আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"সিস্টার ইন বাংলাদেশ নো সিস্টেম, নো ল্, উই সি বাংলাদেশ পিপল ভেরি ব্যাড। হোয়াই ওয়েস্টিং টাইম?"



ঘটনাটা গত বছরের (২০১২) ডিসেম্বরের.... এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকোনমি টিকিট অনেক দরদাম কইরা বনানীর একটা ট্রাভেল এজেন্সি থাইকা খরিদ করছিলাম। তাহা দিয়া নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে আমরিকার নিউ ইয়র্কে নামলাম... সফর শেষ হইলো ডিসেম্বরে.... যে বাসায় ছিলাম তিনি নতুন কিছু শিখানের গর্বে আমার চেক-ইন অন লাইনে কইরা দিলো.... পুরা প্লেনের সিট অন লাইনে দেখা যাচ্চিলো.... যেহেতু কাল খুব সকালেই ফ্লাইট আর আজ রাতে চেক-ইন, তাই দেখা গেলো বেশির ভাগ সিটই বুকড... অন্যরা আগেই চেক-ইন সাইরা নিচে, আমরিকা বইলা কথা!!... তো তিনি আমার সিট নিউ ইয়র্ক থাইকা দুবাই পর্যন্ত পছন্দ কইরা দিলো 63C, আর দুবাই থাইকা ঢাকা 57A.... তিনি গর্বের সাথে বললেন “দুই দিকেই সিটের কাচে বাত্রুম পাইলেন মিয়া, লং জার্নী যখন তখন বাত্রুম যাইতে পারবেন”.... নিউ ইয়র্ক এয়ারপোর্টে ব্যাগেজ দিয়া নিজের চেক-ইন করা বোর্ডিং পাশ বুইজা নিলাম.... সিট নাম্বার বাংলাদেশের রাজধানী “ঢাকা”র মত ঠোটস্ত-মুখস্ত আমার.... নিউ ইয়র্ক থাইকা দুবাই আসলাম, দুই ঘন্টার বিরতি.... দুবাই এয়ারপোর্টে স্মোকিং রুম খুজতেই আমার দেড় ঘন্টা গেলো... দুবাই থাইকা যে ফ্লাইট ঢাকা আসিবে সেই গেটে রিপোর্ট করতে যায়া দেখি আধা ঘন্টা ফ্লাইট ডিলে.... গেট, প্লেন ঠিক আচে কিনা শিউর হওয়ার জন্য গেটে আমার বোর্ডিং পাস দেখাইলাম.... মহিলা আমার বোর্ডিং পাশ নিয়া কইলো “ও করিম স্যার ইউ আর ট্রাভেলিং টু ঢাকা ফ্রম জেএফকে, ওয়ান মিনিট”.... এক মিনিটের কথা কইয়া আমার বোর্ডিং পাশটা ছিইরা নতুন একটা বোর্ডিং পাশ দিয়া কইলো “ উই আর ওপেনিং গেইট ইন টেন মিনিটস”.... আমি থেনকু কয়া বোর্ডিং পাশটা হাতে নিয়া দেখি হারামি মহিলা সিট বদলায় 6A দিসে.... মন খারাপ হয়া গেলো, কাছাকাছি টয়লেট মিস গেলো!!!...ওয়েটিং লাউন্জে ফার্মগেটের ফুটপাথে শীতের কাপড়ের দোকানের মত ভিড় দেইখা বুঝলাম ফ্লাইট কেন ডিলে....মানুষ আর মানুষ..... অবাক হয়া ভাবলাম দুই প্লেনের যাত্রী এক প্লেনে যাবে নাকি!!!... আর একেক যাত্রীর যে মোশান মাথাই নস্ট.... আমি অনেক খুইজা এক্কেরে পিছনের দিকের এক সিটে বইসা অপেক্ষা করতে লাগলাম.... পনের মিনিট পর ঘোষণা শুরু হইলো "বুড়া, প্রেগন্যান্ট, ডিজাবল এবং বিজনেস ক্লাসের যাত্রীরা প্রবেশ করুন".... এরপর এ, বি, সি, ডি, ই এমনে সিরিয়াল ডাকা শুরু হলো..... যাত্রীরা গোল গোল লাইনে দাড়িয়ে হুড়াহুড়ি করে উঠতে লাগলো...আমি চুপ চাপ বসেই আছি... শেষ যাত্রীটা ঢোকার ১ মিনিট পর আমি ঢুকলাম.... প্লেনের গেটে মহিলা হাসি দিয়া কইলো “স্যার দিস সাইড”.... মানে ঢুইকাই ডান দিকের লাইনে আগায় গেলে আমার সিট...ল্যাপটপের ব্যাগ আর জ্যাকেট টা কাধে নিয়া বিজনেস ক্লাস পার হয়া ইকোনমি ক্লাসে ঢুকলাম, মাথার উপরে 6A সিট নাম্বার খুজতে খুজতে বিশাল প্লেনের লেন্জা পর্যণ্ত গেলাম মাগার 6A খুইজা পাইলাম না... নিজেরে মফিজ মফিজ লাগতে লাগলো, এটা কেমনে সম্ভম সিট খুইজা পাইলাম না!!! মনে মনে ভাইবা শান্তি পাইলাম যে লাইন মনে হয় ভুল হইচে... লেন্জার কাছে দাড়ানো এয়ার হোস্টেসরে ছোট্ট বোর্ডিং পাশটা দিয়া জিগাইলাম, এক্সকিউজ মি, হয়ার ইট ক্যান বি?... মহিলা মিচকি হাসি দিয়া কইলো "স্যার ইউর সিট ইজ ইন বিজনেস ক্লাস"... আমি মনে মনে ভাবলাম, বেক্কেল কয় কি?! আমি ক্যান বিজনেস ক্লাসে হমু!!!... বোর্ডিং পাশটা হাতে নিয়া দেখি আমার নামের উপরে লেখা "বিজনেস"!!!.. টাশকি খায়া গেলাম! এ কেমনে সম্ভব!!! তিন চারবার লেখাটা পড়লাম, সিট নাম্বার দেখলাম... মহিলা আমার কাছ থাইকা ল্যাপটপের ব্যাগ আর জ্যাকেট টা নিয়া হাটা ধরলো আমিও তার পিছে পিছে আসতে আসতে খেয়াল কইরা দেখলাম বিশাল এই প্লেনের ডাইনে-বামে যাত্রী ঠাসা... বিজনেস ক্লাসের সিট এতদিন ট্যারা চৌউখে দেইখা পাশ কাটানের অব্যাস, আর আজ এমিরেটস এর বিজনেস ক্লাসের সিটে বসলাম নাকি শুয়া পড়লাম বুঝলাম না... কাহানী হইলো, দুবাই থাইকা ঢাকা প্যাসেন্জার বেশী হওয়ায় এবং বিজনেস ক্লাসের সিট খালি থাকায় কানেক্টিং ফ্লাইটের কিছু কিছু যাত্রীদের অটোমেটিক বিজনেস ক্লাসে প্রমোট দিসে.... এতো পুরান কাহানী আজ লেখার মুল কাহানী হইলো প্লেন যখন ঢাকায় ল্যান্ড করলো, তখন বরাবরের মতই এনাউন্স হতে লাগলো, না বলা পর্যন্ত সিট বেল্ট না খুলতে এবং সিট থেকে না উঠতে.... কে শোনে কার কথা?!! ল্যান্ডিং শেষ, হুড়াহুড়ি করে জ্যাকেট পরা শুরু, মোবাইলে কল করা শুরু, ব্যাগ নামানো শুরু এবং আগে নামার জন্য অনেকের পর্দা ঠেলে বিজনেস ক্লাসে আসাও শেষ... অথচ প্লেন এখনো টার্মিনালে লাগেনি, গেট খোলা তো দুরের কথা?!! এয়ার হোস্টেসরা বার বার অনুরোধ করছে বসার জন্য, কিন্তু কে শোনে কার কথা?!!... অবশেষে গেট খুলোলো, হুরাহুরি করে বাইর হওয়ায় বাধা পরলো... আগে থেকে কোনো ইনফরমেশন থাকায় গেট খোলা মাত্র কয়েকজন পুলিশ আর ডিবি ঢুকে পরছে... নামার জন্য বিজনেস ক্লাসের লাইনে দাড়িয়ে থাকা ইকোনমি ক্লাসের যাত্রীরা এ কাইত, সে কাইত করে যায়গা করে দিলো... পুলিশ কাউকে খুজতে খুজতে এগিয়ে গেলো... গুণ গুণ ফিস ফিস উঠলো, পুলিশ ক্যান?? অনেকে বিরক্ত... কাইত হয়া দাড়ায় থাকা একজন এয়ার হোস্টেস কে প্রশ্ন করলো "সিস্টার হোয়াই পুলিশ? ইউ নো?"... এয়ার হোস্টেস হাইসা জানাইলো সে কিসু জানে না... সেই লোক অতি উতসাহে বলা শুরু করলো "সিস্টার ইন বাংলাদেশ নো সিস্টেম, নো ল্, উই সি বাংলাদেশ পিপল ভেরি ব্যাড। হোয়াই ওয়েস্টিং টাইম?".... আমি সেই দুবাই প্রবাসী বাংলাদেশি ভাইরে বাংলায় প্রশ্ন করলাম, ভাইজানের সিট ছিলো কোথায়? সে বললো "ক্যান??"... আমি বললাম, না এমনিই প্রশ্ন করলাম আর কি.... সিট ছিলো কোথায়?... সে জানালো তার সিট ছিলো, সি৩৭.... আমি তাকে এবার প্রশ্ন করলাম, এই বিদেশি মহিলাকে যে বলতেছেন নো সিস্টেম, নো ল্, বাংলাদেশ পিপল ভেরি ব্যাড, আপনে কোন সিস্টেম ফ্লো করে এই চিপার মধ্যে দাড়ায় আছেন???.. সে না মানে প্লেন তো থামচেই, গেট তো খুলচেই হঠাৎ না পুলিশ উঠলো বলা শুরু করলো... আমি আর কিছু না বলে অবজ্ঞার মিটিমিটি হাসি হাসতে লাগলাম.... ঘটনা হইলো..... চুপিসারে সৈয়দ সাহেব আর মির্জা সাহেব কিন্তু বৈঠক শুরু করছিলো.... হঠাৎ করেই মির্জা সাহেবরা অবরোধ, হরতাল, জ্বালাও-ভাংগো শুরু করলো... সৈয়দ সাহেবরা গ্রেফতার শুরু করলো.... এরশাদ আবারো ডিগবাজী মারলো.... আও ভাও না বোঝা জীবনের সংগ্রামের সৈনিকরা একের পর এক নিহত হতে লাগলো... তারানকো সাহেব আইসা দৌড় ঝাপ শুরু করলো এবং দৌড় ঝাপের শেষে তিনি জানালেন, তিনি দুই দলকে আলোচনার টেবিলে বসালেন এইটাই তার সাফল্য... তিনি আরো আশা করেন এই আলোচনা চলবে...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।