আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিমন্ত্রী!

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান গতকাল শুক্রবার খুলনার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে উন্নয়নকাজ পরিদর্শনের নামে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় এলাকার আওয়ামী লীগের নেতারা ছাড়াও দুজন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
এলাকার লোকজন জানান, প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা লোকজন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের পক্ষে ভোট চান।
সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১০-এর ১৪-এর (ক) বিধিতে বলা আছে, জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ, হুইপ, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বা তাঁদের সমমর্যাদাসম্পন্ন সরকারি সুবিধাভোগী কোনো ব্যক্তি নির্বাচন-পূর্ব সময়ে নির্বাচনী প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। তবে তিনি ওই এলাকার ভোটার হলে ভোট দিতে যেতে পারবেন।


যোগাযোগ করা হলে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী তো কোনোভাবেই এখন নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে উন্নয়নকাজ দেখতে পারেন না। আমি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলছি। ’
খুলনা বিভাগীয় তথ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান দুই দিনের সফরে শুক্রবার খুলনায় এসেছেন। তিনি এলাকার উন্নয়নকাজ পরিদর্শন করবেন। শনিবার রাতে তিনি ঢাকায় ফিরবেন।


খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সানাউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিমন্ত্রী ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ১, ৩ ও ৭ নম্বর ক্যাম্প ও বায়তুল ফালাহ ক্যাম্পের উন্নয়নকাজ পরিদর্শন করেছেন। সঙ্গে কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, তাঁরা তো ছিলেন না। তবে দু-একজন সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসতে পারেন। তবে আমরা তাঁদের সরিয়ে দিয়েছি। ’
দলের অন্য নেতারা জানিয়েছেন, এলাকা পরিদর্শনের সময় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সানাউল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আসলাম, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী তাজুল ইসলাম এবং ওই ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী পারভীন আক্তার।


প্রতিমন্ত্রী বায়তুল ফালাহ ক্যাম্পে গেলে ওই ক্যাম্পের সভাপতি গোলাম মোস্তফার কাছে মেয়র পদপ্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের জন্য ভোট চান প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা লোকজন। এ সময় গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এই যে দেখেন, আমার পকেটে তালুকদার আবদুল খালেকের তালা মার্কার লিফলেট। ’ আওয়ামী লীগের লোকজন এ সময় বলেন, প্রতিমন্ত্রী কিন্তু এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছেন। কাজেই আওয়ামী লীগকেই ভোট দিতে হবে।
১২ নম্বর ওয়ার্ডের মোট ভোটার ১৪ হাজার ৬৪১।

এলাকার বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, নির্বাচিত হওয়ার পর এই এলাকায় হাতে গোনা কয়েকবার এসেছেন প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু এবার তিনি এসেছেন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে।
১২ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, জলাবদ্ধতাসহ মোট নয়টি প্রতিশ্রুতি পূরণ করব। ’ জনগণের কাছে ভোট চেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই তো ভোট চাইছি। ’ শুক্রবার ভোট চেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, চেয়েছি।

’ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে গিয়েছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী তো ভোট চাননি। তিনি অবাঙালি ক্যাম্পগুলোতে গিয়ে উন্নয়ন কার্যক্রম দেখেছেন। আমরা নেতারা সঙ্গে ছিলাম। ’
১১, ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গড়া সংরক্ষিত ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী পারভীন আক্তারও একই ধরনের কথা বলেছেন।
বক্তব্য জানতে কয়েকবার ফোন করার পর মুঠোফোনে সংক্ষিপ্ত বার্তা পাঠানো হলে মন্নুজান সুফিয়ান প্রথম আলোর প্রতিনিধিকে ফোন করেন।

তিনি বলেন, এলাকায় কিছু টিউবওয়েল ও বাথরুম করার জন্য টাকা দিয়েছিলাম। সেই কাজ দেখতে এসেছি। ভোট চাইতে আসিনি। ’
প্রতিমন্ত্রীর সফর সম্পর্কে বিএনপি-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘১৫ জুন নির্বাচন। এ সময় প্রতিমন্ত্রীর এলাকায় প্রচারণা চালানো সম্পূর্ণ আচরণবিধি লঙ্ঘন।

তিনি কোনোভাবেই এখন এলাকায় আসতে পারেন না। শুধু আজ নয়, আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ও তিনি সঙ্গে ছিলেন। সেটিও আচরণবিধি লঙ্ঘন। আমি বিষয়টি তখন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।


জানতে চাইলে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোস্তফা ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী নির্বাচনের সময় প্রতিমন্ত্রী এলাকার উন্নয়নকাজ দেখতে আসতে পারার কথা নয়। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী ১২ নম্বর ওয়ার্ডে এসেছিলেন কি না, আমার জানা নেই। আমি বিষয়টি জেনে আপনাকে জানাব। ’।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.