আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উচ্চশিক্ষা : বিশ্ববিদ্যালয় বনাম সাবজেক্ট

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে অনেক শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন থাকে দেশের শীর্ষস্থানীয় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। আবার কেউ কেউ কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেন সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজেদের পছন্দমাফিক বিষয় যেমন মার্কেটিং, বায়োক্যামিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি, ফিজিঙ্, কম্পিউটার সায়েন্স, টেলিকমিউনিকেশনস, ডেইরি সায়েন্স, নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড, অ্যাকাউন্টিং, ব্যাংকিং, জার্নালিজম, পলিটিক্যাল সায়েন্স, আর্কিটেকচারে উচ্চশিক্ষা নিতে চায়। এক্ষেত্রে কেউ ভর্তি হতে চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, কেউ বুয়েটে, কেউ রুয়েটে বা কুয়েটে। এখন চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার মৌসুম। শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে; ফলাফল কি হয় এ নিয়ে অনেকেই উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে।

এরই মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে নিয়েছে। কিন্তু পরীক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের অনেকেই দ্বিধার মধ্যে আছেন ভালো সাবজেক্ট না ভালো বিশ্ববিদ্যালয় এ দুয়ের মধ্যে কোনটি বেছে নিবেন এ ভাবনায়। কিন্তু সময়ের বিবেচনায় ভাবতে হবে কোনটির গুরুত্ব বেশি। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের মানে কি বিশাল জায়গার আড্ডামুখর ক্যাম্পাস, নাকি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, নাকি উন্নত ল্যাবরেটরি, নাকি চমৎকার আবাসন ব্যবস্থা, নাকি বিশাল একাডেমিক ভবন, নাকি পড়াশোনার চমৎকার পরিবেশ? এর অর্থ খুঁজতে এই দিকগুলোর প্রতি আলোকপাত করতে হবে। আর ভালো বিষয়ের মানে কি বিষয়টির প্রতি নিজের ভালোবাসা, নাকি উক্ত বিষয়ে ভালো চাকরির সুযোগ রয়েছে নাকি বিষয়টির ক্যারিয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? ভালো সাবজেক্ট বনাম ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর এর সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম. আফজাল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ভালো আর খারাপ বলে কিছু নেই।

তাই একজন শিক্ষার্থী কোন বিষয় নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চায় তা আগে থেকেই ঠিক করে নেওয়া ভালো। আর বিষয় বাছাই করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে পছন্দের বিষয়ে পড়াশোনা সম্পন্ন করে ভবিষ্যতে কোন ধরনের চাকরি পাওয়া যাবে, এর ক্যারিয়ার সম্ভাবনা কতটুকু, নিজের কাছে সেই কাজের মূল্যায়ন কতটুকু এসব বিষয়ের প্রতি। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো ফলাফল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফলই যদি ভালো না থাকে তাহলে চাকরিদাতা কি দেখে পছন্দ করবেন? এক্ষেত্রে ভালো সাবজেক্টের দাম থাকল কি? কারও ফলাফল যদি ভালো না হয় তাহলে সাবজেক্ট বা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোষ দিয়ে লাভ কি? উল্লেখ্য, যেকোনো সাবজেক্টে পড়া যেতে পারে যদি শিক্ষার্থীর মেধাশক্তি সে সাবজেক্টের ওপর বিকশিত হয়। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ফ্যাক্টর নয়।

একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী তাকে রেপ্রি্রজেন্ট করবে তার অর্জিত ফলাফল দ্বারা। বিশ্ববিদ্যালয় তাকে রেপ্রিজেন্ট করবে না। ছাত্রকেই তার নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি বাড়াতে হবে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে একজন শিক্ষার্থী অনেক ক্ষেত্রেই তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায় না। কিন্তু পছন্দের বিষয়টিতে ভর্তির সুযোগ পায় এমনটিও দেখা যায়।

কিন্তু কারও কারও ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ মিললেও সাবজেক্ট পছন্দ হয় না। এমন পরিস্থিতি যদি কারও সৃষ্টি হয় তবে কোনটিকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত? বিষয় নাকি বিশ্ববিদ্যালয়কে? এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় ভালো আর মন্দ বলে বর্তমানে কিছু নেই বললেই চলে। যেকোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো ফলাফল করে বের হয়ে আসলে, দেখবে চাকরির জগতে বিশ্ববিদ্যালয় এর নাম নিয়ে কোনো সমস্যাই সৃষ্টি হবে না। যদি কারও বিষয় ও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সাংঘর্ষিক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয় সেখানে বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি এডজাস্ট করে নেওয়া উচিত বলে আমার মনে হয়।

বর্তমানে চাকরির বাজার অনেক প্রতিযোগিতাপূর্ণ।

তাই এখানে তারাই সফলতা অর্জন করবে, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ফল করে বেরিয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, যারা বর্তমান বিশ্ব ও সাধারণ জ্ঞানকে ভালোভাবে আয়ত্ত করবে তারাই চাকরির বাজারে ভালো করবে। বিষয় যাই হোক যদি মনোযোগ দিয়ে পড় তাহলে সফলতা একদিন আসবেই। আমি কোন বিষয় নিয়ে পড়তে চাই তা আগে ঠিক করে নিতে হবে।

বিষয় বাছাই করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে পড়া শেষে ভবিষ্যতে কোন ধরনের চাকরি পাওয়া যাবে, এর ক্যারিয়ার সম্ভাবনা কতটুকু, নিজের কাছে সেই কাজের মূল্যায়ন কতটুকু ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি। কারণ শিক্ষার্থীদের ফাইনাল ডেসটিনেশন হল একটি হ্যান্ডসাম জব। পরিশেষে বলবেন? ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্য লাভের পূর্বশর্ত হলো টেঙ্ট বইয়ের প্রতি বেশি বেশি নজর দেওয়া। বইয়ের গভীরে যাওয়া উচিত। আর প্রতিযোগিতামূলক যেকোনো পরীক্ষায় মূল বই পাঠের কোনো বিকল্প নেই।

চাকরির জগতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিয়ে কোন সমস্যাই সৃষ্টি হবে না। বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাকরির বাজার সম্বন্ধে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. একেএম নূর-উন-নবী বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নবীন শিক্ষার্থীদের জীবনের মোড় চেঞ্জ করে দেওয়ার ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে চাকরির বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আর শিক্ষার পরিবেশ, যুগোপযোগী আন্তর্জাতিক মানের গবেষণামূলক বিষয় বাছাই করা উচিত। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ভালোমন্দ বলে কিছু নেই। বিষয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো ভালো ফলাফল।

আর ভালো ফলাফলের বিকল্প কিছু নেই। সর্বোপরি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের খেয়াল রাখা উচিত বিষয় এবং এর প্রতি শিক্ষার্থীর ভালোবাসা যে সে কতটুকু অর্জন করতে পারবে সেই বিষয়ে। ' এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, যদি কারও বিষয়ও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সাংঘর্ষিক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয় সেখানে বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি এডজাস্ট করে নেওয়া উচিত। প্রসঙ্গত, চাকরির বাজারটি অনেক প্রতিযোগিতাপূর্ণ। তাই এখানে তারাই সফলতা অর্জন করবে, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ফল করে বেরিয়ে যাবে।

তাই নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলব, বিষয় যাই হোক যদি মনোযোগ দিয়ে পড় তাহলে সফলতা একদিন আসবেই। পরিশেষে প্রফেসর ড. এম. আফজাল হোসেন বলেন, 'উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যখন শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি তখনই হরতালের মতো শিক্ষা বিরোধী কিছু কর্মকাণ্ড সেই ট্রেন্ডকে বাধাগ্রস্ত করছে। আর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলাতে না পেরে জাতি পিছিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সামপ্রতিক সময়ের কিছু পরিস্থিতি আমাদের উন্নতির সেই গতিকে পেছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর একটি বিষয় মেধার মূল্যায়ন করতে হবে।

তবেই আজকের নবীন শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হবে। জাতি হবে সুশিক্ষিত। প্রতিযোগিতামূলক যেকোনো পরীক্ষায় মূল বই পাঠের কোনো বিকল্প নেই। ' সিদ্ধান্ত ভেবেচিন্তে নিতে হবে। এক্ষেত্রে একটি প্রবাদ রয়েছে- " ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না"।

এই কথাটি মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। তবেই সফলতা আসবে।

*মাইন উদ্দিন সোহাগ

 

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.