আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবিতজন (পর্ব১ সম্পাদিত)- শোভন মুহাম্মাদ

ছেলেটা ক্লান্ত হয়ে ঘাড় থেকে নামিয়ে রাখলো বস্তাটা। প্রচন্ড খাটনি হচ্ছে। গরমে ও অস্থির অবস্থা। এত গরম আগে কখনো খেয়াল করেছে কিনা মনে পড়ছে না তার। হয়তো অতিরিক্ত খাটনির কারনে গরমটা বেশী মনে হচ্ছে।

ছেলেটা বস্তাটার দিকে তাকালো। ওটার ভিতরে একটা মেয়ে। বয়সে তার চেয়ে বড় হতে পারে। ওজন তো বেশীই। হয়তো আসলে কম, কিন্তু তার ভার বহনে অভ্যাস নেই তার ওজন বেশী লাগছে হয়তো।

ছেলেটা বস্তার মুখটা একটু খুলে দিল। আগুনে ঝলসে বিভৎস হয়ে আছে মুখ। সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো ছেলেটি। চোখ সরিয়ে উঠে দাড়ালো, দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন। শহরটা কতো দূরে।

বিশ্রাম নেয়া দরকার। অথচ তার হাতে সময় নেই। সাতদিনের ভিতর শহরে পৌছাতেই হবে। অথচ চারদিন হয়ে গেল প্রায়, শহরের দেখা নেই।
“এমন করছো কেন?”
গলার আওয়াজ শুনে ভয়ানক চমকে উঠলো ছেলেটি।

অবাক হয়ে দেখল কথা বলছে মেয়েটা। দেখার পর থেকে এই প্রথম কথা বললো। এর আগে ছেলেটিকে দেখে পশুর মতো চিৎকার করেছে শুধু। আহ্ মানুষের কন্ঠে কথা! জীবিত মানুষের মুখে কথা! এত মিষ্টি লাগবে ভাবে নি। কি বললো মেয়েটা? খেয়াল করা হয়নি।


“কি বলছ?”
“খামোখা খাঁটনি করছো। আমি বাঁচবোনা”
“অবশ্যই বাঁচবে। ” ছেলেটা ঝুঁকে পড়ে বস্তার এদিক সেদিকে দেখতে বললো,
“বাঁচতেই হবে। ”
“আমার শরীর যেভাবে পুড়েছে বাঁচার কোন আশাই নেই। বরং বাড়তি খাঁটনি করে তুমি মারা যাবে।


“তোমাকে মরতে দিচ্ছিনা। সারা পৃথিবীতে আর কোন মানুষ বেঁচে আছে কিনা কে জানে। তোমাকে মরতে দেয়া যায়না। ”
“মানুষ আছে। আর তাদের জন্যই আমার এ অবস্থা।


এমন আশংকাই করেছিলো ছেলেটি। মনটা খারাপ হয়ে গেল তার।
“কি হয়েছিল?”
“চার-পাচঁজন মানুষ। দেখতে ভাল মনে হয়নি আমার। কথা আর হাবভাবে বুঝলাম আমাকে মেরে ফেলতে চায়।

আমি দৌড়াই। ওড়া তাড়া করছিল। শেষ পর্যন্ত ধরা দেইনি দেখে বোমা ছুড়ে মারলো। ”
হতভম্ব হয়ে গেল ছেলেটি। এও কি সম্ভম।

মানুষ কিভাবে এত খারাপ হয়? লোক গুলো কি পাগল ছিল? মানুষ যদি থাকেও এখন অল্প কিছুই আছে। এই অল্প কিছুকে এভাবে মারে কিভাবে? মেয়েটাকে আনার সময় তার পাশে তাজা কিছু ছাঁপ দেখে অবাক হয়েছিল। এখন অবাক হচ্ছে এমন ভয়াবহ আহত দেখেও সাহায্য না করে কিভাবে কেউ পারলো। পাগল বা বদ্ধ উম্মাদ হয়ে গেছে বোধ হয় ওরা। মেয়েটিকে তাইই বললো।


“আসলে মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিল ওরা। ওদের কথা বাদ দাও।   তোমার নাম বলো?”
“নাম বলে কি হবে? খামোকা কষ্ট পাবে তুমি। আমার অবস্থা যথেষ্ট খারাপ, আমি বুঝতে পারছি। ”
ছেলেটা হাসলো একটু, “কোন খারাপ অবস্থা নাই তোমার।

এইটা আসলে একটা লাইফ সাপোর্ট ব্যাগ। তোমার সারা শরীরে মির্দারাইটন দেয়া হয়েছে। আল্লাহর দয়া জিনিসটা আমার সাথেই ছিল। তোমার শরীর সাড়ছে ধীরে ধীরে।  তবে এটা সত্যি যে খুব দ্রুত তোমাকে কোন ভালো হাসপাতালে পৌছানো লাগবে, যেটা এখন সম্পূর্ণ অসম্ভব।

কিন্তু আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। সম্ভবত, আমরা দুজনেই মারা যাবো এভাবে। কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না? তোমাকে বাচাঁতে না পারলে আমারইবা বেঁচে কি হবে? নিঃসঙ্গতা আর ভালো লাগে না আমার। ”
“নিঃসঙ্গতার ব্যাপারটা আমি জানি। কিন্তু দুজনে মারা যেয়ে লাভটা কি? তুমি বেঁচে থাকো।

হয়তো বা নিঃসঙ্গতা কেঁটে যাবে তোমার। মানুষ আরো আছে তাতো বললামই তোমাকে। বাঁচলে সঙ্গি পাবেই। ”
“যদি না পাই? আমার আর ভাল লাগছে না। দু বছর সম্পূর্ণ একা একা আছি আমি।

  এতদিন একটা মানুষও আমি দেখিনি। অবশ্য আমার নিজের ছেলেটার কথা আলাদা। ”
“তোমার ছেলে আছে? বলো কি? তোমার বয়স কতো?”
“হ্যাঁ তা আছে। আমার বয়স ১৭ বছর। বাবা আরো আগে বিয়ে দিয়েছিল আমার।

ভাগ্যিস দিয়েছিল, বলে এখন আমার নিজেরই একটা ছেলে আছে। দু বছর বয়স ওর। আচ্ছা তোমার বয়স কতো?”
“১৩ বছর। ”
“১৩?আমি তো ভেবেছিলাম অন্তত ১৯ হবে। ওজন বেশী লাগছিলো।


“ওজন বেশীই আমার। তুমি আর পাগলামো কোরোনা। এভাবে কিছুতেই নিতে পারবে না আমাকে। ছেড়ে দাও। নিজে বাঁচ।


“হুমম, আমি বাঁচি আর তুমি অসহায় ভাবে মানুষের শুধু খারাপ দিকটা দেখে মারা যাও। তোমার জন্য যদি এখন মারা যাই তাহলে মানুষের ইজ্জত বাঁচে। তুমিই বলো মানুষের প্রতি তোমার ধারণা খারাপ না?”
মেয়েটা সে কথার জবাব দিলো না। বললো,
“বাচ্চাটার জন্য বাঁচ?”
“কোন দরকার নাই। ওর একটা মা দরকার-বয়স হলে স্ত্রী।

  কিছুই কি দিতে পারবো আমি ওকে? বিদঘুটে ভয়ংকর একটা ভবিষ্যত হতে যাচ্ছে ওর। পশুর মতো জীবন। তা আমি দেখতে পারবোনা। তাই আমাদের বাচাঁ না বাঁচায় তাই কিছু আসে যায়না। ”
“তুমি পাগল! ওদের মতই বদ্ধ উম্মাদ তুমি।

একটা বাচ্চার জীবনের প্রশ্ন এটা আর তুমি কি হাবিজাবি বলছ! ”
“পাগল হতে পারি। বহু দিন নিঃসঙ্গ দিন কেটেছে আমার। ছেলেটাকে শীতল কক্ষে আটকে রেখেছিলাম ভাইরাসের ভয়ে। সম্পূর্ণ একা ছিলাম তখন। দুঃস্বপ্ন দেখতাম প্রতিদিন।

পাগল হয়ে যেতে ও পারি। ”
“ছেলেটাকে এখন কোথায় রেখে এসেছ?”
“সেখানেই যাচ্ছি আমরা। একটা নার্সিং হোম। ”
“একা একা আছে কিভাবে ওইটুকু বাঁচ্চা। দুবছর বয়স বললে না?”
“ও একা একা থাকতে পারে।

ট্রেনিং দেয়া আছে। কখন কি মরে টরে যাই তাই শিখিয়ে রেখেছি আগে থেকেই। তাছাড়া ওইটা একটা স্বয়ংক্রিয় শিশুপালন কেন্দ্র। তাই কোন ভয় নেই আমার। ”
 
 
[এইটা গল্পের অংশ না: আশ্চর্য কাহিনী অনেকক্ষন পর ঢুঁকে দেখি আমার টিউনটাই নাই।

কমেন্টের কি জোর! প্রথমে বিরক্ত মনে ভাবলাম কোন ভুল করে বসলাম কিনা? পরে দেখি না, কাহিনী অন্য। ভাই, আবার মুছে দিলে আবারও এডিট করে গল্পের ১ম খন্ডটাই বারবার দেব আমি। মজা পাইছি মামা!]

সোর্স: http://www.techtunes.com.bd/     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।