আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবরোধের বলি আরও নয়টি প্রাণ

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের ডাকা টানা ১৩১ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির চতুর্থ দিনে আজ মঙ্গলবার নয়জনের প্রাণ গেল। এ নিয়ে দ্বিতীয় দফার অবরোধে মোট ১৮ নয়জন নিহত হলেন। এর আগে ৭১ ঘণ্টার অবরোধে প্রাণ হারিয়েছেন ২২ জন। সে হিসাবে বিএনপির দুই দফার অবরোধে ৪০ জন প্রাণ হারালেন।
আমাদের অফিস, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

চাঁদপুর
চাঁদপুর শহরের কালীবাড়ি চত্বরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এক স্কুলছাত্রসহ দুজন নিহত হয়েছেন।

নিহত দুজন দলীয় কর্মী বলে দাবি বিএনপির। প্রতিবাদে চাঁদপুরে কাল বুধবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ১৮-দলীয় জোট। নিহত ব্যক্তিরা হলেন রতন (২৫) ও সিয়াম (১৪)। চাঁদপুর সরকারি কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র রতনের বাড়ি শহরের গুনরাজদী এলাকায়। আল আমিন একাডেমির অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র সিয়াম চাঁদপুর শহরের ট্রাক রোডের বাড়িতে থাকত।

তার বাবার নাম মজিবুর রহমান। মজিবুর দাবি করেন, সিয়াম নাশতা খেতে বের হয়েছিল।

চাঁদপুর সদর হাসপাতালের চিকিত্সা কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, দুজনই গুলিতে নিহত হয়েছেন। বেশ কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবু মোরশেদ দাবি করেন, বিএনপি ও শিবিরের কর্মীরা মিছিল থেকে পুলিশের ওপর ককটেল ছোড়েন।

আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুড়তে বাধ্য হয় পুলিশ।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ দাবি করেন, বিনা উসকানিতে অতর্কিতে তাঁদের মিছিলে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে দলের দুই কর্মী নিহত হন।

 

চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে অবরোধকারীদের হামলায় কনটেইনার লরিচালক মাহবুব ও মিজান নামের এক পরিবহনশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) আবুল মনসুর প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘নগরের সল্টগোলা সিমেন্স হোটেলের সামনে দিয়ে পতেঙ্গা থেকে বন্দরের দিকে যাচ্ছিল একটি লরি।

এ সময় অবরোধকারীরা লরিটিকে লক্ষ্য করে পেট্রলবোমা ছুড়ে মারেন। চালক দ্রুতগতিতে লরিটি চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে চালক মাহবুব ঘটনাস্থলে মারা যান। পেট্রলবোমায় দগ্ধ হন তাঁর সহকারী সুমন ও মিজান। তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘পরে চিকিত্সাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় মিজানের মৃত্যু হয়। ’

এদিকে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর সড়াইপাড়ায় অবরোধকারীদের ছুড়ে মারা ককটেলে আজ সাত বছরের শিশু মিনহাজ হোসেন বেলাল আহত হয়েছে। সে সড়াইপাড়া হাজি আবদুল আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হাসপাতালে মিনহাজের বাবা মোহাম্মদ মমতাজ মিয়া বলেন, পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল বলে মিনহাজ সকালে স্কুলে যায়।

কিন্তু পরীক্ষা না হওয়ায় সে বাসায় ফিরে ব্যাগ রেখে খেলতে বের হয়। এর কয়েক মিনিট পর সে ককটেল বিস্ফোরণে আহত হয়। তার চোখের ওপর জখম হয়েছে।  

 

সাতক্ষীরা

আজকের অবরোধে পৃথক দুটি ঘটনায় সাতক্ষীরায় শিবিরের দুই কর্মী, যুবলীগের এক কর্মীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। জেলায় পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন।

তাঁরা শিবিরের কর্মী বলে দাবি জামায়াতের। সকাল সাতটার দিকে দেবহাটার সখীপুর মোড়ে ও সাড়ে আটটার দিকে গরানবাড়িয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত দুজন হলো হোসেন আলী (১৭) ও আরিজুল ইসলাম (১৪)।

জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমানের দাবি, পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষের সময় গুলিতে শিবিরের দুই কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও কয়েকজন আহত হন।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরীর ভাষ্য, যৌথ বাহিনীর ওপর জামায়াত-শিবির হামলা চালিয়েছে। হামলার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কয়েকটি গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষের সময় একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছে বলে শুনেছেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, আজ সকালে সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে গাছ, বালি ও মাটি দিয়ে সড়ক অবরোধ করেন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। অবরোধ অপসারণে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা সকাল সাতটার দিকে প্রথমে সখীপুর মোড়ে পৌঁছান।

এ সময় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা তাঁদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও ককটেল ছোড়েন। একপর্যায়ে পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা কয়েকটি গুলি ছোড়েন। এ সময় হোসেন আলী নামের একজন নিহত হন। স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, এ ঘটনার পরে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা গরানবাড়িয়া এলাকায় যান। সেখানে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে যৌথ বাহিনীর ওপর ইট ও ককটেল ছোড়েন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি ছুড়লে আরিজুল ইসলাম নামের আরেকজন নিহত হয়।

এদিকে আজ বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তালবাড়িয়া এলাকায় মো. গিয়াসউদ্দিন নামে যুবলীগের এক কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন অবরোধকারীরা। এ সময় অবরোধকারীদের হামলায় নাজমুল হক নামের একজন আহত হয়েছেন।

আহত নাজমুল হক প্রথম আলো ডটকমকে জানান, তাঁরা দুজন পাওনা টাকা আদায়ের জন্য মোটরসাইকেলে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাহমুদপুর যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তালবাড়িয়া এলাকায় গেলে পিকেটাররা তাঁদের থামতে বলে।

তাঁরা থামার সঙ্গে সঙ্গে লাঠি ও রড দিয়ে তাঁদের পেটাতে থাকে পিকেটাররা। একপর্যায়ে মো. গিয়াসউদ্দিন ঘটনাস্থলে মারা যান। তিনিও গুরুতর আহত হন। এ সময় পিকেটাররা মোটরসাইকেলটি পুড়িয়ে দেয়।

 

সীতাকুণ্ড

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে গতকাল রাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শরিফুল ইসলাম নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন।

অবরোধের সমর্থনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পিকেটিংয়ের সময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে তিনি নিহত হন বলে দাবি করেছেন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী।

এ ঘটনার প্রতিবাদে কাল বুধবার উত্তর চট্টগ্রামে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল।

শরিফুল মুরাদপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। প্রত্যক্ষদর্শী মো. আনোয়ার, রফিক ও সুজনের ভাষ্য, গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশি নিরাপত্তায় শতাধিক গাড়ি চট্টগ্রামের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এ সময় ৩০-৪০ জন পিকেটার গাড়িবহরে হামলা চালায়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে শরিফুল গুলিবিদ্ধ হন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিত্সক শরিফুলকে মৃত ঘোষণা করেন।

শরিফুলের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, বাড়বকুণ্ড এলাকায় এক বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন শরিফুলসহ কয়েক বন্ধু। সেখান থেকে ফেরার পথে পুলিশ তাঁদের পিকেটার মনে করে গুলি ছোড়ে।

এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে শরিফুল মারা যান।

মুরাদপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আজম টুটুলের দাবি, দলীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা তাঁদের ওপর গুলি ছোড়ে। এতে শরিফুল নিহত হন।

 

পটুয়াখালী

পটুয়াখালীর বদরপুরে অটোবাইকে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে দগ্ধ আবদুস সাত্তার আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান। আগুনে তাঁর শরীরের ৬৮ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।

ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল জানান, ১ ডিসেম্বর তাঁকে এখানে আনা হয়।

গত শনিবার সন্ধ্যার পর মাহফিল শুনে বাসায় ফেরার পথে পটুয়াখালীর বদরপুরে অটোবাইকে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হন আবদুস সাত্তার। তিনি পটুয়াখালীর পাংগাশিয়া নেছারিয়া আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। কয়েক বছর আগে তিনি অবসরে যান।

যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বার্ন ইউনিটে চিকিত্সাধীন অবস্থায় এ নিয়ে নয়জন মারা গেলেন।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।