা করে নারী নির্মাতাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য, তাদের লড়াইকে আরো বেগবান করার জন্য তাদের নানারকম প্রণোদনা দেয়া হয়। জানানো হয় সম্মাননা। আমরা জানি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার জীবন কতটা কঠিন এবং সংগ্রামমুখর। সেখানে নানাবিদ সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কারণেই একজন নারীর জন্য চলচ্চিত্রকারের জীবন আরো সংগ্রামমুখর এবং কঠিন। আমাদের মত একটি দেশে যেখানে যে কোনো সহিংসতায় প্রথমেই আক্রান্ত হন নারী, সেখানে নারীদের চলচ্চিত্রকার রূপে কাজ করা সহজ কাজ নয়।

তবুও আমাদের নারীরা এই দেশে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন এবং তাদের নির্মিত চলচ্চিত্র দর্শক নন্দিত ও প্রশংসিত হচ্ছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী এবং ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি যৌথভাবে বাংলাদেশের নারী নির্মাতাদের চলচ্চিত্র নিয়ে একটি চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন করেছে। এই উৎসবে প্রদর্শিত হবে আমাদের ২৫ জন নারী চলচ্চিত্রকারের নির্মিত ৩৩টি কাহিনী, প্রামাণ্য এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। শুধু তাই নয়, আমরা আমাদের সংগ্রামী নারী চলচ্চিত্রকারদের জানাতে চাই আমাদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা। তাদের সংগ্রামী পথচলাকে সংবর্ধিত করে আমাদের সম্মিলিত লড়াইয়ের পথকে আরোও বেগবান করে তুলতে চাই।

এই উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাদের সবাইকে প্রদান করা হবে সম্মাননা ক্রেস্ট। ১৯৭২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশের নারী চলচ্চিত্রকারদের নির্মিত কাহিনী, প্রামাণ্য এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মধ্য থেকে নির্বাচিত চলচ্চিত্রগুলো নিয়েই করা হয়েছে এই আয়োজন। আমরা আশা করি এই আয়োজনে আমাদের নারী নির্মাতাদের নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো একত্রে দেখার মধ্য দিয়ে আমাদের চলচ্চিত্র-সংস্কৃতির সমৃদ্ধতার অবয়বটি আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে সকলের কাছে। এছাড়াও আমরা মনে করি যেহেতু আমাদের দর্শকরা কখনই এভাবে একত্রে নারী নির্মাতাদের চলচ্চিত্রগুলো দেখার সুযোগ পান নি তাই এই আয়োজন হতে পারে আমাদের নারী নির্মাতাদের সৃষ্টির, সৃজন সক্ষমতার, দ্রোহের এবং অনুভূতিময় ভিন্ন একটি জগৎ আবিষ্কারের ক্ষেত্র। কেননা, সমগ্র চলচ্চিত্র-সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে যে পুরুষপ্রধান ন্যারেটিভ বর্ণিত হয় তার সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দৃষ্টিকোন পাওয়া যায় নারী নির্মাতাদের নির্মাণশৈলীর মধ্য দিয়ে, তাদের বিষয়বস্তু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এবং বক্তব্য প্রকাশের দ্রোহের মধ্য দিয়ে।

উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ৬ অক্টোবর, রবিবার, বিকাল ৫টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবের উদ্বোধন করবেন এবং নারী নির্মাতাদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দিবেন ভাস্কর ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিনী। উৎসবের দ্বিতীয় দিন থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন ৩টি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। বিকাল ৩টায়, বিকাল ৫টায় এবং সন্ধ্যা ৭টায়। উৎসব সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

সকলে আমন্ত্রিত। আমাদের প্রত্যাশা এই আয়োজনে আপনাদের সকলের সহযোগিতা আমরা বরাবরের মতই পাব এবং আপনাদের সংবাদ মাধ্যমে এই আয়োজনের আন্তরিক প্রচার এবং প্রকাশের মধ্য দিয়ে এই উৎসব সফল এবং কার্যকর হয়ে উঠবে সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সবাই ভাল থাকবেন।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.