আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্বাচনী ওয়াদা


প্রদীপ বিরক্ত মুখে পঞ্চম কাপ চা হাতে নিয়ে বসে আছে চায়ের দোকানে। সকাল থেকে কিছুই পেটে পড়ে নি। চিনি বেশি দিয়ে চা খেলে ক্ষুধা কমে যায়। কিন্তু খালি পেটে চিনি বেশি দিয়ে পরপর পাঁচ কাপ চা খেলে যে বমি ভাব শুরু হয় তা জানা নেই প্রদীপের। এখন তার বমি পাচ্ছে।

প্রানপন চেষ্টা করছে বমি আটকানোর। সে বমি বিষয়ক চিন্তা ভাবনা বাদ দেয়ার চেষ্টা করলো। অন্য দিকে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করছে প্রদীপ। উজ্জ্বল আসলে চায়ের দাম তো দেবেই সাথে কিছু টাকাও দেবে।
উজ্জলের আসার কথা আরো ঘন্টা খানেক আগে।

উজ্জ্বল উপজেলা ছাত্রবাদি পার্টির সেক্রেটারি ক্যান্ডিডেট। বর্তমানে সে আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ন-আহ্বায়ক। উপজেলা নির্বাচনের পরপরই পুর্নাঙ্গ কমিটি দেয়া হবে। উজ্জ্বল নির্বাচন করছে একজন হেভিওয়েট প্রার্থীর। প্রার্থীর কাছে উজ্জ্বল খুবই একটিভ কিন্তু তার নিজের এলাকায় সে ভ্যালুলেস।

কেউই উজ্জ্বলকে ভালো চোখে দেখে না। অবশ্য ভালো চোখে দেখার মত কোন কাজই সে এত দিন করে নি। এখন নির্বাচনের সময়। তার এলাকায় প্রার্থীর জন্য মিনিমাম ৪০ পার্সেন্ট ভোট ম্যানেজ করতে হবে। কিন্তু সে নিজেও জানে তার কথায় লোকজন তার প্রার্থীকে ভোট দেবে না।

তাই সে প্রদীপকে ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করছে।
এলাকায় প্রদীপকে সবাই খুব ভালোছেলে হিসেবেই জানে। সহজ সরল ছেলে, একটা প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে সদ্য গ্র্যাজুয়াশন কমপ্লিট করেছে। উজ্জ্বল প্রদীপকে অনেক আশা ভরসা দেখিয়ে, বড় ভাইকে দিয়ে নির্বাচনের পর এক মাসের মধ্যে ভালো একটা চাকরি পাইয়ে দেয়ার কথা বলে নির্বাচনের সময়টাতে নিজের দলে টেনে এনেছে। প্রদীপও চিন্তা করে দেখলো গ্র্যাজুয়াশন কমপ্লিট করার সাথে সাথেই তো আর ভালো বেতনের চাকরি পাওয়া যায় না।

মুফতে সরদার ভাই এর নির্বাচনটা করে দিয়ে যদি একটা ভাল চাকরি পাওয়া যায় তো অসুবিধা কি। হোক না প্রার্থী খারাপ, সে পাশ করে এলাকার উন্নয়ন করুক বা না করুক তাতে প্রদীপের তো কিছু যায় আসে না। নিজের আখেরটা গুছিয়ে নিতে পারলেই হয়। প্রদীপও উজ্জ্বলের দেয়া আশায় ভরসা করে সরদার ভাইকে পাশ করানোর জন্যে প্রানপন খেটে যাচ্ছে।
সরদার ভাই এর টাকা আছে প্রচুর।

তিনি শুধু দুই হাত না, তিন চার পাঁচ ছয় যত হাতে পারছেন তত হাতে টাকা বিলিয়ে যাচ্ছেন। টাকা বিলানোতে কোন সমস্যা নেই সরদার সাহেবের। গত ৫ বছরে যা কামিয়েছেন তার ১০ ভাগের এক ভাগ ঢাললেই চেয়ারম্যানের গদি তার। ২০ টা সিএনজিতে প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তার প্রচারনা চলছে। প্রতিটা এলাকায় কমিটি করে দিয়েছেন, সেখানেও ছেলেপুলেদের খরচ হিসেবে সমানে টাকা পয়সা ঢেলে যাচ্ছেন।

এমপি থেকে শুরু করে কাউন্সিলর কাউকেই টাকা দেয়া বাদ যায়নি। নির্বাচনের ৫ দিন আগে ১০০০ মুরুব্বি টাইপের মানুষ নামিয়ে দেবেন। তারা প্রতিটা এলাকায় যেয়ে ভোট চাইবে। এর মধ্যে দাঁড়ি টুপিওয়ালা টাইপের লোকজন ভোট চাইবে মুসলমানদের বাড়িতে আর হিন্দু লোকজন ভোট চাইবে হিন্দুদের বাড়িতে। শুধু চেয়ারম্যানের চেয়ারটা পেলেই হয়।

খরচের টাকা সব তখন এমনিতেই উঠে আসবে। কোন অঘটন না ঘটলে এবারও তিনিই চেয়ারম্যান। শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।

নির্বাচনের ছয় মাস পরঃ
-দোস্ত।
=হুম ক।


-তুই না কইছিলি ভাই চেয়ারম্যান হইলে একটা ভালো চাকরির ব্যাবস্থা কইরা দিবি। চেয়ারম্যান তো হইলো। এইবার কিছু একটা কর।
=হুম, দেখি কি করা যায়।
-এই কথাটা তো গত ছয় মাস ধইরা কইতাছস।

তুই সত্যি কইরা ক তো, সরদার ভাইরে দিয়া কি তুই আসলেই চাকরি নিয়া দিবি।
=আরে ব্যাটা চাকরি কি মুখের কথা নাকি। আর তাছাড়া সরদার ভাই এলাকায় আসেই মাসে এক দুই দিন। সেই এক দুই দিন সে কি পরিমান ব্যাস্ত থাকে তুই বুঝোস। ভাইরে তো কওয়ার সময়ই পাই না।


-তাইলে কি হইবো না চাকরি।
=হইবো হইবো, তুই নিজেও চেষ্টা কর, আমি ভাই এর ব্যাপারটা দেখতাছি। দোস্ত, আমার একটু তাড়া আছে, আমি তোর ব্যাপারটা দেখুমনে। এখন গেলাম। বুঝসই তো, আমি এখন ছাত্রবাদি পার্টির সেক্রেটারি।

অনেক দিক সামাল দিতে হয়। অনেক ব্যাস্ত থাকতে হয়। তারপরেও তোর ব্যাপারটা আমার মাথায় থাকবো।
উজ্জ্বল বাইক নিয়ে চলে যাচ্ছে। প্রদীপ চেয়ে আছে উজ্জ্বলের বাইকের দিকে।

নিজের অজান্তেই অস্ফুটে স্বরে প্রদীপের মুখ দিয়ে বের হয়ে গেল “শালা বেঈমানের বাচ্চা”।
---------------------
সলিটারি সাইলেন্স

সোর্স: http://www.sachalayatan.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.