আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি ধর্ষণের আত্মকাহিনী

কিছুদিন আগে একটা ছবি দেখলাম, মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত। একাত্তরের উপর নির্মিত ছবিতে স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসে পাকিস্তানিদের অত্যাচার এবং আমাদের নিজেদের আত্মীয় রাজাকারদের অত্যাচার। যখন অত্যাচারিত হই ভিনদেশিদের হাতে তখন কষ্ট যতটা না পাই তার চেয়ে বহুগুনে কষ্ট পাই নিজেদের দেশের মানুষের হাতে অত্যাচারিত হলে। কোন একদিন হয়ত বাঙালি পাকিস্তানিদের ক্ষমা করবে কিন্তু রাজাকারদের ক্ষমা করবে না কোনদিন। সেই ছবিতে দেখায়, ১০-১২ বছরের এক মেয়েকে ধর্ষণ করে রাজাকার বাহিনীর কিছু চ্যালামুন্ডারা।

যখন মেয়েটিকে ওরা টেনে নিয়ে যায় নিজেদের কাম চরিতার্থ করতে তখন মেয়েটির আর্তচিৎকারে আমার সমস্ত পশম দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, কুকড়ে গিয়েছিলাম ঘৃনায়, লজ্জায়। মেয়েটির আর্তচিৎকার, নিস্ফল আস্ফালন থেকে পরিচালক তার ক্যামেরার মুখ ধীরে ধীরে ঘুরিয়ে দিলেন আকাশের দিকে, আমরা কেবল মেয়েটির গোংগানী শুনতে পাচ্ছিলাম আর দেখতে পাচ্ছিলাম বিশাল আকাশ; যেখান থেকে হয়ত সৃষ্টিকর্তা দেখছেন আদিম কামাচার। এরকম হাজারো নারী ধর্ষিত হয়েছেন একাত্তরে; কেবল ধর্ষিত হয়েছেন তা নয়, এদের অনেকেই ধর্ষিত হয়েছেন নিজেদের মা, বাবা, ভাইবোন, স্বামী, সন্তানদের সামনে। পৃথিবীর ইতিহাস এরকম অজস্র ধর্ষণের সাক্ষী। ইতিহাসের বাকে বাকে নৌকা ভিড়ালেই দেখা যায় যুদ্ধ, অন্যায়, অবিচার আর ধর্ষণ।

দুদিন আগে আমি নিজেও কোন এক বাকে আমার নিজের নামটি লিখালাম, পরিনত হলাম ধর্ষকে। কামকে আমাদের সমাজে মনে করা হয় নোংরা আর গোপনীয় কর্মকান্ড হিসেবে। সকল পাপের উৎসও মনে করেন কেউ কেউ। আবার ফ্রয়েডের মতে, কামই আমাদের চালিকা শক্তি। যে যাই বলুক, আমি কামকে মানুষের আর দশটা চাহিদা থেকে ভিন্ন করে দেখিনা।

কাম যদি নোংরা আর অপবিত্র হবে তবে কি আমরা নোংরামির ফসল? আদিম সমাজে কাম ছিল খাবার গ্রহনের মতই সহজ একটি ঘটনা। আর বর্তমানে কাম হলো বিয়ের মাধ্যমে ক্রয় করা পণ্য; যার বাহিরে সকল কামবৃত্তি নোংরামি। নারী পুরুষের পরস্পর সম্মতিতে কামতৃপ্তিতো কোন অন্যায় বা নোংরামি হতে পারে না। বরং অন্যায় হলো সেই কাম যা কিনা একজনের অসম্মতিতে হয়, হোক সেটা বিবাহিত অথবা অবিবাহিত জীবনে, উভয় ক্ষেত্রেই আমি একে ধর্ষণ বলব। সবচেয়ে হাস্যকর হলো, বিবাহিত জীবনে ধর্ষণ হলো বৈধ ধর্ষণ।

দুদিন আগে ফিরে যাই যেদিন আমি ধর্ষণ করলাম। সন্ধ্যায় যখন বন্ধুদের আড্ডায় গেলাম, দেখলাম ওরা বসে রসালাপ করছে। বর্তমান সমাজে তরুণদের কাছে নিজের কাম চরিতার্থ করার জন্য নিজের হাত, রসালাপ আর পর্ণোছবি ছাড়া সহজলভ্য আর কোন উপকরণ নেই। আমিও ওদের রসালাপে ঢুকে গেলাম। দীর্ঘক্ষন আলাপ করে যখন রস নেমে আসছে তখন হঠাৎ এক বন্ধু তার সেলফোন বের করে তার পাশের জনকে একটি ভিডিও দেখাতে লাগল।

আগ্রহ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল পর্ণোছবি দেখছে, ফোন ঘিরে চারটে মাথা জুটে গেল, দূরে থাকায় সেখানে আমার মাথাটা যোগ করতে পারলাম না, কিন্তু ওদের আদিম মুখ সংগীত আহ্‌ উহ্‌ শুনে আগ্রহ আরো বাড়ল। কিছুক্ষণ পর যখন ওদের দেখা শেষ হলো চাইতে লজ্জা লাগা স্বত্বেও সেলফোনটা চেয়ে নিলাম। আর যাই হোক, কামতো সবারি আছে। কিন্তু সমাজ শিখিয়েছে লজ্জা পেতে, তাই যুগ যুগ ধরে সবাই লজ্জা পেয়ে অন্ধকারেই কামসূত্রকে লালন করছে। বন্ধুরা জানাল ওরা প্রায়সই পর্ণোছবি দেখে কিন্তু সেগুলো একি রকম বলে তারা আর মজা পাচ্ছে না।

তাই ওরা এখন ভিন্ন কিছু খুজছে, যেমন সমকাম বা পশুর সাথে কাম অথবা শিশু কাম কিম্বা ধর্ষণ। আজ যেটা পেয়েছে সেটা হলো একটি সত্যিকারের ধর্ষণের ভিডিও। ধর্ষণ কি করে মিথ্যা হয় বুঝলাম না, মনে হয় এখন পুজির বাজারে ধর্ষণেরো অভিনয় হয়। বেশ আগ্রহ নিয়েই ভিডিওটি দেখতে শুরু করলাম, একাই দেখছিলাম কারণ ওরা সবাই আগেই একবার দেখে নিয়েছে। প্রেমিকাই যেখানে পুরনো হয়ে যায় সেখানে এই তুচ্ছ ভিডিও দ্বিতীয়বার কেউ দেখবে না এটাইতো স্বাভাবিক।

ভিডিওতে দেখলাম, দুজন যুবক মিলে এক নারীকে ধর্ষণ করতে চেষ্টা করছে; আর অসহায় নারী হাতপা ছুড়ে বাধা দেবার চেষ্টা করছে। কিন্তু দুই যুবকের সাথে লড়াই করার সাহস বা শক্তিতো তাকে সমাজ দেয়নি। তাই তার প্রতিবাদ পরিনত হল নিস্ফল আস্ফালনে। তাকে নগ্ন করে এক যুবক তার স্তনে হাত বুলাতে লাগল; অন্য যুবক তার দুই পা চেপে ধরে হাত বাড়িয়ে দিলো তার যোনীপথে । প্রচন্ড ভয়ে সেই নারীর গলায় কেবল গোংগানী আর চোখে তার কোরবানীর গরুর মত শূন্যতা।

এরপর দুই যুবক পৃথিবীর তাবত কামুক পুরুষের আজ্ঞাবহ হয়ে পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করতে লাগল, সেই দৃশ্য বর্ননা করার ভাষা আমি এখনো আয়ত্ত করতে পারি নি তাই এর বেশি বর্ননা করা আমার পক্ষে সম্ভব না। বেশ কিছুক্ষন পর দুই যুবক তাদের জানা সকল রীতিনীতি প্রয়োগ শেষে তাকে ফেলে রেখে গেল ঘাসের উপর, আর সেই নারী কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে রইল ধরনী মাতার বুকে; যেন গর্ভের ভ্রুণ। সবুজ ঘাসের উপর পরে রইল সেই নারী, কোন এক ঝড়ো হাওয়া এসে যেন ছিড়ে ফেলেছে কোন নাম না জানা শুভ্র ফুল, আর সেই ফুল পৃথিবীর সকল পাপের নিশ্চুপ প্রতিবাদ হয়ে শুয়ে আছে মায়ের কোলে। আমি অসহায় বোধ করলাম, ক্ষুদ্র মনে হলো নিজেকে। কারণ হঠাৎ করেই আমি বুঝতে পারলাম পুরুষ শাষিত এই সমাজে এই ধর্ষণ দেখে আমার পুরুষাঙ্গ সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাড়িয়েছে; আর আমি বসে আছি পৃথিবীর সকল ধর্ষণের বোঝা কাধে নিয়ে মাথা নিচু করে।

আজ আমি নিজেকেই নিজে ধর্ষণ করলাম। ০৭/০৫/১১। ০২.৪৪(রাত) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.