আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাঝে মাঝেই কেন এমন হয়?

সময় খুব দ্রুত চলছে। জাপানি দ্রুতগামী ট্রেনের চেয়েও গতিতে চলেছে আমাদের রাজনীতি। চীনে ৫০০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন ট্রেন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। কিন্তু আমাদের রাজনীতির গতি তার চেয়েও বেশি। কখন কি হয় শত চেষ্টা করেও আন্দাজ করা যায় না।

সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম ড. কামাল হোসেন বলেছেন, একজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ যেসব অভিনব ব্যাখ্যা দিচ্ছেন তাতে অনেকের ভিরমি খাওয়ার কথা। মন্ত্রীদের পদত্যাগ, সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠন, উপদেষ্টা মনোনয়ন_ সব কিছুতে নতুন নতুন সব অসাধারণ ব্যাখ্যা। ১৯৬২ সালে বুনিয়াদি গণতন্ত্র সৃষ্টি করতে গিয়ে আইয়ুব খান যা যা বলেছিলেন, প্রায় হুবহু তাই তাই ইদানীং আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন বা করছেন। জানি না আইয়ুব খানের 'বন্ধু নয় প্রভু' বইটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পড়েছেন কিনা?

'৮৬ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি ছিলেন। সব বিরোধী দল ছিল তার বিরুদ্ধে।

সে সময়ই যুগপৎ আন্দোলনের নামে জামায়াতে ইসলামী রাস্তায় নামে। তাদের প্রথম বাধা দেয় জয়দেবপুর, তারপর সাভার ও আরও অনেক স্থানে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা জামায়াতে ইসলামীর লোকজনদের রাস্তায় বেরুনোর বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। সে সময় বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি এত বড় ছিল না। তখন আন্দোলনের মূল শক্তিই ছিল জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ জামায়াতের রাস্তায় বেরুনোয় কোনো বাধা দেয়নি, বরং তারা এরশাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন করছে বলে উৎসাহ দিয়েছে। সেদিন আওয়ামী লীগের উৎসাহে জামায়াত আজকের অবস্থানে এসেছে। দিনে থাকুক বা না থাকুক আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের রাতের যোগাযোগ আছে, এমনটা অনেকেই কানাঘুষা করে। আমি এক সময় আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের এক নম্বর সদস্য ছিলাম। আওয়ামী নেতা-নেত্রীদের কত রং-তামাশা দেখেছি।

হাইকোর্টের বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন পেতে আওয়ামী লীগ গোলাম আযমের দোয়া চাইতে গিয়েছিল। আমাদের মতো লোকদের আপত্তি ক্ষমতাবানরা শুনেনি। এরশাদের পতনের পর আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়ার কথা ছিল। তাদের ঔদ্ধত্য, অহংকার আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পছন্দ করেননি, তাই সেবার তারা ক্ষমতায় যেতে পারেনি। '৯১-এর ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আমি যশোর জেলে ছিলাম।

কিন্তু '৯০-এর ১৬ ডিসেম্বর দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে শুনেছিলাম বিএনপি সারা দেশে প্রার্থীই দিতে পারবে না। ১০-১২টা সিটের বেশি পাবে না। আওয়ামী লীগ শুধু মনোনয়ন দেবে আর প্রার্থীদের পাস করিয়ে আনবে। এটা সত্য বিএনপি সবক'টি আসনে সেবার প্রার্থী দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সবক'টি আসনেই পাস করবে, তাই এমপির অভাব কী? তাই শুরু হয় কার সঙ্গে কার দ্বন্দ্ব, কাকে কাকে নির্বাচনে হারানো দরকার? দলীয়ভাবে পাস করানোর চেয়ে ফেল করানোর চেষ্টা শুরু হয়।

তাদের ধারণা ছিল প্রায় সব সিটই আওয়ামী লীগ পাবে। তাই দুই-একশকে হারালেই বা কি? জেলে থাকার কারণে আমিও হাজার ১২০০ ভোটে এক রাজাকারের কাছে হেরেছিলাম। বেশি হলে আওয়ামী লীগের সব সময়ই বদ হজম হয়। '৯৬ সালে মারাত্দক ধরনের আন্দোলন করে খালেদা জিয়ার পতন ঘটানো হয়েছিল। সেখানে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াত কেউ বাদ ছিল না।

বেগম জিয়াকে সরাতে সবাইকে পাশে নিয়েছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। জামায়াতের বর্তমান আমির নিজামীকে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করেছিলেন, যা সারা জগৎ জানে। কতবার কতভাবে কত স্থানে কত আলাপ হয়েছে। কাকের মতো চোখ বুজে অস্বীকার করলে কিছু যায় আসে না। সত্য সত্যই।

সত্য বেশিদিন ছাইচাপা দিয়ে রাখা যায় না। ঝড় এলে ছাই উড়ে সত্য বেরিয়ে আসে।

শুরু করেছিলাম '৮৬-র নির্বাচন নিয়ে। জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে বলেছিলেন, যে নির্বাচনে যাবে সে জাতীয় বেইমান। কিন্তু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সেবার জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গভীর রাতে এক মারাত্দক বুঝাপড়া করেছিলেন।

সেবার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ম্যানেজ করেছিলেন। '৮৬ থেকে ২০১৩, কত ব্যবধান? মাত্র ২৭ বছর। গণেশ উল্টে গেছে। এবার জননেত্রী না হয় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ম্যানেজ করছেন, তাতে দোষের কি? এ আর বিচিত্র কি? তবে '৮৬ সালে আওয়ামী লীগ এবং জননেত্রীর জনগণের ওপর যে প্রভাব ছিল এখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং তার দল জাতীয় পার্টির তার লেশমাত্র নেই। তাই '৮৬ আর ২০১৩-১৪ এক নয়।

মানুষ ছি ছি করছে দুজনকে। কারণ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং জননেত্রী মানুষকে বড় বেশি হতাশ করেছেন। এই হতাশার হাত থেকে দেশবাসীকে সবাই মিলেমিশে উদ্ধার করতেই হবে। মন্ত্রিসভার পদত্যাগের অভিনব দৃশ্য দেখে দেশবাসী বিস্মিত। অনেক মন্ত্রীকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কদমবুচি করতে দেখা গেছে।

কদমবুচিই যদি মন্ত্রিত্বের মাপকাঠি হয় তাহলে পায়ে চুমা খেলে কি যে হবে আল্লাহই জানেন। এখানে যোগ্যতা-দক্ষতা জনপ্রিয়তার মূল্য কোথায়? তা যাই হোক ক্ষমতা যখন থাকে তখন অনেকেই অনেক কিছু ভাবেন, ক্ষমতা চলে গেলে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। যাক ওসব নিয়ে যাদের ভাবার তারা ভাবুন। আমরা সাধারণ মানুষ, আমাদের ভাবাভাবির কষ্ট করে লাভ কি?

তবে দু-একজন মন্ত্রীর বিদায়বেলার করুণ দৃশ্য বড় ভাবিয়ে তুলেছে। সবাই জানে, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও বাড়া বানে।

আমি যখন ভারতে তখন কলকাতার ফরেন অফিসে ডাইরেক্টর ছিলেন শ্রী শরদ্বিন্দু চট্টোপাধ্যায়। ভদ্রলোক প্রায় ১৫-১৬ বছর বালিগঞ্জ অফিসের সর্বেসর্বা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে তিনি সেখানে ছিলেন। স্বাভাবিক কারণেই আমাদের অনেককেই চিনতেন, জানতেন। ধীরে ধীরে সময় বয়ে যাচ্ছিল।

এক দিন সকালে আমার বর্ধমানের বাড়িতে তিনি হাজির। শুনলাম পরের মাসেই তার অবসর। আমি বললেই নাকি বহাল থাকতে পারেন। এমনিতেই নাচুনী বুড়ি, তার উপর ঢোলের বাড়ি। আমরা কারও জন্য কিছু করতে পারলে বলার আগে হাজির।

যখন যা কিছু করি কর্তব্য মনে করেই করি। শ্রী শরদ্বিন্দু চট্টোপাধ্যায় দিলি্ল গিয়েছিলেন এবং পরপর দুইবার তার চাকরির মেয়াদ বর্ধিত হয়েছিল। কিন্তু তিনবারের বার আর কিছু করতে পারিনি বা করিনি। তাতে শ্রী শরদ্বিন্দু চট্টোপাধ্যায় ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। আমি যে ৮-১০ বছর তাকে নানাভাবে সাহায্য করেছি, শ্রী প্রণব মুখার্জি, শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে বলে-কয়ে দুই-দুইবার এঙ্টেনশন এনেছি, তৃতীয়বার কিছু করতে না পারায় শত্রুতে পরিণত হয়েছিলাম।

অমন আর এক ঘটনা ঘটেছিল দিলি্লতে। আমি জে-১৮৮১ চিত্তরঞ্জন পার্কে এসি সেনের বাড়িতে থাকতাম। স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে তাদের চারজনের সংসার। সেখানে আমি ছিলাম সর্বেসর্বা। দাদা এসি সেন, বৌদি ড. শিলা সেন কি যে আদরযত্ন করতেন, যা শুধু ভালো মা-বাবার কাছেই পাওয়া যেতে পারে।

গার্গি-শঙ্কু ছিল আমার সন্তানের মতো। এক দিন সকাল ৮টা সাড়ে ৮টার দিকে দাদা ছুটে এসে বললেন, 'তাড়াতাড়ি এসো। দেরি করো না। এসো এসো। ' বুঝতে পারিনি।

ছুটে গেলাম। হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন গেটে। আমাদের বাড়ির পুবে সুজাতা ও দেবাশীষ এবং পশ্চিমে অমিতদের বাড়ি। শঙ্কুর সঙ্গে পড়ে। ওদের গেটে এক সাধু রাগারাগি করছে।

প্রথম প্রথম কিছুই বুঝতে পারিনি। সাধুর বাড়ি পাঞ্জাবের কোথাও। সে বাড়ি যাবে, টাকা দরকার। বৌদি তার চাহিদামতো টাকা দেয়নি, তাই পাশের বাড়ির কর্তার কাছে অভিযোগ করছে। যখন গেটে দাঁড়িয়েছিলাম তখন সে বলছিল, 'ওই বাড়ির মাইজি খুব খারাপ আছে।

আমাকে মাসে মাসে টাকা দেয়। কিন্তু ছ'মাসের এডভান্স চাইছি দেয়নি। দেখুন তো মাইজি কিতনা খারাপ। ' ফিরে গিয়ে আমরা খাবার টেবিলে বসেছিলাম। আমি তখনো আসল রহস্য জানি না।

দাদা জুৎজাত হয়ে বসে আসল ঘটনা বললেন, পাশের বাড়ির অমিতের বাবার কাছে সাধু যে অভিযোগ করছে ওটা কার নামে করছে জান? আমি জানব কি করে? আগামাথা কিছুই নেই। ওইসব অভিযোগ তোমার বৌদির নামে। আশ্চর্য হয়ে বললাম, 'কেন? বৌদির নামে অভিযোগ কেন? বৌদি তো ভালো মানুষ। ' 'ভালো মানুষ বলেই তো সাধুর রাগ। ' তারপর খুলে বললেন।

সেই সাধুর সঙ্গে ড. শিলা সেনের ১০-১২ বছরের ভদ্রলোকের চুক্তি। যখনই আসে প্রতিদিন এক টাকা করে দিতেন। তখনো কেউ ২-৪ আনার বেশি ভিক্ষা দেন না। বৌদি এক টাকা করে দেন। এতে তার প্রশংসায় সে পঞ্চমুখ।

রাস্তাঘাটেও প্রশংসা করত। চিত্তরঞ্জন পার্কের এক নম্বর মার্কেটে নিজেও তার প্রশংসা শুনেছি। এভাবে চলেছে কয়েক বছর। হঠাৎ এক দিন সে বলে, 'মাইজি, শুধু আপনার জন্যই এদিকে আসি। আশপাশের আর কেউ তেমন কিছু দেয় না।

একমাত্র আপনিই দেন। তাই মাইজি যদি এক মাসের ভিক্ষা একবারে দিয়ে দিতেন তাহলে প্রতিদিন আর এদিকে আসতে হতো না। ' সাধারণত সে প্রতি মাসে ২০-২৫ টাকা পেত। আবার ভদ্রলোকের নতুন চুক্তি, এক মাসের টাকা একবারে। সাধু খুব খুশি।

মাস গেলে একবারে ৩০ টাকা নিয়ে যায়। এটা চলে বেশ কিছুদিন। একবার বাড়ি যাওয়ার সময় সাধুজি বৌদিকে বলে, দুই মাস আসতে পারব না মাইজি। বাড়ি যাব। দুই মাসের এডভান্স দরকার।

বৌদি তাতেই রাজি। ১০০ টাকার নোট দিয়ে তাকে বিদায় করে। সম্পর্ক আরও মধুর হয়। ঘটনার আগ পর্যন্ত ভালোই চলছিল। তখন আর মাস শেষে নয়, মাসের আগে আগে এডভান্স চলে।

যেদিন রাগারাগির সূত্রপাত ছয় মাসের এডভান্স নিয়ে। সাধু বাড়ি যাবে, তাই এডভান্স চাই। বৌদি ৩ মাসের রাজি, ছয় মাস নয়। তখন মাসহারা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। দ্রব্যমূল্যের ঊধর্্বগতির জন্য সাধু-ফকির-মিসকিনের চাহিদাও বেড়ে গিয়েছিল।

সেদিন ছয় মাস আর তিন মাস নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত। সাধুর চাই ছয় মাস, বৌদি তিন মাসের বেশি দেবেন না। একপর্যায়ে তিস্তার পানিচুক্তির মতো চুক্তি ভেঙে যায়। রাগে গজগজ করতে করতে পাশের বাড়ির মালিককে গিয়ে অভিযোগ করছিল, 'আপনার পাশের বাড়ির মাইজি কি যে খারাপ! কত বছর ধরে টাকা দেয়। আমি মাত্র ছয় মাসের এডভান্স চাইছি, দিল না।

তিনি তিন মাসের দেবেন। আমি তিন মাস নেব কেন? এত বছর দিয়েছে, আমার একটা দাবি আছে না? এটা একটা কাজের কাজ হলো? এরকম করা কি তার উচিত? আপনিই বলুন? তাদের কত টাকা। আমাদের মতো গরিবদের দিলে কি টান পড়বে? ভগবান আরও দেবে। কিন্তু বুঝলেন না। বুঝবেন কেন? তারা যে বড়লোক।

' অনেক রাগারাগি-দাপাদাপি করে একসময় আমাদের গেটে কড়া নাড়ে। বৌদি অফিসে চলে গিয়েছিলেন। দাদাও বেরোই বেরোই করছিলেন। আমরা দুজন একসঙ্গে বেরিয়ে দেখি সেই গালাগাল করা সাধু কড়া নেড়েছে। কি ব্যাপার? কি চাই? 'না, ঠিক আছে মাইজিকে ডেকে দিন।

তিনি যখন ছয় মাসের এডভান্স দেবেন না কি আর করা, তিন মাসেরই দিন। এতদিনের সম্পর্ক নষ্ট করি কি করে?' দাদা যেই বললেন, বিবিজি তো দফতরমে চলা গিয়া। তার সোজা-সাপটা জবাব, 'মাইজি বহুত আচ্ছা হ্যায়। মাইজি চলা গিয়া তো কিয়া হুয়া? হামারা লিয়ে জরুর কুছ না কুছ ছুড়কে গিয়া। হামারা পানা হামে দে দিজিয়ে।

' কি মারাত্দক ব্যাপার! ৪-৫ মিনিট আগেই পাশের বাড়ির গেটে বৌদি সম্পর্কে যা-তা গালাগাল করেছে। আবার আমাদের গেটে এসে বলছে 'মাইজি বহুত আচ্ছা, হামারে লিয়ে জরুর কুছ ছুড়কে গিয়া। ' আসলেই বৌদি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি তার বহু পুরনো সাধুর জন্য তিন মাসের এডভান্স পোঁটলায় মুড়ে দাদার কাছে রেখে গিয়েছিলেন। সে পোঁটলা তার হাতে দিলে গদগদ হয়ে চলে যায়।

দাদা হাসতে হাসতে বললেন, কাদের, তোমার বৌদি বছরের পর বছর ওকে টাকা দিয়ে যাচ্ছে। এখন তার এডভান্স চাই ছয় মাসের, তোমার বৌদি দেবে তিন মাসের। বনিবনা হয়নি বলে পাশের বাড়িতে অভিযোগ করছে। অথচ ও বাড়ি তাকে কোনোদিন এক পয়সাও দেয়নি। কিছু না দিয়েই অমিতের বাবা-মা ভালো, আর বছরের পর বছর দিয়ে এবার ছয় মাসের এডভান্স দেয়নি বলে তোমার বৌদি খারাপ।

শ্রী শরদ্বিন্দু চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও আমার অবস্থা তেমন হয়েছিল। তার দুইবার এঙ্টেনশন এনেছিলাম। কিন্তু তৃতীয়বার কেন হলো না সে জন্য সব ভুলে গেলেন। তবে তার অফিস ছাড়ার কথা শুনে আমি খুব মর্মাহত হয়েছিলাম। যেদিন তিনি শেষ অফিস করেন, সেদিন সারাদিন ছটফট করছিলেন।

যে চেয়ারে ১০-১৫ বছর বসেছেন সেই চেয়ারে বার বার পা তুলে বসছিলেন, শক্ত করে হাতল ধরে রাখছিলেন। অফিসের প্রতিও সে যে কি এক কলিজা ছেঁড়া টান। তার স্বাস্থ্য বেশ ভালোই ছিল কিন্তু অবসরের কিছুদিন পরই তিনি মারা যান। সেদিন মহাজোট সরকারের খাদ্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অফিস ছাড়া খাদ্যমন্ত্রীর কান্নাকাটি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হাবভাব দেখে প্রায় ৩০ বছর আগে শ্রী শরদ্বিন্দু চট্টোপাধ্যায়ের অবসরে যাওয়ার কথা মনে পড়ছিল। সম্ভব হলে আগামী পর্বে ড. রাজ্জাক এবং দীপু মনির ৬০০ দিন বিদেশ সফর সম্পর্কে দুই কথা লিখব।

পত্র-পত্রিকায় তার পাঁচ বছরের মন্ত্রিত্বে ৬০০ দিন বিদেশ সফরকে অসত্য বলে ৫১৭ দিন স্বীকার করেছেন। হতে পারে। তার হিসাবে ৫১৭ দিন। সেখানে বিমানে থাকার সময়, বিমানবন্দরের যাতায়াত এবং অপেক্ষার সময় যোগ-বিয়োগ করলে ৬০০ দিনের বেশি ছাড়া কম হবে না। আর যে সময় হিসাবটা বেরিয়েছিল তারপর আরও ৩০-৪০ দিন বিদেশ সফর তো হয়েছেই।

তাই সংবাদপত্রের হিসাবে খুব বেশি ভুল হওয়ার কথা নয়। ভুলে ভুলে মানব জীবন, একটি ভুলের জন্য কাঁদে মানুষ সারা জীবন।

লেখক : রাজনীতিক।

 

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.