আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধূলোর দিনে ফেরা..

..সেই ভিজে মেঘের দুপুরে উড়েছিলে চিল সোনালি ডানার.. তোমার কান্নার সুরে ধানসিড়ি দ্যাখে ম্লান চোখে অন্ধকার। পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যা চলে যায় দূরে সবটুকু রূপ নিয়ে--- সে দুঃখ পড়ে থাকে ঘাসের পাখনায়, আমি কাতর লিখিয়ে!

____________________________________________________________________
শীত ঋতুটা কি অন্যরকম, বছরের অন্য সময়ের চেয়ে? আমার কাছে শীত মানে আলসেমি, শীত মানে লেপের ওম, ভাপা পিঠার চনমনে ধোয়া, ছোট্টবেলার কানটুপি ঢাকা মাথা নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে হু হা করে মুখ দিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ার ভান। শীত মানেই স্মৃতিকাতরতা...
এখন আর সেই শৈত্যপ্রবাহের জোর কই! আগে তো সেপ্টেম্বর না ছাড়াতেই সন্ধ্যেবাতি ঘনিয়ে দেয়া কুয়াশা, অক্টোবর আর নভেম্বর জুড়ে হাড়কাঁপানো কনকনানি, ডিসেম্বরের শেষটা থেকে ফের হালকা চাদরে ফেরা..। সময় বদলেছে, বদলেছে মানুষ, বদলেছি আমিও। আসলেই বদলেছি কি?
ক্লাস ফোরে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের অনুষ্ঠানে ছবি আঁকায়' 'একাত্তরের গণহত্যা ও নারীনির্যাতন' নামে একটা বই পুরস্কার পেয়েছিলাম।

বড় হয়ে ঐ বইটা কখনো কাউকে পড়তে বলতাম না, কারণ অত শক্ত কলজে আমার নিজেরই ছিলো না। এখনো নেই।
তবু সুযোগ পেলেই পরিচিতদের পড়তে বলি ' আমি বীরাঙ্গনা বলছি, একাত্তরের দিনগুলি, মূলধারা ৭১, রাইফেল রোটি আওরাত'-- এই চারটা বই। আর ডঃ এম এ হাসানের লেখা 'যুদ্ধ ও নারী' আর বাসন্তী গুহঠাকুরতার 'একাত্তরের স্মৃতি'। এবং পারলে বাংলা একাডেমি থেকে বেরুনো শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মারক সিরিজটা।

যে বুদ্ধিজীবিদের একজন, শহীদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, লোহার রড আর বেয়োনেটের সামনে দাঁড়িয়েও বলেছিলেন, 'হ্যাঁ, আমি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লিখেছি!' কতোটা মনের জোর নিয়ে যে পৃথিবীতে এসেছিলেন এই মানুষগুলো!
নির্বাসন যাত্রার সম্ভাবনার সূচনা হতেই প্রথম কাতরতা শুরু হলো বই নিয়ে। দেশ ছেড়ে থাকার আশুবেদনা ছাপিয়ে উঠল নিজের বুকশেলফ দুটোর সঙ্গে সাময়িক বিচ্ছেদের বেদনা। ক্যাঠায় জানে হালায়, হয়তো যাওয়াই হবে না শেষমেশ! ভিসা অফিসার তেএঁটে খচ্চর মার্কা হাসি দিয়ে বলবেন-- যা পারো এখানেই কলম পিষে খাও বাছা। কেন খামোকা ঐ প্রস্তরখণ্ডসম নিরেট মস্তকে উচ্চশিক্ষার হাউউ ঢুকিয়ে আমাদের মাথাটা খেতে এলে বলো দিকিনি? খিক খিক।
আর যদি ছেড়েই যাই সব? যাই পেরিয়ে নিজের ছায়া, বাড়িয়ে দেওয়া হাত.. তখন সন্ধে নামার সময় হলে..পশ্চিমে নয় পুবের দিকে, মুখ ফিরিয়ে ভাববো আমি কোন দেশে রাত হচ্ছে ফিকে? এত ভাল আর কিছুকে তো বাসি না, এর চেয়ে ভাল আর যে কোনকিছুকে কখনো বাসিনি।


বুকশেলফ ছিল না একসময়। একটা তিন তাকের শোকেস ছিল, দেড়খানা তাক বরাদ্দ ছিল আমার হীরেমাণিকখনির জন্য। এরপর কাঠের বড় শেলফ জুটল। কড়ির গাছে কড়ি হলো, কোলের ছেলে ধাড়ি হলো আর ঈদ সালামি আর স্কলারশিপের টাকায় ঘুন ধরে যাওয়া শেলফের ঘুপচিগুলো ভরেও গেল বইয়ের ভারে। সচলদের সৌজন্যে কত বই যে পেয়েছি উপহার হিসেবেই..।

কলকাতা থেকে দময়ন্তীদি একবার পাঠিয়েছিলেন একটা কবিতার বই। হায়, শুধু ঐ কবিতার ঘোরে এক পৃথিবী লিখবো বলে, একটা খাতাও শেষ না করেই তো কেটে গেছে সহস্র বছর!
এরপর একসময় নামলাম কামলাগিরিতে। সংসার চালানোর দায় ঘাড়ে নেই, ছেলারি নামক অতি অসম্মানজনক অঙ্কের টেকাটুকা মনের ফূর্তিতে ফি সাবিলিল্লাহ ফিলোসফিনুযায়ী মাসের দশ তারিখের মধ্যেই মোটামুটি উড়িয়ে দিই। একদিন অডিট টিমের ঝাড়ি খেয়ে মনটন খুব খারাপ ছিল। ব্যাগে টেকা ছিল না, তয় এটিএম কার্ড ছিল।

ফেরার পথে অটবিতে নেমে দড়াম করে আরেকখানা পেল্লায় শেলফ বুকিং দিয়ে ফেললাম। আজ মরলে কাল কুলখানি, হুদাই দীর্ঘশ্বাস জমিয়ে কী লাভ কন?
এই শেলফটা নিজের রুমেই রাখা, বিছানায় আড়মোড়া ভাঙতেই সোজা চোখে পড়ে। এখনো অনেকটুকু জায়গা বাকি তার ভরভরন্ত হয়ে ওঠার। হায় অবোধ কাষ্ঠপুত্তলি, আমি চলে গেলে তোমায় আর যতনে রাখিবে কে!
ঘুমের সাইকেল বদলে গেছে ইদানিং, রাতে এগারোটা বাজতেই ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসে, ভোররাতে উঠে সচল খুলে বসে থাকি। লগ ইন করি কখনো.. কখনো নয়।

পুরোনো সচলদের মিস করি অনেক। বিশেষ করে নির্বাসনে যাবার আগে, জাহিদ হোসেনকে। যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে। তা জেনেও আমাদের সেই ভেজা বনের পাড়ায়, যা হারাবার হারায় কেবল হারায়.. বোকা আঙুল, দুঃখী আঙুল হারায়।
তা, এবারের বিজয় দিবস আমাদের হেরে যাওয়ার তো নয়।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পাকিস্তানের অনুগত ছিলেন বলে পাকিমন্ত্রীর ছাট্টিফিকেট পাওয়া কসাই কাদের অলরেডি ঝুলেছে দড়িতে, মহান বান কী মুন বুক ভাসানো অশ্রুজলে পদ্মামেঘনা ছাপিয়ে যাওয়ার যত চেষ্টাচরিত্র-ই করুন না কেন, লাভ হৈবো কাঁচকলা। মুহুহুহু।
আমি নাদান, হাফ ইনসমনিয়াক, ম্যালাক্ষণ অনলাইনে রূপবতী বালিকাদের প্রোফাইলে ইতিউতি তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকি, ভোর হলেই একমাত্র ছোটবোনকে নিয়ে ছাদে যাব গতকাল ফেরিওয়ালার কাছ থেকে কেনা বিশাল পতাকাটা টাঙাতে। ঘড়ির এলার্ম আর মডেমের নব দুটোই মুচড়ে বন্ধ করার আগে কী খেয়ালে Bangladesh লিখে উইকিতে উঁকি দিই--
Bangladesh (Bengali: বাংলাদেশ), officially the People's Republic of Bangladesh (Bengali: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ Bangladesh), is a country in South Asia, located on the fertile Bengal delta. The borders of modern Bangladesh took shape during the Partition of Bengal and British India in 1947, when the region became the eastern wing of the newly formed state of Pakistan. Following years of political exclusion, ethnic and linguistic discrimination, and economic neglect by the politically dominant western wing, a surge of popular agitation, nationalism and civil disobedience led in 1971 to the Bangladesh Liberation War, resulting in the separation of the region from Pakistan and the formation of an independent Bangladesh.
আংরেজি কষ্টেসৃষ্টে বুঝি তো এক-আধটু। তাও বোকার মতো ফট করে চোখে পানি চলে আসে কেন কে জানে! বয়সের দোষ বোধহয়।


সোর্স: http://www.sachalayatan.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।