শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ- এ স্লোগানে ঘোষণা করা হয়েছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার। ২০৫০ সালকে লক্ষ্যমাত্রা ধরে গতকাল বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভিশন-২০২১-এর পর আগামী পাঁচ বছরে সরকারের ভিশন নতুন পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা 'রূপকল্প-২০৪১' উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। গতবারের মতো এবারও তরুণদের উৎসর্গ করা হয়েছে ইশতেহার। নতুন ভোটারদের শুভকামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আমরা বর্তমানকে উৎসর্গ করছি।
ইশতেহারে বলা হয়- বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে এসেছে। এ পথ ধরেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। দেশবাসী সংঘাত নয়, শান্তি চায়। তারা অসাংবিধানিক পথে বা স্বৈরশাসনে ফিরে যেতে চায় না। তারা চায় সহিষ্ণু গণতন্ত্রের আলোকোজ্জ্বল অভিযাত্রা অব্যাহত রাখতে।
ক্ষমতাসীন দলের ঘোষিত ইশতেহারে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় যমুনা ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ শুরু, আগামী পাঁচ বছরে প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ পেঁৗছে দেওয়া, দারিদ্র্যের হার ২৬ থেকে ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনা, ফোর-জি চালু, দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা-দক্ষতা বাড়িয়ে এর কার্যকারিতা বাড়ানো, নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার অব্যাহত রাখা, সংসদের ভেতর ও বাইরে সংসদ সদস্যদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখা, প্রতি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণ, প্রতি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের পৃথক বেতন স্কেল ও স্থায়ী বেতন কমিশনেরও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তবে পদ্মা সেতু নিয়ে কোনো বক্তব্য রাখা হয়নি।
দলের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূরের সঞ্চালনায় বিকাল সোয়া ৩টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানপর্ব শুরু হয়। পরে পবিত্র কোরআন, গীতা, বাইবেল, ত্রিপিটক পাঠ করা হয়। সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মূল ইশতেহারের চুম্বক অংশ পড়ে শোনান শেখ হাসিনা।
ইশতেহারে মোট ১০টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। পুরো ইশতেহার আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে বলে জানানো হয়েছে। বড় ডিজিটাল স্ক্রিনের মাধ্যমে পুরো অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার সদস্য, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শীর্ষস্থানীয় নাগরিক, বিদেশি কূটনীতিক, বুদ্ধিজীবী, আমলা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ইশতেহার ঘোষণার সময় মুহর্মুহু করতালি আর 'নৌকা' মার্কার দলীয় নির্বাচনী স্লোগানে মাঝেমধ্যেই মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো মিলনায়তন।
ইশতেহার ঘোষণার শুরুতেই শেখ হাসিনা বলেন, রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দ্বিতীয় মেয়াদের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি জাতীয় সনদ ২০১৪ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আমাদের বিশ্বাস, উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং দেশকে শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে আপনারা আরেকবার দেশসেবার সুযোগ দেবেন। শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে তার দল যেসব অঙ্গীকার করেছিল তা পালন করেছে। সংকট মোচন করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার যে কর্মসূচি দিয়েছিল, তা অত্যন্ত সততা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক বেশি সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের আর্থ-সামাজিক মুক্তি এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমাজ গঠন। সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়ন। এ জন্য প্রণীত হয়েছে পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা। তিনি বলেন, সরকার ২০১৫ সালের মধ্যে বর্তমান ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। দীর্ঘ মেয়াদের লক্ষ্য ২০৫০ সালের মধ্যে দেশকে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সমপর্যায়ে উন্নীত করার কথাও বলেন তিনি।
দেশবাসীর কাছে ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশবাসী সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ খাদ্যে উদ্বৃত্ত হবে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, অপুষ্টির অভিশাপ দূর হবে, দারিদ্র্যের লজ্জা ঘুচে যাবে, নিরক্ষরতা দূর হবে, শিক্ষিত দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে উঠবে, শিল্প-সভ্যতার ভিত্তি রচিত হবে, প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ পেঁৗছাবে, বেকারত্বের অবসান ও কোটি কোটি তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে, পরিকল্পিত নগর-জনপদ গড়ে উঠবে, রাজধানী ঢাকা যানজটমুক্ত তিলোত্তমা নগরে পরিণত হবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ সমৃদ্ধির সোপানে পা রাখবে। এ ছাড়া রাজনীতি থেকে হিংসা, হানাহানি, সংঘাতের অবসান হবে, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের ধারা থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে আসবে। গড়ে উঠবে একটি সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। শেখ হাসিনা আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর প্রতীক স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক নৌকায় ভোট দিন। আসুন, আমরা বিভেদ ভুলে সম্মিলিতভাবে শান্তি, উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাই।
হত্যা, সন্ত্রাস, হানাহানি, সংঘাত-রক্তপাতের চিরঅবসান ঘটাই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলি। দেশ গড়ার এই সংগ্রামে জনগণের জয়, বাংলাদেশের জয় অনিবার্য। শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিতীয় যমুনা সেতু ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের কারিগরি ও অন্যান্য প্রস্তুতি দ্রুত সম্পন্ন করে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ দুটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা ছাড়াও সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা হবে। আগামীতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে দেশের প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে উন্নীত করা এবং দারিদ্র্যের হার ২৬ থেকে ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।
একই সঙ্গে বিদ্যুতের উৎপাদন ১০ হাজার মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ২০৫০ সালের মধ্যে দেশকে বিশ্বের প্রথম সারির দেশে নিয়ে আসা। এ লক্ষ্যেই কয়েক ধাপে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইশতেহারে বলা হয়েছে, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষিত হলে ২০২১ সাল নাগাদ মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৪ ডলার থেকে ১ হাজার ৫০০ ডলার হবে, প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ২ থেকে বেড়ে ১০ শতাংশ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০ হাজার মেগাওয়াট থেকে ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।
২০২১ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পরিকল্পিত ৩০ লাখ সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার সহজলভ্য ও ব্যাপক করা হবে। এ ছাড়া রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তিনি বলেন, ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে নেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে এবং এ জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানি করা হবে। ২০৩০ সালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের হিস্যা হবে প্রায় ৫০ শতাংশ।
তিনি বলেন, আমাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ২০৫০ সালের মধ্যে দেশকে বিশ্বের প্রথম সারির দেশে নিয়ে আসা।
এ লক্ষ্যেই কয়েক ধাপে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ন্যায় ও সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের অঙ্গীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব ক্ষেত্রে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা হবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সব ক্ষেত্রে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা হবে। নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান, তাদের কাজের ও চলাফেরার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। সংবিধান সুরক্ষা, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত করা হবে।
সংসদকে কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংসদের ভেতরে এবং বাইরে সংসদ সদস্যদের সামষ্টিক ও ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনানুগ বিধি-বিধান করা হবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমুন্নত এবং নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়ন নিশ্চিত করার মতো মৌলিক প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণী ও পেশাজীবী সংগঠন এবং নাগরিক সমাজসহ দল-মত নির্বিশেষে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রক্রিয়া চালু রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করতে গিয়ে আন্দোলনের নামে হত্যা, সন্ত্রাস, পবিত্র কোরআন শরিফে অগি্নসংযোগ, শিল্প-কারখানায় অগি্নসংযোগ, রেলওয়ের ফিশপ্লেট উপড়ে ফেলা, সড়ক কাটাসহ রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পদের ধ্বংস, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, উপাসনালয় ধ্বংস, অগি্নসংযোগ, লুটপাট ও বৃক্ষ নিধনের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিচার করা হবে। এ ছাড়া সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প-কারখানাসহ অর্থনীতির পুনর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা এবং নাশকতায় ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপনা পুনর্নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও ঘোষণা দেন তিনি।
জঙ্গিবাদের বিষয়ে ইশতেহারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে জঙ্গিবাদ, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী কোনো শক্তিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ মোকাবিলায় দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং এসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে। মুসলিম উম্মাহর সংহতি এবং ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) কাঠামোয় সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও জোরদার ও ফলপ্রসূ করা হবে।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মর্যাদা সংহত করা হবে। সর্বস্তরে জনগণের বিচারপ্রাপ্তি সহজলভ্য ও মামলাজটমুক্ত করে সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ে বিচার সম্পন্ন করার জন্য গৃহীত প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কারসহ বিচার বিভাগের কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির বাস্তবায়নাধীন ব্যবস্থা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
ন্যায়পাল নিয়োগ ও স্বাধীন মানবাধিকার কমিশনকে আরও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে। নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী, দক্ষ এবং স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী করা হবে। যুগের প্রয়োজনে নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার অব্যাহত থাকবে। ২০১৮ সালের মধ্যে সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পেনশন ব্যবস্থা প্রচলনের উদ্যোগ শুরু হবে এবং ২০২১ সালে সবার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি জাতীয় পেনশনব্যবস্থা চূড়ান্ত করা হবে। আগামী পাঁচ বছরে দেশের সব জমির রেকর্ড ডিজিটালাইজড করার কাজ শেষ করা হবে।
খাস জমি, জলাশয় এবং নদী ও সমুদ্র থেকে জেগে ওঠা জমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভূমিহীন ও বাস্তুভিটাহীন হতদরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের পৃথক বেতন স্কেল ও স্থায়ী বেতন কমিশন গঠন করা হবে। উচ্চশিক্ষার প্রসার এবং ভর্তি সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে এরই মধ্যে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক ও পরিচালন ব্যবস্থাকে অধিকতর গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার পাশাপাশি শিক্ষকদের দলাদলির কারণে শিক্ষা কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় সে জন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশগুলো পুনর্মূল্যায়ন ও প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বলা হয়েছে, বর্তমান কেন্দ্রীভূত প্রশাসনিক কাঠামোর গণতান্ত্রিক পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদের কাছে অধিকতর ক্ষমতা ও দায়িত্ব অর্পণ করা হবে।
সর্বস্তরে ই-গভর্ন্যান্সকে সম্প্রসারিত করা হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে আইনি, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ জোরদার করা হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে প্রতিষ্ঠানটির কার্যকারিতা আরও বাড়ানো হবে। ঘুষ, অনোপার্জিত আয়, কালো টাকা, চাঁদাবাজি, ঋণখেলাপি, টেন্ডারবাজি ও পেশিশক্তি প্রতিরোধ এবং দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন নিমর্ূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিজেদের সম্পদ, আয়-রোজগার সম্পর্কে সর্বস্তরের নাগরিকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
ইশতেহারে বলা হয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তির বিপুল বিকাশের ফলে সামাজিক গণমাধ্যম এবং অনলাইন পত্রিকার ভূমিকা বেড়েছে। অনলাইন পত্রিকা এবং সামাজিক গণমাধ্যমের অপব্যবহার রোধ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। তবে বলা হয়েছে, সব ধরনের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংরক্ষণ এবং অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করার নীতি অবিচলিতভাবে অব্যাহত রাখা হবে। জনগণের তথ্য জানা এবং সরকারের সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রণীত তথ্য অধিকার আইন এবং তথ্য কমিশনকে অধিকতর কার্যকর ও ফলপ্রসূ করার জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে আরও অধিকসংখ্যক কমিউনিটি রেডিওর লাইসেন্স দেওয়া হবে।
সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গঠিত অষ্টম মজুরি বোর্ড বাস্তবায়ন করা হবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।