আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্ষণের প্রতিবাদ নাকি হুজুগ

হুজুগে পড়ে কেউ যদি সমাজের বা রাষ্ট্রের নৈতিক উন্নতি চায় তাহলে বুঝতে হবে নৈতিক জীবন উদযাপনের যোগ্যতা রাষ্ট্রে বা সমাজে গড়ে উঠেনি। আর যে বা যারা হুজুগে পড়ে নৈতিকতার কথা বলে বা গলা ফাটায় তিনি বা ‘তাহারা’ কপটতার নাটক করে সমাজকে আরও অধঃপতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। হুজুগের মধ্যে নাচানাচি করা বা এজন্য সমাধান চাওয়া - আর যারা এটা চায়- তারা নিজেদের সচেতন বা নামীদামী নাগরিক মনে করে, তারা কেন আগে ভাগে কোন প্রতিকারের পথ তৈরি করেন না। যারা প্রতিকারের পথ তৈরি করতে সমর্থ তারাও পরিস্থিতি বুঝে নীরব থাকে। আর যারা সমর্থ নয় তারা বৈরি পরিস্থিতির কথা বলে চোখ বুজে এড়িয়ে যায়।

ন্যূনতম প্রতিবাদও করে না। ভারতের দিল্লিতে যখন চলন্ত বাসে এক যাত্রীকে ধর্ষণ করা হল তখন হঠাৎ করেই এদেশে একের পর ধর্ষণের খবর পত্রিকায় আসছে। এবং ধর্ষণের প্রতিবাদে তথাকথিত প্রচার পেতে কাঙালরা লাইন দিয়ে মানববন্ধন সাজাচ্ছে। এরকম খবর গত কয়েকদিনই প্রচার ও সম্প্রচার হচ্ছে। তার মানে ধর্ষণ কি এদেশে নতুন কোন শব্দ।

বা নতুন কোন অঘটন। এটা ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনাটা ভবিষ্যতেই থাক। পুরোপুরি একটা অবদমিত সমাজ ও রাষ্ট্রে ধর্ষণের মত গুরুতর অপরাধ এখানে বিরাজমান। যা আমরা গতানুগতিক অপরাধ হিসাবেই দেখে আসছি। এর বাইরে ভারতে যেটা হয়েছে ওই মেয়েটি ডাক্তারি পড়–য়া ছাত্রী।

তার সামাজিক বা ব্যক্তিক অবস্থানটা অন্য যারা প্রতিনিয়ত ধর্ষণের শিকার হয় তাদের চেয়ে উঁচু। বাস্তবতা হচ্ছে উচুঁ হোক বা দলিত নারী হোক এ ধরনের পরিস্থিতির যারা শিকার হয় তাদের উভয়ের সম্মানহানির বিষয়টা চরম গর্হিত। কিন্তু যখন প্রতিবাদ হয়, বিচারের আবেদন জানানো হয় তখন দুজনের ক্ষেত্রে দু’রকম চিত্র। সম্ভবত গতকাল নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, শহরের চেয়েও গ্রামে অব্যাহতভাবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে। এটা নতুন কোন বিষয় নয়।

শুধু দিল্লির বাসে মেয়েটি যে গণ ধর্ষণের শিকার হয়েছে সেটার প্রতিবাদ হচ্ছে গ্রামে এমন ঘটনা অব্যাহত ভাবে ঘটছে। অর্থাৎ এর কোন প্রতিবাদ নেই। কেউ কোন বিচার দাবি করে না তাদের জন্য। যে কথা অমর্ত্য সেন বলেছেন এমন ঘটনা কি আমরা কিছুই জানি না বা শুনিনি। আমরা কেউ আমাদের জানাশোনা বা পাড়া- গ্রামে বা মহল্লায় ঘটে যাওয়া এমন কোন ঘটনা নীরবে চেপে যায়।

আর দূরের কোন ইস্যুকে দেশের ভেতর এনে মানববন্ধন করে হিরু বা হিরোইন সাজার চেষ্টা করি। এমন হুজুগে মতলববাজ, অনুকরণ প্রিয় লোকগুলোর মূল উদ্দেশ্য কি তা ভাবলে অনেক কিছুই পরিস্কার হবার কথা। ইন্ডয়ার বিজেপির নেতা বলেছেন- ধর্ষণ ভারতে নয়, ইন্ডিয়ায় হচ্ছে। তিনি যেটা বোঝাতে চাইলেন সেটা হয়তো ভারতের ঐতিহ্যকে। সামাজিক রীতি নীতিকে।

বাস্তবতা হচ্ছে- গোটা ভারতের জোতদার-জমিদার-মহাজন সামন্তরা যে ঘরের বউ রেখে বাঈজী বাড়িতে আনাগোনা করত -তারা কারা -ভারতীয় ছিলেন না ইন্ডিয়ান। এসব ঘটনা তো দূর অতীতের নয়। যে সমাজের কর্তাব্যক্তিরা সৌখিনতার জন্য নারীদের চিত্ত বিনোদন ও শরীর বিনোদনে ব্যবহার করেছে তাদের পরবর্তি প্রজন্মের অনেকে ধর্ষকামী বা ধর্ষক হতে পারে সেখানে অবাক হবার মত কিছু নেই। এরপরও প্রকৃতই সচেতন তথা নৈতিক সমাজের বাসিন্দা হলে এটা থেকে রেহাই পাওয়া যেত। বাস্তবে সেই রকম কিছু নেই।

দামিনীর ইজ্জত আর গ্রামে বা অন্যত্র যে সমস্ত মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে কারো ইজ্জতের কোন তফাৎ নেই। কিন্তু তফাৎ যদি থেকে যায় ধর্ষণ কমানো যাবেনা। এজন্য ন্যায় বিচার ও নিরাপত্তাবোধ আগে নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষিতার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সুরক্ষিত করতে হবে। এ চাওয়াটা গ্যারান্টেট হোক বা নিশ্চিত করুক যারা মানববন্ধন করছে বা অন্যান্য কায়দায় হুজুগে মেতেছে তারা।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.