আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্যাক্তি স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা



মানুষের ব্যাক্তি স্বাধীনতা নিয়ে নানা ধরনের ভ্রান্ত ধারনা আছে । ব্যাক্তি স্বাধীনতা মানে যা ইচ্ছা করা নয় বা যা ইচ্ছা বলা নয় । সমাজের শৃঙ্খলিত নিয়মের বাইরে কোন কিছু বলা বা করার স্বাধীনতা সমাজ কতৃক স্বীকৃত নয় । কাউকে গালি দেয়া বা কারও গায়ে হাত তোলা ইত্যাদি কার্যক্রম প্রথমে সামাজিক নিয়ম দ্বারা নিষিদ্ধ ও পড়ে আইন দ্বারা নিষিদ্ধ । ব্যাক্তি স্বাধীনতা মানে এই নয় যে যেমন খুশি জামাকাপড় পরবে যেমন খুশি চলবে , যেমন খুশি জীবন যাপন করবে ।

আসলে মানুষের সমস্ত কার্যক্রম আগে সামাজিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত পরে সামাজিক দাবী অনুযায়ী আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । সমাজে স্বীকৃত নয় এমন কার্যক্রম ব্যাক্তি স্বাধীনতার আওতায় পড়ে না । এবার আসা যাক রাজনৈতিক প্রসঙ্গে যেখানে ব্যাক্তি স্বাধীনতা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় । রাজনৈতিক চিন্তা একটি দার্শনিক ও আদর্শিক চিন্তা যার সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা ও জনগনের কল্যাণের প্রসঙ্গটি জড়িত । একটি নির্দিষ্ট চিন্তা বা দর্শনের আলোকে জনগণকে সংগঠিত করে সেই জনসমর্থনের উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র পরিচালনা করার কার্যক্রমই রাজনীতি ।

হোক তা ডান অথবা বাম । ফলে রাজনীতির সাথে তিনটি কার্যক্রম জড়িত ১। আদর্শ , ২। রাজনৈতিক দল , ৩। জন সম্পৃক্ততা ।

এর বাইরে যে কোন একটিও যদি অনুপস্থিত থাকে তা রাজনৈতিক কার্যক্রম হিসেবে বিবেচিত নয় । যেহেতু রাজনৈতিক কার্যক্রম নিজেই একটি সামাজিক শৃঙ্খল কাজেই তার আইনি কাঠামো হচ্ছে সংবিধান । সমাজ যেহেতু গতিশীল ফলে সংবিধানও জন স্বার্থের অবস্থান থেকে পরিবর্তন এর প্রয়োজন পড়ে । এটি একটি নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া । কিন্তু সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে সকল রাজনৈতিক আদর্শের মুলে হচ্ছে রাষ্ট্রের সকল জনগনের উন্নত ও নিরাপদ জীবনকে নিশ্চিত করা ।

এই উন্নত ও নিরাপদ জীবনকে নিশ্চিত করতে গিয়ে নানা ধরনের রাজনৈতিক চিন্তা নিয়ে জনগণের কাছে হাজির হওয়ার প্রক্রিয়ার সংগঠিত রূপই হছে রাজনৈতিক কার্যক্রম । এই রাজনৈতিক কার্যক্রম এক বা একাধিক বা বহুবিধ রাজনৈতিক দল দ্বারা পরিচালিত হতে পারে । বহু দলীয় কার্যকলাপের অংশ হিসেবে দলের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে আসলে ব্যক্তি স্বাধীনতা হিসেবে বিবেচিত করা হয় । মত প্রকাশের স্বাধীনতার আবার কিছু আইনি বাধ্য বাধকতা আছে অর্থাৎ তা সংবিধান পরিপন্থী বা সংবিধান এর সাথে সাংঘরসিক হতে পারবে না এবং রাষ্ট্রের স্বাধীনতার পরিপন্থী হতে পারবে না । কাজেই মত প্রকাশের স্বাধীনতারও সীমাবদ্ধতা আছে ।

এই সীমাবদ্ধতা জরুরী । মানুষের যাপিত জীবনের সমস্ত কিছুর মধ্যেই সীমাবদ্ধতা থাকে । যা কিছু ভাল মানুষ তাকেই সামাজিক ভাবে স্বাভাবিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় । রাষ্ট্র ও সংবিধান পরিপন্থী কার্যকলাপ সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে । মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে ব্যহত করে ।

ব্যাক্তি স্বাধীনতাও রাষ্ট্র ও সংবিধানের কাঠামো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । এখন জনগণের স্বার্থের অবস্থান থেকে মত প্রকাশ অধিকার সকল নাগরিকের রয়েছে , এই মত প্রকাশ শুধু মাত্র ভিন্ন রাজনৈতিক দলের আদর্শের বিপক্ষে হতে পারে কিন্তু রাষ্ট্র ও সংবিধানের বিপক্ষে নয় । যেহেতু সকল রাজনৈতিক দলই রাষ্ট্র ও সংবিধানকে স্বীকার করে ফলে নিজেদের মধ্যে মতামত আদান প্রদান , পরস্পরের সমালোচনা ইতাদি কার্যক্রমই ব্যাক্তি স্বাধীনতার অংশ । এই ধরনের মত প্রকাশের স্বাধীনতা সকল নাগরিকের রয়েছে । দেশের সংবাদ পত্রগুলোও স্বাধীন মত প্রকাশের একটি মাধ্যম ।

একটি দৈনিকে ( দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ) দেখলাম নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক জনাব নুরুল কবিরকে কোঠর ভাষায় সমালোচনা না করার জন্য বিশেষ মহলের পক্ষ থেকে হুমকি দেয়া হয়েছে । জনাব নুরুল কবির স্বাধীন মত প্রকাশের ব্যাখ্যা আমার থেকে আরও ভাল জানেন ও বুঝেন । আমার জানা মতে আমি তার কোন মন্তব্য ও মতামত রাষ্ট্র ও সংবিধান পরিপন্থী হিসেবে বিবেচনা করা যায় এমন শুনিনি । সরকারের সমালোচনা মানে রাষ্ট্র ও সংবিধান এর সমালোচনা নয় , ভিন্ন রাজনৈতিক দলের ও নীতির সমালোচনা । সরকার একটি রাজনৈতিক সংস্থা ও দেশের সকল জনগণ এই সংস্থার সাথে জড়িত ।

ফলে সরকারের নানা কার্যক্রম সমাজে শ্রেণী বিশেষে অভিনন্দিত হবে , সমালোচিত হাবে যা খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া । জনাব নুরুল কবির এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করেছে মাত্র । কিন্তু যে বিশেষ মহল তাকে ও তার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে তারাই বরং অস্বাভাবিক আচরন করছে যা সংবিধান পরিপন্থী কারন সংবিধান রাজনৈতিক মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়ে ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকারকে নিশ্চিত করেছে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.