আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘শহীদদের আত্মা শান্তি পেল’

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী ও ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, এতে শুধু তাঁদের পরিবারের শহীদ সদস্যরাই নন, ১৯৭১ সালের ৩০ লাখ শহীদের আত্মা শান্তি পেল। দেশ ও জাতি দায়মুক্তির পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল।

আজ বৃহস্পতিবার রাতে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর প্রথম আলো ডটকমের কাছে তাঁরা এই আবেগঘন প্রতিক্রিয়া জানান।

কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমেদ খান বলেন, ‘একাত্তরে কাদের মোল্লা ও তাঁর দোসররা কেরানীগঞ্জে আমার বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন।

আমার ভাই গোলাম মোস্তফা, ভাগনে ওসমান গনিসহ গ্রামবাসীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছেন। তাঁর শাস্তি দেখার জন্য ৪২ বছর ধরে অপেক্ষা করেছি। আমাদের ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর এত দিনের কষ্ট ও যন্ত্রণার কিছুটা হলেও উপশম হয়েছে। ’

রাষ্ট্রপক্ষের দ্বিতীয় সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল হক মামা বলেন, ‘এই জল্লাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বিদেশ থেকে ছুটে এসেছিলাম। প্রথমে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় শুনে তরুণদের সঙ্গে রাজপথে নেমেছিলাম।

অনেক ক্লান্তি শেষে আজ মনে হচ্ছে, আমার সব কষ্ট সার্থক। ’ তিনি বলেন, ‘রায় বাস্তবায়ন করতে না দেওয়ার জন্য জামায়াতের সব অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম এক নতুন বাংলাদেশের সামনে দাঁড়িয়ে। যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম, তা আজ এই সাজা কার্যকরের মাধ্যমে সার্থক হলো। ’

রাষ্ট্রপক্ষের চতুর্থ সাক্ষী কবি কাজী রোজী বলেন, ‘আমার বন্ধু কবি মেহেরুননিসাকে কাদের মোল্লা ও তার বাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমি এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। আজ আমার অপেক্ষার পালা শেষ। এই রায় জনতার রায়। এখন মরেও শান্তি পাব। ’

মুক্তিযুদ্ধকালে মিরপুরের আলুব্দী (আলোকদী) গ্রামে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন রাষ্ট্রপক্ষের নবম সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মোল্লা।

২০০৮ সালে তিনি পল্লবী থানায় কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলা করেন।

ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় আমির হোসেন বলেন, ‘অনেক আনন্দ হচ্ছে। স্বাধীন দেশে কাদের মোল্লার মতো খুনিদের ঠাঁই থাকতে পারে না। কেউ অপরাধী হলে ইতিহাস যে তাকে ক্ষমা করে না, তা এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হলো। ’ তিনি বলেন, ‘আলুব্দী গ্রামের হত্যাকাণ্ডে আমার মামা, খালা, খালু, ফুফাতো ভাইসহ ২৩ জন স্বজন প্রাণ হারান।

আমার স্বজনসহ ওই হত্যাকাণ্ডে যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন, তাঁদের আত্মা আজ শান্তি পাবে। ’

ঘাটারচর হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা আবদুল মজিদ পালোয়ান বলেন, ‘যে কাদের মোল্লা শত শত নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, সেই কাদের মোল্লার ফাঁসি হলো এ দেশেই। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, পাপ কখনো পাপীকে ছাড়ে না। ’ তিনি বলেন, ‘সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য যদি আমাকে হত্যাও করে কেউ, তাতে আমার কোনো আফসোস থাকবে না। এক বুক তৃপ্তি নিয়েই আমি মরব।

শহীদ সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবের নাতি খন্দকার অমিয় হাসান বলেন, ‘দাদাকে হত্যার পেছনে কাদের মোল্লা জড়িত ছিলেন, তা আগেই প্রমাণিত হয়েছে। কাদের মোল্লার ফাঁসির জন্য অনেক অপেক্ষা করেছি। অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। দাদা দেশের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন। আজ তাঁর আত্মা শান্তি পাবে।

আমরা কলঙ্কমুক্তির পথে এগিয়ে গেলাম। ’

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।