রাজধানীর বারিধারায় যমুনা ফিউচার পার্কের নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ও শাটার ধসে শাহীন নামে এক মোটরসাইকেল চালক নিহতের ঘটনায় ভাটারা থানায় হত্যাসহ দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলায় যমুনা গ্রুপ ও ফিউচার পার্কের মালিক নুরুল ইসলাম বাবুলকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। শাহীনের বড় ভাই হযরত আলী গতকাল হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নম্বর-২৪। অন্যদিকে, শাহীন নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ বাদী আরেকটি মামলা হলেও তাতে বাবুলকে আসামি করা হয়নি।
ভাটারা থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে যমুনা ফিউচার পার্কের নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবনের ছাদ ও শাটার ভেঙে ব্যস্ততম সড়কের ওপর পড়লে কুড়িল এলাকার ওই ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আশপাশ এলাকার উত্তেজিত শত শত নারী-পুরুষ যমুনা ফিউচার পার্কের মূল ফটকে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। যমুনা গ্রুপের নিরাপত্তা কর্মীরা এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করলে পরিস্থিতি আরও মারাত্দক আকার ধারণ করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পেঁৗছে বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসআই মোস্তাফিজুর আরও জানান, ভবন নির্মাণে কোনোরকম নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না নেওয়াসহ চরম অবহেলার অভিযোগ এনে তিনজনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের বড় ভাই।
মামলায় যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল প্রধান আসামি। অন্যরা হলেন যমুনা গ্রুপের চিফ ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর হোসেন, প্রোজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন এবং অজ্ঞাত একজন প্রোজেক্ট ইঞ্জিনিয়ারসহ চার-পাঁচজন। এ ঘটনায় দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ বাদী অন্য মামলাটির নম্বর-২৫। এতে ঘটনাস্থল থেকে আটক যমুনা গ্রুপের সিকিউরিটি অফিসার এরশাদুল্লা প্রধান আসামি। এ ছাড়া যমুনা গ্রুপের অজ্ঞাত পরিচয়ের ৩০০-৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে শাহীন হত্যাকাণ্ডের পর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে অভিযোগ তুলে যমুনা গ্রুপের উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ইউনুস আলী বাদী হয়ে ভাটারা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এতে স্থানীয় আজহার উদ্দিনসহ চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। তবে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা অবিলম্বে শাহীন হত্যা মামলায় যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুলসহ অন্যান্য আসামিকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। তারা অভিযোগ করেন, জমি নিয়ে পূর্ববিরোধের সূত্র ধরে আজাহার উদ্দিনসহ এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। নুরুল ইসলাম বাবুল নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে শাহীন হত্যা মামলাটি ধামাচাপা দেওয়ারও চেষ্টা করছেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, শাহীনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার গভীর রাতেই স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার করুণ মৃত্যুর ঘটনায় কুড়িল, চৌরাস্তা ঘাটপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গোটা এলাকায় গতকালও থমথমে পরিস্থিতি ছিল। দিনভর শাহীনের বাসভবন ও কবরস্থান ঘিরে শোকার্ত মানুষের ভিড় দেখা যায়। তাদের মুখে মুখে ছিল যমুনা গ্রুপের হাজারো অত্যাচার-নির্যাতনের কাহিনী।
অনেকে বিক্ষুব্ধ কণ্ঠে বক্তব্যও দিয়েছেন। বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যখন যমুনা গ্রুপের চরম অবহেলায় ছাদ ধসিয়ে তরতাজা যুবক শাহীনকে হত্যা করা হয়, তখন যমুনা ফিউচার পার্কের বিভিন্ন রাইডসে গানের শব্দ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যাতে আশপাশের মানুষ বিষয়টি টের না পান। নুরুল ইসলাম বাবুলের নির্দেশেই নানা জঘন্য গানের শব্দ মাইকে জোরে ছড়িয়ে দেওয়া হতে থাকে। সাধারণ মানুষ এতে আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।
ভাটারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফিরোজ কবীর জানান, যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ এজাহার নামীয় আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে। পুলিশের দুটি টিম মাঠে নেমেছে। যমুনা গ্রুপের অজ্ঞাতনামা আসামিদেরও তদন্তপূর্বক চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।