আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মধ্যস্থতা করতে আসিনি বার্তা দিতে এসেছি

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিয়ে কোন মধ্যস্থতা করতে ঢাকায় আসিনি। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পৰগুলোর কাছে ভারতের বার্তা পৌছে দিয়েছি। সেই বার্তা রাজনৈতিক ও ভারতের বিষয়। তাই সেটি প্রকাশ্যে জানাচ্ছি না। দিনভর বাংলাদেশের শীর্ষ তিন রাজনৈতিক দলের প্রধান নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় গনমাধ্যমের সিনিয়র প্রতিনিধিদের একথা বলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং।

আগামি নির্বাচন নিয়ে সংকটসহ নানা প্রশ্নের জবাব অত্যনত্দ রৰনশীলভাবে দিয়েছেন ভারতের এই নবনিযুক্ত পররাষ্ট্র সচিব। সকল কথাই বলেছেন কূটনৈতিক চালে। নির্বাচন ইস্যুতে ভারতের অবস্থান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, 'বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন দেখতে চায় ভারত। সেই নির্বাচনে জনগনের অংশগ্রহন থাকতে হবে। বৃহৎ পরিসরে নির্বাচন গ্রহনযোগ্য হতে হবে।

' অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'বাংলাদেশের জনগনের প্রজ্ঞার উপর ভারত বিশ্বাস রাখে। বৃহত গনতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত বিশ্বাস করে বাংলাদেশের জনগনই এই সিদ্ধানত্দ নেবে কে বাংলাদেশের শাসন ব্যাবস্থায় থাকবে। ' সুজাতা বলেন, 'বাংলাদেশের আভ্যনত্দরীন বিষয়ে ভারত কোন হসত্দৰেপ করতে বা দেখতে চায় না। ' দুই নেত্রীর কাছে কি বার্তা পৌছে দিয়েছেন এমন কয়েকটি প্রশ্নের মুখোমুখি হন সুজাতা সিং। উত্তরে বলেছেন, 'বাংলাদেশের স্থিতিশীল ও শানত্দিপূর্ণ পরিবেশ ভারত আশা করে।

সেই সঙ্গে স্বার্থক গনতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত আশা করে ভারত। ' সংলাপ প্রসঙ্গে বলেছেন, ' এটা চলমান প্রক্রিয়া। সময় হলেই নিশ্চয়ই আপনারা একটি সমাধান দেখতে পারবেন। ' সুজাতা বলেছেন, প্রত্যেক দেশেরই গনতান্ত্রিক পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন। কোন একই মাপকাঠিতে এর বিচার করার সুযোগ নেই।

পৃথিবীর প্রতিটি দেশেরই তাদের নিজেদের পদ্ধতিতে গনতান্ত্রিক ধারা সংরৰনের অধিকার আছে। তাই বাংলাদেশের গনতন্ত্র কেমন হবে তা বাংলাদেশই নির্ধারন করবে। ' তিনি বলেন, 'তবে সংঘাত কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। চলমান সংঘাতের বিষয়ে ভারত গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ' বিরোধীদলের নির্বাচনে অংশ না নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি সরাসরি কোন মনত্দব্য করেননি।

তবে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো হলো এক একটি পিলার। বিরোধী দল গনতন্ত্রে অন্যতম গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারি অংশ। বাংলাদেশেও একই কথা প্রযোজ্য। সুজাতা বলেন, ভারত বাংলাদেশকে সমর্থন করে এবং বিশ্বাস করে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে। আমি পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে চার মাস আগে দায়িত্ব নিয়েছি।

তাই এখানে এসেছি সবার সঙ্গে পরিচিত হতে। ' মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সুজাতা সিং এর পাশাপাশি ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন এবং প্রতিনিধি দলের অপর তিন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। গনমাধ্যম ব্যাক্তিত্বদের মধ্যে ছিলেন রিয়াজ উষ্টীন আহমেদ, নাইমুল ইসলাম খান, মন্জুরম্নল ইসলাম বুলবুল, সোহরাব হাসান, ইসতিয়াক রেজা, হারম্নন হাবিব, বাসুদেব ধর, মুন্নী সাহা, জাহিরম্নল আলমসহ ১৯ সিনিয়র সাংবাদিক।

এর আগে সুজাতা সিং সকাল সাড়ে ১০টায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে ঢাকায় হজরত শাহজালাল (রা:) আস্তজট্টাতিক বিমানবন্দরে আসেন। তার সঙ্গে ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা মিয়ানমার (বিএসএম) বিভাগের যুগ্ম সচিব হর্ষ বর্ধন স্রিংলা, বাংলাদেশ মিয়ানমার (বিএম) বিভাগের নতুন যুগ্ম সচিব শ্রী প্রিয়া রঙ্গনাথন।

বিমানবন্দরে সুজাতাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক ও ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ। বিমানবন্দর থেকে সুজাতা সরাসরি যান সেগুনবাগিচা পররাষ্ট্র দপ্তরে। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে সাৰাত করেন সুজাতা। আধাঘন্টার এই বৈঠকের শুরম্নতে মন্ত্রণালয়ের অন্যা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তবে শেষ পনের মিনিট একানত্দে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সুজাতা ও পঙ্কজ শরন।

বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে তেমন কোন কথা বলেননি সুজাতা। শুধু বলেছেন, একটি ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বেরিয়ে সুজাতা সিং যান তেজগাওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাৰাৎ করেন। আধাঘন্টার সাৰাৎ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, সাক্ষাতে তারা দু'দেশের বিভিন্ন স্বার্থ-সংশিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

সভায় প্রধানমন্ত্রী দরিদ্রমুক্ত দক্ষিণ এশিয়া গঠনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃবৃন্দ একযোগে কাজ করলে তা সম্ভব হবে। এম্বাসেডর এট লার্জ এম. জিয়াউদ্দিন, মূখ্য সচিব এম. ওয়াহিদুজ্জান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোলস্না ওয়াহিদুজ্জামান, ভারতীয় হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে হাইকমিশনার পঙ্কজ শরনের বাসভবনে একটি মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন সুজাতা সিং। হাইকমিশনের আয়োজনে সেই ভোজ সভায় ঢাকায় বসবাসরত ভারতীয় ও বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের বেশ কিছু সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ভোজ শেষে কিছুৰনের বিশ্রাম নিয়ে বারিধারায় সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের বাসভবন প্রেসিডেন্ট পার্কে যান সুজাতা।

এরশাদের সঙ্গে আলোচনা করেন রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। বৈঠক শেষে এরশাদ প্রেস ব্রিফিং করেন। সুজাতা সিংয়ের সঙ্গে কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে এরশাদ বলেন, 'সুজাতা বলেছেন, অন্য কোনো দল যদি নির্বাচিত হয়, তাহলে দেশে জামায়াতে ইসলামীর উত্থান হবে, এটা কি আপনি চান? এ প্রসঙ্গে আমি বলেছি, যদি জামায়াতের উত্থান হয় তাহলে এর দায় সরকারের। জামায়াতের উত্থান হোক এটা আমিও চাই না। ' এরশাদ ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন তিনি সুজাতাকে বলেছেন, সরকার সবাইকে শত্রু (হোসটাইল) বানিয়েছে।

দেশের জনমত ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে। সাংবাদিকেরা এ সময় জানতে চান, আপনি কোনো চাপে আছেন কি না। এরশাদ বলেন, 'আমার ওপর কোনো চাপ নেই, আতঙ্ক নেই। ' তাহলে কেন আপনি পালিয়ে ছিলেন, জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'পালিয়ে ছিলাম তোমাদের (সাংবাদিকদের) ভয়ে। আমি নির্বাচনে যাব না, যাব না, যাব না।

এটাই আমার শেষ কথা। দলের নেতাদের বলেছি, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করো, নিজেদের জীবন বিপন্ন কোরো না। ' এরশাদের সঙ্গে সাকাৎ শেষে বিকালে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনে গিয়ে সাৰাত করেন সুজাতা। বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যনত্দ খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর গুলশানের কার্যালয়ে ঘন্টাব্যাপী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শমসের মবিন চৌধুরী ছাড়াও বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহউদ্দীন আহমেদ, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সুজাতা সিং কোনো কথা বলেননি। তিনি শুধু বিএনপিকে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার বিষয়ে কথা বলেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে সুজাতা সিংয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে শমসের মবিন চৌধুরী জানান, ভারত প্রত্যাশা করে বাংলাদেশে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক াবস্থা দেখতে চায় ভারত। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ভারত আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশি দেশ।

তাদের সঙ্গে আমাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। আমরা সমস্বার্থ ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে এ সম্পর্ককে আরো শক্তিশালি করতে চাই। তিনি পররাষ্ট্রচিব সুজাতা সিংয়ের মাধ্যমে সে দেশের নেতৃবৃন্দ ও মুরম্নবি্বদের প্রতি তার সালাম জানান।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো আলাপ হয়েছে কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। তবে তারা চায় বাংলাদেশের জনগণই এ সংক্রানত্দ সমস্যার সমাধান করম্নক এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক।

এরপরই রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে ঢাকার কয়েকজন সিনিয়র গনমাধ্যম ব্যাক্তিত্বের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সুজাতা। গনমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাৰিক বৈঠকে বসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ও প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে এতে অংশ নেয় ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল। সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ও তিস্তা চুক্তির অগ্রগতিসহ দ্বিপাৰিক সম্পর্কের নানান বিষয় নিয়ে তারা আলোচনা করেন। পরে পররাষ্ট্র সচিবের আয়োজনে এক নৈশ ভোজে অংশ নেন সুজাতা।

এটিই ছিল ঢাকায় তার শেষ কর্মসূচি। রাত যাপন শেষে আজ সকালেই দিত্দিদ্দ ফিরে যাবেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব। কূটনৈতিক সূত্রের তথ্যানুসারে, সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোর নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সফর একটি 'সূচি'তে পরিণত হয়েছে। নেপালের নির্বাচনের আগে গত ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর সুজাতা সিং কাঠমান্ডু সফর করেন। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে গত ১৬ ও ১৭ অক্টোবর মালে সফরে যান সুজাতা সিং।

নভেম্বরে দুই দেশেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।