আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জোহরা-সুরত বানুদের ভিটেমাটি দখল করে যমুনার পাঁচতারা হোটেল

সহায়সম্পত্তি হারানো জোহরা, সুরত বানু, হাজী আজাহার উদ্দিনসহ অনেকেই কুড়িল প্রগতি সরণিতে দাঁড়িয়ে প্রায়ই দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। শাড়ির আঁচল বা শার্টের আস্তিনে মোছেন চোখের পানি। তারা যেখানটায় দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন, চোখের পানি ফেলেন ঠিক তার সামনেই গড়ে তোলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের পাঁচ তারকা হোটেল জে ডবি্লউ ম্যারিয়ট। জোহরা বানু-সুরত বানুদের মতো আরও অনেকের শেষ সম্বল যেসব ভিটেমাটি দখল করে নেয় যমুনা গ্রুপ- এখন সেখানেই গড়ে তোলা হচ্ছে হোটেলটি। কেড়ে নেওয়া অন্যদের জায়গা-জমিতে এরই মধ্যে নির্মিত হয়েছে যমুনা ফিউচার পার্কের বিনোদন স্পট।

সেখানেই বসানো হয়েছে শিশুদের নানা ধরনের খেলাধুলার যন্ত্রসামগ্রী। আন্তর্জাতিক মানের হোটেল আর যমুনা ফিউচার পার্ক শপিং মলের জন্যই জবরদখল করা হয়েছে অসংখ্য খুদে ব্যবসায়ীর দোকানপাট, রিকশার গ্যারেজ, মসজিদ এমনকি কবরস্থানও। যমুনা গ্রুপের প্রতাপের সামনে টুঁশব্দটি করতে পারেননি সর্বস্বহারা এসব অসহায় মানুষ। জায়গাজমি জবরদখল ছাড়াও নানা রকম সন্ত্রাসী তাণ্ডব আর মামলা-হয়রানির মুখে স্থানীয় বাসিন্দারা রয়েছেন ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায়। এ সুযোগেই টিন আর কাঁটাতারের সীমানা বেড়া লাগিয়ে একে একে নানা স্থাপনা নির্মাণ করেছে যমুনা গ্রুপ।

ভুক্তভোগী লোকজন তাদের জায়গাজমির কাছেও ঘেঁষতে পারছেন না। রাজধানীর জোয়ারসাহারা এলাকার কুড়িলে বর্তমানে বড় বড় ক্রেন লাগিয়ে যে নির্মাণযজ্ঞ চলছে সেখানেই ছিল ছোট আকারের একটি মহল্লা। জোহরা বানু, সুরত বানু, আলহাজ আজাহার উদ্দিনের মতো আটটি পরিবারের বসবাস ছিল সেখানে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দিনদুপুরে যমুনা গ্রুপের ষণ্ডাপ্রকৃতির ৩০-৪০ জন লোক চারটি বুলডোজার নিয়ে মহল্লাটিতে চড়াও হয়। মুহূর্তেই সব কিছু ভেঙেচুরে ফেলে।

চলতে থাকে বুলডোজারের তাণ্ডব। ক্ষতিগ্রস্ত সুরত বানু জানান, দুপুরে রান্নাবান্না শেষ করে খাওয়া-দাওয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছিল, এরই মধ্যে সব কিছু ধ্বংস করে দেওয়া হয়। মেয়েকে নিয়ে ক্ষুধার্ত সুরত বানুকে দুই মুঠো খাওয়ার সুযোগও দেওয়া হয়নি। ঘরের ফ্রিজ, টিভি, মূল্যবান আসবাবপত্র সব কিছু বুলডোজারে গুঁড়িয়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়। কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে সুরত বানুর মতো অন্যরাও আশ্রয়হীন অবস্থায় রাস্তার বাসিন্দা হয়ে পড়েন।

বেশ কয়েক দিন ধরে খোলা আকাশের নিচেই বসবাস চলে তাদের। পরবর্তীতে বিভিন্ন স্বজন-পরিজনদের বাড়িঘরে পরগাছার মতোই ঠাঁই মেলে সুরত বানু ও জোহরা বানুদের। বহু মূল্যের জায়গাজমি থেকে উচ্ছেদ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন আলহাজ আজাহার উদ্দিন। তিনি বলেন, 'আমার অন্তত ৩০ কোটি টাকা মূল্যের জায়গাজমি দখল করে নিয়েছে যমুনা গ্রুপের বাবুল। এ ব্যাপারে আদালতে মামলা করেছি, কিন্তু প্রভাবশালী চক্রটির অর্থবিত্ত আর পেশিশক্তিতে বলীয়ান হওয়ায় নানা রকম হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের।

' আজাহার উদ্দিন এখনো আশা ছাড়েননি। তিনি বলেন, 'প্রশাসন সহযোগিতা করলে আমরা হারানো জায়গাজমি ফেরত পাব। ' স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যমুনা ফিউচার পার্ক ও হোটেলের জন্য জবরদখল করা জায়গায় কুড়িলের আদি বাসিন্দাদের প্রায় ১০ বিঘা জমি রয়েছে। হাজী আজাহার উদ্দিন বলেন, জবরদখল করে নেওয়া ২০০ কাঠা জমির বর্তমান বাজারমূল্য ৬০০ কোটি টাকা। বেশির ভাগ সম্পত্তিই ছিল গরিব মানুষের, যারা কোনোমতে একখণ্ড ভিটের ওপর দু-চারটি ঘর তুলে বসবাস করতেন।

কিন্তু যমুনা গ্রুপের দখলবাজির কারণে তারা এখন আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন, কারও কারও ঠাঁই জুটেছে ঝুপড়ি বস্তির স্যাঁতসেঁতের ভাড়া ঘরে। প্রগতি সরণি থেকে কুড়িল উত্তরপাড়া যাতায়াতের জন্য ১২ ফুট চওড়া সরকারি একটি রাস্তা ছিল। মহানগর জরিপ মানচিত্রে এবং সিটি করপোরেশনের কাগজপত্রেও এ রাস্তার বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে রাস্তা দখল করেই গড়ে উঠেছে যমুনা ফিউচার পার্কের মেইন গেট এবং ভবনের একাংশ। সরকারি রাস্তাটি কীভাবে একজন ব্যক্তি দখল করে নিলেন তা ভেবে পান না বাসিন্দারা।

তারা অবিলম্বে সরকারি রাস্তা জবরদখলমুক্ত করে জনসাধারণের চলাচলব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সরকারি হস্তক্ষেপের দাবি জানান। একই সঙ্গে ওয়াক্ফ করা কবরস্থান ও মসজিদের জমিতে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ বন্ধের ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।