আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঙালির রাজনৈতিক আদর্শের কাঠগড়ায় চৌধুরি মঈনউদ্দিন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমুলক রায়

বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড
স্বাধীনতা যুদ্ধ তখন প্রায় শেষ প্রহরে । সময়টা ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি । নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ আর ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার কথা বিশ্বের কাছে জানান দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এক নবজাতক দেশ । বাংলাদেশ । পরাজয় অনিবার্য বুঝতে পেরে দুই দশকের বেশী সময় ধরে শোষন করা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তার বাঙালি দোসররা বাঙালির উপর শেষ প্রতিশোধ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ।

আলবদরের একটি বিশেষ দলকে নিয়োজিত করা হয় বাঙালি বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করতে । শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাহিত্যিক, চলচিত্র নির্মাতা, শিল্পী কেউ বাদ পড়েনি সেই তালিকা থেকে । নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় বাংলার সুর্য সন্তানদের [১] । সদ্য রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করা দেশটি আঁতুড় ঘরেই কয়েক যুগে পিছিয়ে পড়ে মুক্ত বুদ্ধির চর্চায় এবং বিকাশে ।
মঈনউদ্দিন চরিত
আলবদরের যেই বিশেষ দলটিকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের দায়িত্ব দেয়া হয় তার নেতৃত্বে ছিল তরুন এক সাংবাদিক ।

চৌধুরি মঈনউদ্দিন । বুদ্ধিজীবিদের তালিকা তৈরি, ঠিকানা খুজে বের করা, অপহরন, নির্যাতন করা এবং সবশেষে নির্মম ভাবে হত্যা করা সব কিছুতেই তার ছিল সক্রিয় ভুমিকা । ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতার পরপরই অন্যান্য অনেক শীর্ষস্থানীয় রাজাকারের মতই চৌধুরি মঈনউদ্দিন পাড়ি জমায় দেশের বাইরে । স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের আভ্যন্তরিন রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক মহলের চাপ, ৭৫ পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল এসব কিছুর ডামাঢোলে চাপা পড়ে যায় মঈনুদ্দিন অধ্যায় । অতীত ভুলে সামনে এগোতে থাকার মিছিলে সামিল হওয়া বাঙালি জাতি ভুলতে বসে স্বাধীনতার উষা লগ্নের সবচেয়ে ঘৃন্যতম খুনিদের একজনকে ।

ভুলে যায় জন্মঋন ।
১৯৯৫ সালে ব্রিটেনের টিভি চ্যানেল "চ্যানেল ফোরে" প্রচারিত হয় "ওয়ার ক্রাইম ফাইলস" [২] । স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ প্রহরে বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডের ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি এই প্রামাণ্যচিত্রে উঠে আসে, আলবদরের নেতৃত্বস্থানীয় কয়েক জনের ভয়ংকর ভুমিকার কথা । দুই দশক ধরে ইতিহাসের পাতা থেকে পালিয়ে বেড়ানো এক ঘৃন্য পশুর পুনঃআবির্ভাব ঘটে ইতিহাসের পটভুমিতে । চৌধুরি মঈনউদ্দিন ।

চ্যানেল ফোরের সাংবাদিকরা খুজে বের করে মঈনউদ্দিনের বিভৎস কর্মকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শীদের; নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্বজনদের এবং বেঁচে যাওয়া কয়েকজন বুদ্ধিজীবীকে । তাদের বর্ননায় উঠে আসে একাত্তরের শেষদিকের সেই বিভিষিকাময় রাতগুলার কথা । ৭১ পরবর্তি সময়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত মঈনউদ্দিনের ছবি ও বর্ননার সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান মিলিয়ে খুজতে খুজতে চ্যানেল ফোরের সাংবাদিক দল পৌছে যায় ব্রিটেনে । স্বাধীনতার ২৪ বছর পর চৌধুরি মঈনউদ্দিনের খোজ মিলে ব্রিটেনে । যুদ্ধের পরপরই ব্রিটেনে পালিয়ে আসে মঈনউদ্দিন ।

পালিয়ে আসা অন্যান্য রাজাকার-আলবদর সদস্যদের সাথে নিয়ে গঠন করে "দাওয়াতুল ইসলাম" নামে জামাত-এ-ইসলামের আদর্শের একটি সংগঠন । ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের একটি বড় অংশের ধর্মান্ধতা এবং সাম্প্রদায়িক মানসিকতাকে কাজে লাগিয়ে, ব্রিটেনে বাংলাদেশী মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইস্ট লন্ডন মসজিদের ভাইস চেয়ারম্যান মনোনীত হয় [৩] ।
চ্যানেল ফোরের এই প্রামাণ্যচিত্র প্রচারিত হবার পর খোদ ব্রিটেনেই চৌধুরী মঈনউদ্দিনকে নিয়ে বিতর্কের ঝড় বয়ে যায় । "ব্রিটেনের মাটিতে যে কোন দেশে সংগঠিত যুদ্ধপরাদের বিচার সম্ভব ", এমন আশ্বাস ব্রিটিশ মুলধারার বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের মুখে বার বার শোনা গেলেও, বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি । চৌধুরি মঈনউদ্দিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাদের সাথে সংস্লিষ্ট থাকার অভিযোগ এবং পর্যাপ্ত প্রমান থাকা স্বত্তেও কোন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও শোনা যায় নি ।

গত ৩রা নভেম্বর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল-২ , বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের অপরাধে অভিযুক্ত চৌধুরি মঈনউদ্দিন এবং যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আশরাফুজ্জামানকে ৫ টি অপরাধ প্রমাণের ভিত্তিতে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয় [৪] । মইনউদ্দিন এবং আশরাফুজ্জামানের অনুপস্থিতিতেই এই রায় দেয়া হলেও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখনো অপরাধী বিনিময়ের কোন অনুরোধ ব্রিটিশ বা আমেরিকান প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয় নি । ব্রিটেনে মুসলিম সমাজে মঈনউদ্দিনের প্রতিপত্তি, বাংলাদেশের দুর্বল ফরেন ডিপ্লোমেসি এবং ব্রিটেনে আশ্রয় গ্রহনকারী যুদ্ধপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ প্রশাসনের উদাসীনতা [৫] এই সব মিলিয়ে মঈনউদ্দিন রয়ে যায় ধরাছঁোয়ার বাইরে ।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমুলক বিচার ঃ
খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই রায় প্রকাশের পর পরই চৌধুরী মঈনউদ্দিনের আঈনজীবী ব্যারিস্টার টবি ক্যাডম্যান ব্রিটেনের ট্যাবলয়েড পত্রিকা মেট্রোতে দেয়া সাক্ষাতকারে এই রায়কে রাজনৈতিক ভাবে উদ্দেশ্য প্রনোদিত বলে আক্ষায়িত করে বিবৃতি দেয় [৬] এবং বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যানের সংগে সরকারের যোগসাজসের অভিযোগ আনে । বি.এন.পি জামাত গোষ্ঠীর অতি প্রচারনার ফলে "রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত" শব্দটির বিস্তার এখন রাজনীতির মাঠ ছাড়িয়ে বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে ।

যুদ্ধপরাধের বিচার গোড়া থেকেই এই প্রক্রিয়াকে দেশে এবং দেশের বাইরে প্রশ্নবিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে বি.এন.পি এবং জামাতের প্রচারযন্ত্র যেন হিটলারের প্রপাগান্ডা মিনিস্টার জোসেফ গোয়েবল্সের "বিগ লাই" থিওরি ইম্প্লেমেন্ট করার চেষ্ঠায় ব্যতিব্যস্ত । তাদের এই প্রচার যে বেশ ভালো ভাবেই সফল হয়েছে, তা পরিষ্কার বোঝা যায় যুদ্ধপরাধের বিচারের ব্যপারে বাংলাদেশের শিক্ষিত যুব সমাজের একটি বড় অংশের অজ্ঞতা এবং মুর্খতায় । "আওয়ামিলীগ তো শুধু জামাতের যুদ্ধপরাধের বিচারই করছে " ; "ঠিক আছে গোলাম আজম রাজাকার ছিল কিন্তু আওয়ামিলীগ নিজের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে এই বিচার করছে "; এই সাঈদী সেই সাঈদী নয় "; "কাদের মোল্লা মেধাবী ছাত্র ছিলেন"; বিচার আন্তর্জাতিক মানের এবং স্বচ্ছ নয়, ইত্যাদি ইত্যাদি । পাঠক কিন্তু ভুল করেও মনে করবেন না এগুলো কেবল জামাত সমর্থকদের কথা । বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টক শো, জামাতি অর্থপুষ্ট বিভিন্ন দেশী এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার নিয়মিত বিবৃতি, জামাতি অনলাইন প্রচারনা এসব থেকে বার বার শুনতে শুনতে আমার আপনার আশপাশের অনেক সাধারন মানুষই এসব প্রশ্ন করে বসতে পারে ।


পাঠক আসুন একটু খুজে দেখা যাক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমুলক বলতে আমরা আসলে কি বুঝি ? প্রচলিত অর্থে, "কোন সরকার বা রাজনৈতিক দল কেবলমাত্র রাজনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যে কোন বেআইনী কাজে লিপ্ত হলে তাকেই রাজনৈতিক উদ্দেশশ্যমুলক আচরন বলা হয় । " জামাত এবং জামাতের অংগসংগঠন গুলো এই কাগুজে সংজ্ঞাটাই বিচারের শুরু থেকে আওড়ে যাচ্ছে । মজার ব্যপার হল এই চেষ্টা জামাতের মত মাল্টিমিলিয়ন ডলার স্কেলে না হলেও বিশ্বে এই প্রথম নয় । ইতিহাসের পাতা ঘাটলে এমন আরো বহু নজীর মেলে এবং দেখা যায় যুদ্ধপরাধের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের বিচার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক পক্ষপাত দুষ্ট বলে আখ্যায়িত করেছে ।
(ক) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল ইয়োগস্লাভিয়া [ ইউ.এন সমর্থিত ] ।

আসামী পক্ষ, গ্রীক এমপি এবং রাশিয়ান সরকারের দাবী এই বিচার প্রক্রিয়া অর্থের অপচয় এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমুলক । [৭,৮] (খ) প্রাক্তন লাইবেরিয়ান প্রেসিডেন্ট চার্লস টেইলরকে যুদ্ধপরাধের অপরাধে অভিযুক্ত করে ইউ.এন সমর্থিত সিয়েরা লিওনের এক বিশেষ আদালত । আসামী পক্ষের দাবী এই বিচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমুলক । [৯] (গ) বিশ্ববিখ্যাত ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল, রোয়ান্ডা ওয়ার ক্রাইম ট্রায়াল , টোকিও ওয়ার ক্রাইম ট্রায়াল, সাদ্দাম হুসেইন ট্রায়াল প্রতিটি বিচার প্রক্রিয়াই "ভিকটরস জাস্টিস", "রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমুলক" ইত্যাদি বিভিন্ন বিশেষনে ভুষিত হয়েছে । [১০]
সুতরাং দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ যুদ্ধপরাধের বিচারের প্রক্রিয়ার গায়েই রাজনৈতিক প্রতিশোধপরায়নতার কালিমা লেগে আছে ।

তবে অনেক আঈন বিশেষজ্ঞই যুদ্ধপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমুলক' বিশেষনটির এমন প্রচলিত অর্থে ব্যবহারের ব্যপারে জোরালো আপত্তি জানিয়েছেন । লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের প্রফেসর গ্যারি সিম্পসন দাবী করেন, "সকল যুদ্ধপরাধের বিচারই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমুলক, তবে প্রচলিত অর্থে নয় । স্বৈরশাসন, ধর্মান্ধতা, বর্নবাদের রাজনৈতিক আদর্শকে আস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলে নতুন আদর্শ গ্রহন করে নেয়ার অর্থে [১১]। " যুদ্ধপরাধ/মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযুক্ত ব্যক্তিরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বৈরশাসক কিংবা কোন মৌলবাদী/বর্ণবাদী রাজনৈতিক আদর্শের অনুসারী । ভ্রষ্ট রাজনৈতিক আদর্শ বাস্তবায়নে জঘন্যতম কাজ করতেও তাদের বাধে না ।

তাদের পতনের সাথে সাথে পতন হয় তাদের রাজনৈতিক আদর্শেরও । ব্যক্তির সাথে সাথে বিচারের মুখোমুখি হয় ব্যক্তির রাজনৈতিক আদর্শও । আর তাই বিচার প্রক্রিয়াটাও হতে হয় দৃষ্টান্তমুলক । ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল এর সবচেয়ে বড় উদাহরন । নাৎসী অফিসারদের সাথে সাথে বিচারের মুখোমুখি হয় নাৎসী আদর্শেরও ।

পুরো বিশ্বের কাছে এই নাৎসী আদর্শ এক ঘৃন্য মতবাদের সমার্থক হয়ে দাড়ায় । এই বিচারের ব্যপ্তিটা এতটাই সুদুরপ্রসারী যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় ৭ দশক পরেও এই আদর্শ সমান ভাবেই ঘৃনিত । একবিংশ শতাব্দীর এই উন্নত বিশ্বে এখন রাষ্ট্রপ্রধানকে নিয়ে রসিকতা যায়; ধর্মকে ব্যঙ্গ করা যায় কিংবা পতিতার সাথে হাতেনাতে ধরা পড়েও রাজনীতিতে টিকে থাকা যায় [১২] । কিন্তু এই লিবারেল সমাজে এখনো গ্রহনযোগ্য নয় নাৎসী আদর্শের ক্ষুদ্রতম কোন নিদর্শনও । তাই এখনো নাৎসী কস্টিউম পরার অপরাধে ছোট শিশুকেও স্কুল থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়, বন্ধুর বাড়ির ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে নাৎসী পোষাক পরার অপরাধে চাকরী হারাতে হয় ব্রিটিশ পরিবহন সচিবকে [১৩, ১৪] ।

রাজনৈতিক আদর্শের সংঘাতের বিচারে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালও রাজনৈতিক ট্রাইবুন্যাল । জামাত-এ-ইসলামের ধর্মান্ধ ও মৌলবাদী রাজনৈতিক আদর্শকে চিরতরে আস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলে একটি আধুনিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক আদর্শ গ্রহন করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করাই এই বিচার প্রক্রিয়ার মুল লক্ষ্য ।
চৌধুরী মঈনউদ্দিন বাংলাদেশের রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত নয় । তাই প্রচলিত অর্থেও তার বিচারকে "বাংলাদেশ সরকারে রাজনৈতিক অভিসন্ধিমুলক" বলে অভিহিত করে তাই আঈনজীবি ব্যারিস্টার টবি ক্যাডম্যান তার বালখিল্য আচরনেরই প্রমান দিলেন আরেকবার । এই লেখা যখন প্রায় শেষ করছি ঠিক তখনি চোখে পড়ল টবি ক্যাডম্যানের সাক্ষাতকারের এই ভিডিওটি ।

ভিডিওটিতে তিনি আঈনের পরিভাষায় দাবী জানালেন, তার মক্কেল চৌধুরী মঈনউদ্দিন এই ট্রায়ালের ব্যপারে কোন নোটিস পাননি এবং অবহীত নয় । তাই এই রায় ত্রুটিপুর্ন [১৫] । টবি ক্যাডম্যান বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ব্যপারে গোড়া থেকেই অবহিত এবং নিয়মিত আঈনী ভাষায় কড়া সমালোচনাও করেছেন তিনি । তার মক্কেল চৌধুরী মঈনউদ্দিনের মামলার ব্যপারে না জানার কোন কারন থাকার কথা নয় এবং এ ব্যপারে তার মক্কেল অবহীত না থাকার দায় তার ঘাড়েই বর্তায় এবং একজন আঈনজীবী হিসেবে তার যোগ্যতাকেই মারাত্মক ভাবে প্রশ্নবিধ্য করে । বিস্তারিত আঈনী বিশ্লেষনের জন্য আঈন বিশেষজ্ঞদের মতামত জানার অপেক্ষায় রইলাম ।


শেষ কথা ঃ
শেষ একটি প্রশ্ন করে আজকের মত বিদায় নিব । "কেন যুদ্ধের শেষ প্রহরে এসে বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করা হল ?" এই প্রশ্নটা আমাদের কজনের মাথায় আসে । আপাত দৃষ্টিতে এই হত্যাকান্ডকে "পাকিস্তানিবিরোধী অবস্থানের কারনে হত্যা করা হয়েছে" বলে চালিয়ে দেয়া যায় অনায়াসেই । সরলীকরনে বিশ্বাসী বাঙালি তাই সহজেই মেনে নেয় এই ব্যখ্যা । কিন্তু কেন যুদ্ধের নয় মাসে নয় ? কেন একেবারে শেষ প্রহরে এসে ? বাঙালিত্ব আর ধর্মীয় গোড়ামি এই দুই খুব একটা সহজে মিশে না ।

পাকিস্তানের জন্ম থেকেই এই দুই আদর্শের দ্বন্দটাই শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের কাল হয়ে দাড়িয়েছিল । বাঙালিত্ব বাংলার প্রতিটি বাঙালির স্বত্তায় মিশে আছে । ধর্মকে তার পাশে যদিও বা কিছুটা জায়গা দেয়া যায়, ধর্মান্ধতাকে কখনোই নয় । বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাঝ দিয়ে বাঙালি চিৎকার করে এই রাজনৈতিক চেতনারই জানান দেয় । নতুন এই আদর্শের বিস্তার, বিকাশ এবং ধর্মান্ধ পাকিস্তানি আদর্শের বিশ্লেষনের মাধ্যমে নাৎসী আদর্শের মতই তার সমাধী রচনায় অগ্রনী ভুমিকা পালনের দায়িত্ব পড়ত বাংলার বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় কাঁধেই ।

রাজনৈতিক পাকিস্তানের পরাজয় ঘটলেও আদর্শিক পাকিস্তানের নেতারা এই ভয়টা থেকেই যুদ্ধের শেষ প্রহরে ঘৃন্যতম এই হত্যাকান্ড ঘটায় । বেচে থাকায় সুযোগ করে দিতে চায় পাকিস্তান আদর্শের । তাদের এই ঘৃন্য হত্যাকান্ডের কারনেই বাংলাদেশে বেচে থাকে মৌলবাদী পাকিস্তানের ভুত । বাংলাদেশের জন্য তাই আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের গুরুত্ব অপরিসীম । আঈনী নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি সময় এসেছে সামাজিক ভাবে ধর্মান্ধ পাকিস্তান আদর্শের ভুতগুলোকে (জামাত-এ-ইসলাম, হেফাজতে ইসলামের) কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলে ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ।


===================================================================
ঘচাংফু ব্লগ ঃ http://ghochangfoo.blogspot.co.uk/ ইমেইল ঃ dosshughochangfoo অ্যাট gmail ডট com
=================================================================== তথ্যসুত্র ঃ ১। http://en.wikipedia.org/wiki/1971_killing_of_Bengali_intellectuals ২। http://www.youtube.com/watch?v=lvbotYo-6rI ৩। http://www.genocidebangladesh.org/?p=296 ৪। http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=2465e4db3007807bc39d5f784b291809&nttl=03112013236304 ৫।

http://www.bbc.co.uk/news/uk-23495314 ৬। http://metro.co.uk/2013/11/03/fugitive-muslim-leader-based-in-britain-sentenced-to-death-in-bangladesh-over-war-crimes-4172091/ ৭। http://www.breakingnews.ie/world/milosevic-trial-politically-motivated-witness-171792.html ৮। http://en.wikipedia.org/wiki/International_Criminal_Tribunal_for_the_former_Yugoslavia#Criticism ৯। http://www.voanews.com/content/charles-taylor-lawyer-says-trial-is-neocolonialism-117648753/136232.html ১০।

http://en.wikipedia.org/wiki/Victor%27s_justice ১১। Law, War & Crime: War Crimes, Trials and the Reinvention of International Law By Gerry J. Simpson ১২। http://politicalhumor.about.com/od/politicalgaffes/tp/most-embarrassing-moments-of-decade.htm ১৩। http://www.theguardian.com/lifeandstyle/shortcuts/2013/oct/04/boy-dressed-hitler-nazi-costumes ১৪। http://www.independent.co.uk/news/uk/politics/nazi-stag-party-mp-is-sacked-6278863.html ১৫।

http://www.youtube.com/watch?v=O77FUpBnCEo&feature=youtu.be

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.