আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্নপূর্ণা বেইস ক্যাম্প ট্র্যাকিং এর গল্প – ৩ (শেষ পর্ব)



অন্নপূর্ণা বেইস ক্যাম্প ট্র্যাকিং এর গল্প – ১ অন্নপূর্ণা বেইস ক্যাম্প ট্র্যাকিং এর গল্প – ২ ২৩/১০/১৩ সকাল ৫:৪৫ এ ঘুম ভেঙ্গে গেল। বেশ কিছু মানুষের গলার শব্দ পেলাম। বেরিয়ে দেখি এখনও সূর্য উঠেনি, কিন্তু পরিষ্কার আবহাওয়ার কারনে অন্নপূর্ণা দেখতে দারুন লাগছে। ছবি ১: অন্নপূর্ণা দক্ষিণ {Annapurna South (7219 m)} তখন ও সূর্য উঠেনি। ছবি ২: অন্নপূর্ণা বেইস ক্যাম্প।

ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। যখন একটু একটু করে সূর্যের সোনালী আলো এসে চূড়ায় পড়ছে, দেখতে অসাধারন লাগছে। ছবি ৩: সূর্যের প্রথম রশ্মি যখন অন্নপূর্ণা দক্ষিণ এর চুড়াতে। ছবি ৪: সূর্যের প্রথম রশ্মি যখন অন্নপূর্ণা রেঞ্জে পড়ছে। ছবি ৫: অন্নপূর্ণা দক্ষিণ এর সামনে আমি।

অনেকে দেখি চা খেতে খেতে হাঁটছে আর দেখছে। মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলাম হিয়ান চুলি(৬৪৪১ মি.), অন্নপূর্ণা দক্ষিণ (৭২১৯ মি.),অন্নপূর্ণা-১ (৮০৯১ মি.), অন্নপূর্ণা ফাং (৭৬৪৭ মি.), গঙ্গাপূর্ণা (৭৪৫৫ মি.), অন্নপূর্ণা-৩ (৭৫৫৫ মি.), গন্ধরবা চুলি (৬২৪৮ মি.), মাছাপুছেরে (৬৯৯৩ মি).। আমার ক্যামেরাটাতে প্যানরমা মুড না থাকাতে সব একসাথে তুলতে পারিনি। ছবি ৬: হিয়ান চুলি {Hiunchuli (6441 m)} ছবি ৭: অন্নপূর্ণা দক্ষিণ {Annapurna South (7219 m)} ছবি ৮: অন্নপূর্ণা ফ্যাং{Annapurna Fang (7647 m)} ছবি ৯: অন্নপূর্ণা ১ {Annapurna I (8091 m)} ছবি ১০: গঙ্গাপূর্ণা {Gangapurna ( 7455 m)} ছবি ১১ অন্নপূর্ণা ৩ {Annapurna III (7555 m)} ছবি ১২: গন্ধরবা চুলি{Gandharba Chuli (6248 m)} ছবি ১৩: মাছাপুছেরে {Machapuchhre (6993 m)} ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে ঘুরে ৮ টা পিক আপনি দেখতেই থাকবেন। গতকাল ও নাকি তুষার পড়েছিল।

ক্যাম্পটার সামনের সবটা বরফে ঢাকা। জীবনে প্রথম এমন বরফ দেখলাম। দেরি না করে বল বানিয়ে পিয়াসের সাথে মারামারি শুরু করলাম। ছবি ১৪: দুই বন্ধুর ছেলে মানুষী... প্রচুর ছবি তুললাম। মাঝে একবার গিয়ে নাস্তা সেরে আসলাম।

বিরাট একটা গ্রুপ(২৩ জনের) ধরল গ্রুপ ছবি তুলে দিতে, এরা এসেছে সুদূর ( ৩৮ ঘণ্টা নাকি প্লেনেই ছিল !!) বলিভিয়া থেকে। লাফালাফি করতে করতে গরম শুরু হয়ে গেল। তাই জ্যাকেট খুলে লম্ফ ঝম্প মারতে লাগলাম। ভাবলে ভুল হবে কেবল আমরাই এমন করেছি। ওখানে অধিকাংশই লাফালাফি করে পোজ দিচ্ছিল।

অনেকক্ষণ ধরে পাহাড় গুলোকে দেখলাম। ১০:৩০ এ গেস্ট হউসে ফিরে বিল দিলাম। রাতের খাওয়া, থাকা, সকালের খাওয়া বাবদ দুজনের ৩৪০০ রুপি বিল হয়েছিল। ১০:৩০ এ রওনা দিলাম। ছবি ১৫: দুই মালায়সিয়ান ( কিম আর আমেলি) ট্র্যাকার, চম্রং থেকে একই দিনে শুরু করলেও ওরা আমাদের পরদিন ABC পৌঁছে।

ফেরার সময় অন্নপূর্ণা ৩ , গন্ধরবা চুলি , মাছাপুছেরে দেখতে অস্থির লাগছিল। ছবি ১৬: ABC থেকে ফেরার পথে আমরা দুই বন্ধু, পেছনে গন্ধরবা চুলি(বামে) এবং মাছাপুছেরে ( ডানে)। টার্গেট ছিল বাম্বু। কিন্তু আমরা দোভান পর্যন্ত যেতে পেরে ছিলাম। মাঝে হিমালায়া তে দুপুরের খাওয়া খেয়েছি।

সন্ধ্যায় দোভানে পৌঁছে একটা গোসল দিলাম। ১৫০ রুপির বিনিময়ে হট সাওয়ার। রাতের খাওয়া খেয়ে ঘুম। পরদিন সকালে নাস্তা না খেয়ে হাঁটা শুরু। নাস্তা করলাম বাম্বু এসে।

এখানে ঐ ইতালিয়ান গুলোর সাথে আবার দেখা হয়ে গেল। এরপর টানা হাঁটা, চম্রং এর পাহাড়টা উঠতে আবার খবর হল। চম্রং থেকে আমরা অন্য আর এক পথ ধরলাম। দিনের হাঁটা শেষ করলাম ঝিনুতে এসে। ২৪/১০/১৩ ঝিনুতে একটা হট স্প্রিং আছে।

ঘুম থেকে উঠে চলে গেলাম হট স্প্রিং দেখতে। ২০ মিনিটের মত ধাল বেয়ে নিচে নামলাম। নদীর ধারের দৃশ্য অসাধারন। গরম পানিকে ধরে রাখার মত হাউস করা আছে। আগে জানলে সাবান আর টাওয়েল নিয়া আসতাম আর দারুন একটা গোসল হত।

ছবি ১৭: মদি খোলা নদীর তীরে... ওখান থেকে উপরে উঠে আসতে ৩৫ মিনিট লাগলো। নাস্তা সেরে রওনা দিলাম। ঝিনু থেকে নিউ ব্রিজ হয়ে সিওয়া পৌঁছে গেলাম ২:৩০ এ। ওখান থেকে জীপ ভাড়া নিয়ে সোজা পোখারা। পুরা ট্র্যাক এ কোন বাংলাদেশীর সাথে দেখা হয়নি আফসোস।

একজন বাংলাদেশী-অস্ট্রেলিয়ানের সাথে দেখা হয়েছিল, যিনি সিডনী থেকে এসেছিলেন। এরপর একদিন পোখারা আর একদিন কাঠমুন্ডু ঘুরে ২৬/১০/১৩ তারিখ ফিরে আসলাম দেশে। আমার সর্বমোট ৩৬০০০ টাকা খরচ ( বিমান ভাড়া সহ) হয়েছিল। কেউ চেষ্টা করলে আর ও ২ হাজার কমেও শেষ করতে পারবেন। কিছু টিপস : ১. যতটা সম্ভব কম জিনিস ( কাপড়, খাবার) নিয়ে হাঁটুন।

২. অবশ্যই একটা ভাল ব্যাকপ্যাক থাকা উচিত। ট্র্যাকিং বুট থাকলে ভাল, না থাকলে ও চলবে। আমি বাটার কেডস পড়ে হেঁটেছিলাম। ৩. বেশী দ্রুত হাঁটার দরকার নাই। প্রয়োজনে ১০ মিনিট পর পর রেস্ট নিন।

খুব খাড়া পাহাড়ের ক্ষেত্রে আমি ১৫/২০ স্টেপ উঠে রেস্ট নিয়েছি। ৪. চেষ্টা করুন যাতে রাতে থাকা যায় চম্রং, দোভান/দেউরালি , MBC/ABC. ৫. চকলেট, বাদাম বেশী কিনুন, পানি ১ লিটার নিলে হবে রাস্তাতে অসংখ্য ঝর্না পাবেন। প্রতি ঘণ্টাতে ১ লিটার পানি খান। ৬. সান গ্লাস, সান্সক্রিম সাথে রাখুন। দরকারি কিছু ঔষধ সাথে রাখুন (মাসল রিলাক্সেসিং, জ্বর, সর্দি, মাথা ব্যাথা, বমি ইত্যাদি)।

৭. ইংলিশ, হিন্দি দুটো ভাষা হালকা পাতলা জানলেই চলবে। আপনাকে ইন্ডিয়ান ভাবার আগেই বলে দিন বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। ৮. হাতে অবশ্যই ( প্ল্যান করা দিন বাদ দিয়ে) ১ দিন বেশী রাখবেন। ৯. পাহাড়ে গড়ে প্রতিদিন ১৭০০ টাকা খরচ হতে পারে হিসাবে বাজেট করুন। ১০. মানি এক্সচেঞ্জ এ বোর্ডে লিখা রেট থেকে বেশী পেতে পারেন যদি রসিদ না নেন।

১১. চেষ্টা করবেন বাংলাদেশ বিমানে করে যেতে( কারন ফ্লাইট সকালে) আর ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ এ ফিরতে ( কারন ফ্লাইট বিকালে)। সবচেয়ে বেশী যেটা দরকার সেটা হোল আপনার মনের ইচ্ছা। আপনার যদি মনের জোর থাকে বেরিয়ে পড়ুন, বাকিটা ম্যানেজ হয়ে যাবে। এইগুলা হাতি ঘোড়া কোন ব্যাপার না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.