আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি আকাশ খুঁজি, আমি স্বপ্ন দেখি , (সম্পূর্ন কাল্পনিক )

আমি নিজে যে কি তা নিজেই জানি নাহ

*** ছিপছিপে গড়নের একটা মেয়ে। পরনে নীল জিন্স, সাথে গোলাপী টপস। চুলগুলো কোমর অবধি বিস্তৃত। একটু যেন ঢেউ খেলানো। তবে চুলের রঙ কালো কুচকুচে।

এই ঘরটায় শুধু এই মেয়েটিই চেয়ারে বসে আছে। বাকি মেয়েগুলোকে মেঝেতে সারি করে বসিয়ে রাখা হয়েছে। সবার মাথাতেই ওড়না দেওয়া অথবা আঁচলে মুখ ঢাকার আপ্রান চেষ্টা। সারির একেবারে শেষ মাথায় হাত পেছনে করে বেঁধে রাখা হয়েছে একটি ছেলেকেও। মাথার একপাশে সামান্য একটু কেটে গিয়ে রক্ত পড়ছে তার।

আর ওই অল্প রক্তের লোভেই এলাকার সব মাছি যেন ছুটে এসেছে তার কাছে, ঠিক যেমনটি করে ছুটে আসে নঃপুংশকরা মাংসের লোভে তাদের ক্ষয়ে যাওয়া পৌরুষ প্রমান করতে। সবগুলো মানুষকে রাতে একটি হোটেল থেকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। পুলিশি ভাষায় অভিযোগের নাম - অসামাজিক কার্যকলাপ। তবে সবাইকে এক সাথে ধরে নিয়ে আসা হলেও দীঘল কালো কেশের অরুনিমা চৌধুরীকে একটু সম্মানই করছে পুলিশ অফিসারেরা। হাজার হলেও দেশের অন্যতম সেরা নৃত্য শিল্পী অরুনিমা চৌধুরী।

টিভি ছাড়লেই তার দেখা মেলে প্রতিনিয়ত। তাকে কি আর সাধারন আসামীর সাথে বসিয়ে রাখা যায়? অরুনিমা চোধুরীর দিকে সামান্য ঝুঁকে তরুণ পুলিশ অফিসারটি জিজ্ঞেস করলেন--তো ম্যাডাম আপনি ওখানে ছিলেন কেন? মানে আপনার মত সেলিব্রিটিদেরকে ওই মানের হোটেল থেকে এভাবে পাবো ব্যাপারটা তো আমার সূদুর ফ্যান্টাসীতেও ছিল না। মুখে যথেষ্ট গাম্ভীর্য এনে অরুনিমা চৌধুরী বললেন-এখানে আসার পর থেকেই তো বলছি, আপনার অফিসাররা আমাকে ভুলে করে ধরেছেন। শ্যুটিং এর কাজে বরগুনা যেতে গিয়ে গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়াতে আটকা পড়ে রাতটা কাটাতে হয় আমাকে ওখানে। আর আমরা কোথাও কি সাধারণ জায়গায় থাকতে পারিনা? সেটাতেও কি পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া লাগে নাকি? কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেই অরুনিমা চৌধুরী বুঝতে পারলেন তার নাক ঘামছে।

জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছেন তিনি। মিথ্যে কথা গুছিয়ে বলতে না পারলে তাঁর এমন হয়। এক সাথে অনেক কিছু মাথায় ঘুরছে এখন। “অরুনিমা চৌধুরী একটা জেলা শহরের থানায় আটক আছে, তাও আবার হোটেলে অসামাজিক কাজ করার অভিযোগে” এর থেকে চটকদার খবর আগামীকালের বিনোদোন পাতার জন্যে আর কি হতে পারে!! হঠাত ভাবনায় ছেদ পড়লো পুলিশ অফিসারের বানোয়াট গাম্ভীর্যপূর্ণ কথায়--কি আর বলব! আপনারা তো আইকন তরুণ প্রজন্মের কাছে। একটু ভেবে চললেই তো পারেন।

আর কোনো সমস্যা হলে তো আমাদের জানাতেই পারতেন। আমরা তো আছিই আপনাদের সেবার জন্যে, তাই নয় কি? কিছুক্ষন পর ব্যাগে থাকা বেশ কয়েকটি সিঁদুরে লাল বর্ণের কাগজ টেবিলের নীচ দিয়ে প্রদান করে ও একটি কাগজে সাইন করে ছাড়া পেল অরুনিমা। **** অরুনিমা রয় চৌধুরী, সংক্ষেপে অরুনিমা চৌধুরী। প্রতিভাবান একজন নৃত্য শিল্পী। ছোট থেকেই নাচতে ভীষন ভালোবাসে মেয়েটা।

তবে প্রথাগত আর দশটা বাঙ্গালীর মত-ই সব কিছুতেই “ভবিষ্যৎ” খুজতে চান অরুনিমার বাবা। তার মেয়ে যে নাচকেই ভালোবেসে ফেলেছে সেটা তিনি জানতে পারেন অরুনিমা যখন অষ্টম শ্রেনীতে পড়ে। হঠাৎ একদিন অরুনিমার স্কুল থেকে ফোন আসে। ডেকে পাঠানো হয় বাবাকে। ইংরেজি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে প্রশ্ন এসেছিল- “Aim in life”. সেখানে সে লিখেছিল “wants to be a dancer” এটাই ছিল অপরাধ।

বাসায় এনে “নর্তকী” হতে চাওয়ার অপরাধে মৌখিকভাবে সেদিনই খুন করে ফেলা হয়েছিল অরুনিমাকে। এর পরে অনেক কষ্টে এসএসসি এইচএসসি পাশ করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই পুরোনো স্বপ্নটাকে নতুন করে জাগানো, ঠিক যেন ফিনিক্স পাখি। অতঃপর কিছু ক্ষ্যাপাটে বন্ধুর কল্যানে একটা রিয়েলিটি শোতে অংশ নেওয়া। তারপর আর কি!! ক্যামেরা, লাইট, রিফ্লেকটরের জগতটাকে ভীষন ভালোবেসে ফেলা।

একে একে রিয়েলিটি শো এর বিভিন্ন ধাপ পেরোনো আর স্বপ্নের কাছাকাছি চলে যাওয়া; সেরা সাতে পৌঁছানো। কিন্তু হঠাতই স্বপ্নচ্ছেদ। মানুষের দূর্বিনীত গতির রক্তাক্ত সময়ের পুন্যলোভী ধার্মিকেরা স্থুল হাতে সুন্দরের পেলব প্রতীমা বারবার কলঙ্কিত করার প্রয়াসে যে রত রয়েছে তা আবারো বুঝতে পারে অরুনিমা। শো এর ডিরেক্টেরের সাথে একটা রাতে ডিনারের প্রস্তাব আসে। ডিনারের পর হোটেলে কিছু সময় কাটানো! বিনিময়ে সেরা তিনে জায়গা নিশ্চিত।

”আরে কিছুটা কম্প্রোমাইজ না করলে কি সাফল্য পাওয়া যায় নাকি?” কিন্তু কম্প্রোমাইজ সে করতে পারবে না। ফলাফল- সেই রাউন্ড থেকেই বাদ!! *** কিছু মানুষ আছে যারা শুন্য প্রান্তরে পড়ে থাকার জন্যেই এই পৃথিবীতে এসেছে। শুন্যতা তাদের স্বপ্নে থাকেনা, শুন্যতা থাকে তাদের পারিপার্শিকতায়। তাদের স্বপ্নে শুন্যতা না থাকলেও স্রষ্টা তাদের স্বপ্নকে ছন্নছাড়া করে দিতেই হয়ত ভালোবাসেন। ঠিক যেন কেউ একজন তাদের স্বপ্নগুলোকে ছিবড়ে ফেলেছে।

আর তখনই চাওয়া আর পাওয়ার দাড়িপাল্লার দুটি পাল্লা ভারসাম্য হারায়। অরুনিমা চৌধুরিও নিজেকে ঠিক সেই দলেরই মানুষ ভেবে নিয়েছেন । সোজাসাপ্টা ভাবে বলা যায় ধর্ষিতা হতে কারোরই ভালো লাগেনা। “তবে ধর্ষন শুধু শারীরিক নয় করে না। সব থেকে বড় ধর্ষনের স্বীকার হয় মানুষের মনটা, যখন স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায় অগোচরে, উবে যায় মহাশুন্যে কর্পুরের মত” --অরুনিমার খাতাটা এমন কথাতেই ভর্তি, আজও লিখতে ইচ্ছে করছে সেটাতে অনেক কিছু।

লিখতে ইচ্ছে করছে হোটেলে নতুন প্রোডিউসারের ডাকে গিয়ে সর্বস্ব বিলোনোর কথাগুলো। কিন্তু কিছুই লিখতে পারছে না সে। খাতাটাতে এর আগেও অনেকবার অনেক কিছুই লিখেছিল। কি লাভ হয়েছে? অরুনিমাও চেয়েছিল এমন কাউকে যে তাকে খুব ভালবাসবে। তার ভালোবাসাকে ভালোবাসবে।

ছোট্ট বেলাতে সব মেয়েরা যখন পুতুল খেলে তখনই তাদের মনে একটা স্বপ্ন তৈরী হয়ে যায় জীবন নিয়ে। কিন্তু আজ সব কিছুর বদলে অরুনিমা একজন দামী পতিতা ছাড়া আর কিছুই নয় এই সমাজের চোখে। আচ্ছা স্বপ্ন ছাড়া কি বেঁচে থাকা ওর পক্ষে একেবারেই অসম্ভব?? *** সাত তলার রেলিংবিহীন বারান্দাটা থেকে আকাশ দেখেছে অরুনিমা! ঢাকা শহরের এদিকটায় তেমন বড় দালান নেই। তাই আকাশকে দেখতে তেমন কোনো সমস্যা হয়না। আচ্ছা! বেদনার রং নাকি নীল! তবে কি আকাশেরও অনেক বেদনা আর কষ্ট? আজ আর এতকিছু ভাবার সময় নেই তার।

দিনকে দিন বড্ড বেশি কাব্যিক হয়ে যাচ্ছে সে। শেষ বারের মত মন খুলে আকাশটা দেখাতেই মনোযোগ দেওয়া দরকার অরুনিমার...। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।