আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কি হচ্ছে সাতক্ষীরায় ?????????????????



সাতক্ষীরা জেলা কেন ‘আতঙ্কের জনপদে’ পরিণত হলো? আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মনে করেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যথাসময়ে যথাযথ ভূমিকা রাখলে এই অবস্থা হতো না। কিন্তু পুলিশ দুষছে আওয়ামী লীগকে। স্থানীয় কোনো কোনো নেতার কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। আর সাধারণ মানুষ দায়ী করছে আওয়ামী লীগ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সমানভাবে। গতকাল বুধবার সাতক্ষীরার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী আর পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, সাতক্ষীরা অনেক আগে থেকে জামায়াত-অধ্যুষিত এলাকা হলেও আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে এ ধরনের তাণ্ডবের সুযোগ পেত না জামায়াত-শিবির। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা দলের অনৈক্যের জন্য সদ্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হককে দায়ী করেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ বলেন, আ ফ ম রুহুল হকের জনবিচ্ছিন্নতার জন্য দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা মাঠে নেই। কয়েক দিন আগে তিনি হেলিকপ্টারে করে জেলা সদরে এসে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সার্কিট হাউসে অবস্থান করেন পাঁচ দিন এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আবার ঢাকায় গিয়ে নিরাপদে আছেন। অথচ তাঁর নির্বাচনী এলাকা দেবহাটা, আশাশুনি ও কালীগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি নাশকতার ঘটনা ঘটছে।

তিনি একবারও সেখানে যাননি। আ ফ ম রুহুল হকও আওয়ামী লীগে অনৈক্য আছে বলে স্বীকার করেছেন। তবে পাল্টা প্রশ্ন করে জানতে চান, ‘এ অনৈক্যের জন্য কি আমিই দায়ী? আপনারা দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক কী করছে, খোঁজ নিন। ’ এ নেতাদের সঙ্গে বারবার বসেও দলীয় কোন্দল মেটাতে ব্যর্থ হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এখনো যদি বিবাদ মেটানো যায়, তাহলে সাতক্ষীরায় স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম এবার দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন।

মুজিবুর সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সাংসদ এবারও এই আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। নজরুল সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মুজিবুর ঢাকায় অবস্থান করলেও নজরুল সাতক্ষীরায় আছেন। তবে এই দুই নেতার অনুসারীদেরও প্রবলভাবে মাঠে উপস্থিত হতে দেখা যাচ্ছে না। বর্তমানে ঢাকায় অবস্থানকারী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সব সময় মাঠে আছি।

২৮ ফেব্রুয়ারিতে সহিংসতা যখন চরম আকার নেয়, তখনো এলাকাতে ছিলাম। গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। সহসাই আবার এলাকায় যাব। ’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য যৌথ বাহিনীর অভিযানের পাশাপাশি জনমত গঠনের কাজও শুরু হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল বলেন, মাস খানেক আগে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু করা গেলে জামায়াত এত বাড়াবাড়ি করতে পারত না।

তিনি আত্মসমালোচনা করে বলেন, ‘সাতক্ষীরার জনমানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় আমাদের যেমন দায় আছে, তেমনি আছে প্রশাসনের ব্যর্থতাও। ’ প্রশাসনের, বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবনতি ঘটেছে বলে মনে করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ। তিনি বলেন, এ জেলা থেকে সদ্যবিদায়ী পুলিশ সুপার মোল্যা জাহাঙ্গীর হোসেনকে প্রত্যাহারের জন্য সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছে আওয়ামী লীগ। প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সাংবাদিকদের পক্ষ থেকেও মোল্যা জাহাঙ্গীর হোসেনকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সঞ্চারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে ঢাকার মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মোল্যা জাহাঙ্গীর হোসেন অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে আনা নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমি আমার সাধ্যমতো করেছি।

’ তিনি নাশকতা প্রতিরোধে সরকারি দলের উদ্যোগহীনতাকে দায়ী করে বলেন, ‘আমি কাজ করতে গিয়ে সরকারি দলের কতিপয় স্থানীয় নেতার চরম অসহযোগিতা পেয়েছি। তা ছাড়া আমার কাছে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ ছিল না। তবু জেলাটিকে শান্ত রাখার চেষ্টা করেছি। প্রতিদিনই নাশকতাকারীদের আটক করেছি। ’ কিন্তু পুলিশের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২৬ নভেম্বর জেলাজুড়ে নাশকতা শুরুর পর স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা কমে যায়।

এমনকি ২৬ নভেম্বর গ্রেপ্তার হওয়া দুজনের একজন ছিলেন যৌতুক মামলার আসামি, অন্যজন আদালতে হাজিরা দিতে এসে গ্রেপ্তার হন। ১৫ ডিসেম্বর শুরু হয় যৌথ বাহিনীর অভিযান। এর আগের দিন পর্যন্ত জেলখানায় একজনও নতুন আসামি ঢোকেনি। জানতে চাইলে জেলার পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির বলেন, মামলা ও গ্রেপ্তারের সংখ্যা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাচাই করার চেষ্টা সব সময় যথার্থ হবে না। যৌথ বাহিনীর অভিযান আর কত দিন চলবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এখনই বলা সম্ভব নয়।

অভিযানের উদ্দেশ্য, জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা। উদ্দেশ্য সফল হওয়ার পরই অভিযান বন্ধ হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.