আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুসলমানী



ঘটনাটা যেসব পুরুষের জীবনে ঘটে, তাঁদের বেশীর ভাগের ক্ষেত্রেই বা বলা যায় সব ক্ষেত্রেই ঘটনাটা ঘটে শিশু বয়সে। এমন এক বয়সে, যার স্মৃতি সাধারণতঃ একটু বড় হওয়ার পরে আর তাঁদের থাকে না। সেই সময়ের ঘটনাগুলো সম্পর্কে তাঁর যা জ্ঞান তা অন্যের কাছ থেকে পাওয়া। যে বিবরণ সে জানতে পারে, তাঁর বেশীর ভাগই সে অন্য কারো মুখে শুনেছে, একটু বয়স হওয়ার পরে। হয় বাবা মা কিংবা বড় ভাই বা বোন।

কিংবা অন্য কোন আত্মীয়। মজার কিছু ঘটে থাকলে সেসব রসিয়ে রসিয়ে বলে অনেকদিন তাঁকে লজ্জা দেয়া হয়েছে। তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই গল্প গুলো একই রকমের। পরিবারের মুরুব্বীরা প্রথমেই ঠিক করে ফেলেন সব কিছু। কখনও ছেলেটি আগেই আঁচ করে।

কখনও বা চুপিসারে ঘরের শত্রু কোন বিভীষণ আগেই এসে জানিয়ে দেয়, ‘কালকে না তোর, হি হি...’। কিভাবে করা হবে তা নিয়েও অনেক সময় বিস্তর তর্ক বিতর্ক হয়। ‘হাজাম’ না ‘ডাক্তার’। পরিবারে কেউ ডাক্তার থাকলে খুব বেশী বিতর্ক হয় না। না থাকলে অনেক সময় কিছুটা হয়।

কখনও স্মৃতিচারণ চলে, কার, কবে কি সমস্যা হয়েছিল। হাজাম এবং ডাক্তার তুলনামূলক বিচার বেশ কিছুদিন চলে। এরপরে পরিবারের মহা প্রতাপশালী কেউ, নীতি নির্ধারণী বক্তব্য দেন। ঠিক হয় কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে। এরপরে আসে বোম ফাটানোর ব্যাপার।

সিনেমার নায়ক কে জানানো হয় কাল বহু প্রতীক্ষিত সিনেমার ‘লাইভ শ্যুটিং’ শুরু হবে। শোনার পরে সেই নায়কের কি অনুভুতি হবে তা নির্ভর করে ব্যাপারটা তাঁকে কিভাবে বোঝানো হয়েছে তাঁর ওপর। যদি সে আগে শুনে থাকে এটা করলে অনেকে দেখতে আসে, টাকা দেয়, খাওয়া দাওয়া হয় তবে সে বেশ আনন্দেই থাকে। দারুণ আনন্দে সে নিজেও সবাইকে বলে বেড়ায়, ‘জানিস কালকে না আমার...। ‘ সমস্যা ঘটে দ্বিতীয় ক্ষেত্রে।

যদি ঘটনাটি সম্পর্কে তাঁকে ভয়ংকর এক ছাপ তাঁর মনে এঁকে দেয়া হয় তবে তাঁর শিরদাঁড়া বেয়ে প্রথমটায় একটা হিমশীতল স্রোত হয়ে যায়। এরপরে শুরু হয় কান্না কাটি। ‘আমি করবো না’। শুরু হয় রাজী করানো। ‘কিচ্ছু হবে না।

ভয়ের কিছু নাই। শুধু একটু ব্যাথা লাগবে। ‘ এমন হরেক রকমের সান্ত্বনা বাণী। কখনও কাঁদতে কাঁদতে বাচ্চা ঘুমিয়ে পড়ে। কখনও জেদ করে খাওয়া দাওয়া বন্ধ।

জিনিসপত্র ভাংচুর। এরপরে শুরু হয় ভীতি প্রদর্শন। ‘এটা না করলে আল্লাহ্‌ রাগ করবে। ‘ উত্তর আসে ‘করুক’। ‘গুনাহ হবে’।

তাতেই রাজী না, ‘হোক’। এরপরে চেষ্টা হয়, ‘তাহলে তুমি তো সারাজীবন হিন্দু থেকে যাবা’। ‘আমি হিন্দুই থাকবো’। সব সময় এতো চেষ্টা করা হয়, তা না। কখনও হয়তো বলাই হয় না।

চলো আজকে বেড়াতে যাই। বলে সোজা অপারেশান থিয়েটারে। বিশেষ করে ডাক্তার আত্মীয় থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই এমনটা হয়। আর বাসায় হাজাম ডেকে হলে, বাচ্চা প্রথম চেষ্টা করে বিছানার নীচে কিংবা বাথরুমে লুকাতে। এবং যথারীতি ব্যর্থ হয়।

টানতে টানতে ক্রন্দনরত শিশুটিকে নিয়ে আসা হয়। শুরু হয় সাহস দেয়ার পালা ‘এক্ষুনি হয়ে যাবে। ‘ কখনও বা ‘ছি ছি তুমি না সাহসী ছেলে। ‘ এভাবেই সাধারণতঃ বেশিভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। কিছু কিছু বিচ্ছু থাকে।

যাদেরকে তাঁদের বাবা মা ও ভয় পায়। এমনই একজনকে একবার রাজী করাবাড় দ্বায়িত্ব পড়ল আমার ঘাড়ে। আমি ঘরে ঢুকতেই বলল, ‘আমি মুসলমানি করব না। ‘ বললাম, ‘ঠিক আছে করতে হবে না। ‘ খুশী হয়ে বলল, ‘ঠিক?’।

বলাই বাহুল্য, মিথ্যা কথা বললাম, ‘ঠিক’ সঙ্গে আরও জানালাম, ‘তোমার ওখানে ময়লা জমে গেছে তো, ওটা সাফ করে দিলেই আর মুসলমানি করতে হবে না। ‘ সরল শিশুটি ফাঁদে পা দিল। ‘তাই? সাফ করলেই হবে?’ বললাম, ‘হ্যাঁ। সাফ করলেই হবে। ‘ শিশুর শেষ প্রশ্ন, ‘ব্যাথা লাগবে না তো?’ এবার নির্ভেজাল সত্য বললাম, ‘একদম না।

একটা ওষুধ দিয়ে তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হবে। কিছু বুঝতেই পারবা না। ‘ শিশুরা কখন, কিভাবে, কোন কথায় রাজী হবে তাঁর বোধকরি কোন নিয়ম নেই। কখনও আরেকজনের উদাহরণ দেয়া হয়। ‘দেখো তো, ও কি কাঁদছে?’ এভাবে শিশুটির আত্মসম্মানে আঘাত দিয়ে রাজী করাবার চেষ্টা চলে।

লজ্জা দেয়ার চেষ্টা চলে ‘কাঁদলে সবাই কি বলবে?’ কখনও চলে বিশদ ব্যাখ্যা। আমার পরিচিত এক শিশুকে তেমনি তাঁর পিতা ব্যাখ্যা দিতে বসলেন। ‘এরকম করে না বাবা। এটা করতে হবে। ‘ রাগী শিশুটির জিজ্ঞাসা, ‘কেন?’ পিতা তখনও হাল ছাড়েন নি।

‘এটা সব মুসলমান ছেলেকেই করতে হয়। ‘ বিশ্বাস হয় না শিশুটির। জানতে চায়, ‘সবার করতে হয়?’ পিতাটি আশায় বুক বাঁধেন। ছেলে বোধহয় রাজী হয়ে এসেছে। আর একটু বোঝালেই হয়তো রাজী হয়ে যাবে।

নতুন উদ্যমে তিনি শুরু করেন। ‘হ্যাঁ বাবা। সব মুসলমান ছেলেকেই করতে হয়। ‘ ‘আপনিও করেছেন?’ ‘হ্যাঁ বাবা। আমারও হয়েছে।

‘ ‘কই দেখি। ‘

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।