আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রথম আলোর 'সীমানা ছাড়িয়ে' বিভাগে প্রকাশিত আমার লেখাটির পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ

ইতিহাস, নেই অমরত্বের লোভ/ আজ রেখে যাই আজকের বিক্ষোভ...

গতকাল ক্যাম্পাসের ডিসপ্লে স্ক্রিনে একটি ট্রিভিয়া কুইজ চোখে পড়ল; কোন সে ক্যাম্পাস যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটানা একুশ বছর ধরে সর্বোচ্চ স্থান ধরে রাখা হাসপাতাল; বিশ্বের এক নম্বর পাবলিক হেলথ স্কুল; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের র্যা ঙ্কিংয়ে এক নম্বর নার্সিং স্কুল এবং তিন নম্বর মেডিকেল স্কুল অবস্থিত? নিচেই বোল্ড হরফে উত্তরটি লেখা- জন্স হপকিন্স মেডিকেল ক্যাম্পাস; জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত অনেকগুলো ক্যাম্পাসের মধ্যে যা সবচেয়ে স্বনামধন্য। জন্স হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথের নতুন ভবন যুক্তরাষ্টের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে প্রধান সেশন হল হেমন্তকালীন সেশন বা ফল সেশন, যা সাধারণত আগস্ট মাসের শেষে কিম্বা সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে আরম্ভ হয়। স্কুল অব পাবলিক হেলথের ইন্টারন্যাশনাল হেলথ ডিপার্টমেন্টে, ডক্টরেট ইন পাবলিক হেলথ প্রোগ্রামে, তৃতীয় বর্ষে পা দিয়েছি গত মাসে শুরু হওয়া ফল সেশন থেকে। দেশের বাইরে যারা পড়তে আসতে চায় তাদের অন্যতম জিজ্ঞাসা থাকে অর্থায়নের ব্যাপারে। তাদের উদ্দেশ্যে আমার অভিজ্ঞতাসঞ্জাত পরামর্শ হল, আগে ভর্তি নিশ্চিত করা উচিত।

ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলে ফান্ডিং সচরাচর আটকে থাকেনা। তাছাড়া ভর্তির পর অন্তত এক বছর ভর্তি মুলতবি রাখা যায়। এর মধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বৃত্তির জন্য আবেদন করলে ভর্তি নিশ্চিত হওয়া ছাত্র ছাত্রীরা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। আমার ফান্ডিং প্রাপ্তি ছিল বেশ নাটকীয়। জন্স হপকিন্সে সুযোগ পাওয়ার পর যখন ফান্ডিংয়ের জন্য হন্যে হয়ে পরিচিত স্বল্প পরিচিত সম্ভাব্য উৎসগুলোতে ধর্না দিচ্ছি, তখনি এ্যাডমিশন ডিপার্টমেন্ট থেকে একটি ইমেইল পেলাম।

জন্স হপকিন্সের বাংলাদেশি অধ্যাপক, নবজাতকের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গবেষণার বিশ্ববরেণ্য পুরোধা ডক্টর আবদুল্লাহ বাকী তাঁর সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন। পরে জানতে পারলাম বাংলাদেশি একজন ছাত্র হপকিন্সে সুযোগ পেয়েছে এ খবর পেয়ে তিনি স্বত:প্রণোদিত হয়ে তাঁর আওতায় থাকা একটি ট্রেনিং ফান্ড থেকে ফেলোশিপের ব্যবস্থা করেছেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন “মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ”। অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ এর সাথে যোগ করেছিলেন, “ তবে বাঙালির ওপর বিশ্বাস রাখা বিপজ্জনক”। আমি এক্ষেত্রে কবিগুরুর অনুগামী।

পিএইচডির ক্ষেত্রে আরেকটি প্রশ্নের মুখোমুখি প্রায়:শই হতে হয়, “প্রফেসরের সাথে যোগাযোগ করবো কিভাবে, যিনি এ্যাডমিশন দেবেন?” জানিয়ে রাখি, ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার ডক্টরেট প্রোগ্রামে কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে। ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ার ডক্টরেট প্রোগ্রামের জন্য আগে থেকে প্রফেসরের সন্ধান করতে হলেও উত্তর আমেরিকার বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার প্রয়োজন হয়না। এখানে সাধারণত জিআরই’র স্কোর, রেফারেন্স, স্টেটমেন্ট অফ পারপাজ, কাজের অভিজ্ঞতা, কখনো পাবলিকেশন ইত্যাদি নানা মানদন্ডের আলোকে একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে মাস্টার্স বা অন্যান্য কোর্সের মতোই এডমিশন দেয়া হয়। দেড় থেকে দু’বছর কোর্সওয়ার্ক করা লাগে, যা ইউরোপিয় ডক্টরেট থেকে আরেকটি পার্থক্যের জায়গা। কোর্সওয়ার্কের সময় থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের গবেষণার ক্ষেত্র অনুযায়ী এডভাইজার ঠিক করে দেয়া হয়।

পড়াশুনার বাইরে আরেকটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে অসংখ্যবার; ঢাকার বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন অফিসারকে দিয়ে যার শুরু- “দেশের বাইরে ডক্টরেট করতে যাচ্ছেন, দেশে তো নিশ্চয়ই ফিরবেন না?” ইমিগ্রেশন অফিসারকে যে উত্তর দিয়েছিলাম, সে উত্তরই দিয়ে আসছি এখন পর্যন্ত বারবার সবাইকেই। তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করেছিলাম, “বাড়ি থেকে অফিসে কাজ করতে এসেছেন; অফিসেই কি থেকে যাবেন?” বাড়ি থেকে কাজে বের হয়ে, কাজ শেষে বাড়িতে ফিরে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। আমরা আমাদের মননে এর ব্যতিক্রমটিকেই স্বাভাবিক বানিয়ে নিয়েছি। নিজেরাও অস্বাভাবিক ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে আছি, অপরকেও তাতে প্ররোচিত করছি। তবে আশাবাদী হই যখন দেখি আমার সমবয়সী, তথা আমার জেনারেশনের আরো অনেকেই আজকাল পিএইচডি শেষে দেশে ফিরে নিজের অর্জিত জ্ঞানকে দেশের কাজে লাগাতে চায়।

আজ থেকে চার পাঁচ বছর আগেও হয়ত এ ট্রেন্ডটা চোখে পড়তনা, এখন পড়ে। আরেকটি ছোট্ট পরামর্শ দিয়ে শেষ করব। আবদুল্লাহ আবু সাঈদ স্যারের একটি কথাকে একটু ঘুরিয়ে আমার অনুজদেরকে বলি, “মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় নয়; মানুষ তার স্বপ্নের চাইতেও বড়। কারণ মানুষ তার সম্ভাবনাকে জানেনা”। জেনেভার নাটালির সাথে জামালপুরের নাজমার কোনই পার্থক্য নেই মৌলিক জৈব কাঠামোর দিক থেকে।

দু’জনের সম্ভাবনাই সমান, দু’জনের সম্ভাবনাই অসীম। বিশ্বায়ন আমাদেরকে হয়ত অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন করে দিয়েছে, কিন্তু এটাও সত্য যে বিশ্বায়ন আমাদেরকে একটি গ্লোবাল ভিলেজের বিশ্ববাসিন্দা হিসেবে অফুরন্ত সম্ভাবনার দুয়ারও খুলে দিয়েছে। এখন সময় কেবল অপরিসীম আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিশ্বজয়ের কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়ার। [লেখাটির খন্ডিত অংশ প্রথম আলোতে ১৩, অক্টোবর ২০১৩ তারিখে প্রকাশিত হয়]

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.