আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাখামৃগ কাহিনি

অনেক রকম বানর আছে পৃথিবীতে। অধিকাংশই উষ্ণ অঞ্চলে বাস করে। গাছে, বনজঙ্গলে এদের বিচরণ। দলে-দলে চলাফেরা করে। পাতা, ফলমূল এবং পোকামাকড় খেয়ে বাঁচে।

এরা সাধারণত ছোট হয়। লেজ হয় লম্বা। তারা চার পায়ে গাছের ডাল ধরে চলাফেরা করে। পেছনের পায়ে ভর করে কিছুক্ষণ দাঁড়াতে পারে। হাত আমাদের হাতের মতো।

পাঁচটি আঙুল আছে। গাছের ডাল ধরে ফল পেড়ে খেতে পারে। মুখের অবয়বও অনেকটা মানুষের মুখের মতো। কিন্তু তারা কোনো কিছু ধরার সময় হাত-পা চারটি দিয়েই ধরে। কারণ তাদের পায়ের আঙুলগুলো লম্বা লম্বা।

স্ত্রী-বানর একবারে একটি বাচ্চা দেয়।
সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পরিচিত হচ্ছে রেসাস বানর। এরা হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে পবিত্র প্রাণী। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কেউ এর কোনো ক্ষতি সহ্য করবে না। এরা যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারে।

যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। চিড়িয়াখানায় খুব পরিচিত প্রাণী ওরা।
ভারত উপ-মহাদেশের একটি পরিচিত খেলা হচ্ছে বানর নাচ। এ খেলায় বানরের মাথায় টুপি এবং গায়ে জ্যাকেট পরিয়ে খেলা দেখানোর সময় চারদিকে দর্শকরা ঘিরে থাকে। ক্যাপুচিন নামক বানর দক্ষিণ আমেরিকায় খুব পরিচিত।




ইন্ডিয়ান ম্যাকাকি লেজসহ প্রায় ৬০ সেণ্টিমিটার লম্বা হয়। শরীরের চেয়ে লেজ লম্বা হলুদাভ বাদামি রংয়ের শরীর। অধিকাংশই দলবদ্ধ হয়ে গাছে বাস করে। পাথুরে পাহাড়ি অঞ্চলেও বাস করে। এখন তারা প্রায় সব জায়গাতেই বাস করতে পারে।

ভারতে তারা পাকা দালানের কার্ণিশে, ছাদে বাস করতেও অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। পুরনো ঢাকার অনেক বাড়িতে এখনও বানর আছে।
স্ত্রী-ম্যাকাকি বানর একবারে একটি বাচ্চা দেয়। জন্মের সময় ওজন থাকে ৪৫ গ্রাম।

বাচ্চা মাকে হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে থাকে। বাচ্চার এক বছর বয়স পর্যন্ত মা তার খুব যতœ করে। এটার সাথে খেলাও করে। অধিকাংশ বানর একে অপরের প্রতি মমতা দেখায়। মা-বানর সাহসের সঙ্গে বাচ্চাকে রক্ষা করে।

কোনো বাচ্চা মারা গেলে মা-বানর ওটাকে নিয়ে কয়েক দিন ঘুরে বেড়ায় এবং চেষ্টা করে দেখে আবার বাঁচিয়ে তোলা যায় কিনা। কোনো-কোনো সময় বাচ্চার ওই শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য অন্যের বাচ্চা চুরিও করে।
অন্য একটি ম্যাকাকি বানরের নাম হচ্ছে পিগ-টেইল্ড ম্যাকাকি। এদের লেজ খাটো বলেই এই নাম। এরা মায়ানমার ও সুমাত্রায় বাস করে।

এদের নারকেল গাছে উঠে নারকেল পাড়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মালয় অঞ্চলে কাঁকড়াভোজী ম্যাকাকি ম্যানগ্রোভ জলাভূমিতে বাস করে। এখানে তারা প্রধানত চিংড়ি, কাঁকড়া, শামুক প্রভৃতি খায়। জিব্রালটারে একটি ম্যাকাকি বানর দেখা যায়, যার নাম বারবারি এপ। আসলে এরা এপ নয়।

এরা ইউরোপের একমাত্র বানর। কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না, কোত্থেকে এরা এখানে এসেছে। সম্ভবত বহু বছর আগে দক্ষিণ-পূর্ণ এশিয়া থেকে এদের প্রথম ইউরোপে আনা হয়েছিল।


কিছু আফ্রিকান বানর হয় খুবই উজ্জ্বল সাদা রং। নীল বানরের পশম শ্লেট-ব্লু।

গুঁফো বানরের লাল গোঁফ আছে। কানের উপর লাল পশমের গোছা আছে। কানের উপর পশমের গোছা আছে। হাসার বানরের লেজ বেশ লম্বা এবং শরীরের রং লাল। আফ্রিকার কিছু কালো বানরের ধবধবে সাদা চুলের ঝালর দেখা যায়।


বেবুন আফ্রিকা ও আরবের এক ধরনের বড় বানর। অন্যান্য বানরের চেয়ে বেশি সংখ্যায় মাটিতে বাস করে। তবে রাতে ঘুমানোর জন্য গাছে উঠে যায়। তাদের হাত ও পায়ের দৈর্ঘ্য সমান। ফলে তারা সহজে মাটিতে চলাচল করতে পারে।

তারা ঘোড়ার মতো দ্রুত খেতে পারে। তাদের মুখ অনেকটা কুকুরের মতো। এদেরই গোষ্ঠীর একটি হচ্ছে পশ্চিম আফ্রিকার ম্যা-্রলি। তাদের মুখে লাল ও নীল ডোরা কাটা আছে। উজ্জ্বল লাল নাক এবং হলুদ দাঁড়ি আছে।

দলবদ্ধ হয়ে খাবার খুঁজতে যায়। ফলমূল এবং শস্য খায়। পাথর উল্টিয়ে পোকামাকড়, বিছা ইত্যাদি খুঁজে খায়।
দলের নেতা হয় সবচেয়ে ক্ষমতাবান পুরুষ। তারা খুবই ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে মাঝে-মাঝে।

অল্প দূরত্বে সহজে উড়ে যেতে পারে। রাগান্বিত অবস্থায় মারাত্মকভাবে কামড়ে দিতে পারে। এদের আছে বড় বড় দাঁত।


বেবুন এক অদ্ভুত বানর। সাধারণত চিড়িয়াখানা বা সার্কাসে তাদের দেখা যায়।

তাদের মাথা দেখতে অনেকটা কুকুরের মাথার মতো, কিন্তু কুৎসিত। তাদের চিৎকার কুকুরের ডাকের মতো। এরা চার পায়ে হাঁটে। হাঁটার সময় লেজ উপরের দিকে খাড়া অবস্থায় বাঁকানো থাকে। মুক্ত অবস্থায় তারা বন্য।

অবশ্য আফ্রিকায় পানি খোঁজার কাজে এদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মাটির অনেক গভীরে পানির প্রবাহ থাকলেও বেবুনরা তা আঁচ করতে পারে।
একজন শিকারি কেনিয়ায় একটি চিতাবাঘ এবং একটি বেবুন পরিবারের মধ্যে যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। একটি চিতাবাঘ একটি বানরকে আক্রমণ করল। বানরটি যন্ত্রণায় চিৎকার করছিল।

বেবুনের একদল যুদ্ধা এসে চিতাবাঘের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। চিতাবাঘটি তাদের আক্রমণের তীব্রতায় অবাক হয়ে গেল। তারা চিতাবাঘটিকে মারাত্মকভাবে আহত করে ফেলল। চিতাবাঘটি মাটিতে কয়েক বার ডিগবাজি দিয়ে এবং থাবা মেরে সে আক্রমণ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে সক্ষম হল। শিকার আগেই ছেড়ে দিয়েছে।

তারপর নদীর দিকে পালিয়ে বেঁচেছে।
দক্ষিণ আমেরিকার বানর এশিয়া এবং আফ্রিকার বানরের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। দক্ষিণ আমেরিকার বানরের নাক প্রশস্ত, এদের হাতের এবং পায়ের আঙুলে নখ আছে। অধিকাংশ দক্ষিণ আমেরিকান বানরের নখ অতিরিক্ত হাত হিসেবে কাজ করে। এর ফলে তারা গাছের ডালে ঝুলে থাকতে পারে।

আফ্রিকা ও এশিয়ায় মাত্র কয়েক প্রকারের বানরের এ রকম নখ আছে।


ক্যাপুচিন আরেক রকম বানর। এদের মাথার উপর পশমের একটি সুচাগ্র আবরণ আছে। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এ রকম একটি আবরণ মাথায় পরেন। এর নাম ক্যাপুচি।

এখান থেকেই ওই বানরের ক্যাপুচিন নাম হয়েছে।
কিছু বানর চিৎকার করে সমস্বরে। গাছের উপর বসে ভোরে এবং সন্ধ্যায় এরা চেঁচামেচি করে। এই চেঁচামেচির শব্দ কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যায়।
মারমোসেট দক্ষিণ আমেরিকার বানর।

এরা দেখতে বেশ সুন্দর এবং আকারে ছোট। একটি ধূসর কাঠবিড়ালির মতো আকার। বড়, উজ্জ্বল চোখ এবং রেশমি পশমে এদের ভারি সুন্দর দেখায়। গাছের উপর দলবদ্ধ হয়ে বাস করে। ফল এবং পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে।

গায়ের বর্ণ ধূসর। এর উপর কালো ডোরা আছে। লেজ ধূসর এবং কালো রংয়ের রিং করা। কানের উপর চুলের গোছা আছে। মারমোসেটকে পোষ মানানো যায়।

কিন্তু তারা খুবই কোমল। ঠা-া আবহাওয়ায় বাঁচতে পারে না।
বানরকে সহজে পোষ মানানো যায়। বিভিন্ন কৌশল শেখানো যায় এদের। যদিও বানর মানুষ ও এপ-এর একই ক্রমপর্যায়ে পড়ে, তবুও এরা মানুষ বা এপের মতো বুদ্ধিমান নয়।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।