আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্রিকেটবিশ্বে বিষাদের সুর

পুরো মুম্বাই তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয়েছে, কোথাও কেউ বেহালা বাজাচ্ছে না! অথচ শহরের আনাচে-কানাচে বিষাদের সুর। কী বস্তি, কী রেলস্টেশন, আবাসিক এলাকা কিংবা খেলার মাঠ- ঘরে-বাইরে সবখানে একই চিত্র। বিষাদের সুরটা মুম্বাই ছাপিয়ে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে পুরো ক্রিকেট বিশ্বেই। মাস্টার ব্লাস্টার ব্যাটসম্যান শচীন রমেশ টেন্ডুলকারের বিদায় বলে কথা! বেহালার কী আর সাধ্য আছে শত কোটি ভক্তকে মহাবিষ্ট করে, বিষাদের এই সুর তো ভেসে আসছে আরব সাগরের গভীর থেকে!

অবাক কাণ্ড! কলকাতায় লিটল মাস্টারের ১৯৯তম টেস্ট নিয়েই যত মাতামাতি, অথচ মুম্বাইয়ে ২০০তম টেস্ট নিয়েও তেমন কোনো আড়ম্বর নেই। আর থাকবেই বা কীভাবে, শোকে আচ্ছন্ন সবাই।

তবে বিদায় ঘিরে তৈরি হয়েছে মহোৎসব। এই ম্যাচ দেখতে ক্রিকেটের রথী-মহারথীরা আজ উপস্থিত থাকবেন ওয়াংখেড়েতে।

টেস্ট ক্রিকেটের ১৩৬ বছরের ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ২০০তম ম্যাচ খেলার মাইলফলক অর্জন করছেন শচীন -এটা তো চাট্টিখানি কথা নয়! কিন্তু রেকর্ডের বরপুত্রের এমন বিরল রেকর্ডে গর্বিত না হয়ে ভক্তরা তার বিদায়ের যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। ঈশ্বর (শচীন) তার প্রিয় ধর্মকে (ক্রিকেট) বিদায় দিতে যাচ্ছেন চিরতরে, এমন বেদনা কী আর সহ্য করা যায়!

কোনো খেলোয়াড়ের বিদায়ে ক্রীড়াঙ্গনে এমন বেদনাঘন পরিবেশের অবতারণা হওয়াটা বিরল ঘটনাই বটে। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি ফুটবলার পেলে যখন সান্তোসের জার্সির তার শেষ ম্যাচ খেলতে মাঠে নেমেছিলেন সে মুহূর্তটিও ছিল রোমাঞ্চকর।

কিংবা বাস্কেটবলের সর্বকালের সেরা মাইকেল জর্ডানের বিদায়ী ম্যাচের কথাই ভাবুন। আবেগহীন পশ্চিমা মানুষ হু হু করে কেঁদেছেন। ইউএস ওপেন থেকে ক্রিস এভার্টের হেরে বিদায় নেওয়ার ক্ষণটিও ভোলার নয়। তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী জিনা গ্যারিসন যখন ম্যাচ জিতেও কাঁদছিলেন, তখন সাধারণ দর্শকের অবস্থা কি হয়েছিল তা সহজেই অনুমেয়। কিংবা বিদায়ী ম্যাচে সিডনি টেস্টে স্টিভ ওয়াহর ড্রেসিংরুম থেকে হঠাৎ উধাও হওয়ার ঘটনাটি এখনো বিদায়ী লগ্নে যুগান্তকারী ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি।

কিন্তু শচীন টেন্ডুলকারের বিদায় লগ্ন যেন আগের সব ঘটনাকেই ছাপিয়ে যাচ্ছে।

মহানায়কের শুরু সেই ১৯৮৯ সালে, পাকিস্তানে। তারপর তিলে তিলে ২৪ বছরে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়েছেন। সেঞ্চুরির 'সেঞ্চুরি', ওয়ানডেতে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি, পৃথকভাবে টেস্ট ও ওয়ানডেতে সর্বাধিক সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ রান -আরও কত্তো রেকর্ড। ১৭ বছরের সেই বালক বিন্দু বিন্দু রেকর্ড দিয়ে আজ অর্জনের মহাসাগর গড়েছেন! এখন ক্রিকেটে শচীনের রেকর্ড বের করার চেয়ে, কি রেকর্ড তার নেই সেটি বের করাই যেন সহজ কাজ।

ক্রিকেটের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার অবাধ বিচরণ। শচীনের বন্দনা করতে গিয়ে তাই তো ক্যারিবীয় কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা বলেছেন, 'আমার যদি ছেলে থাকতো, সে যদি ইউটিউবে আমার পুরনো ইনিংস দেখতে চাইতো, আমি তাকে শচীনের ইনিংসগুলো দেখতে বলতাম। কী চমৎকার কৌশলী ব্যাটিং, শিখতে হলে ওকেই ফলো করো। '

পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ওয়াকার ইউনুস তো রীতিমতো অবাক! 'সেই ১৯৮৯ সালে যখন ওকে দেখি, সাইজে একদম পিচ্ছি। বিশ্বাসই হয়নি এই ছেলের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে এমন কিছু।

' সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার স্যার ডন ব্রাডম্যানও মারা যাওয়ার আগে বলেছেন, 'শচীনের ভেতর আমি আমার নিজের ছায়া দেখতে পাই। ' আরেক অসি ওপেনার মেথু হেইডেন তো সরাসরি বলেছেন, 'আমি ঈশ্বরকে দেখেছি। তিনি ভারতীয় দলে চার নম্বরে ব্যাটিং করেন। '

শচীনের বিদায়ের 'বেদনা' যেন মধ্যাকর্ষণ শক্তির মতো আকর্ষণ করছে ক্রিকেটামোদীদের। সবার দৃষ্টি এখন মুম্বাইয়ের দিকে।

আজ শুরু ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের শেষ টেস্ট। কলকাতা টেস্ট জিতে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে ভারত। এ ম্যাচে জয় কিংবা ড্র হলেই সিরিজ জিতে যাবে ধোনির দল। কিন্তু এসব রেকর্ড-টেকর্ড নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। কে জিতবে, কে হারবে- চুলোয় যাক! মনে হয় যেন পুরো ম্যাচে খেলবেন এক শচীন! এই ম্যাচটি যে শিবনারায়ণ চন্দরপলেরও ১৫০তম ম্যাচ, সেদিকেও কারো ভ্রূক্ষেপ নেই।

শচীন আগ্নেয়গিরির লাভাস্রোতে অন্য সব ঘটনা যেন অতি সূক্ষ্ম অগি্নকণা মাত্র!

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.