আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মার্চ ফর ডেমোক্রেসি

খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো...

গেল মঙ্গলবারে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া বিরোধিদলীয় নেত্রীর প্রেস বক্তৃতাটি নানা কারণে আলোচিত হচ্ছে। প্রথমত টানা হরতাল অবরোধের পর বিরোধিদলীয় নেত্রী ঘটা করে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করলেন। তাতে অনেকের মধ্যেই শঙ্কা ছিল হয়তো আরো কঠোর আন্দোলনের ঘোষণাই তিনি দিবেন। কিন্তু তিনি তা না দিয়ে ”রোড ফর ডেমোক্রেসি’র ডাক দিলেন ২৯ ডিসেম্বর। অর্থাৎ সকল সক্ষম মানুষদেরকে তার দেয়া কর্মসূচিতে আসার আহ্বান তিনি জানিয়েছেন।

ভালো কথা, একজন উচ্চ পর্যায়ের রাজনীতিক হিসেবে তিনি তা দিতেই পারেন। তবে আপাতত স্বস্তির বিষয় হলো দেশ অচল করে দেয়ার মতো কোন কর্মসূচি তিনি ডিক্লায়ার করেননি যার জন্য বিরোধিদলীয় নেত্রী ধন্যবাদ পেতে পারেন।

দ্বিতীয়ত: বিরোধীদলীয় নেত্রীর গণজমায়েতের ডাক দেয়ার পর পরই এ নিয়ে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বি দলের মধ্যে বাহাস চলছে। সরকারি দল বলছে ” না এটা করা যাবেনা”। কারণ পোড় খাওয়া গরু সিদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পাবে সেটাই স্বাভাবিক।

৫মে হেফাজতের শাপলা চত্তরে গণজমায়েত থেকে সরকার যে শিক্ষাটা পেয়েছে তাতে এধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি সরকার এড়িয়ে যেতে চাইবে সেটাও খুবই স্বাভাবিক। অনেকে বুদ্ধিজীবি টকশোওয়ালারা অবশ্য সরকারের বিরোধিতা করছেন। বলছেন ’’ না এটা সরকার করতে পারেনা কারণ রাজনৈতিক অধিকার হরণ করা আইনের পরিপহ্নি”। যারা আইনের কথা বলছেন তারা কিন্তু সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার কথা বলছেননা। এতেই প্রমাণিত হয় ঔসব বুদ্ধিজীবিরা বুদ্ধি করেই চলছেন।



আমাদের দেশে যারা রাজনীতি করেন তারা সব সময় ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করেন। সঠিক গণতান্ত্রায়ন হয়নি বলেই প্রতীয়মান। বিরোধিদলীয় নেত্রী বলেছেন সরকারের একগুয়েমির কারণেই সমঝোতা হয়নি। এ কথার পাশাপাশি এও সত্য যে বিরোধিদল গত দুই মাসে আন্দোলনের নামে যে পরিমাণ সহিংসতা দেখিয়েছে তা নজিরবিহীন। পেট্রোলবোম, গান পাউডার দিয়ে মানুষ হত্যার এক নেশা আন্দোলনকারীদের পেয়ে বসেছিল।

যা পরবর্তীতে বেগম জিয়া স্বয়ং মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেছেন তাদের লক্ষ্য সাধারণ মানুষ নয়, আন্দোলনের কারণে যাতে সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন না হয় তা যেন আন্দোলনকারীরা খেয়াল রাখেন। মজার ব্যাপার হলো মাননীয় বিরোধিদলীয় নেত্রীর এমন আহ্বানের পর কিন্তু নাশকতা কমেছে।

বেগম জিয়া বলেছেন একাদশ নয় দশম সংসদেই আলোচনা ফলপ্রসূ করা সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে সরকারি দলের আগ্রহ থাকতে হবে বলেও তিনি মত দিয়েছেন। কিন্তু গত বেশ কয়েক দিন ধরেই তো দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে আলোচনা চলছে কিন্তু এর ফলাফল কি তাতো দেশবাসি এখনো জানতে পারলোনা।

এমন কি জাতিসংঘের সহকারি মহাসচিবের উপ¯িহতিতেও তো আলোচনা বেশ এগুয়েছে বলে জানা গেছে কিন্তু আল্টিমেট ফলাফলতো আপাত দৃষ্টিতে শুন্যই বলা চলে। যদি বিএনপি বা ১৮ দলীয় জোট সত্যিই নির্বাচনমুখি হতো বা দশম জাতিয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতো তাহলে দেশজুড়ে এখন নির্বাচনী আমেজ অন্য রকম থাকতো কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধিনে কিংবা র্নিদলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবেনা বলেই তো সঙ্কট সৃষ্টি করা হয়েছে। এ সঙ্কট যারা সৃষ্টি করেছে তাদেরকেই এর সমাধান করতে হবে বলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। এখন শেষাবধি কি হয় তার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর উপায় কি?

ইতোমধ্যেই অর্ধেকেরও বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে গেছে। আর যাকে উপলক্ষ করে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন পর্যবেক্ষনে আসবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছে।

এ ক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ দুর্বল নির্বাচনী গেম খেললো কি? যদি নির্বাচনই করা লাগে তাহলে সব আসনে বিদ্রোহি প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী দাড় করিয়ে একটা অর্থবহ নির্বাচন কি করা যেত না? জাতীয় পার্টিতো নির্বাচনে ছিলই। তিনশো আসনে দুই হাজার প্রার্থী দাড় করিয়ে একটা নির্বাচন যদি আওয়ামীলীগ করতে পারতো তাহলে আজকের যে পরি¯িহতি তার মুখোমুখি হতে হতো না। অর্থাৎ প্রতি আসনে একাধিক প্রার্থী থাকলে ইউরোপিয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অন্যান্য দাতা দেশ খোড়া যুক্তি দেখিয়ে পর্যবেক্ষক না পাঠিয়ে পারতো না! তখনকার পরি¯িহতি হতো অন্য রকম। এর পিছনের মুল কারণটা সরকারের সঙ্গে যারা ছায়ার মতো আছে তারা ভালো বলতে পারবে। যদি আওয়ামীলীগ মনে করে যেনতেনভাবে একটা নির্বাচন করে সাংবিধানিক সঙ্কট থেকে দেশকে রক্ষা করবে তাহলে হিসেবটা হবে এক রকম।

কেননা বিএনপিও কিন্তু ৯৬’র ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন করেছিল সাংবিধানিক সঙ্কট থেকে দেশকে রক্ষার জন্য। সে নির্বাচনেও কিন্তু বিএনপি ছাড়া কেউ অংশগ্রহণ করেনি।

২৯ ডিসেম্বর আসলে কি হতে যাচ্ছে? এমন একটা আশঙ্কা নিয়ে দেশবাসির মধ্যে ভয় ভীতি ও কৌতুহল বাড়ছে। বিএনপি কি সত্যিই পারবে কিছু একটা করতে? সরকার যে চুপ করে বসে থাকবেনা তা পাগলেও বুঝে। সরকারের প্রতিহতের মধ্যে দিয়ে বিএনপি কি মার্চ ফর ডেমোক্রেসি সম্পন্ন করতে সক্ষম হবে? নাকি দেশের সক্ষম লোকগুলোরে দাওয়াত দিয়ে বিএনপি নিজেই অক্ষম হয়ে বসে থাকবে? তবে ২৪ ডিসেম্বর কিন্তু হেফাজতের ঢাকায় সমাবেশ করার কথা ছিল কিন্তু সরকারের অসহযোগিতার কারণে সেটা হয়নি।

হেফাজতের ২৪ ডিসেম্বরের জমায়তের সহিত বিএনপির ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচির কোন যোগসাজশ আছে কিনা তাও কিন্তু প্রশ্নাতীত নয়। বিরোধি নেত্রী খুব মজা করেই বলেছেন ’ এ নির্বাচন দেশের জন্য নয়, দেশের জনগণের জন্যও নয়, এ নির্বাচন হলো আওয়ামীলীগের জন্য ” অর্থাৎ এ নির্বাচনকে পাতানো নির্বাচন বলে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি কিছুটা মজাও করেছেন।
সে যাই ই হোক। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটা খারাপ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হলো। এভাবে এক তরফাভাবে নির্বাচন করা বা নির্বাচন বয়কট করার যে মানসিকতা দুই দলের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তাতে গণতন্ত্র খুব বড় ধরনের হোচট খেতে যাচ্ছে।

এ থেকে উত্তরণের উপায় বড় দুই দলকেই বের করতে হবে। অন্যথায় গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হচ্ছে রাজনৈতিক নেতারা কথায় কথায় দেশ অচল করে দেয়ার যে হুমকি দিচ্ছেন তা নিয়ে ভাবার দরকার কারণ এভাবে দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা বাণিজ্য ধ্বংস করে ক্ষমতায় যাওয়ার যে প্রক্রিয়া চালু হয়েছে তা থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় দেশের অর্থনীতিতে এমন ধ্বস নামবে যে গণতন্ত্র দিয়ে আর অর্থনীতি ধরে রাখা যাবেনা।




অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.