আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভুলে যেতে চাই কিছু অতীতকে!!



[১] ১৬ জানুয়ারি, ২০১৩। কাছের এক কাজিনকে ব্লাড দিয়ে বিকাল ৪টার বাসে খুলনা ছাড়লো নিল। যদিও পজিটিভ ব্লাড গ্রুপ তারপরেও পাওয়া যাচ্ছিল না। আর নিলও সবে ইন্টার ২ন্ড ইয়ারে উঠবে উঠবে। এই বয়সে ব্লাড দেওয়া ঠিক না তারপরেও দিয়েছে।

হাজার হলেও তার আত্মীয়ই তো। খুলনা থেকে ঝিনাইদহ প্রায় তিন ঘন্টার রাস্তা। জানালার পাশের সিটে বসে হেডফোনটা কানে দিয়ে লিংকিন পার্কের "ফ্রম দ্যা ইনসাইড" গানটা প্লে করে ফেসবুকে লগইন করলো। গত বেশ কিছুদিন ধরেই নিলের মন হালকা খারাপ। যদিও নিল ২০০৮ সাল থেকে ফেসবুক ব্যবহার করে, তারপরেও ফেসবুকে তার কোনো মেয়ের সাথেই তেমন একটা কথা হতো না।

এসএসসি পরীক্ষা দেবার পর ফেসবুকে রিমি নামের একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়। রিমির সাথে তার অনেক ভালো বন্ধুত্ব ছিল। তবে রিমি মাঝে মাঝে এমন ভাবে কথা বলতো যে নিলের মনে হতো মেয়েটা হয়তো তাকে পছন্দ করে। কিন্তু কখনো শোনার সাহস হয় নি। এভাবে কয়েকটা মাস কেটে যায়।

ডিসেম্বরের শেষের দিকে নিল জানতে পারে রিমির বয়ফ্রেন্ড আছে। নিল কিছুটা কষ্ট পায় এটা জানার পরে কারন সে সবেমাত্র রিমিকে পছন্দ করা শুরু করেছে। এরপরে কিছুদিন পর হঠাত কেন জানি রিমি নিলকে ফেসবুকে ব্লক দেয়। রিমির বয়ফ্রেন্ড আছে এইটা জানার পরেও নিল কখনো রিমিকে বুঝতে দেয়নি সে রিমিকে পছন্দ করে। ফ্রেন্ডলি ব্যবহারই করতে থাকে আগের মত।

হঠাত এমন ভালো একটা ফ্রেন্ডকে হারানোর কারনে তাই নিলের মনটা খারাপ। কোনো কাজই স্বাভাবিক ভাবে করতে পারছেনা। অনেক ভালো একটা ফ্রেন্ডকে হারিয়েছে বলে তার মনটা বারবার কষ্ট পাচ্ছে।   বাস চলছে। নিল ফেসবুকে তার এক ফ্রেন্ডের স্টাটাসে কমেন্ট করলো।

কিছুক্ষণ পর একটা নোটিফিকেশন আসলো। নিল দেখলো আর কমেন্টে একটা মেয়ে লাইক দিয়েছে। নিল কিছুটা অবাক হলো কারন সে লাইক পাবার মত তেমন কোনো কমেন্টই করে নি। একটু কৌতুহলি হয়েই মেয়েটার প্রোফাইল ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। মেয়ের আইডির প্রাইভেসি দেখেই বোঝা গেল সে অপরিচিত কাউকে ফ্রেন্ডলিস্টে এড করে না।

জানে মেয়ে তার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করবেনা, তারপরেও ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠালো মেয়েটাকে। বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে একটা ঘুম দিলো নিল। রাতে ১০টার দিকে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকে ঢুকলো। অনেকগুলা নোটিফিকেশন এসে জমা হয়ে আছে। হঠাত বাসের ভেতরের সেই মেয়েটার কথা মনে পড়লে নোটিফিকেশন চেক করতে বসে গেল।

কয়েকটা নোটিফিকেশন চেক করার পরেই দেখলো স্নিগ্ধা তার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করেছে। স্নিগ্ধা মানে সেই মেয়েটা। কিছুটা অবাক হলেও মনে মনে খুশিই হলো নিল। এক মুহূর্ত ভেবে স্নিগ্ধার টাইমলাইনে ধন্যবাদ জানিয়ে একটা পোস্ট দিল নিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই রিপ্লাই আসলো।

এরপরে টুকিটাকি কথা বলতে লাগলো। জানতে পারলো মেয়েটা ক্লাস টেন এ পড়ে। ঢাকার উত্তরার কোনো একটা সেক্টরে থাকে। এখন চট্টগ্রামে তার নানাবাড়িতে বেড়াতে গেছে। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কথা হলো।

  নিলের এখনো স্পষ্ট মনে আছে, সেদিন তার ঐ পোস্টটাতে দু'জনের মোট ৭৪টা কমেন্ট ছিল!!!   [২] রাত ১২টা ২০ এর দিকে ফেসবুকে একটা ম্যাসেজ আসে স্নিগ্ধার আইডি থেকে। কিছুটা অবাক হলো নিল ওর ম্যাসেজ দেখে। ওপেন করে দেখে সে লিখেছে, "আমরা ইনবক্সে কথা বলি??" নিল শুনলো কোনো সমস্যা কিনা। সে বললো তার বয়ফ্রেন্ড ওয়ালে আমাদের কথোপোকথন দেখে কিছু মনে করতে পারে। তাই ইনবক্সে কথা বলায় ভালো।

এরপর নিল স্নিগ্ধার সাথে ম্যাসেজিং করে কথা বলতে লাগলো। কিছুদিনের মধ্যেই তাদের সম্পর্কটা অনেক ভালো একটা বন্ধুত্বের পর্যায়ে চলে গেল। নিলের ছিল যে কাউকেই অনেক সহজে আর অনেক দ্রুত আপন করে নেবার ক্ষমতা। হয়তো এখনো আছে!! নিল তার সবরকম কথাই স্নিগ্ধার সাথে শেয়ার করতো। স্নিগ্ধাও করতো তবে নিলের থেকে একটু কম।

সেটা নিয়ে নিলের আফসোস ছিল না। সে শুধু ভাবতো রিমি চলে যাবার পরে সে যে এত দ্রুত এত ভালো একটা মানুষ পাবে তার লাইফে যা সে কখনো কল্পনাও করতে পারে নি। এমনকি রিমির সব কথাও সে স্নিগ্ধার কাছে বলে। তার লাইফের খারাপ একটা সময়ে স্নিগ্ধার আগমন যে তার লাইফটা আবার আগের থেকেও ভালো করে দিবে এটা সে কখনো ভাবে নি। সত্যিই অনেক ভালো সময় যাচ্ছে নিলের।

আর আগের পুরনো কষ্টের লাইফ থেকে বেরিয়ে আসতে স্নিগ্ধাও তাকে অনেক সাহায্য করছে। মাঝে পরীক্ষার কারনে একসময় স্নিগ্ধা ফেসবুকে আসা কমিয়ে দিবে বলে নিলের কাছ থেকে তার ফোন নম্বরটা নিলো। এরপর থেকে তাদের ফোনেই ম্যাসেজিং বেশি হতো। এমনকি ফেসবুকে গেলেও স্নিগ্ধা অফলাইনে থেকে শুধু নিলের সাথেই ম্যাসেজিং করতো। এরই মধ্যে স্নিগ্ধা বললো তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে সময়টা ভালো যাচ্ছে না।

ছেলেটা অনেক খারাপ আর তার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করে। কিছুদিন পর হঠাত শুনলাম সে স্নিগ্ধার সাথে ব্রেক-আপ করেছে। ওর নিজের মনটাও অনেক খারাপ। যেভাবে পারতো ওকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করতো নিল। কিছুদিনের মধ্যে ও অনেক রিকভার করে নিতে পেরেছিল নিজেকে।

  এপ্রিলের কোনো একটা দিনের কথা। নিল স্নিগ্ধার কাছে খুব ছোট একটা মিথ্যা কথা বলে। কথাটা তেমন সিরিয়াস কিছুও ছিল না। নিল স্নিগ্ধাকে খুশি করার জন্যেই বলেছিল। তবে সে এটাও ঠিক করে রেখেছিল কিছুদিন পরেই সে স্নিগ্ধাকে সত্যি কথাটা বলে দিবে।

তখন স্নিগ্ধা কতটা অবাক হবে ভেবেই নিলের হাসি পেল। কিন্তু কিভাবে জানি স্নিগ্ধা আগেই সত্যিটা জেনে যায়। তার তো নিলের উপরে অনেক রাগ। সে কখনো ভাবতেও পারেনি নিল তার সাথে মিথ্যা কথা বলবে। সত্যি বলতে নিল সাধারণত মিথ্যা বলে না।

কিন্তু স্নিগ্ধাকে খুশি করার জন্যেই সে সেদিন মিথ্যা বলেছিল। স্নিগ্ধা টানা নয় দিন নিলের সাথে কথা বলে না। এদিকে নিল তো সারাদিন খালি ফেসবুকের ইনবক্স চেক করে আর ফোন দুইটা হাতে নিয়ে বসে থাকে। কখন একটা ম্যাসেজ আসবে স্নিগ্ধার কাছ থেকে। এরই মাঝে নিল ফেসবুকে ও মোবাইলে স্নিগ্ধাকে প্রতিদিনই ম্যাসেজ দিতে থাকে।

নিলের কেন জানি মনে হয় ও ওর খুব কাছের একজনকে হারিয়ে ফেলেছে। খুব কষ্ট হতে থাকে নিলের। প্রতিটা মুহূর্ত যেন মিস করতে থাকে স্নিগ্ধাকে। নিল ঠিক বোঝে না, তার এই এত এত মিস করার, এত এত কষ্ট পাবার পিছনে কারন কি। তবে কি সে স্নিগ্ধাকে ভালোবেসে ফেলেছে??!! নিল ঠিক বুঝতে পারে না, এটা ভালো লাগা নাকি ভালোবাসা।

নয় দিনের চতুর্থ দিনে নিল কিছু না ভেবেই স্নিগ্ধাকে ফেসবুকে ম্যাসেজ দেয়। "ভালবাসি তোমায়। সত্যিই অনেক বেশি ভালবাসি। " সেদিন বিকালেই ম্যাসেজটা পড়ে স্নিগ্ধা তবে কোনো রিপ্লাই দেয় না। এরও আরো ৫ দিন পরে মানে নয় দিনের দিন স্নিগ্ধা রিপ্লাই দেয়।

তবে সে ভালবাসার ঐ ব্যাপারটা এড়িয়ে যায়। ওটা নিয়ে তেমন কোনো কথায় বলে না। পরে অবশ্য স্নিগ্ধার কাছে জানতে পেরেছিল নিল, ঐদিন ভালবাসার ঐ ম্যাসেজটা পাবার পরে খুব রাগ হয়েছিল স্নিগ্ধার।   [৩] ওদের মাঝে আবার কথা বলা শুরু হয় কিন্তু আগের মত আর হয় না। অনেকদিন পর হালকা হালকা হতো।

তবে নিল এতেও খুশি যে স্নিগ্ধা তার সাথে আবার কথা বলছে। জুলাই এর শেষ দিকে নিল এবার সরাসরি প্রোপোজ করে স্মিগ্ধাকে। স্নিগ্ধা বলে সে অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিল ব্যাপারটা কিন্তু কিছু বলেনি নিলকে। নিল জানে যে মেয়েরা অনেক আগে থেকেই অনেককিছু বুঝতে পারে। মেয়েরা খুব কম বয়সেই মনের দিক থেকে ম্যাচিউর্ড হয়ে যায়।

কলেজে পড়া একটা ছেলে যখন হাতে ব্যাট নিয়ে মাঠে বন্ধুদের সাথে খেলতে যায়, ক্লাস টেন এ পড়া একটা মেয়ে তখন তার ভবিষ্যত নিয়ে ভাবা শুরু করে দেয়। নিল স্নিগ্ধাকে কোনো প্রকার চাপ দেয়নি যে রিলেশন করতেই হবে বলে। ও বলেছিল স্নিগ্ধা যেটা ডিসিশন নিবে সেইটাই হবে। স্নিগ্ধা কিছুদিন ভাবার সময় চায়। এদিকে নিলও ওর কথাবার্তা, কাজ সবকিছু দিয়েই স্নিগ্ধাকে বোঝানোর চেষ্টা করে ওর ভালবাসার কথা।

স্নিগ্ধা যতই ভাবে নিলকে নিয়ে, ততই অবাক হয়ে যায়। ততই যেন দূর্বল হয়ে পড়ে নিলের প্রতি। সে নিজেও বুঝতে পারে সে নিলকে ভালবাসতে শুরু করেছে। এসব কথা সে নিজেই নিলের কাছে বলতো। নিল জানতো তার আগের রিলেশনের কথা কিন্তু তাতেও নিলের কোনো সমস্যা ছিল না।

সত্যি বলতে সে স্নিগ্ধাকে এতটাই ভালবাসতো সে তার পুরো পৃথিবীটা জুড়ে শুধু স্নিগ্ধাই ছিল।   অবশেষে সেই দিনটি আসে। যে দিনের জন্যে নিল অপেক্ষা করে ছিল এতদিন ধরে। ৬ সেপ্টেম্বর স্নিগ্ধা নিলকে জানায় সে নিলকে ভালবেসে ফেলেছে। নিলের তো বিশ্বাসই হয় না।

মনে হয় সে যেন কোনো ঘোরের মধ্যে আছে। সে বারবার স্নিগ্ধাকে প্রশ্ন করতে থাকে সে একটু আগে যে ম্যাসেজটা নিলকে পাঠিয়েছে সেটা সত্যি কিনা। স্নিগ্ধা বোধহয় এক প্রকার বিরক্তই হয়ে গিয়েছিল বারবার নিলের ঐ প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে :p   নিলের জীবনটা খুব দ্রুতই যেন বদলে যেতে থাকে স্নিগ্ধার ভালবাসার ছোঁয়াতে। নিল মাঝে মাঝে ভেবে বের করতে পারেনা, একটা মানুষ অন্য একটা মানুষকে কিভাবে এতটা ভালবাসতে পারে??!! স্নিগ্ধা নিজেও মাঝে মাঝে নিলকে বলতো, "এতটা ভাল কেন বাসো আমাকে?? কেন নিজের ভালবাসা দিয়ে আমাকে আরো বেশি পাগল করে দাও?? কেন এত দূর্বল করে দিচ্ছো তোমার প্রতি?? আমাকে ছেড়ে কখনো যেওনা নিল। আমি পারবোনা তোমাকে ছাড়া থাকতে।

অনেক বেশি ভালবাসি তোমাকে। আমাদের ভালবাসাটা অনেক বেশি সত্য। অনেক বেশি পবিত্র। "   নিল জানতো সে নিজেও স্নিগ্ধাকে ছাড়া থাকতে পারবেনা। তার ওপরে আবার জীবনের প্রথম ভালবাসা।

জীবনের প্রথম ভালবাসার প্রতি সবাই আলাদা একটা গুরুত্ব দেয়। সবাই চাই এই ভালবাসাকে শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখতে। নিলও তাদের ব্যতিক্রম ছিল না। আর তাছাড়া আগে একবার মিথ্যা বলার কারনে সে ৯ দিন শাস্তি পেয়েছে। তাই এবার সে আরো বেশি সিরিয়াস।

মিথ্যা বলা তো দুরের কথা, সত্যি কথা গুলাও অনেক ভেবেচিন্তে বলতো। স্নিগ্ধাকে হারানোর ভয়টা নিলের মনে সবসময়ই থাকতো। আর স্নিগ্ধাকে হারানোর পরিনতিও সে খুব ভালভাবে জানতো। এই কারনেই হয়তো অনেক বেশি ভালবাসতো স্নিগ্ধাকে।   নিল আর স্নিগ্ধার দিনগুলো অনেক ভাল কাটছিল।

স্নিগ্ধা প্রায়ই নিলকে বলতো যে ওর ভাইয়া আর আম্মু ওর সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করে। ওর আগের রিলেশনের কথা ওর ফ্যামিলি জেনে ফেলছিল কোনো একভাবে। এরপর থেকেই ওর সাথে সবাই খারাপ ব্যবহার করে। তবে ও কাউকে বুঝতে দিত না ওর কষ্টগুলো।   নিল আর স্নিগ্ধার অনেক ছোট ছোট স্বপ্ন ছিল।

তবে নিলের স্বপ্নের পরিমাণ একটু বেশিই ছিল। স্বপ্ন ছাড়া মানুষ বাচে না। নিলও তার ব্যতিক্রম না। সে ওর সব স্বপ্নের কথায় স্নিগ্ধার কাছে বলতো। নিলের ইচ্ছা ছিল ওর পড়াশোনা শেষ হয়ে গেলেই ওদের রিলেশনের কথা দুইজনের ফ্যামিলিকে জানাবে।

স্নিগ্ধারও তাতে কোনো আপত্তি ছিল না। যেহেতু স্নিগ্ধারা চট্টগ্রামের মানুষ, তাই তার ফ্যামিলির প্রথম পছন্দ চট্টগ্রামের ছেলে। আর তা না হলে ছেলেকে বুয়েটে চান্স পেতে হবে। স্নিগ্ধা এই সবই নিলকে জানায়। তবে সে বলেছে সে নিলকে কোনো কন্ডিশন দিতে চায় না যে বুয়েটে চান্স পেতেই হবে অথবা মেডিকেলে চান্স পেতে হবে অথবা অন্যকিছু।

নিল ভবিষ্যতে যেমনই থাকুক না কেন সে নিলের সাথেই সবসময় থাকবে। নিলকে ছেড়ে কখনো যাবে না। নিল নিজেও ভাল একটা পজিশনে যাবার জন্যে চেষ্টা করতে থাকে।   স্নিগ্ধা মাঝে মাঝে বলতো ওদের এলাকার অনেক ছেলেই ওকে পছন্দ করে। এমনকি ওদের স্কুলের এবং ও যেখানে গিটার ক্লাস করতে যেত সেখানের একটা ছেলেও ওকে পছন্দ করে।

তবে ও বলতো যেই ওকে পছন্দ করুকনা কেন, ও তো শুধু নিলকেই ভালবাসে। নিল মাঝে মাঝে ওকে বলতো, "আচ্ছা স্নিগ্ধা , তোমার কি মনে হয় আমি তোমার জন্যে পারফেক্ট??" স্নিগ্ধা রাগ করে বলতো, "আরে বুদ্ধু আমি যেমন একটা ভালবাসার মানুষ আশা করতাম আমি তার থেকে আরো অনেক বেশি ভালো একজন মানুষকে পেয়েছি।  আমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে শুধুই তোমার অস্তিত্ব অনুভব করি। তোমাকে ছাড়া থাকার কথা কখনো কল্পনাই করতে পারিনা। "   প্রায় প্রতি রাতেই নিলের সাথে স্নিগ্ধার ফোনে কথা হতো।

এমনকি কুরবানীর ঈদের আগের রাতেও প্রায় রাত ৪টা ২০ পর্যন্ত কথা হয়। সকালে ঈদের নামাজ আছে এই বলে নিলকে বকা দিয়ে ওকে ঘুমাতে পাঠায় স্নিগ্ধা।   [৪] সবকিছুই ঠিক ছিল। ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়ে আসার পর সাড়ে ১০টা পর্যন্ত স্নিগ্ধার সাথে ফেসবুকে কথা হয় নিলের। ঐদিন স্নিগ্ধা বলে যে ঈদের দিন অনেক ব্যস্ত থাকবে সে।

বাড়ির কাজ অনেক। কিন্তু ফেসবুকে ম্যাসেজিং করতে করতে হঠাতই অফলাইনে চলে যায় স্নিগ্ধা। নিল কিছুটা অবাক হয়। পরে স্নিগ্ধার ফোনে কল দিলে রিসিভ করে না। এমনকি ফোনে ম্যাসেজ দিলেও আর রিপ্লাই দেয় না।

সেদিন অনেকবার ফোন আর ম্যাসেজ দিলেও স্নিগ্ধা কোনো রিপ্লাই দেয় নি। নিলের কিছুটা রাগ হতে থাকে। আবার অনেক চিন্তাও হতে থাকে। স্নিগ্ধার কিছু হলো কিনা এই ভেবে।   ঈদের পরদিনও স্নিগ্ধার কোনো খোজ নেই।

এবার সত্যিই অনেক টেনশন হতে থাকে নিলের। কিন্তু কিছুই তো করার নেই তার। তারও পরের দিন সন্ধায়  নিলকে একটা টেক্সট দেয় স্নিগ্ধা। নিলের ভিতরে যেন জীবন ফিরে আসে। পরে স্নিগ্ধার কাছ থেকে জানতে পারে ঈদের দিন বিকালে ওর আম্মু আর ভাইয়া ওকে অনেক বকাঝকা করে আর ফোন নিয়ে নিয়েছিল।

তবে স্নিগ্ধার ম্যাসেজ গুলা পড়ে নিলের কেন জানি মনে হয় স্নিগ্ধা স্বাভাবিক নেই। ওর পাঠানো ম্যাসেজ গুলা কেমন জানি লাগে নিলের কাছে।   নিল জানতে চাইলে সে বলে তার ফ্যামিলির লোকজন তাকে একদমই দেখতে পারেনা তাই তার লাইফে কারো দরকার নাই। সে একাই চলতে পারবে। এখন থেকে সে একাই থাকবে।

ফ্যামিলির কারো সাথে কথা বলবে না। নিল বলে, "ফ্যামিলির উপর রাগ করে আমাকে কেন দূরে ঠেলে দিচ্ছো?? আমি কি করছি??" স্নিগ্ধা জানায় একা যখন থাকবে তখন সে পুরোপুরিই একা থাকবে। নিল জানতে চাই যে তাহলে আমাদের রিলেশনের কি হবে?? স্নিগ্ধা বলে যে রিলেশন থাকবে তবে আগের মত না। কথা হবে, ম্যাসেজিং হবে তবে লিমিট বজায় রেখে।   সেদিন রাতে সে স্নিগ্ধাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু স্নিগ্ধা কিছুতেই বুঝতে চাই না।

পরেরদিন সকালে সে নিলের সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করে। এরই মধ্যে যে তৃতীয় কোনো ব্যক্তির প্রবেশ ঘটেছে এটা নিল বুঝতে পারে না। ২১ তারিখ সন্ধ্যায় নিল স্নিগ্ধাকে বলে যে আমাকে এত কষ্ট কেন দিচ্ছো তুমি?? স্নিগ্ধা রিপ্লাই দেয়, "আমি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি?? কারন আমি অন্য একজনকে পছন্দ করি। "   ম্যাসেজটা পড়ার পরে নিলের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। নিলের বিশ্বাস হতে চায় না স্নিগ্ধার কথা।

স্নিগ্ধা এমন মেয়েই না। কিন্তু স্নিগ্ধা বলে যে লুকিয়ে রেখে কোনো লাভ নেই, কারন আমি একজনকে পছন্দ করি। পরে নিল জানতে পারে গিটার ক্লাসের সেই ছেলেটাকেই ও পছন্দ করে। স্নিগ্ধা অবশ্য একদিন বলেছিল যে ঐ ছেলেটাকে সে বড়ভাইয়ের মত দেখে। ছেলেটা নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়ে।

  নিল যেন চারিদিকে অন্ধকার দেখে। কি হবে এখন তার সে ঠিক বুঝে ওঠে না। সে বলে যে আমাদের রিলেশনের কি হবে তাহলে?? স্নিগ্ধা বলে যে রিলেশন থাকবে কিন্তু ফ্রেন্ডশিপের রিলেশন। কিন্তু নিল জানে, ভালবাসার মানুষকে কখনোই ফ্রেন্ড হিসাবে ভাবা যায় না। যতই ফ্রেন্ড হিসাবে ভাবুক না কেন, দিনের শেষে ঠিকই তাকে পেতে ইচ্ছা হবে।

মনে হবে যে আবার যদি সব আগের মত হয়ে যেত। এতে শুধু নিলই কষ্ট পেয়ে যাবে। সে কিভাবে দেখবে যে তার প্রেমিকা তারই সামনে অন্য একটা ছেলের সাথে প্রেম করছে??   নিল শুধু বলে যে আমাকে যখন ছেড়েই দিবা তাহলে এতদিন কেন দেখালা এত এত স্বপ্ন?? কেন এত ভালবাসলা আমাকে?? কেন এত আপন করে নিলা?? কেন বলছিলা যে আমাকে ছেড়ে কখনোই যাবা না, যেভাবেই হোক সবকিছু ম্যানেজ করে নিবা?? আরো অনেক কিছুই নিলের মনে প্রশ্ন হয়ে জমা হয়ে থাকে কিন্তু তার মুখ দিয়ে কোনো কথায় বের হয় না। সে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। এতসব প্রশ্নের উত্তর স্নিগ্ধা এক কথায় দিয়েছিল, "আমি কিছুই জানি না।

" নিল বলে "আমার দোষটা কি?? কি জন্যে আমাকে ছেড়ে দিলা??" স্নিগ্ধা বললো যে "তুমি আমার জন্যে পারফেক্ট ছিলা না। "তাহলে এতদিন আমার লাইফ, আমার ভালবাসা, আমার আবেগ নিয়ে কেন খেলা করলা?? কেন মিথ্যা ভালবাসার অভিনয় করলা??" স্নিগ্ধা জাস্ট একটা কথায় বলেছিল, "I was emotional.. ami tomake kokhonoi mon theke valobashte parini"   [৫] এরপরে নিল আর কোনো কথা খুজে পায় না। ২১ অক্টবর নিলের সাথে ব্রেক-আপ করে স্নিগ্ধা। পরে কয়দিন অবশ্য নিলের সাথে তার কথা হয়। নিল ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না।

স্নিগ্ধা বলে নিলের ভালবাসাটা নাকি সত্যি ছিল না। যদি সত্যিই ভালবাসতো তাহলে স্নিগ্ধা যাতে নতুন মানুষটার সাথে অনেক সুখী থাকে এই দোয়া করতো। কিন্তু নিলের ভালবাসা সত্যি ছিল কি মিথ্যা ছিল সেটা আর কেউ না জানুক, একমাত্র আল্লাহ জানেন। ব্রেক-আপ হবার পরে একদিন স্নিগ্ধা বলে যে, "কাউকে ভালবাসলেই কি তাকে পেতে হবে??" নিল কিছু বলে না, শুধু মনে মনে ভাবে মানুষ তো কাউকে এতটা ভালবাসে তাকে পাবার জন্যেই।   নিল এখন একাই থাকে।

অবসরে মোবাইলে গান শুনে আর কম্পিউটারে গেম খেলে মোটামুটি একভাবে ওর দিন চলে যায়। নিলের একটা জিনিস ভাবলে এখনো খারাপ লাগে যে, ওর সাথে রিলেশন থাকাকালিন অবস্থাতেই স্নিগ্ধা অন্য ছেলেটার সাথে রিলেশন করে। ওর সাথে ব্রেক-আপ করার পর ছেলেটাকে ভালবাসতে পারতো, আগে কেন?? আর এমন একটা সময় স্নিগ্ধা এই কাজটা করলো যার কিছুদিন পরেই নিলের এইচএসসি পরীক্ষা। ওর লাইফের কথা একবারো ভাবলোনা স্নিগ্ধা।   স্নিগ্ধার সাথে ব্রেক-আপ হয়েছে ১ মাসও হয় নি।

নিলকে দেখলে কেউ বুঝতেই পারবেনা যে এই ছেলেটার কিছুদিন আগে ব্রেক-আপ হয়েছে। নিল এমনই। নিজের কষ্ট গুলা নিজের মধ্যে চেপে রাখতেই বেশি ভালবাসে সে। নিলের ক্লাসফ্রেন্ডরাও মাঝে মাঝে বলে, তুই এত তাড়াতাড়িই স্নিগ্ধাকে ভুলে গেলি?? তুই মনে হয় ওকে সত্যিকারের ভালবাসিস নি। নিল কিছু বলে না, কারন বলেও কোনো লাভ নেই।

ওরা বুঝবেনা। ওরা শুধু নিলের বাইরের অবস্থাটায় দেখে। নিলের মনের মধ্যে যে কি কষ্টের স্রোত প্রবাহিত হয় সেটা ওরা কখনোই বুঝবেনা, জানবেনা। সেইটা বোঝার ক্ষমতা আছে শুধু নিলের মত হাজারো ভিকটিমদের।   অনেক চেষ্টা করছে নিল জীবনের এই কিছু অতীতকে ভুলে যেতে।

কিন্তু কিছুতেই পারছেনা। আসলে মানুষ কিছু অতীতকে কখনোই মন থেকে একবারে ভুলে যেতে পারে না। অনেকদিন পরে হলেও একসময় ঠিকই মনে পড়ে। আর এটা তো নিলের জীবনের প্রথম ভালবাসা ছিল। কিভাবে ভুলবে নিল?? নিল এখন একটা জিনিস ভাবে, ও নিজে হয়তো খুব একটা লাকি ছিলনা কারন সে কারো লাইফের প্রথম ভালবাসা হতে পারেনি, কিন্তু স্নিগ্ধা অনেক লাকি ছিল কারন সে কারো লাইফের প্রথম ভালবাসা হতে পেরেছিল।

একজনের প্রথম ভালবাসা হতে পারাটা সত্যিই অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার।   এতকিছুর পরেও নিল স্নিগ্ধাকে ভুলার, তার অতীতকে ভুলার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে। (সমাপ্ত)     কিছু কথাঃ পুরো গল্পটাতেই ২টা জিনিস বাদে আর সবকিছুই একদম সত্যি। নিল আর স্নিগ্ধা, এই নাম দুইটা। এখানে নিল বলতে লেখক নিজে আর স্নিগ্ধা তার প্রেমিকার ছদ্মনাম যার সাথে লেখকের ব্রেক-আপ হয়েছে কিছুদিন আগে।

স্নিগ্ধা নামটা মেয়েটার খুব পছন্দের একটা নাম তাই তার নাম হিসাবে এই স্নিগ্ধা নামটাই ব্যবহার করা হয়েছে।   এটাকে আসলে গল্প বলাটা ভুল হবে কারন এটা লেখকের জীবনে ঘটে যাওয়া একটা সত্যি ঘটনা। লেখক শুধু গল্পের মত করে লেখার চেষ্টা করেছে। গল্পের মত অতটা সুন্দর করে হয়তো লিখতে পারিনি। আসলে এখানে অনেক কিছুই বলা হয় নি।

এতকিছু লেখা আমার নিজের পক্ষেও সম্ভব নয়। আর তাছাড়া এমনিতেই অনেক বেশি লিখে ফেলেছি। যার ফলে অনেক বড় হয়ে গেছে লেখাটা। হয়তো সময় পেলে অব্যক্ত কথাগুলাও একদিন লিখে ফেলবো।   লেখক এখনো জানে না ঠিক কি কারনে স্নিগ্ধা তাকে ছেড়ে চলে গেছে।

সে নিজেও কিছু পরিষ্কার করে বলেনি লেখককে। শুধু বলেছিল লেখক তার পারফেক্ট ছিল না। এই একটা ব্যাপারেই লেখকের আক্ষেপ থেকে গেল, কখনো জানা হবে না কেন তার প্রথম ভালবাসা তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল।   আর আল্লাহর কাছে একটা দোয়াই করি সবসময়, স্নিগ্ধা যেন লাইফে অনেক সুখী থাকে, অনেক ভালো থাকে। লেখকের থেকেও অনেক ভালো একটা ছেলেকে যেন ও লাইফে পায়।

স্নিগ্ধা আমাকে বলেছিল ও কখনোই আমার জন্যে রিগ্রেট করবেনা। ও এখন যাকে ওর লাইফে পেয়েছে সে কখনোই ওকে আমার জন্যে রিগ্রেট করতে দিবে না। আমি নিজেও চাইনা ও আমার জন্যে রিগ্রেট করুক। ও নিজে অনেক হ্যাপি থাক এইটাই প্রার্থনা করি।   আর ভাইয়া ও আপুদের উদ্দ্যেশ্যে একটা কথাঃ কাউকে ভাল যদি বাসতে না পারেন, সম্পর্ক যদি রাখতে না পারেন তবে তাকে শুরুতেই বলে দিন।

রিলেশনে জড়িয়ে যাবার পরে তাকে এইসব কথা বলে তার স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে দিবেন না। তার মা-বাবা তাকে এই জীবনটা দিয়েছে। তার জীবনটা নষ্ট করার কোনো অধিকারই আপনার নেই।   সবাইকে অনেক ধন্যবাদ এতক্ষন কষ্ট করে আমার লেখাটা পড়ার জন্যে। সামনে আমার এইচএসসি পরীক্ষা।

পড়াশোনার অবস্থা যাচ্ছেতাই। সবাই আমার জন্যে দোয়া করবেন। ধন্যবাদ সবাইকে। ভুলে যেতে চাই কিছু অতীতকে!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.