আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কয়েকটা পুরানা ছায়াছবি দেখার দাওয়াত



ভূমিকা - আমি খুব যে সিনেমা দেখি তা না, সে অর্থে আমি যে সিনেমাখোর তা বলা যায় না। তবে ভাল ভাল সিনেমার সন্ধান পেলে সেগুলা দেখি, মিস করিনা। সে সিনেমা যে কোন ভাষার হউক না কেন তাতে কোন সমস্যা নাই। সেরকম কয়েকটা আমার ভাল লাগা সিনেমা দেখার দাওয়াত দিতে এই পোস্টের অবতারনা -

প্রথম ছায়াছবি
চিলড্রেন অব হেভেন



এটা একটা ইরানী ছবি। পরিচালকের নাম মাজিদ মাজিদি

যারা ইরানী ছবি দেখেন তারা নিশ্চয় মাজিদ মাজিদি কে ভাল করে চিনেন। যার অনেক শর্ট ফিল্ম, ডকুমেন্টারি, ফিচার ফিল্ম আছে যেগুলা মুগ্ধ হয়ে দেখার মত। তেমনি একটি ছবি চিলড্রেন অব হেভেন । যে ছবিটি ১৯৯৮ সালে একাডেমি এ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট ফরেন মুভি হিসাবে মনোয়ন পেয়েছিল। ছবির কাহিনি একদম ছোট একটা বিষয় নিয়ে ।

ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র আলী তার ছোট বোনে জারা'র জুতা রিপিয়ার করে ঘরে ফিরার পথে সে জুতা হারিয়ে ফেলে । সেই জুতা হারানোর কাহিনীর পরে দুই ভাইবোন আলি ও জারার কীর্তিকলাপ নিয়াই পুরা ছবি। আর সাথে দেখানো হয় আলীর পরিবারের দুঃখ দূর্দশা আর অভাব অনটনের চিত্র। ছবিতে কিছু কিছু দৃশ্য আছে যেগুলা আজীবন মনে রাখার মত। একজোড়া জুতোর অভাবে আলি আর জারার যে কি পরিমান আকুলতা তা ছোট ছোট নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে পরিচালক ছবিটাতে তুলে ধরেছেন।

যে কোন ঘরানার দর্শকের মন ছুঁয়ে যাওয়ার মত একটা মুভি।



পুরা মুভি সাব-টাইটেল সহ

দ্বিতীয় ছায়াছবি
সালাম বোম্বে

[

নাম শুনেই বুঝতে পারছেন ছবিটা হিন্দি ছবি। ছবির পরিচালক মিরা নায়ের। সালাম বোম্বে ছবিটি মিরা নায়েরের প্রথম ফিচার ফিল্ম। প্রথম ছবিতেই উনি বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন ইন্ডিয়ান গৎবাঁধা বানিজ্যিক পরিচালক থেকে তিনি আলাদা।

যার প্রমান হিসাবে তার প্রথম ছবিই সালাম বোম্বে ১৯৮৯ সালে একাডেমি এ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট ফরেন মুভি হিসাবে মনোয়ন পেয়েছিল। ছবির কাহিনী ১০ বছরের ছেলে কৃষ্ণা কে নিয়ে। তাকে তার মা বাড়ি থেকে বের করে দেয় বড় ভাইয়ের সাইকেল ভেঙ্গে ফেলার জন্য এবং বলে দেয় যদি সাইকেলের ৫০০ টাকা না নিয়ে আসে তাহলে সে বাড়িতে ঢুকতে পারবে না। সেজন্য সে ৫০০ টাকা রুজি করার জন্য ভ্রম্যমাণ মেলায় কাজ করতে যায়। মেলায় মালিক তারে জর্দা আনতে বাজারে পাঠায়।

বাজার থেকে এসে দেখে মেলার লোকজন সব চলে গেছে। তারপর সে বোম্বাই চলে যায়। ছবিতে মেইনলি বোম্বাইয়ের টোকাইদের জীবনচিত্র দেখানো হয় আর সাথে কৃষ্ণার ৫০০ টাকা জমানোর লড়াই ।

ছবির ট্রেলার


পুরা মুভি


কৃষ্ণা চরিত্রে যে ছেলেটি কাজ করে তার নাম শফিক সায়িদ । সালাম বোম্বে ছবিতে সে অসাধারণ অভিনয় করেছে যার ফলশ্রুতিতে চাইল্ড এক্টর হিসাবে সে ন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড জিতেছিল।

১৯৯৪ সালে শফিক সায়িদ পাটাং
নামের আরেকটি ছবিতে কাজ করেছিল। সে ছবিটিও ফিচার ফিল্ম হিসাবে ন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড জিতেছিল। কিন্তু বর্তমানে শফিক সায়িদ করছে সেটা দেখুন -


তৃতীয় ছায়াছবি
হোমলেস টু হার্ভার্ড



নিউইয়র্ক ব্রোন্জের লিজ মুরির জীবন কাহিনী নিয়ে সত্যি ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ছবি। লিজের মাদকাসক্ত বাবা মায়ের করুণ দূর্দশার চিত্র ,নোংরা পরিবেশে তার বেড়ে উঠা,স্কুলের সহপাঠীরা তাকে এড়িয়ে চলা, একসময় সরকারি হেফাজতে চলে যাওয়া,সেখান থেকে হোমলেস হয়ে যাওয়া,মায়ের করুন মূত্যু,তারপর আবার নতুন করে পড়ালেখা শুরু করা, একসময় নিউইয়র্কের টাইমসের স্কালারশিপ পেয়ে হার্ভার্ড পড়ার সুযোগ পাওয়া - এসব কিছু ছবিতে দেখানো হয়েছে । ছবিটিতে একটা মেসেজ আছে সেটা হল আত্ববিশ্বাস আরা চরম অধ্যাবসায়ের সাথে চেষ্টা করলে সাফলতা আসবেই ।

সিনেমায় আমেরিকান বিউটি খ্যাত থোরা ব্রিচের অভিনয়টাও দারুণ হয়েছে।
ছবির ট্রেলার


পুরা মুভি


যার লাইফের ঘটনা নিয়ে ছবি তার( লিজ মুরের) ছোট একটা ইন্টারভিউ


চতুর্থ ছায়াছবি
পারফিউম



সামুতে অনেক আগে একটা সিনেমা রিভিউ পড়েছিলাম। পড়ার পরে ঠিক করেছিলাম ছবিটা দেখবো। ছবিটা দেখার পরে মনে হল এরকম ছবি বারবার দেখা যায়। এক কথায় অসাধারণ এবং পুরা অন্যরকম একটা ছবি।

ছবির নাম পারফিউম। জার্মানিয়ান লেখক পেট্রিক সাসকাউন্ডের কালজয়ী উপন্যাস পারফিউমের উপর ভিত্তি করে ছবিটি বানানো হয়েছে। ছবিতে দেখানো হয় প্যারিসের ট্যানারিটা নামের এক জায়গায় গ্রেনুয়ালে নামের একজন চোখ বন্ধ করে শুধু নাক দিয়ে ঘ্রাণ নিয়ে অনেক কিছু বলে দিতে পারে। একবার সে তার মালিকের সাথে শহরের অভিজাত এক এলাকায় চামড়া ডেলিভারী দিতে গিয়ে সে একটা এক পারফিউম দোকানের বিভিন্ন রকমের পারফিউম দেখছিল। হঠাৎ বাইরে থেকে অন্য একটা গন্ধ তার নাকে ভেসে আসে।

সে গন্ধ ফলো করতে গিয়ে দেখে সেটা যুবতী এক মেয়ের শরীর থেকে ভেসে আসছে। সে মেয়েটার পিছু নিতে থাকে কিন্তু একসময় সে মেয়েটাকে হারিয়ে ফেলে। এরপর সে ঠিক করে সে শিখবে কিভাবে সুগন্ধ বন্দী করে রাখতে হয়। সে এক পারফিউমারকে অফার করে যদি তাকে সেটা শিখাতে পারে তাহলে সে তাকে দুনিয়ার সেরা পারফিউমার বানিয়ে দিবে। সে পারফিউমার তাকে পারফিউমের বিভিন্ন দিক বুঝিয়ে বলে।

এবং তাকে মিশরের একটা গল্প বলে - একটা মমির কফিন থেকে এমন একটা ঘ্রাণ বের হয় যেটা শুকলে মানুষ কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে স্বর্গে রয়েছে ভাবতে থাকে। সে পারফিউমে বার'টা উপাদানের সাথে অন্য একটি তের'তম উপাদানও ছিল। সে তের'তম উপাদান কি সেটা আজ পর্যন্ত কেউও উদ্ধার করতে পারেনি। এটা শুনে গ্রেনুয়ালে সিদ্ধান্ত নেয় তের'তম উপাদানসহ সে বানাবে পৃথিবীর সেরা সুগন্ধী।

ছবিটা একটু সাইকো টাইপের।

সবার ভাল নাও লাগতে পারে।
ছবির ট্রেলার


পুরা মুভি
পারফিউম

উপসংহার - সিনেমাগুলা একদম কমন, তাই অনেকের কমন পড়বে। তবে যাদের কমন পড়েনি তারা দেখে নিতে পারেন। আশা করি ভাল লাগবে ।



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.