আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাইকেল প্যারেন্টির সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বইয়ের পর্যালোচনা

মন কি যে চায়...... বইয়ের লেখক ৫০০ বছরের পূর্বের ইউরোপ থেকে বর্তমান আমেররিকান সা¤্রাজ্যবাদের পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন। বিশ্ব ইতিহাসে সা¤্রাজ্য্যবাদ সবচেয়ে পরাক্রমশালী শক্তি। লেখকের মতে সা¤্রাজ্যবাদ এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি জাতির প্রভাবশালী আর্থ-রাজনেতিক ব্যক্তিরা নিজেদের উন্নতিসাধনের জন্য অন্যদের জমি, শ্রম, কাঁচামাল এবং বাজার দখল করে নেয়। পশ্চিম ইউরোপীয় সা¤্রাজ্যবাদের প্রথম শিকার হয়েছিল অন্য ইউরোপীয়রা। প্রায় আটশো বছর আগে আয়ারল্যান্ড যে দেশটির প্রথম উপনিবেশ হয়েছিল , সেটিই পরবর্তীকালে ব্রিটিশ সা¤্রাজ্য নামে পরিচিত ।

পদ্ধতিটি ইউরোপে স্থায়ী থাকে যখন পশ্চিম ইউরোপ, বিশেষ করে ইংরেজরা পূর্ব ইউরোপ আক্রমন করে উপনিবেশ স্থাপন করে। এটা ছিল সা¤্রাজ্যবাদের শুরু। উপনিবেশ স্থাপন ছিল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে প্রভাবশালী দেশ অন্য দেশে আক্রমন করে এবং ওই দেশ পরিচালনা করার জন্য নিজেদের পছন্দের নেতা বসায়। এটি একটি ব্যয়বহুল পদ্ধতি মনে হতে পারে, বাস্তবিকই পুঁজিবাদ বিস্তারের জন্য ব্যয়বহুল। সা¤্রাজ্যবাদ পুঁজিবাদ থেকেও পুরোনো।

সম্প্রসারণ বা বিস্তার হচ্ছে পুঁজিবাদের জন্য অপরিহার্য। পুঁজিবাদের চাবিকাঠি হচ্ছে টাকা বিনিয়োগ যেখানে বিনিয়োগের পরিমানের চেয়ে আয়ের পরিমান বেশি হয়। এর অর্থ পুঁজিবাদিরা অবিরামভাবে অতিরিক্ত টাকা আয়ের পথ খোজে। একজন অবশ্যই লাভের জন্য এবং আধিপত্য বজায়ের জন্য বিনিয়োগ করবে। সম্প্রসারণমুখী চরিত্রের কারণেই শুধূ নিজদেশে সীমাবদ্ধ থাকার প্রবণতা পুঁজিবাদের একেবারেই নেই।

প্রাকৃতিক সম্পদ দখল করাই পুজিবাদের বৈদেশিক সম্প্রসারণের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। এর মূল উদ্দেশ্য হল উৎপাদন খরচ কমিয়ে সর্বোচ্চ মুনাফা তোলা। মার্কিন কর্পোরেশনগুলো শিল্পোন্নত দেশসমূহ থেকে যে হারে মুনাফা তুলতে পারে: কম মজুরি, কর, কোন ধরণের কল্যান ভাতা না দেয়া, দুর্বল শ্রমিক ইউনিয়ন, কর্মস্থলে দুর্ঘটনা হতে সুরক্ষা বিষয়ক পরিবেশ সংরক্ষমূলক আইনের অনুপস্থিতি ইত্যাদি কারনে তৃতীয় বিশ্বে পারে তার ৫০ শতাংশ বেশি। টিকে থাকার জন্য বিনিয়োগকারীদের সা¤্রাজ্যবাদী হওয়া একান্ত প্রয়োজনীয় শর্ত নয়। কিন্তু এটা হচ্ছে আধুনিক পুঁজিবাদের অন্তর্নিহিত প্রবণতা ও স্বাভাবিক বৃদ্ধির ধারা।

সা¤্রাজ্যবাদী হয়ত মুনাফার একমাত্র পন্থা নয়। কিস্তু এটা সবচেয়ে লোভনীয় পন্থা। বর্তমানে পূর্বে পরিচালিত ঔপনিবেশিক কাঠামো দেখা যায় না। যা দেখা যায় তা হল শক্তিশালী দেশগুলোর দ্বারা দুর্বল দেশগুলোর ওপর সা¤্রাজ্যবাদী অত্যাচার, যা অনেকটা লঘু দৃষ্টিগোচর অর্থাৎ কম চোখে লাগার মত। সা¤্রাজ্যবাদী দেশগুলো একজনকে বা একটি দলকে মুৎসদ্দি বা দালাল হিসেবে তৈরি করে।

নিজের দেশকে বিদেশী স্বার্থের গ্রাহক-রাষ্ট্র হিসেবে বহাল রাখতে সহায়তাকারী শ্রেণী হচ্ছে মুৎসদ্দি শ্রেণী। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য অবধারিতভাবে লাভজনক হবে, এমন শর্তে যেসব রাষ্ট্র বিনিয়োগের সুযোগ দেয়, সেগুলোকেই গ্রাহক রাষ্ট্র বলে। এই সম্পর্ককে বিভিন্নভাবে নামকরণ করা হয়েছে : অনানুষ্ঠানিক সা¤্রাজ্য, উপনিবেশবিহীন উপনিবেশবাদ, নয়া উপনিবেশবাদ, নয়া সা¤্রাজ্যবাদ। ” মুৎসদ্দিরা প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর চাহিদা পূরণের চেষ্টা করে। প্রকৃতপক্ষে সে হলো পুঁজিবাদি প্রথম বিশ্বের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের হাতের পুতুল।

লেখক একে আধুনিক উপনিবেশবাদ বা আধুনিক সা¤্রাজ্যবাদ নামে আখ্যায়িত করেছেন। আমেরিকা ব্রিটিশদের জায়গা নিয়েছে প্রভাবশালী প্রথম বিশ্বের আধুনিক সা¤্রাজ্যবাদ জাতি হিসেবে। আমেরিকার স্কুলগুলোতে আজ ‘উন্নয়ন তত্ত্ব’ পড়ানো হয়। উন্নয়ন তত্ত্ব আবার আধুনিকায়ন তত্ত্ব হিসেবে পরিচিত। এই তত্ত্ব অনুযায়ী পশ্চিমা বিনিয়োগের ফলে দরিদ্র দেশের শ্রমিকেরা আধুনিক সব ক্ষেত্রে বাড়তি মজুরিতে অধিক উৎপাদনশীল কাজ পাবে।

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে দেখা হয় অনুন্নত দেশ হিসেবে। বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে যা ব্যবহার করা হচ্ছে ‘উন্নয়নশীল দেশ’ হিসেবে। অনুন্নয়ন হচ্ছে কতগুলো সামাজিক সম্পর্ক, যা জোর করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। পাশ্চাত্যের উপনিবেশবাদীদের আবির্ভাবের কারণে তৃতীয় বিশ্বের মানুষদের বিকাশ পিছিয়ে পড়ে। আমেরিকার এসব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে হস্তক্ষেপ দেখানো হয় মানবিক প্রচেষ্টা ও অনগ্রশীল জনগণকে সাহায্য বা দান হিসেবে।

এই তত্ত্বে বলা হয় যে পশ্চিমা কর্পোরেট বিনিয়োগ দরিদ্র দেশগুলোর কর্মীদের উন্নতিতে সাহায্য করবে কারণ পুঁজি বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যবসায়ীরা লভ্যাংশ পুনঃবিনিয়োগ করবে এবং এভাবে প্রচুর চাকরি, পণ্য, ক্রয়ক্ষমতা ও বাজার বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু বাস্তবে কখনই তা ঘটে না বা ঘটার সম্ভাবনাও নেই। অন্যদিকে দরিদ্র দেশগুলোর অর্থনীতি ধ্বসে পড়ে কারণ সেখানে কথিত পুনঃবিনিয়োগ ঘটে না। প্রকৃতপক্ষে পুনঃবিনিয়োগ হল দরিদ্র জাতিগুলোর অবকাঠামো নতুনভাবে সজ্জিত করা যাতে তারা মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য আরও বেশি করে কর্পোরেশনগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণের পরিমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা আরও দরিদ্র হয়ে পড়ে।

তাদেরকে কৃত্রিম অর্থনৈতিক পদ্ধতিতে সীমাবদ্ধ করে রাখার কারনে তারা নিজেদেরকে মুক্ত করতে পারে না। তাই সা¤্রাজ্যবাদ যা তৈরি করেছে তাকে লেখক ‘অপউন্নয়ন’ বলেছেন। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর অর্থনীতি হচ্ছে এমন যা মূলত কিছু কাঁচামাল বা এমন পণ্য রপ্তািেন করে যেগুলো উৎপাদনে বেশি শ্রমিক লাগে। এই রপ্তানির ক্ষেত্রে বাজারের প্রভুত্ব থাকে ক্রেতাদের হাতে। ফলে দরিদ্র দেশগুলো একে অন্যের সাথে তীব্র প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়ে।

এই সুযোগে ধনী দেশগুলো তাদের জন্য সুবিধাজনক সব বাণিজ্য শর্ত আরোপ করে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনুন্নত ও উন্নত দেশগুলোর সম্পর্কের কারণে দরিদ্র দেশগুলো বিপুল পারমান ঋণ নেয় ধনী শেগুলোর কাছ থেকে। এই বিপুল ঋণ শোধ করার ক্ষমতা তৃতীয় বিশ্বের নেই। যে দেশের ঋণের পরিমান যত বেশি, ঘাটতি মেটতে আরও ঋণ নেবার চাপ তত বেশি। আর অধিকাংশ সময়েই এই বাড়তি ঋণ নিতে হয় চড়া সুদে, কঠিন শর্তে।

ঋণগ্রস্ত দেশের আয়ের একটি বড় অংশ ক্রমবর্ধমান হারে চলে যায় ঋণ পরিশোধে। বর্তমানে ধনী ও গরীব দেশগুলোর মুদ্রার বিনিময় হার তাদের শ্রমশক্তির তুলনামূলক উৎপাদনশীলতা এবং মুদ্রার অভ্যন্তরীণ ক্রয় ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল নয়। বরং তৃতীয় বিশ্বের জনসাধারণের আয়ের অবমূল্যায়ন ঘটাতে পশ্চিমা আর্থিক প্রষ্ঠিানগুলো কৃত্রিমভাবে এই বিনিময় হার নির্ধারণ করে। সাহায্য রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রনের একটা বড় হাতিয়ার। বৈদেশিক বিনিয়োগের মতই বৈদেশিক সাহায্যেও চূড়ান্ত ফলাফল হচ্ছে সামান্য কিছু লোকের হাতে বিপুল সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়া এবং অধিকাংশ মানুষের জন্য দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাওয়া।

১৯৯০ সালে ফ্রান্সে আন্ডারডেভেলপমেন্ট এর পরিবর্তে ম্যালডেভেলপমেন্ট ধারণা পরিচিতি পায় মানব ও সমাজ উন্নয়নের ধারণা হিসেবে। যেখানে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর হস্তক্ষেপকে বলা হয় ‘অর্থনৈতিক সমতার জন্য সাহায্য’। এই অবকাঠামো পরিবর্তন মূলত করা হয় বিদেশী ব্যবসায়ীদের স্বার্থ অনুযায়ী। তাদের অধিকাংশ প্রাকৃতিক সম্পদ কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং বাকি জমি বহুজাতিক কোম্পানি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাদের দুর্নীতিগ্রস্ত মুৎসদ্দি নিজেদের জন্য আমেরিকার কাছ থেকে প্রচুর সাহায্য পায়।

জনগন তাদের কাছ থেকে কোন সাহায্য বা নেতৃত্ব পায় না। লেখকের মতে এই প্রহসন কিছু সময়ের জন্য চলতে পারে, কিন্তু জনগণ যদি প্রকৃত স্বাধীনতা ও নিজ অধিকার চায় তবে এর বিপরীত ক্রিয়াও হতে পারে। একজন প্রকৃত নেতা তৈরি হতে পারে এবং সে নিজেদের দেশের নিয়ন্ত্রন নিতে পারে। এই সম্ভাবনা থেকে মুক্তি পেতে আমেরিকা ‘নিচু মাত্রার যুদ্ধ’ নামক পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এটাকে বলা হয় বদলি যুদ্ধ।

যখন আমেরিকা কর্তৃক তৃতীয় বিশ্বের দেশে আক্রমন নিজ দেশে যথেষ্ট সাপোর্ট পায় না তখন বিদ্রোহ দমনের নামে সেখানে মিলিটারি প্রশিক্ষক, পরামর্শক এবং অত্যাধুানিক উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র পাঠানো হয়। গেরিলারা জনসাধারণের সমর্থন ছাড়া টিকে থাকতে পারে না। অথচ অপরদিকে এই সংঘর্ষে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হতে থাকে। আর এত চড়ামূল্য দিতে দিতে জনগণ ক্রমশই মনোবল হারাতে থাকেন। এই প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময় ধরে চলে।

আমেরিকা দেশটির কথিত মুক্তি এনে দিতে পারে, কারণ যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য তাদের আছে টাকা ও দুর্নীতিগ্রস্ত মুৎসদ্দিদের পর্যাপ্ত সাহায্য। কিন্তু আমেরিকার অধিকাংশ লোকই জানে না আসলে কি হচ্ছে। এই কৌশল নিকারাগুয়া, মোজাম্বিক, অ্যাঙ্গোলা, ইথিওপিয়া, আফগানিস্তান, এল সালভেদর এবং গুয়াতেমালায় সফল হয়েছে। আমেরিকার সংবাদমাধ্যমগুলো যাই কভার করুক না কেন তারা প্রধানত বিদ্রোহ-কে দোষ দেয় তাদের নিজেদের প্রয়োজনে এবং সত্যিকার দেশপ্রমিক হিসেবে সরকারকে সাহায্য করে। এটি মূলত ছবির খন্ডাংশ।

প্রশ্ন থাকে যে, বড় বড় কোম্পানিগুলো কেন বিদেশে এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে তাদের ব্যবসা নিয়ে যাচ্ছে? কারণ সেখানে তারা সস্তা দামে শ্রম পায়, যেখানে তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করার মত সংঘ নেই এবং করের পরিমান খুবই কম যা অনেক ক্ষেত্রে না দিলেও হয়। লেখক একে ‘পুঁজিবাদের স্বর্গ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আর্থ-রাজনৈতিক অভিজাতদের এখন নাফটা এবং গ্যাটের মত বৈধ চুক্তি আছে, যার মাধ্যমে তারা আন্তঃজাতিক সহযোগিতা উপেক্ষা করে বিশ্বায়নের নামে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর শুল্ক বন্ধ করতে পারে। কিন্তু গ্যাট ছোট দেশগুলোতে একচ্ছত্র দারিদ্র চাপিয়ে দেয়ার লাইসেন্স দেয়ার সুযোগ দান করেছে উন্নত দেশগুলোকে। এটি উন্নত দেশগুলোকে ওইসব দেশগুলোর প্রাকৃতিক সম্পদ ভোগ করার সুযোগ দেয় যারা পূর্ব থেকেই আত্মনির্ভরশীল ছিল।

ফলে তারা নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদ নিজেরা ভোগ করতে পারে না। বিশ্বায়নের এই চুক্তি আসলে বিংশ শতাব্দীর বর্ধমানশীল সা¤্রাজ্যবাদের নতুন রূপ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকাকে ধ্বংসযজ্ঞ শহর বা শিল্প পুনঃনির্মান করতে হয় নি। পার্ল হারবার ছাড়া আমেরিকার অন্য কোথাও অক্ষশক্তির মিলিটারিরা ক্ষতি করতে পারে নি। যুদ্ধ পরবর্তী সময় ছিল শিল্পেন্নয়নের সময়।

সেনাবাহিনীর উন্নয়নও ছিল সমান ব্যয়বহুল। তখনকার ও বর্তমান আমেরিকান সা¤্রাজ্য ১৯ শতকের ব্রিটিশ সা¤্রাজ্য ও প্রাচীর রোমান সা¤্রাজ্য থেকেও বড়। সুতরাং বিশ্ব পুঁজিবাদের অভিভাবক হিসেবে আমেরিকার ভূমিকা শুরু হয় তখন থেকেই। আমেরিকার বাৎসরিক উন্নয়ন বাজেটের বড় অংশ ব্যয় হয় প্রতিরক্ষা খাতে। জনগনের কাছ থেকে আদায়কৃত কর বা রাজস্ব থেকে সেনাবাহিনী পরিচালনা করা হয়।

বাস্তবে আমেরিকার বাইরে সকল ঝুকিপূর্ণ জাতীয় সাহায্য হল সেনাবাহিনীর সুরক্ষায় ব্যবসা ও সম্পদ বৃদ্ধি করা। এটা সত্য যে গণতন্ত্রের বিনিময়ে সা¤্রাজ্য ধনী হয়। ১৯৯২ সালের ডিফেন্স প্লনিং গাইডেন্স অনুসারে,“শিল্পোন্নত দেশের নেতৃত্ব যা আমেরিকাকে প্রতিদ্বন্দিতা করতে পারে অথবা বৃহৎ বৈশ্বিক বা আঞ্চলিক ভূমিকাকে অনুৎসাহিত করা হয়েছে। ” পেন্টাগণের বিশ্লেষকদের মতে, এই আধিপত্য বজায় রাখার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘বিশ্ব অর্থনীতির দুই-তৃতীয়াংশ নিয়ে বি¯তৃত শান্তি ও সমৃদ্ধিতে ভরপুর একটি বাজারমুখী অঞ্চল নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে’। এই বিশ্বব্যাপী ক্ষমতা বজায় রাখা খুবই ব্যয়বহুল।

সামরিক ও অন্যান্য ধরণের ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা ব্যয় করে তা এই খাতে দুনিয়ার অন্য সমস্ত দেশের সম্মিলিত খরচের চেয়ে অনেক বেশি। আমেরিকান সেনাবাহিনী পৃথিবীর সর্বত্র বিরাজ করছে। এমন কোন স্থান নেই যেখানে তাদের প্রভাব নেই। আমেরিকার এই সামরিক হস্তক্ষেপকে দেখানো হয় প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ রক্ষা করা, নতুন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করা, আর্থ-রাজনৈতিক আধিপত্য ও পুঁজি পুঞ্জীভবনের ব্যবস্থা রক্ষা করা প্রতি হিসেবে। জনগণকে বিশ্বাস করানো হয় যে আমেরিকান নাগরিকদের স্বার্থেই বৃহৎ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে রক্ষা করা হচ্ছে।

এবং এই বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কথিত বিভিন্ন বিপদ দূর করবে। তারা তাদের ব্যবসা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে নিয়ে যাচ্ছে, যাতে তারা সস্তা শ্রমিক এবং ক্ষমতাহীন বা এমনকি অনুপস্থিত শ্রমিক সংঘের সুবিধা পায়। কিন্তু সেখানে যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে তাদের কে উদ্ধার করবে? আমেরিকান সেনাবাহিনী যা সেসব জনগণের টাকায় পরিচালিত যারা তাদের দেশের শিল্প বন্ধ বা অন্য দেশে চলে যাওয়ার কারনে চাকরি হারিয়ে বেকার। এখানেই এর শেষ নয়। যদি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত টাকার দরকার হয় তারা আমেরিকান সাহায্যও পায়।

লেখকের মতে,“সর্বশেষে ব্যক্তিগত ১ ডলার রক্ষার্থে জনগণের ৩ ডলার খরচ কখনই অযৌক্তিক নয়-কমপক্ষে বিনিয়োগকারীর দৃষ্টিকোণ থেকে। ” অনেকে এই পর্যবেক্ষন প্রত্যাখ্যান করে বলেন ছোট দেশগুলোতে আমেরিকার আক্রমণ কোন পুঁজিগত আগ্রহ নয় বরং গণতন্ত্রের উন্নয়নের জন্য। এটা এতই সহজ নয়। কোন জাতি তা হোক ছোট ও কম গুরুত্বপূণ যদি আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জ করে তাহলে দেশটির প্রয়োজনীয়তা দ্রুত ও কঠিনভাবে অগ্রাহ্য করা হয়, যাতে কোন দেশ আর দৃঢ় হওয়ার সাহস না দেখায়। কীভাবে এই জটিল নীতি আমেরিকার লোকজনের মধ্যে প্রভাব ফেলে।

পোলস বলেন, ৮০ শতাংশ আমেরিকান আক্রমন ও যুদ্ধের পরিবর্তে কুটনৈতিক আলাপ আলোচনা পছন্দ করে। অধিকাংশ আমেরিকানরা মনে করে রাজনীতিবিদরা প্রায়শই মিথ্যা কথা বলে। কিন্তু যখন এটা বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে আসে তখন অধিকাংশই এটি এড়িয়ে যান। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করে না যে নেতারা তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলবে। বিশেষত এটি নব্য সাম্রাজ্যবাদ, গণতন্ত্রের প্রবৃদ্ধি নয়।

অধিকাংশ সময় তাদের নেতারা বলে যে, তাদের শুধু অন্য দেশে মধ্যস্ততার অধিকার নেই বরং অন্যদের রক্ষক হিসেবে তাদের ওপর বিশ্ব নেতা হিসেবে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই তারা পালন করবে। বিশ্ব নেতা বলতে বোঝায় যে পুঁজি বিনিয়োগ বৃদ্ধির বৈশ্বিক পদ্ধতি নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা বা দায়িত্ব শুধুমাত্র আমেরিকার। সোভিয়েত ইউনিয়ন ধ্বংসের পূর্ব পর্যন্ত এই ধরনের যুদ্ধকে বলা হত সাম্যবাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত। এর কারণ বলা হয়-‘গণতন্ত্র রক্ষা’ এবং ‘আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা’ এবং উপরে বর্ণিত ‘বিশ্ব নেতার দায়িত্ব পালন করা’। জাতীয় নিরাপত্তায় নিয়োজিত আমলাতন্ত্র নয়, বরং বাণিজ্যই হচ্ছে মার্কিণ হস্তক্ষেপের চালিকাশক্তি।

সাম্যবাদ বিরোধিতা বা সোভিয়েত ভীতি নির্ধারণের উৎস হিসেবে যতখানি কাজ করেছে, তার চেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে বৈদেশিক হস্তক্ষেপের জন্য দেশের ভেতরে জনসাধারনের মধ্যে সমর্থন গড়ে তুলতে ও মার্কিন জনসাধারণকে ভীত করার প্রচারণা কৌশল হিসেবে। সা¤্রাজ্যবাদী দেশের সরকার হয়তো যা পায়, তার চেয়ে বেশি খরচ কওে সা¤্রাজ্যের জন্যে। কিন্তু সাম্যাজ্য বজায় রাখার সুবিধা যারা ভোগ কওে তারা সা¤্রাজ্য বজায় রাখার জন্য খরচ যোগায় না। সা¤্রাজ্যের লাভ সুবিধাভোগ করে ব্যবসায়ী শ্রেণী, আর এর জন্য প্রয়োজনীয় খরচের পয়সা আসে বাকি জনসাধারণের শ্রম থেকে। সা¤্রাজ্য থেকে আসা মুনাফার একচেটিয়া সুবিধা নেয় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো।

বহু বছর ধরে ওষুধ কোম্পানিগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ উদ্ভিদণাশক, কীটনাশক ও অন্যান্য ক্ষতিকর ওষুধ তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্রয় করে আসছে। ফলে খাদ্রসামগ্রী বিষে পরিণত হচ্ছে। মুনাফালোভী নিয়ন্ত্রনহীন বহুজাতিক কোম্পানিগুলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডল, সমুদ্র আর ভূগর্ভস্থ জল কারখানার ক্ষতিকর গ্যাস আর বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে ভরে দিচ্ছে; এদের খনি, কাঠ আর কৃষি ব্যবসা তৃতীয় বিশ্বের ভূমিকে ধ্বংষ করছে। অর্থাৎ এই গ্রহ তথা জনসাধারণের নিরাপত্তা ও মঙ্গলের সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে মার্কিন সেনাবাহিনী। সা¤্রাজ্য ক্রমবর্ধমান হারে প্রজাতন্ত্রকে নিঃস্ব করে থাকে।

অতীতের সা¤্রাজ্যগুলোর মতোই বিশ্ব সমরবাদের খরচ যোগানো এত গুরুভার হয়ে দাড়ায় যে, যে সমাজ এর ব্যয় বহন করে সা¤্রাজ্য তাকেই নির্মমভাবে নিংড়ে দেয়। সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপের সাম্প্রতিক তৈরি নতুন জাস্টিফিকেশন হল মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। ১৯৯০ সালে আমেরিকা ওয়াচের রিপোর্টে দেখা যায়, কলম্বিয়ায় মাদক ব্যবসা বন্ধের জন্য আমেরিকা অর্থ যোগান দেয়। পরবর্তীতে জানা যায় এই অর্থ ব্যবহৃত হত বামপন্থী নেতাদের হত্যা ও অত্যাচার করতে। জনগণ শুধু মনে করে যে আমেরিকা ভুল পথে পরিচালিত হয়েছে এবং ভুল জনগণকে টাকাগুলো দেয়া হয়েছে।

আসলে আমেরিকা ভুল পথে পরিচালিত হয়েছিল না, তারা কিছুদিনের জন্য তাদের সত্যরূপে প্রকাশিত হয়েছিল। আমেরিকার প্রেসিডেন্টরা যে দ্বিধাহীন এবং বলিষ্ঠ, তা বোঝানোর জন্য প্রায়ই তাদেরকে মাচো বা মর্দানি আবহ তৈরি করা হয়। রাষ্ট্রক্ষমতা প্রয়োগের মূল যন্ত্র সামরিক বাহিনী তৈরি হয় একটা মাচো মনোভাবের ওপরে এবং এর তত্তাবধানে নিযুক্ত সবাই দৃড়তা, কর্তৃত্ব এবং সহিংসতার ওপর জোর দিয়ে থাকে। কিন্তু যখন মাচো মনোভাব এবং ভাবমূর্তিকে উৎসাহিত করা হয় এবং চাপিয়ে দেয়া হয়, তখন সা¤্র্রাজ্যর নীতিমালাকে ব্যাখ্যা কওে না। আমেরিকান নেতারা নিজেদেও দুনিয়ার নেতা হিসেবে ঘোষণা করে।

‘দুনিয়ার নেতা হবার প্রকৃত অর্থ হচ্ছে পুজি বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের বিশ্ব ব্যব¯া’ রক্ষা করার প্রাথমিক দায়িত্ব পালন করা। পৃথিবীর নেতার কাজ হচ্ছে প্রতিবাদী শক্তিকে বশীভূত করা; তাবেদার-রাষ্ট্রের হত-দরিদ্র কাঠামোর মধ্যে মানুষকে আবদ্ধ রাখার জন্য সকল ধরণের নিয়ন্ত্রণ ও শক্তিক্ষয়মূলক ব্যবস্থা প্রয়োগ করা। নব্য সা¤্রাজ্যবাদের প্রাকটিস দেশে ও দেশের বাইরে আমেরিকা করে আসছে। এই যুক্তির পেছনে রেগান এর যাদুবিদ্যার অর্থনীতি বিবেচনা করা হয়। সরকার যদি সকল নিয়ন্ত্রন ও কর দূর করে, তবে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ বাড়বে এবং এর ফলে উৎপাদন বাড়বে, চাকরির ক্ষেত্র বাড়বে এবং আমেরিকান শ্রমিকদের আয় বাড়বে।

বৃহৎ কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র দূর হবে এবং বাজেট ঘাটতিও কমে যাবে। করদাতাদের বৃহদাংশ হল মধ্যশ্রেণী। বৃহৎ কর্পোরেটগুলো বেশি অর্থ আয় করে কিন্তু কর প্রদান করে কম। রেগানের সময়েও দেখা যায় যে, চলমান আয়ের কর প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তার প্রশানের শুরুতে সর্বেচ্চ কর ছিল ৭০%।

তার সময়ের শেষ দুই টার্মে করের পরিমান কমে গিয়ে দাড়ায় ২৮%। তার মানে দাড়ায় ২৫ হাজার ডলার আয়কারী আর ২৫০ হাজার ডলার আয়কারী উভয়ই একই হারে কর দেয়। এটি দ্বিতীয় শ্রেণীর জন্য সুবিধাজনক কারণ সে বেশি খরচ করতে পারে যা ২৫ হাজার ডলার আয়কারী করতে পারে না। সারা দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নব্য সা¤্রাজ্যবাদের প্রভাব অথবা সরাসরি নিয়ন্ত্রন থেকে মুক্তি নয়। মার্কিন যুক্করাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন ব্যক্তিরা আছেন যার তৃতীয় বিশ্বে ব্যক্তি মালিকানাধীণ কর্পোরেশনগুলোর বিনিয়োগ নিরাপদ রাখার জন্য‘ঝুকি বিশ্লেষন’ করেন।

এসব কথিত মুক্ত একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমেরিকার ভবিষ্যত নেতাদের কি শিক্ষা দেয় সে বিষয়ে খুবই সতর্ক। এসব ক্যাম্পাসে রয়েছে আরওটিসি কর্মসূচি। বড় বড় সংস্থাগুলো এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ যোগান দেয় এবং এগুলোর ‘বোর্ড অব ট্রাস্টি’ তেও থাকে ধনী ব্যবসায়ীরা। অনেক শিক্ষক-প্রশাসক অত্যন্ত গভীরভাবে যুক্তি দিয়ে বলেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে নিরপেক্ষ পন্ডিতদের স্বাধীন সমাজ, জাগতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে এক জ্ঞানমন্দির। বাস্তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই বিভিন্ন মার্কিন বৃহৎ কর্পোরেশনের বিপুল পরিমানের স্টকের মালিক।

অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বামপন্থী বা সা¤্রাজ্যবাদ বিরোধী প্রফেসর নিয়োগ দেয়া হয় না। শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করতে পারে, আন্দোলন করতে পারে কিন্তু এর খুবই সামান্য প্রভাব পড়তে পারে। সা¤্রাজ্যবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রফেরসরদের বৈষম্যের দৃষ্টিতে দেখা হয়। যদি কোন প্রফেসরের বিশ্বাস ও মতবাদ কোন মতান্তর সৃষ্টি না করে তবে তাদের নিরপেক্ষ ও বস্তুবাদী মনে করা হয়। ‘মুক্ত ও বহুত্ববাদী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা তাদের ক্লাসে আর্থ-রাজনৈতিক বিষয়ে কোন বিতর্কিত প্রেক্ষাপট তুলে ধরার আগে দ্বিতীয় বার চিন্তা ভাবনা করেন।

উন্নত মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চায় যেন তাদের অনুষদগুলো নিরপেক্ষ হয়। কিন্তু নিরপেক্ষ ও বস্তুবাদী ধারণাটি শুধুমাত্র একটি চুক্তি যা শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী হওয়ার অল্প সুযোগ দেয়। এটি স্পষ্টভাবে ক্ষমতাসীন নব্যসা¤্রাজ্যবাদের অনুকূলে। মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় নিজেকে মুক্তিচিন্তার আশ্রয়স্থল হিসেবে জাহির করে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে যে, উচ্চ শিক্ষার গড়পড়তা প্রতিষ্ঠানগুলোর আনুগত্য এথেন্সের চেয়ে স্পার্টার কাছেই বেশি।

মার্কিন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বুদ্ধিবৃত্তিগত উৎস হিসেবে যতটুকু ভূমিকা পালন করে, তার চেয়ে বেশি কাজ করে ভাবাদার্শ তৈরির কারখানা হিসেবে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সা¤্রাজ্যবাদ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয় সামান্যই। বরং এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা সমাজ ব্যবস্থা হিসেবে পুজিবাদের কাছেই তাদের ভবিষ্যৎ বন্ধক রাখে। সবশেষে লেখক ‘প্রকৃত বিপ্লব’ নামক ধারণার প্রস্তাব করেছেন। নীতি সূত্রবদ্ধকরণ তাদের দ্বারা করা উচিত যারা এর ফলাফলের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

এ বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন,“ “যাদেরকে কোন দিনই সুপার মার্কেটে ঢুকতে হয়নি বা খাবারের দাম নিয়ে ভাবতে হয় নি, তারাই নীতি তৈরি করে সেসব মানুষদের জন্য, যাদেরকে কানাকড়িটি পর্যন্ত হিসেব করে খরচ করতে হয়.................... স্বাস্থ্য নীতি সূত্রবদ্ধকরণ করা হয় সেসব লোকের দ্বারা যাদের কখনই পাবলিক হাসপাতালে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয় না.................... দিবাযতেœর নীতিগুলো পরিকল্পিত হয় তাদের দ্বারা যাদের অনেক আয়া আছে”....এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে কিন্তু এই ধরণের অভিজ্ঞতা একজন লোককে নীতির পূর্ণ খসড়া তৈরি ও সূত্রবদ্ধকরণের জন্য প্রস্তুত করে না। এ ধরণের লোকের অভিজ্ঞতা নীতি তৈরির প্রক্রিয়ায় অবদান রাখতে পারে এবং তাদের মতমতগুলো বিবেচনায় রাখতে হবে। আরেকটি বিকল্পের কথা তিনি বলেছেন তা হল সিআইএ এর অর্থ যোগান বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ এটির অপব্যবহার হচ্ছে। এসব গোয়েন্দা সংস্থার এখতিয়ার শুধু তথ্য সংগ্রহের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত।

তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসব সংস্থার অন্তর্ঘাতমূলক ও সহিংস তৎপরতা নিষিদ্ধ করা দরকার। আমি এই নীতির সাথে একমত কিন্তু এটা বাস্তব হওয়ার কোন সম্ভবনা দেখছি না। কেবল সরকারের হাতেই রাষ্ট্রের লাগাম থাকা দরকার। কোন রকম ফাকফোকরের সুযোগ না রেখে সকল প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের নির্বাচনী ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা কঠোরভাবে বেধে দেয়া দরকার। এসব পদক্ষেপ নেয়া হলে আগে থেকেই প্রার্থী বাছাই ও নির্বাচনী ফলাফল নির্ধারণে অর্থের ক্ষমতাকে ব্যপকভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

গণমাধ্যমের গণতন্ত্রায়নও হওয়া দরকার। ছাড়পত্র পাবার জন্য জনস্বার্থ পূরণের যে শর্ত রয়েছে, সেই বাধ্যবাধকতা শুধু নির্বাচনের সময়ই নয় বরং সারা বছর জুড়ে র‌্যাডিক্যাল ও ভিন্নমতাবলম্বীসহ সকল দৃষ্টিভঙ্গী প্রচারের জন্য টেলিভিশন ও বেতার কেন্দ্রগুলোর সমপরিমান প্রচার-সময় বরাদ্দ করা দরকার। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও ভর্তুকি দিয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিবেশ সম্মত আবাদ উৎসাহিত এবং পর্যায়ক্রমে রাসায়নিক ও কীটনাশক সারের ব্যবহার এবং গবাদিপশুকে হরমোন প্রদান দ্রুত বন্ধ করতে হবে। ভূমি, বায়ু ও জলের ব্যাপক পরিশোধনসহ পরিবেশ পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষনের জন্যে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া দরকার। তিনি আয়করের পুনঃপরিবর্তনের কথা বলেছেন যেখানে কোন ফাকফোকর থাকবে না এবং গরীব জনগণের কর সংকোচনের ব্যবস্থা থাকবে।

তিনি আরও বলেছেন, স্বাস্থ্য পরিচর্যার ক্ষেত্রে সিঙ্গেল-পেয়ার পদ্ধতির কথা যা অনেকটা সার্বজনীন স্বাস্থ্য পরিচর্যার মত। রাজস্ব সংক্রান্ত নীতি পরিবর্তন করতে হবে যাতে ব্যয়ের ঘাটতি থাকবে না, চাকরির ক্ষেত্রে সামাজিক ন্যায়পরায়নতা থাকবে এবং দেশে ও দেশের বাইরে দরিদ্রদের ওপর শোষণ বন্ধ করে শ্রেণী যুদ্ধের অবসান করতে হবে। তিনি এক্ষেত্রে ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের ব্যাপক ব্যয় কমাতে বলেছেন এবং আরও ব্যয়ের জন্য কর ধার্যের প্রস্তাব করেছেন। যে পুজিপাতিদের কাছ থেকে বর্তমানে ঋণ করে, তাদের কাছ থেকে আরও কর আদায় করেই সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে ঘাটতির অবসান ঘটতে পারে। বিনিয়োগের জন্য ভর্তুকি ও মুনাফার নিশ্চয়তা দেবার মতো উৎকোচ ধনীদের না দিয়ে বরং সরকারের উচিত জনসাধারণের কল্যাণার্থে মুনাফার-জন্য-নয় খাতগুলোতে পুজি বিনিয়োগ করা।

আইন ও আদালতসহ সকল প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে বর্ণ ও নারী-পুরুষ বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে। প্রয়োজন ব্যাপক ফেডারেল কর্মসংস্থান কর্মসূচি, যা সাম্রাজ্যর কাছ থেকে জনগনেণর সম্পত্তি নিয়ে প্রজাতন্ত্রের বিনির্মানে ব্যয় করবে। একজন পক্ষপাতহীন ব্যক্তি এই নৈতিক ভিত্তিগুলোর সাথে কি তর্ক করতে পারে? তবে লেখক শুধুমাত্র বামপন্থী দৃষ্টিকোন থেকে দেখেছেন। আসল সমস্যা হল সরকারের উপর্যুক্ত কাজ করা। গতানুগতিক সরকার এটা শুরু করার সাহস পাবে না।

যেকোন উন্নয়নমূলক পরিবর্তন হবে রহপৎবসবহঃধষ. তারপরে আছে শক্তিশালী উচ্চ শ্রেণীকে সঠিকভাবে খুজে বের করা। এটা ভাবা ঠিক না যে তারা যে ক্ষমতার অধিকারী তা সহজে ছেড়ে দেবে বা আদৌ ছেড়ে দেবে কি না। আমি বইটি উপভোগ করেছি এবং কিছু উন্নয়নমূলক চিন্তাশীল যে আছে তা আমাকে প্রেরণা যুগিয়েছে। এটি ছিল ১৯৯৫ সালে লেখা। সুতরাং আমাদের বর্তমান আর্থ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ড. প্যারেন্টি কে নিয়ে আসতে পারলে চমৎকার হবে।

বইয়ের লেখক ৫০০ বছরের পূর্বের ইউরোপ থেকে বর্তমান আমেররিকান সা¤্রাজ্যবাদের পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন। বিশ্ব ইতিহাসে সা¤্রাজ্য্যবাদ সবচেয়ে পরাক্রমশালী শক্তি। লেখকের মতে সা¤্রাজ্যবাদ এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি জাতির প্রভাবশালী আর্থ-রাজনেতিক ব্যক্তিরা নিজেদের উন্নতিসাধনের জন্য অন্যদের জমি, শ্রম, কাঁচামাল এবং বাজার দখল করে নেয়। পশ্চিম ইউরোপীয় সা¤্রাজ্যবাদের প্রথম শিকার হয়েছিল অন্য ইউরোপীয়রা। প্রায় আটশো বছর আগে আয়ারল্যান্ড যে দেশটির প্রথম উপনিবেশ হয়েছিল , সেটিই পরবর্তীকালে ব্রিটিশ সা¤্রাজ্য নামে পরিচিত ।

পদ্ধতিটি ইউরোপে স্থায়ী থাকে যখন পশ্চিম ইউরোপ, বিশেষ করে ইংরেজরা পূর্ব ইউরোপ আক্রমন করে উপনিবেশ স্থাপন করে। এটা ছিল সা¤্রাজ্যবাদের শুরু। উপনিবেশ স্থাপন ছিল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে প্রভাবশালী দেশ অন্য দেশে আক্রমন করে এবং ওই দেশ পরিচালনা করার জন্য নিজেদের পছন্দের নেতা বসায়। এটি একটি ব্যয়বহুল পদ্ধতি মনে হতে পারে, বাস্তবিকই পুঁজিবাদ বিস্তারের জন্য ব্যয়বহুল। সা¤্রাজ্যবাদ পুঁজিবাদ থেকেও পুরোনো।

সম্প্রসারণ বা বিস্তার হচ্ছে পুঁজিবাদের জন্য অপরিহার্য। পুঁজিবাদের চাবিকাঠি হচ্ছে টাকা বিনিয়োগ যেখানে বিনিয়োগের পরিমানের চেয়ে আয়ের পরিমান বেশি হয়। এর অর্থ পুঁজিবাদিরা অবিরামভাবে অতিরিক্ত টাকা আয়ের পথ খোজে। একজন অবশ্যই লাভের জন্য এবং আধিপত্য বজায়ের জন্য বিনিয়োগ করবে। সম্প্রসারণমুখী চরিত্রের কারণেই শুধূ নিজদেশে সীমাবদ্ধ থাকার প্রবণতা পুঁজিবাদের একেবারেই নেই।

প্রাকৃতিক সম্পদ দখল করাই পুজিবাদের বৈদেশিক সম্প্রসারণের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। এর মূল উদ্দেশ্য হল উৎপাদন খরচ কমিয়ে সর্বোচ্চ মুনাফা তোলা। মার্কিন কর্পোরেশনগুলো শিল্পোন্নত দেশসমূহ থেকে যে হারে মুনাফা তুলতে পারে: কম মজুরি, কর, কোন ধরণের কল্যান ভাতা না দেয়া, দুর্বল শ্রমিক ইউনিয়ন, কর্মস্থলে দুর্ঘটনা হতে সুরক্ষা বিষয়ক পরিবেশ সংরক্ষমূলক আইনের অনুপস্থিতি ইত্যাদি কারনে তৃতীয় বিশ্বে পারে তার ৫০ শতাংশ বেশি। টিকে থাকার জন্য বিনিয়োগকারীদের সা¤্রাজ্যবাদী হওয়া একান্ত প্রয়োজনীয় শর্ত নয়। কিন্তু এটা হচ্ছে আধুনিক পুঁজিবাদের অন্তর্নিহিত প্রবণতা ও স্বাভাবিক বৃদ্ধির ধারা।

সা¤্রাজ্যবাদী হয়ত মুনাফার একমাত্র পন্থা নয়। কিস্তু এটা সবচেয়ে লোভনীয় পন্থা। বর্তমানে পূর্বে পরিচালিত ঔপনিবেশিক কাঠামো দেখা যায় না। যা দেখা যায় তা হল শক্তিশালী দেশগুলোর দ্বারা দুর্বল দেশগুলোর ওপর সা¤্রাজ্যবাদী অত্যাচার, যা অনেকটা লঘু দৃষ্টিগোচর অর্থাৎ কম চোখে লাগার মত। সা¤্রাজ্যবাদী দেশগুলো একজনকে বা একটি দলকে মুৎসদ্দি বা দালাল হিসেবে তৈরি করে।

নিজের দেশকে বিদেশী স্বার্থের গ্রাহক-রাষ্ট্র হিসেবে বহাল রাখতে সহায়তাকারী শ্রেণী হচ্ছে মুৎসদ্দি শ্রেণী। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য অবধারিতভাবে লাভজনক হবে, এমন শর্তে যেসব রাষ্ট্র বিনিয়োগের সুযোগ দেয়, সেগুলোকেই গ্রাহক রাষ্ট্র বলে। এই সম্পর্ককে বিভিন্নভাবে নামকরণ করা হয়েছে : অনানুষ্ঠানিক সা¤্রাজ্য, উপনিবেশবিহীন উপনিবেশবাদ, নয়া উপনিবেশবাদ, নয়া সা¤্রাজ্যবাদ। ” মুৎসদ্দিরা প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর চাহিদা পূরণের চেষ্টা করে। প্রকৃতপক্ষে সে হলো পুঁজিবাদি প্রথম বিশ্বের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের হাতের পুতুল।

লেখক একে আধুনিক উপনিবেশবাদ বা আধুনিক সা¤্রাজ্যবাদ নামে আখ্যায়িত করেছেন। আমেরিকা ব্রিটিশদের জায়গা নিয়েছে প্রভাবশালী প্রথম বিশ্বের আধুনিক সা¤্রাজ্যবাদ জাতি হিসেবে। আমেরিকার স্কুলগুলোতে আজ ‘উন্নয়ন তত্ত্ব’ পড়ানো হয়। উন্নয়ন তত্ত্ব আবার আধুনিকায়ন তত্ত্ব হিসেবে পরিচিত। এই তত্ত্ব অনুযায়ী পশ্চিমা বিনিয়োগের ফলে দরিদ্র দেশের শ্রমিকেরা আধুনিক সব ক্ষেত্রে বাড়তি মজুরিতে অধিক উৎপাদনশীল কাজ পাবে।

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে দেখা হয় অনুন্নত দেশ হিসেবে। বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে যা ব্যবহার করা হচ্ছে ‘উন্নয়নশীল দেশ’ হিসেবে। অনুন্নয়ন হচ্ছে কতগুলো সামাজিক সম্পর্ক, যা জোর করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। পাশ্চাত্যের উপনিবেশবাদীদের আবির্ভাবের কারণে তৃতীয় বিশ্বের মানুষদের বিকাশ পিছিয়ে পড়ে। আমেরিকার এসব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে হস্তক্ষেপ দেখানো হয় মানবিক প্রচেষ্টা ও অনগ্রশীল জনগণকে সাহায্য বা দান হিসেবে।

এই তত্ত্বে বলা হয় যে পশ্চিমা কর্পোরেট বিনিয়োগ দরিদ্র দেশগুলোর কর্মীদের উন্নতিতে সাহায্য করবে কারণ পুঁজি বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যবসায়ীরা লভ্যাংশ পুনঃবিনিয়োগ করবে এবং এভাবে প্রচুর চাকরি, পণ্য, ক্রয়ক্ষমতা ও বাজার বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু বাস্তবে কখনই তা ঘটে না বা ঘটার সম্ভাবনাও নেই। অন্যদিকে দরিদ্র দেশগুলোর অর্থনীতি ধ্বসে পড়ে কারণ সেখানে কথিত পুনঃবিনিয়োগ ঘটে না। প্রকৃতপক্ষে পুনঃবিনিয়োগ হল দরিদ্র জাতিগুলোর অবকাঠামো নতুনভাবে সজ্জিত করা যাতে তারা মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য আরও বেশি করে কর্পোরেশনগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণের পরিমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা আরও দরিদ্র হয়ে পড়ে।

তাদেরকে কৃত্রিম অর্থনৈতিক পদ্ধতিতে সীমাবদ্ধ করে রাখার কারনে তারা নিজেদেরকে মুক্ত করতে পারে না। তাই সা¤্রাজ্যবাদ যা তৈরি করেছে তাকে লেখক ‘অপউন্নয়ন’ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।