আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নানা বৈচিত্রে রাঙামাটি ( রাঙামাটি পর্ব -৪)


রাঙামাটিতে প্রবেশের সাথে সাথেই যেখানে সবাই ছুটে আসতে চাই সেটি হল ঝুলন্ত সেতু আর শুভলং ঝর্ণা। আমি এই দুটির কোনটিতেই না গিয়ে সকলকেই প্রথমেই নিয়ে যেতে চাই ইটালির ভেনিসে। আমি কখনো এই দেশে যাইনি তবে আমার সাথে থাকা বন্ধুরা যেই জায়গার সাথে তথা যেই দৃশ্যের সাথে ইটালির তুলনা করেছে সেটি এই পাহাড়ের ভ্যালি। এর সাথে নাকি ইটালির অনেক মিল তবে নিজ চোখে না দেখে সেটাকে বৈধতা দিতে পারছিনা। তথাপিও এই পানিঘেসা পাহাড়টা দেখতে কিন্তু দারুণ।

পাহাড়ের গায়ের এই কারুকাজ দেখে মনে হবে যেন কোন শিল্পীর বহু বছরের পরিশ্রমের ফসল এটি।
(১)

(শুভলং পাহাড় )
(২)

( কারুকাজ)
আর এই পাহাড়কে সাক্ষী রেখেই বয়ে চলেছে জানা অজানা এমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বহু পানির প্রবাহ। অবশ্য এইসব ছোট খাট প্রবাহ বা ঝর্ণাই এখানকার মানুষের সুপেয় পানির প্রধান উৎস।
(৩)

( ঝর্ণার পানি)
বর্ষা শেষ তবুও এই সময়ের দু একটি ছবি না দেখালেই নয়। এই সময় খালের পানি থাকে চারপাশ জুড়ে।

কিছুদূর পর পর এইরকম অসংখ্য বাঁশ ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। কখনো এরা কোন এক অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে আসে কখনো বা একেবারেই একা। তবে হ্যাঁ সঙ্গী সাথীদের একত্র করেই তবে পাঠানো হয় এদের।
(৪)

( বাঁশের চালি)
(৫)

(বাঁশের চালিতে ভেসে চলেছে কজন)
চারপাশে এরকম প্রকৃতি থাকলে তার পাহারায় বাঁশের ভেলা হয়ে ভেসে বেড়ানোর মজাই আসলে আলাদা।
নৌকায় চড়ে যেতেই এবার পেয়ে গেলাম একদল ব্যান্ড অব ব্রাদার্সের দেখা।

বাঁশের ভেলা ভাসিয়ে তারা যেন হারিয়ে যাবে অন্য কোন মোহনায় ।
(৬)

( ব্যান্ড অব ব্রাদার্স -১)
(৭)

( ব্যান্ড অব ব্রাদার্স -২)
দেখে ঠুনকো মনে হলেও খুব মজবুত এইসব ভেলা। বাঁশের মোড়কে বাঁধাই করে বিশাল সব গাছের গুঁড়িদের পৌঁছে দেয়া হবে গন্তব্যে। তবে এই ভেলা বয়ে যাবার জন্য কিন্তু প্রয়োজন হবে স্রোত আর অবশ্যই তার গতি প্রকৃতি হবে অনুকূলে। মূলত বর্ষা মৌসুমের দিকেই চেয়ে থাকে এখানকার মানুষেরা।

এই সময়টা এখানকার সবার জন্যে ভবিষ্যতের অনেক কিছু সংগ্রহের। দূর দুরান্ত থেকে নানা জিনিষ ক্রয় করে যেমন সংগ্রহে রাখা হয় এই পানির ওপর ভর করে। একইভাবে ব্যবসারও বেশ ভালো সময় এই বর্ষা। কারণ শুকনার সময় শুকিয়ে যাবে এই খালের পানি। আর তাই এই সময়েই কাঠের চালান অথবা বাঁশের বড় চালান নিয়ে মালিকেরা ছুটছে রাঙামাটি শহরে।

সেক্ষেত্রে বাহন হচ্ছে কাঠের ভেলা আর পথনির্ভরতা এই পানি।
(৮)

নানাভাবে নৌকার দেখা পাওয়া যাবে এখানে। অবসরে কখনো তারা তীরে ভেড়ানো তরী কখনো আবার যাত্রী নিয়ে নির্দিষ্ট কোন গন্তব্যে।
(৯)

( পানি কমেছে তাই বাড়ছে নৌকার অবসর)
(১০)

আর তীরে দাড়িয়েই হয়তো কারো জন্যে অপেক্ষমাণ এই ছেলেটি। অথবা ঝাপ দিয়ে হয়তো খালের ওপারে যাবার রাস্তা ঠিক করে নিচ্ছে সে।

পানির ওপরে আবার রাস্তা, ভাবতেই অনেকে অবাক হতে পারেন। তবে এটাই এখানে খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। এই বয়সী অথবা এদের থেকেও ছোট ছেলে মেয়েরা এখানে সাতার দিয়েই পার হয় এই সব পানি। আমি অনেককেই দেখলাম লুঙ্গি গুটিয়ে পার হতে হতে একসময় বুক সমান পানিতে নেমে সর্বস্ব ভিজিয়ে পার হলেন।
(১১)

( ওপারে যাবার অপেক্ষা)
অনেক সময় পার হয়েই আবার পা রাখতে হয় এইসব সিঁড়িতে।

পাকা সিঁড়ি রাখা যায় না পানির স্রোতের কারণে আর তাই বেশ মাপ নিয়েই বানানো হয়েছে বাঁশের সিঁড়ি। একটু পারদর্শী না হলেই যে কারো পা ফসকে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পানিতে গোসল করার এক সুযোগ তৈরি হতে পারে তখন।
(১২)

(সিঁড়ি)
যেতে যেতেই চোখে পড়লো এই কালো গরুটি। দেখেই মনে পড়লো মহেশের কথা। তবে খুব একটা কর্ম ক্লান্তি নেই তার, একটা শান্তির সুবাতাসে বটবৃক্ষের নিচে নিজেকে মেলে ধরেছে সে।


(১৩)

( ছায়াশীতল)
এখানে শিক্ষার সুযোগ রয়েছে, আছে স্কুলও কিন্তু বর্ষা মৌসুমে সেখানে পৌঁছানো একটু কষ্টকর। তখন দু এক টাকা ভাড়া দিয়ে অথবা নিজেদের নৌকায় ছাত্র ছাত্রীরা বিশাল এই পানি বাঁধা অতিক্রম করে। অনেক শিক্ষক আছেন যারা ৪-৫ কি মি পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে যান। স্যালুট এই সব আলোর পথের যাত্রীদের যাদের কাছে আমরা সর্বদায় ঋণী।
(১৪)

(পানি পথে স্কুল)
ঘুরতে ঘুরতেই আবার সেই ঝর্ণা।

তখন পানি ছিল আর সে কারণেই শুভলং ঝর্ণায় ছিল পানির ফোয়ারা।
(১৫)

(শুভলং ঝর্ণা)
(১৬)

(শুভলং ঝর্ণা)
তবে যে ঝর্ণার কাছে খুব কম মানুষই যান সেটি কিন্তু শুভলং ঝর্ণার একেবারে পাশেই। বাইরে থেকে খুব একটা বোঝা যায় না তবে কাছে গেলেই ধরা পড়ে এর বিশালতা আর অপার সৌন্দর্য। এই ঝর্ণায় প্রবাহ যেমন আছে তেমনি আছে মন ছুঁয়ে যাওয়া আছড়ে পড়া পানির নান্দনিক আওয়াজ।
(১৭)

(শুভলং ঝর্ণার পাশেই রয়েছে এই ঝর্ণাটি)
এভাবে ঘোরাঘুরিতে কখন যে বেলা পড়ে আসে তা বোঝা যায় না ।

তবে এই সব পানিপথের যাত্রীদের ঘরে ফেরার তাগিদ মানেই সন্ধ্যার আগমনী সুর।
(১৮)

(পানিপথের নিয়মিত যাত্রী)
পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকা শেষ বিকেলের আলোর আভা তখনও খুব বেশী ম্লান হয়নি। তাই আর বেশী দূর না গিয়ে এখানেই থামাতে হল ঘোরাঘুরি পর্বের শকট।
(১৯)

(ঘরে ফেরার পালা)
(২০)

(শেষ বিকেলের আলয়)
রাঙামাটি নিয়ে অন্যান্য লেখা
১। মেঘের আয়না
২।

মেঘের পড়শি
৩। জাল খাল আর জেলেদের কথা
অমি_বন্যা

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.