আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত

রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা। এতে সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে ৩৫ লক্ষাধিক পরিবহন শ্রমিক। অবরোধের জেরে রাস্তায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে পণ্যবোঝাই ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান। পচন ধরেছে শাকসবজি, মাছে। অচলাবস্থা কবে কাটবে তার প্রতীক্ষায়ই দিন গুনছে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও পরিবহনশ্রমিকরা।

এদিকে রাজধানীতে সরবরাহ ঘাটতিতে পাইকারি ও খুচরা বাজারে বাড়ছে পণ্যের দাম। ব্যবসায়ীরা জানান, অন্য সময়ে হরতালে সড়কপথ বন্ধ থাকলেও অনেকটাই সচল থাকে নৌ ও রেলপথ, ফলে পণ্য পরিবহনব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ হয় না। কিন্তু এখন অবরোধের কারণে সব পথ আটকে আছে পুরোপুরি। আবার ঝুঁকি নিয়ে কিছু পরিবহনে পণ্য সরবরাহ হলেও ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে। এর পরও পণ্যবোঝাই পরিবহনগুলো গন্তব্যে পেঁৗছবে কি না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বরং প্রায়ই পণ্য পরিবহনের সময় ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের কারণে বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়ছে ব্যবসায়ী ও পরিবহন মালিকরা।

অবরোধ-হরতালে পণ্য আনলোডিং বন্ধ থাকায় কোনো পণ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেওয়া যায় না। তাই বাজার একপ্রকার লেনদেনশূন্য হয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীরা জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হরতালের চিত্রও পরিবর্তন হয়েছে। আগে হরতালের সময়ও দিনের বেলায় কিছু কিছু পণ্যবাহী ট্রাক যাতায়াতের সুযোগ দেওয়া হতো। কিন্তু এখন সব কিছু থেকেই বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এখন দিনের বেলায় তো নয়ই, রাতেও মালামাল আসতে পারে না। নানা ঝুঁকি নিয়ে পণ্য আনতে চাইলেও গাড়ি পোড়ানো আতঙ্কে ড্রাইভাররা পণ্য পরিবহনে রাজি হয় না। কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজি হলেও ৩-৪ গুণ ভাড়া হাঁকছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ী মহলও রীতিমতো দিশাহারা। রাজধানীর সবজির বড় পাইকারি আড়ত কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী ও শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অবরোধের কারণে এসব বাজারে সবজি ও মাছের সরবরাহ ৭০ শতাংশ কমেছে। গতকাল কারওয়ান বাজারে মাত্র ২৫-৩০টি সবজির ট্রাক এসেছে। অথচ স্বাভাবিক অবস্থায় বাজারটিতে প্রতিদিন গড়ে ৫০০-৬০০ ট্রাক আসে। শ্যামবাজার ও যাত্রাবাড়ীর বৃহৎ আড়তেও একই অবস্থা। কারওয়ান বাজারে কাঁচামাল আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, গত তিন দিনে সবজির সরবরাহে ধস নেমেছে। কিছু ব্যবসায়ী বাড়তি ঝুঁকি নিয়ে পণ্য পরিবহনের চেষ্টা করলেও তাদের গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া। অন্য সময়ে যশোর থেকে ১৫ হাজার টাকায় ট্রাক এলেও এখন ৩৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। অবরোধে এরই মধ্যে দেড় শতাধিক পণ্যবাহী গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে, জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে ২৫টিরও বেশি ট্রাক। বেনাপোল স্থলবন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্দরে পণ্যবোঝাই ৬ শতাধিক ট্রাক আটকে আছে। ভোমরা স্থলবন্দরেও একই পরিস্থিতি। অবরোধের কারণে এসব ট্রাক বন্দর থেকে বের হতে পারেনি। একটানা অবরোধ, থেমে থেমে হরতাল। সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার বিরতি রেখে আবার চলে টানা হরতাল-অবরোধ। বিপর্যস্ত হয়ে আছে যোগাযোগব্যবস্থা, ভেঙে পড়েছে পণ্যের সরবরাহব্যবস্থা। চাল, ডালসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে। সরবরাহ সংকট এবং মজুরদের ঘাটতিতে পণ্যের দাম হু হু করে বেড়েই চলেছে। শহরের বাজারে শীতের শাকসবজি মিলছে না বললেই চলে। বেশ আগের পচনশীল যেসব শাকসবজি পাওয়া যায় তার দামও আকাশছোঁয়া। টানা অবরোধের মুখে দেশের ভোগ্যপণ্য সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে বাজারে পণ্য সরবরাহের সংকট দেখা দিয়েছে মারাত্দকভাবে। এ অবস্থায় ডাল-চাল-চিনিসহ অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একটানা হরতালে ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহনে নানামুখী বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। এমনকি রপ্তানি পণ্য পরিবহনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে রপ্তানিকারকদের বিভিন্ন সংগঠন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট সেক্রেটারি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ কামনা করে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতায় ঘন ঘন হরতাল ও অবরোধের কারণে চরম দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে পরিবহনশ্রমিকরা। হরতাল-অবরোধের সমর্থকরা গাড়ি ভাঙচুর করছে, অগি্নসংযোগ করছে। সেই ভয়ে গাড়ির মালিকরা গাড়ি নামাতে পারছে না রাস্তায়, যার মারাত্দক প্রভাব পড়ছে পরিবহনশ্রমিকদের ওপর। গাড়ির চাকা বন্ধ থাকায় পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছে পরিবহন চালক ও হেলপাররা। তাদের জীবন-সংসারের চাকাও অনেকটা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বেশির ভাগ শ্রমিক এখন বাসা ভাড়া দিতে পারছে না। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। সায়েদাবাদ ট্রাক টার্মিনালের শ্রমিকনেতা আবদুল বারিক জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতায় পরিবহনশ্রমিকদের কোনো নিরাপত্তা নেই। হরতার-অবরোধ সমর্থকরা পরিবহনশ্রমিকদের পুড়িয়ে মারছে, হত্যা করছে এবং আহত করছে। বিশেষ করে রাস্তায় রাস্তায় পণ্যবোঝাই ট্রাক-লরি নিয়ে আটকা পড়া শ্রমিকদের অবস্থা যে কতটা শোচনীয় হয়ে আছে তা বোঝানোর উপায় নেই। তারা গাড়ি ও মূল্যবান মালামাল ফেলে চলেও যেতে পারছে না, আবার নিজের পকেট অনেক আগেই শূন্য হয়ে আছে। এখন অনেক পরিবহনশ্রমিক রাস্তাঘেঁষা বাড়িঘরে ভিক্ষা করে খাওয়ার অবস্থায় পড়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী খান জানান, হরতালে শ্রমিকদের ওপর হামলা, হত্যা ও গাড়ি ভাঙচুর বেশি হচ্ছে সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলায়। তিনি বলেন, হরতালে পরিবহনশ্রমিকরা ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হয়েছে। একই সঙ্গে শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে গাড়ির মালিকদের। বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি রোস্তম আলী বলেন, হরতাল-অবরোধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পরিবহন খাত। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা আনুমানিক হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.