আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটগল্পঃ অতঃপর ফেসবুকিয় দেশবোধ(মনেহয় হালকা হাসির)

সমালোচনার প্রথম শর্তই হচ্ছে সততা, আর প্রশংসার দ্বিতীয় শর্ত হল মিথাচার।

শুক্রবার গুলা হয়ও একেবারে ঝিমাইন্যা। তবে সেই ঝিমানি দূর করিতে ভর্তি পরীক্ষা অথবা চাকরীর পরীক্ষা গুলোর জুড়ি নাই। এখন অবশ্য আমার বেশ ফুরফুরে লাগতেছে, তবে অন্য কারনে। তাই বলে! মন এত তাড়াতাড়ি ঝরঝরে হইয়া যায়!! কিভাবে?? কিছুক্ষন আগেও বিষণ্ণ মনে 'বুয়েটে' আসতেছিলাম।

উদ্দেশ্য “পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিঃ” এ ‘সহকারী বাবস্থাপক’ পদের জন্য পরীক্ষা দেওয়া। পরীক্ষা অবশ্য কি দিবো? আসল উদ্দেশ্য হইলো প্রশ্ন দেখা। নানা করনে প্রতিবারের মত এবার প্রিপারেসন নেয়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। যথাসময়ে বুয়েটের শহিদ মিনার গেটে আমি উপস্থিত। পোলাপাইন খুব বেশী নাই, তখনই সন্দেহ হইছিলো।

তবে নিশ্চত হইলাম সদ্য লাগানো নোটিশ বোর্ডে লেখা দেইখা। পরীক্ষা স্থগিত! তাও আবার অনিবার্য কারনে!! "তথ্য অধিকার আইনে মামলা করিয়াও অনিবার্য কারনটা যে কি, সেই তথ্য কেউ জানতে পারবে কিনা সন্দেহ। " ব্যাপার বুঝিয়াও আমি কিছুক্ষন একইভাবে দাঁড়াইয়া রইলাম(এই..ই আসিয়াছি, এই..ই কি চলিয়া যাইব? এমন একটা ভাব)। ঠিক তখনই একরাশ বাঁক নিয়ে উপস্থিত হইলো (আমার আশেপাশের বয়সী) এক সুন্দরী!! এমনিতে জীবনেও আমি আগে কথা বলতাম না(ডরে!), কিন্তু কি আর করার, সেতিই যে আগে শুরু করল(আর আমিও বুঝিয়া লইলাম, এখনকার দিনে আধুনিকা মেয়েরা আগ বাড়িয়ে কথা বলতে কোন কার্পণ্য করে না) সুন্দরীঃ "দেখলেন অবস্থা?" আমিঃ "হুম! পরীক্ষা স্থগিত!" সুন্দরীঃ "কিন্তু আগে থেকে জানাবে না?" আমিঃ "ওয়েব সাইটে হয়তো আগেই দিয়েছে, আমরাই হয়তো চেক করিনি। " সুন্দরীঃ "কিন্তু দেখেন! এই ডিসিশন কালকে সন্ধ্যায় নেয়া হইছে!!!(নিচে ডেট দেখাইয়া)" তখনই আমার চোখে পড়ল অন্য জিনিষ।

আমি আঙ্গুল তুলে নোটিশ বোর্ডের উপরে হাতের লেখা একটি লাইন দেখালাম। কিছুক্ষন আগেই হয়তো কোন দুষ্ট পরীক্ষার্থী জাতীর উদ্দেশে লিখে গেছে(অমর বানী)- “হায়রে! এই digital দেশে, খবর জানতে হয় analog সিস্টেমে?”(হুবুহু মনে নেই)। এটা অবশ্য ভালোই। সবারই এরকম মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিৎ। অন্য একজন উক্ত দুষ্ট লেখাকে সমর্থন জানিয়ে সাথে লিখে রেখেছে “yes”, কেমন একটা ফেসবুক ফেসবুক আবহাওয়া।

স্ট্যাটাসের জবাবে কমেন্ট। জায়গা থাকলে হয়তো আরও অনেক কমেন্ট পরতো। হয়তো অনেকে মনে মনে মৌন সমর্থন দিয়ে গেছেন। এবার আমি কলম বের করে নিচে ছোট করে লিখলাম "1 like" (আর মনে মনে ভাবলাম, আহ! কয়েকদিন আগে নোটিশটা সবাই "share" দিলে অনেক ভালো হতো। আজ আর কষ্ট করে আসতে হতো না)।

তবে আমার এহেন আচরণে সুন্দরী মনেহয় ভালই মজা পাইছে। সেতি "like" সংখ্যা দিগুন করে দিতে বললো। আমিও উৎসাহের সাথেই "like" দুইটা বানাইয়া দিলাম। কিন্তু সেতিরও ফেসবুকের কথাই মনে হইয়া গেল কিনা? একটু উদাস হইয়া মোবাইল বাইর কইরা, দূরে সরতে সরতে কারে যেন ফোন করল(আমার ধারনা ফেসবুকের কথা মনে হওয়া থেকে, বয়ফ্রেণ্ডের সাথে ডেটিং ফিক্সের কথা মনে হইইয়া গেছে)। এরপর আর কি! বাঁক প্রদর্শন করিতে করিতে রিক্সা নিয়া চইলা গেল!! আর আমার জন্য রেখে গেল একরাশ খেজুরের কাঁটা।

আমি খেজুরের কাঁটা দিয়া নিজের অন্তর খোঁচাইতে লাগিলাম। মোহ কেটে গেলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে পেলাম, সবাই গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত হইয়া আলোচনায় মনযোগী। লোকসংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশী এমন একটি গ্রুপে "like" দিয়া জয়েন করলাম। লোকজন বেশী দেখেই ধারনা করলাম এই গ্রুপের "admin" ভালই একটিভ। কিছুক্ষণের মধ্যেই এডমিনকে সনাক্তও করে ফেললাম।

অধিকাংশ সময় সে একাই বক বক করছে। বিষয় বস্তুঃ “পরীক্ষা স্থগিত ও দেশের পিছিয়ে যাওয়া” সারমর্মঃ এই যে দেশে ভর্তি পরীক্ষা সময়মত হচ্ছে না, আজ আমাদের পরীক্ষাও হল না। অথচ অনেক পোস্ট খালি পড়ে আছে। আবার অনেকে চাকরীর বাহিরে বেকার বসে আছে...বক বক ...তারপর বিশ্ববিদ্যালয় গুলতে সেশন জট... ইত্যাদি ইত্যাদি আমি মৌন সমর্থন দিলাম এবং এডমিনকে "follow" করলাম। এই গ্রুপ "dislike" না দিয়েই, পাশের অন্য একটি গ্রুপে "like" দিয়ে প্রবেশ করলাম।

এখানেও প্রনবন্ত আলোচনা চলছে... বিষয় বস্তুঃ “ম্যান টু ম্যান কমুনিকেশন” সারমর্মঃ দেশ এখনও Digital এর ছোঁয়া পুরোপুরি পায়নি ঠিকই। কিন্তু যেটুকু Digital হয়েছে আমরা তার কতটুকু সুবিধা নিচ্ছি? যেমনঃ ভারতের হাতে আমরা বিভিন্ন সময় অত্যাচারিত। এ ব্যাপারে বাক্তিগত ভাবে আমাদের কি করনীয়? ভারতের বিভিন্ন চ্যাট রুমে, ফেসবুকে এক এক জনের সাথে কথা বলেছি। তাদের বুজিয়েছি যে “একটু ভাবো? তোমরা যা করছ তাকি ঠিক? সীমান্ত হত্যা, অন্যায় ভাবে চাপিয়ে দেয়া চুক্তি?” প্রথমে গো ধরে থাকলেও পরে যুক্তির কাছে ঠিকই হার মানে অনেকে। এতে হয়তো ভারতের অন্যায় আচরণ একটুও বদলাবে না ঠিক।

কিন্তু ভারতে একটা সমর্থক সংখ্যাতো আমরা তৈরি করতে পারি। তাই না? আসলেইতো! এভাবে তো আগে ভাবা হয়নি? আমরা সবাই যদি ভারতের অন্যায় আচরণ সম্পর্কে ভারতের কয়েকজনকে করে বুঝাতে থাকি, তাহলে কয়েক বছর পর ভারতের মধ্যেই হয়তো এমন অনেক লোক পাবো যারা অন্তত মনে করবে “ভারত বাংলাদেশের সাথে যা করছে তা ঠিক না। " এভাবে সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরা যেতে পারে। আমি পেইজে পেইজে ঘুরলাম প্রায় দের ঘণ্টা। বুঝলাম সেখানে প্রায় ৪০ ভাগই বেকার, কিন্তু কেউই হতাশ না।

প্রায় সবার মধ্যেই প্রত্যয়ী ভাবটা স্পষ্ট। দেশ এখন সংকটময় সময় পার করছে, কিন্তু তরুণদের মুখে মুখে আশার কথা। শত সমস্যার মধ্যেও সবার মনে সুন্দর দেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়। অন্যে/ রাজনীতিবিদ/ নীতি নির্ধারকরা কি করছে, তার আগে প্রশ্ন আমি কি করছি? আমি কি দুর্নীতি গ্রস্থ? আমি কি ট্যাক্স দেই? আমি কি কোন অন্যায়ের সাথে জড়িত? আমি কি আইন শৃঙ্খলা মানি? আমি কি..... * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * পাঠক হয়তো ভাবতেছেন এইসব সিরিয়াস কথা শুনে মেজাজ কি কারো ফুরফুরে হয়ে যায়? ফুরফুরে মেজাজের আসল কারনটা হলো, আজ যদি পরীক্ষা হতো তাহলে এতক্ষনে আমার পরীক্ষা হলে বসে চিন্তা করতে হইত ট্রান্সফরমার, ওয়াই ডেলটা কনভারসন, মেশ এনালাইসিস আর সিমেট্রিক ফলট এসব নিয়ে। এই পোস্টও আর লেখা হতো না।

সবচেয়ে বড় কথা পরীক্ষা না দিয়ে আড্ডাবাজী, এর উপরে কিছু আছে নাকি? * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * অবশেষে বাসায় ফিরতে ফিরতে আমি খেজুরের কাঁটা গুলো বের করলাম। ভয়ংকর সূচালো কাঁটা গুলো!! আচ্ছা?? সবাই মিলে "report" করে কি কোন ডেটিং এর "event" ক্যানসেল করা যায়????? (২৯/১১/২০১৩) দেশবোধ নিয়ে উৎসাহ যোগায় এমন লেখাঃ মোঃ ইসহাক খান ভাইয়ের লেখা দেশান্তরী কাল্পনিক_ভালোবাসা ভাইয়ের লেখা আমাদের ভোজনরসিক-তা, গরুটির মুক্তি কবে?


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।